ফিরে এসো
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
আজ চন্দ্রবানু মিছিলে গিয়েছিলো। মিছিল না ঠিক, নারী দিবসের শোভাযাত্রা বলা যায়। গলা ফাটাইয়া শ্লোগান দিয়েছে, “পুরুষতন্ত্র নিপাত যাক, নারী স্বাধীনতা মুক্তি পাক”।
নারী স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা বলে চিল্লাইয়া মুখে ফেনা তুলে মাথায় ব্যাজ ও প্ল্যাকার্ড হাতে হয়রান হয়ে ঘরে ফিরেছে। দুপুর গড়িয়েছে সেই কখন। চুলায় হাড়ি চড়েনি এখনো। রাগে ক্ষুব্ধ চন্দ্রবানুর জামাই চুলের মুঠি ধরে দিয়েছে কয়েক ঘা। অথচ সকালে সে নিজেই বউকে এগিয়ে দিয়েছে বড় রাস্তা পর্যন্ত। র্যালিতে যাওয়ার এডভান্স কড়কড়ে দুইশো টাকা তখনও তার পকেটে রাখা।
জামাইয়ের উপর ভীষণ নারাজ চন্দ্রবানু ।
মার খেয়ে হাঁপুস নয়নে কেঁদে কেঁদে এসেছে আমার কাছে। মামি এই ব্যাডার ঘর আর করতাম না। আপনে মামারে কইয়া আমার ডিভুর্সের ব্যবস্থা করেন। দেহেন, নডির পোলায় আমারে মাইরা কি করছে।
চন্দ্রবানু, মুখ সামলে কথা বলো, বাজে কথা বলিও না তো। দোষ করলে তোমার জামাই করছে, ওর মা তো কিছু করে নাই।
হেই বেডি তো আসল…
আমার কঠিন মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে যায় চন্দ্রবানু। শরীরে বিষ বেদনা নিয়ে কুঁকাতে কুঁকাতে আমার সামনে থেকে চলে যায়।
চোখের জলের বাধ ভাঙা স্রোত কপোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। চন্দ্রবানুর মুখ দেখেই মর্ম বেদনার গভীরতা বুঝা যাচ্ছে। সে তার বেলতলা জামাইয়ের উপর বেশ ক্ষেপে আছে। আজ রাতের মধ্যেই তালাক দিবে এই গুনধর ব্যাটাকে।
“ন্যাড়া একবার বেল তলায় যায়”, কথাটাকে নির্জলা মিথ্যা প্রমাণ করে চন্দ্রবানু বার বার বেল তলায় যায়।
রাত পোহালেই আমাকে হতাশ করে চন্দ্রবানু এসে বিগলিত ভাবে বলবে, মামি হে ব্যাটা ভালা হই গেছে। কাইল রাইতে পুয়া-পুড়িন্তের মাথা ছুইয়া কিরা কাটছে। কসম করছে আর ইতা করতো নায়।
প্রতিবার কিরা-কসমের মাস দুই পেরোতে না পেরোতেই চন্দ্রবানুর খাবারে গন্ধ লাগে, মাথা ঘুরায়। সকালে বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করে না। পেটে ফোটা পরিমাণ পানিও হজম হয় না। গড় গড় করে বমি হয়।
বড়লোকের মর্নিং সিকনেস ও গরীবের শইলের বেজুইত। এই নিয়ে বিছানায় পড়ে থাকে পুরো সকাল। দুপুরের দিকে ধীর পদক্ষেপে বাসা বাড়ির কামে যায়। কোন মতে এক দুইখান কাজ করে ঝাড়ি ঝুড়ি খেয়ে বাসার কাম টিকিয়ে রাখে।
সপ্তাহ দুয়েক পরে চন্দ্রবানুর শারিরীক পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। লাজে লজ্জায় রাঙা হয়ে সুখবর দেয়, মামি শইল ভার, আপনেগো নাতি নওশা হইবো। আল্লায় দিছুইন, কিতা করতাম মামি, কইন চাইন?
ন্যাড়া মাথা নিয়ে চন্দ্রবানু এই করে করে পাঁচ বার বেল তলায় গিয়েছে। ছিলা চান্দির উপর ঠাস ঠুস পাকা বেল পড়ে মাথায় গুটা উঠেছে প্রতিবার।
সন্তান জন্মানোর উর্বরভূমি চন্দ্রবানুর সংসার কন্যা সন্তানে ভরপুর। অশান্তি, অভাব অনটন ও ধার দেনা নিত্য সঙ্গী।
পিটুনি খেয়েও বাদাইম্যা অকর্মণ্য জামাইয়ের পিছু ছাড়ে না সে। ছেড়ে যাওয়ার উপায়ও নেই।
সামনের বছর বিশ্ব নারী দিবসের র্যালি আরো দীর্ঘ হবে। চন্দ্রবানুর মেয়েরা তখন নারী হয়ে যুক্ত হবে নারী দিবসের র্যালিতে। দ্বিগুণ চিল্লাইয়া বলবে পূরুষতন্ত্র নিপাত যাক, নারী স্বাধীনতা মুক্তি পাক।
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
ভার্সিটির বাস ধরতে হয় আমাকে খুব সকালে। বাড়ি থেকে একটু হেঁটেই রিকসা। তারপর বাস। হাঁটা…..
আজকের সন্ধ্যাটা থমকে যাওয়া মেঘেদের। ঝিরিঝির বৃষ্টি ছিল দিনভর। ঢাকা শহরের পথঘাট জল কাদায় মাখামাখি।…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..