ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
নৌকা বাইতে থাকা মেয়ের প্রতি চর্যাপদের কবির যে কী অসম্ভব আকর্ষণ, তা কি করে বলে বোঝাই! দূর থেকে নৌকা বেয়ে তাকে আসতে দেখে কবি চিনতে পারেন। সে মেয়েকে পরাশর ঋষি যোজনগন্ধা করে দিয়ে গিয়েছেন। কামতৃপ্তির অগ্রিম পুরস্কার ছিল ওটি। সে মেয়ে আসে সোনার তরণী বেয়ে। আসে আমার ফসল নিয়ে যেতে। আমি মোহমুগ্ধ। ভাবি ও মেয়ে আমাকেও নিয়ে যাবে। ওর সাথে নিরুদ্দেশ যাত্রাতেও কী অদ্ভুত তৃপ্তি। কিন্তু ও মেয়ে বড়ই দুষ্টু। কিছুতেই আমার ইন্দ্রিয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করে না। একটু আঁচল হয় তো ছুঁয়ে চলে যায়। পদ্মিনী মেয়ের গায়ের মিষ্টি সুবাস একটু হয়তো কাছ দিয়ে ভেসে গিয়ে আমায় লুভিয়ে তোলে। বুকের আঁচল ছল করে সে একটুখানি সরায়। কিন্তু হাতের মুঠোয় কিছুতেই ধরতে পারিনা তাকে। ও নির্ঘাত চর্যাপদের মেয়ে। ও আমার সাধের ডোমনি। নৌকা বাওয়া ওর ছল। খাটো কাপড় পরে অঙ্গে অঙ্গে বিভঙ্গ তুলে ও আমার ভিতরকে উসকে দেয়, আর তারপর নিষ্ঠুর খেলা। এই নন্দিনীকে দেখে সকলের কী আকুতি। মেয়ে ধানি রঙের শাড়ি পরে পথ চলে। আর চলার চঞ্চলতা ফুটে ওঠে শাড়িতে। সবাই অবাক হয়ে আড়ে আড়ে চেয়ে আধো দেখে, আর দুষ্টু মেয়ে সেই লুকিয়ে দেখা উপভোগ করে। পণ্ডিত ওকে তত্ত্ব বোঝাতে চেয়ে মিনতি করে। ও মেয়ে ছল করে বলে আরেক দিন শুনব। রাজার খুব ইচ্ছে করে ওর কালো দীঘল চুলে হাত ডোবাতে। সে যেন মরার আরামের মতো মনে হয় রাজার। স্তনসন্ধিতে নীলকণ্ঠ পাখির পালক রেখে ও রঞ্জনের আসার খবর বলে আমায়।
ডোমনি সেজে ও চুপড়ি বোনে, আর চুপড়ি বেচে। কানাঘুষোয় শুনেছি সে দৈব বুনোটের চুপড়ি এমন, তার উপর দাঁড়িয়ে ও মেয়ে কত্থক নাচে, তবু চুপড়ি ভাঙে না। বামুনেরা সংসারকে লুকিয়ে ডোমনির সঙ্গ করতে আসে। আর দুষ্টু মেয়ে কামার্ত বামুনদের নিয়ে কী ছলনাটাই না করে। ও মেয়ে কিছুতেই নিজেকে এঁটো হতে দেবে না।
চর্যাপদের মেয়ে এমন যে ও ঘুমোলে কানের দুল খুলে চোরে নিয়ে গেল। পাশের ঘরে শ্বশুরমশায় ঘুমিয়ে ছিল, সে পর্যন্ত চোরের গতিবিধি টের পায় নি। দুষ্টু লোকজন নিন্দে রটায় ও মেয়ে ইচ্ছে করে চোরকে কানের দুলটা খুলে নিতে দিয়েছে। চোরের ছদ্মবেশে যে গোপন প্রেমিক এসেছিল, সে কি আমি আর বুঝি না? ঘুমের ভান করে পড়ে থেকে ও চোরের ইন্দ্রিয় তৃপ্তি করেছে। এ মেয়ে এমনিতে লাজুক। দিনের বেলা ও যেন কাকটিকে দেখেও ভয় পায়। রাতে সে অন্য মেয়ে। নিশিপদ্ম ফুটলে মেয়ের অন্যরকম রূপ। ভিতরের খবর যারা জানে তারা বলে রাত বাড়লে ও যোগিনী সেজে লঘুপায়ে কামরূপ ঘুরে আসে। চর্যাপদের মেয়ে আমায় ঘুমোতে দেয় না। রোজ তার অভিসারে আসা চাই।
ওই যে চর্যাপদের ভাষাটা নিতান্তই বাংলা, এটা সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মশায়কে রীতিমত প্রমাণ করে দেখাতে হল। তার আগে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মশায় ওটি নেপালের রাজ দরবারের লাইব্রেরি ঘেঁটে আবিষ্কার করলেন। । তার মানে সেটা চালু ছিল না। মুনিদত্তের একটা টীকা খুঁজে পাওয়া গেল। তাও সংস্কৃত ভাষায়। তাতে অর্থ কিছু কিছু স্পষ্ট হল। এ যেন সেই হারানো রাজপুত্রের গল্প। তাকে যারা চিনত, জানত, তারা কেউ কোথাও বেঁচে নেই। কেমন নাক, কেমন চোখ, গলার স্বর কেমন কেউ জানে না। অয়েল পেন্টিং দূরস্থান, রাজবাড়ীর কোনো গ্ৰুপ ছবিতে পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। কারো স্মরণে নেই। এবার কি তাহলে ডি এন এ টেস্ট হবে? উপস্থিত বুদ্ধি তো সেটাই বলে।
সেই আমাদের হাজার বছরের পুরোন গান। কেউ বলে চর্যাগীতি, কেউ বলে চর্যাগাথা। কেউ বলে উঁহু, না না , নাম তার চর্যাচর্যবিনিশ্চয়।
ভাষাও বোঝা সাধারণের কর্ম নয়, লিপিরও সেই দশা। তবু বাংলা। আর সেটাই ঠিক। বিজ্ঞানঘটিত প্রমাণ।
আমাদের অস্তিত্বের ভেতরে ভেতরে বিজ্ঞান এমন কাজ করে।
গল্পটা তাহলে কেমন দাঁড়িয়ে গেল? সেই যেন মা হারা ছেলে জঙ্গলে নেকড়ে বাঘের দুধ খেয়ে বড় হয়েছিল। বলছ বাংলা, কিন্তু খুঁজে পেলে বাপু নেপালের লাইব্রেরি ঘেঁটে। হয় কথায় নয় কথায় যাঁদের লাইব্রেরি পোড়াতে হাত নিশপিশ করে, তাঁরা মনে রাখুন। আর মানেটা বোঝার সুবিধে হল মুনিদত্তের সংস্কৃত টীকা থেকে। ওর নাম “নির্মলগিরা”। ভাল করে বলতে গেলে নির্মলগিরার তিব্বতি অনুবাদ। চর্যাটীকার খাঁটি পাঠ পাওয়া গেল ওই তিব্বতি অনুবাদে। বাংলাভাষার এই প্রত্নসম্পদ কি করে বৌদ্ধগানের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেল, তার শিকড় সন্ধান করতে গেলে ব্রায়ান এইচ হজসনের নামটা এসে যায়। তিনিই নেপাল থেকে বৌদ্ধপুঁথি সংগ্রহ করে প্রাচ্যবিদ্যাচর্চায় আগ্রহী মানুষদের কাছে পাঠাতেন।
নাম এসে যায় ইউজিন বার্ণউফ এরও। ড্যানিয়েল রাইট আর সিসিল বেনডালকেও ভোলা চলে না।
তাহলে কি মনে হচ্ছে? নেপালের লাইব্রেরি, সংস্কৃত টীকা, তার আবার তিব্বতি অনুবাদ, বিদেশী পণ্ডিতের অকুণ্ঠ আগ্রহ, সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থনীরে আমার বাংলার জন্ম? আমরা শুরু থেকেই “বিশ্ববাংলা” ? আমাদের মনে মেজাজে আন্তর্জাতিকতা স্থান পেতে দেরি কিসের?
উঁচু উঁচু পর্বত। সেখানে থাকে শবর তরুণী। পরনে তার ময়ূর পুচ্ছ, আর গলায় তার বনফুলের মালা। তার মুখটি কি পান পাতার মতো? তার হৃদয়টা কি পানের মতো করেই আঁকি না এখানে ওখানে! আহা কর্পূর দিয়ে মিঠে পান খাই আর সহজ সুন্দরীর মুখটি মনে ভাসে।
কি চমৎকার করেই না আমার মনের কথা আগে ভাগে জেনে লিখে গিয়েছেন শবরপাদ। গান ধরেছেন বলাড্ডি রাগে। চর্যাগাথার আঠাশ নং কবিতায়।
তারপর জানা গেল শবর তরুণীটি আসলে কবির ঘরণী। সে ছল করে অমন সেজেছে। আমাদের চেনা জানা চণ্ডীও শিবের সাথে অমন ছল করতেন। খাটো পোশাক পরে মাছ ধরতেন। আর তাকে পরস্ত্রী মনে করে শিবের সে কি কাম পিপাসা!
কাম নিয়ে নানারকম মজা চর্যাগাথায়।
আবার পড়ব আঠাশ নং চর্যাগান।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..