করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
কবিতা চালিসার সমান্তরালে আয়না রাখি। পারদের স্তরে কিছু কারচুপি থাকতে পারে। হিসেবে রাখিনি। হিসাব কিতাবে হুকুমত দেখি। আয়নারা জলজ হলে স্বচ্ছতা মেখে নেয় সারা গায়ে। শব্দেরা নিশ্চিত হলে সমস্ত অক্ষরের ভেতর অকার খুঁজি। দিগন্ত হারালে সমস্ত সমাসের ভেতর দ্বন্দ্ব। বেবাক অশ্বিনীর চালিসায় রাখা তৃষ্ণা। জলের আদর। আলবাট্রস। অচিন চোখের টানাবোনায় হরিণের বিস্তার। অলখ। অলখ। বিষয়কে অন্তরে রাখলে ব্যাপ্তির কথা ভাবতেই পারো। পারাহীনতায় আরশি যতটা দেখাতে চায়।
কবিতা প্রাণীর হাড় মাংস নদী হয়ে গেলে জলের ওপরে ভেসে ওঠে মন্ত্রশব্দ। মন্ত্র থেকে মহিমা বিয়োগে শব্দের পাটে বসে মন্ত্রণার মৌন সাঁকো। তো সেই সাঁকো পারাপারের চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে একটা নৌম্যাপ বিছিয়ে রাখি। দ্রাঘিমা বা অক্ষাংশ উল্টেপালটে নিজেদের মুখ দেখে। কবি শব্দের বাকল খুলে রোদে দেয়। বর্ণভ্রান্ত জানলারা উদোম হলেই অফুরান আলো। ছলকে ছলকে নিজের মতো বর্ণান্ধ হয়ে উঠি। তোমার ফেরোমন স্ট্রিং বাহিত বিদ্যুৎ যখন ঝলসে ওঠে আমি গোপন রোদ কুড়োতে যাই তোমার বৈশালে। আউলে ওঠে সুলতা আর মনোরমার জলসাইন। নদীঘেঁষা মানুষের অশ্রুগ্রন্থির ছেঁড়া টুপগুলো কী কথা বলে বুঝিনা আমি। বোঝার বোঝা নামিয়ে রেখে টুপশালে পাততাড়ি পেতে বসি। চারপাশে বেজে ওঠে জংগানের বাজনা। মৌন সুরের সড়ক বেয়ে উড়ে যায় দ্বিধার পালক। গুপ্ত ঝলক দেখবো বলে চোখের পলক খসিয়ে নগ্ন হয়ে উঠি। ভাবনার খোলা পিঠে মুখ রেখে মুখের আদল খুঁজি। খোঁজ এক আশ্চর্য নৌপথ। নাবিকের পিঠে ছিটকোনো পানিপথ জল আর পথ আলাদা করতে থাকে। পথ কোনো হরিণের পদশব্দ লিখে রাখে না। অথচ জলের ভেতর টলটলানো প্রতিফলন মাথার ভেতর ফলিত বিদ্যুৎ জড়ো করে। বেজোড়ে থাকা বিদ্যুৎকণারা ট্রন ট্রন করে ওঠে। লোকটা তখন উচ্চারণ করে –
বিদ্যুতটি উঠতে গিয়েও পড়ে গেল পায়ে
খোলা সায়া সায়ে
ভাবনা আর ছাড়িয়ে পেলো না মাথা
এই স্থির বিদ্যুৎ স্থির মানুষের চুল
কিছুই হারালো না দীনাদীন কাশ অবকাশ
চোখের ভেতর থেকে গেল সব মেঘ[প্রণয়ধ্বনির সফটওয়্যার]
লোকটা কে? কবিতার সংকট মোচনের মন্ত্র উচ্চারণ করে লোকটা। পরিচয় সকলেই জানি। সে কথা থাক। বরং লোকটার দেওয়া পদ্য লেখার আটদফা কারিয়াক্রম শোনা যাক –
(১) উপমা থেকে বেরিয়ে এসেছি, মতো শব্দটা ব্যবহারই করছি না।
(২) ছবি ফুটে উঠলেই ছিঁড়ে ফেলছি, ছবি চাইনা জ্ঞানত।
(৩) বহুল ব্যবহৃত শব্দগুলো বর্জন হল। আবার জ্ঞানত।
(৪) নতুন বিষয় ধরতে হবে।
(৫) আমরা আমাদের তোমরা তোমাদের এসব সর্বনাম ভুলতে হবে।
(৬) প্রতীক চিনতে পারলেই বাদ, কেটে দাও শূন্য। বরং বিপ্রতীক।
(৭) নাটক নয়।
(৮) যেখানে আছো যেখানে গ্যাছো এইসব স্থান অনুষঙ্গ বাদ।
[খালাসিটোলা (৫/২ কিদোয়াই)]
সবই তো বাদ গেল! রইলটা কী? বাকি সামান্যই যা পড়ে রইল তাকে কবিতা করে তোলা। লোকটা পারে। আর সেই পারার পারাপারে বসে আমরা “কবিতা চালিসা” শুনি –
কবিতা চালিসা আমি বারে বারে পড়ি রোজ ভোরে
সচন্দ ওয়েব থেকে বিদ্যুৎ নহর নামাই
মলাট ছেঁড়া তমতমের ভেতর ভেসে আসে
ত্রিকোণের প্রত্যেকটি সুলতা
চুপ করে বসে শোনে নরম বাঘের কথা
লোকাল ঈশ্বরের কথা
সূর্যমুখীকে ছোট্টমুখী বলার মজাগুলো[ কবিতা চালিসা ]
কবিতার পিঠে নবমীর চাঁদ আর চাঁদোয়ার অন্তর খুলে বসে আছি যেদিক থেকে হাওয়া আসে। সুঠাম হাওয়াকলের পায়ে জমে ওঠা শ্বাসকষ্ট সরে যাচ্ছে দূরদেশে। রোদপৃষ্ঠায় ঝরা ডুব আর ডুবুরি হাতবদল হতে হতে আমাদের চারুভাব; কান্না মন্থনের সংকেত চিহ্ন। চিহ্ন থেকে তোমার দূরত্ব মেপে এইসব সরে যাওয়া। আসলে দূর এক সীমানা ফোটানো দিগন্ত। নেমপ্লেট নেই, বিজ্ঞাপন নেই, মঞ্চ নেই। অথচ একটা নিঃশব্দ ফোকাস বিন্দু থাকে; যার ভেতর হেঁটে যায় বালক ডট কম। ফলত ওই সব সরে যাওয়ারা ইনফিনিটি ছুঁয়ে ফেলে। স্পর্শ চিহ্নের নাভিমূলে হাত রেখে উছলে যায় ইশারা –
অবালক ছুটি আমরা কাটাতে চেয়েছি দূরদেশে
কেঁদে না ফেললে বুঝবো কি করে কষ্ট কার
কার ছবি হারিয়ে গেল
স্বপ্ন বিজ্ঞাপন থেকে মুখ ফেরালো কে
[ বালক ডট কম ]
কবির কোনো বধিরতা নেই। তাই কবিতা চালিসার সামনে পেতে রাখা আয়নায় চোখের শ্রবণ; অবাক হতে থাকে শব্দায়নের কুর্নিশে। কুয়াশায়নের নেপথ্যকাহিনীতে মোহত্বক। ত্বকের গায়ে যেকটা দাগ হরিণের মায়া ছুঁয়ে অপার ডেকেছিল, সেখানে পেতে রাখি পূর্বস্মৃতির সংরাগ। সুলতার মধুভুল চোঁয়ানো নৈশ সুর; সুরের ভেতর হর্ষচিহ্ন বহনকারী সারি ঘটনা। বন্দরনামানো নদীপথ শেষ হয় না, শুরু হয় অ্যাই শব্দমহলার প্রান্তরে। প্রান্তর টান্তর সব ভাঙনের কাহিনী। চোরা তরঙ্গে ভাসতে ভাসতে কোথায় যাবে জানে না। একাশিয়া মদেশিয়া ম’ ম’ করে ওঠে। ভিলেন বাহিনীর প্রধানও কান্না বিলোতে বসে। মনখারাপের মাথায় ডুম আলো জ্বলে উঠলে হাঅন্তর হাপ্রান্তর; হাহাকাশে বিপন্ন রুদালির রোদ ভিজতে ভিজতে প্রলাপ হচ্ছে। আলাপের ধীর স্বরের ভেতর স্মৃতিযানের হারমোনিকা দ্রুতলয় খুঁজছে ঝালা খুঁজছে সংগত দেবার জন্য। আর গ্রে সেলের ঘোড়া আলাদা হয়ে যাচ্ছে সুলতার নথানো দ্বিতীয় বন্ধনীতে –
এই যেমন সুলতার মধুভুল রোজ নিঙাড়ি তবু
আরও আছে
. তেপান্তরের গায়ে পড়া সারিঘটনা
স্তেপে স্তেপে
আগেকার ভুলভাবের স্টেপ নাচ যে যেমন পারে
মেয়ে পটাবো না ঝুমচাষের জল পটাবো
ফর্দাফাই হয়ে যাবার পর যে
রকম সাদাবোধ হয়
ঠিক মাথায় আসছেনা বরফ
. বিয়ার চিল অ্যাই
কাহিনী থেকে সদ্য নামানো বরফ
পাখনা মেলা পথের ঘুরঘুরাওঁ চোটি
পাহাড়ের একলা চটি
থাকলে থাকো পরলে পরো আর ঘুমিয়ো কিন্তু[ মধুভুলনা ]
বিষয়হীনের বিস্মিত হাতলে ধারাবাহিক জলোচ্ছ্বাস। মনক্রোম বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে অস্তিত্ব। অস্তি নাস্তি কথা ও কাহিনীকে আলবিদা জানালে ক্রোমভাঙা রহস্য হরিণ হরিণ ডেকে ডেকে তরঙ্গ তোলে। কণারা ছড়িয়ে যায় বিবাদি ঠিকানায়। পরিচিত আরোহণের কুহকে কবি ভোলে না। ভারমুক্ত আঙুলে তাই ব্যর্থভরের নাভি; ফুটে ওঠে ব্রহ্মকমল। কমলের আশেপাশে এক পশলা যুবকের গুঞ্জনধ্বনি। বয়ঃসন্ধির সহজপাঠ্য সাইকেলরা বীজতলা বুনে দিলে দিনগুলো সব ফুটফুটে। দিনের গায়ে ফিনিক ফোটে। ঝলকে ওঠে অরূপদেশের ফিনিক্স পাখি। আর সেই ঝলকে কোথাওপুরের দরজা হাটখোলা। পুরবাসীর স্নেহপ্রবণ চোখে যেসব পায়ের চিহ্ন ফোটে তাদের কলবিকল খেলাগুলোয় আলোর দাগ। হাশব্দের সীমানা ভেঙে হো হো। আলোর ভেতর তরুণ তরঙ্গরা মৃত শব্দপাখির ডানা থেকে পালক খসিয়ে নিজেকে সাজায় অচেনা পর্যটকের বিস্ময়ী ডাকঘরে। ডাকের ভেতর ঘরলঙ্ঘন শব্দরহস্য খুঁজে নিচ্ছে নিজস্ব রুটম্যাপ –
ক্রিয়া ক্রিয়া
এক পশলা যুবকেরা
এই অপরীত ঝলকে
. দরজা না কেঁদে খোলে না
কল বিকল খেলতে খেলতে
হৃদয়ের কাছাকাছি কোথাওপুরে তোমরা এলে
আমার সাথে খুঁজলে বেলুনে বেলুনে
তরঙ্গ চাপ
. ভাঙার শব্দসীমা[ আশ্চর্য মলম ]
নিটোল শব্দেরা রঙিন ঢাকনা খুলে বেআব্রু করতে থাকে নিজেকে। সেরিব্রামের ভাঁজে রাখা নিয়তিচিহ্ন পটপরিবর্তনের ইঙ্গিতে মুছতে থাকে থরে থরে সাজানো প্রতীকের বাহার। শুধু ভালোবাসা রয়ে যায় প্রতীকহীন। আমি বর্ণগ্রাফের বিস্ময়বোধক চিহ্নহাতে দাঁড়িয়ে থাকি। আর দেখতে থাকি কীভাবে মানুষও আজকাল প্রসব করছে প্রজাপতির বাচ্চা। বিয়োগের যোনি থেকে উঠে আসা ঊরুবাসনা সন্ন্যাস সন্ন্যাস করে উড়ছে আর রঙ চাইছে প্রজাপতি। রঙের ভেতর খণ্ড খণ্ড চোখ, টলটলে চন্দ্রবিন্দু নিয়ে দিগন্ত ছিঁড়ে ছিঁড়ে ভাগ্যখেলার রিহার্সাল দিচ্ছে। মেলানকলির মধু আর ফেরানকলির স্ফটিকে ঠিকরে ওঠে নবজাতকের স্বর। থই খেই শব্দকিনারে উথাল দেয় সোমত্ত নদী। ঠিক তার পিছনে –
অবিকল এক রিয়ার প্রজাপতি
তাই না রোদ্দুর ঢলে নিঃশব্দে
. বাতিল হয় নোটেশন
রাতদুপুরে টর্চলাইটে ধরা পড়ে ফড়িংগাছ[ প্রজাপতি ]
ট্রেকিং শব্দটাই উসকে দেয়। পাহাড় নিয়ে প্যাশান। আমার ঘুলঘুলিহীন বিরামপাহাড়ে ঠোঁট ঘষে দেখেছি প্রমিত নৈঃশব্দ্যের পাড়ভাঙা শব্দ; লাফিয়ে গড়িয়ে ঘুরপথে ঘোরাই খোঁজে আর পঞ্চভূতের ছায়াসিম্ফনিতে আমি শব্দ সাজাই –
– মাটিতে নাচঘরের নার্সারি
– বাতাসে দুফর্মার দুন্দুভি
– আলোতে আমাদের শ্যামল শ্যামলীরা
– আগুনের আস্তিনে ঠোঁট মুছে নাচছে মায়ারোদ্দুরে
– জলের বর্ণপরিচয় মাখা হস্তরেখা
শব্দদগ্ধ আঙুলে ট্রেকিং আলাপ, সঞ্চারী ছুঁলেই আবহাওয়া দপ্তরে এলোমেলো কম্পাস
শব্দদগ্ধ আঙুলে ট্রেকিং আলাপ, সঞ্চারী ছুঁলেই আবহাওয়া দপ্তরে এলোমেলো কম্পাস
ঝড়ের পূর্বাভাস। ঝরাপাতার ডাক। ডাকের ভেতর আরো এক ডাক; অর্গলমুক্তির শব্দ শুনছে শব্দেরা। তুমুল বর্ণবিপর্যয়। ভাঙচুর। চিহ্নকের কাছে ফেরার দুর্যোধনী আহ্বান। চিহ্নিত এক করণ প্রকৌশল; বিশৃঙ্খলার পরিমাপে যতটা চিহ্ন। বাস্তবও তখন জায়গা বদল করে নেয় অবাস্তবের সঙ্গে।
হাড়ের রূপ, কংকালের রূপক আর প্রতিমা নিরঞ্জনের কাঠামো নিয়ে বিষয়ান্তরে। অব পূর্বক চেতনার কালো বোরখা সরিয়ে সম্প্রসারিত ভোর নামছে –
আমাদের ট্রেকিং এই শুরু হল রাকস্যাক সেলাই দিয়ে
আংগেল ট্যাংগেল খোঁচা সামলে
. পিলপিল পা গা গারে
গায়ের পাশাপাশি দেয়াল ধারণায়
[ ট্রেকিং শব্দ-৩ ]
পদ্যপায়ে সিকিম; মেবেলায় মেদিনী ছুঁয়েছে কোয়েলের মিস্টি কূ। আমার আয়না হারানো চোখ দৃশ্য খুঁজছে। অথচ পদ্যলেখার কারিয়াক্রমে দৃশ্য নেই। সুতরাং চোরাগোপ্তায় ইন হচ্ছে ফেড হচ্ছে আর পাহাড়ি শিরায় হরিণী নাচের আশানল ছড়িয়ে পড়ছে। সমতলী যাপনের গা থেকে অন্ধকার মুছে মুছে রুণরুণ শব্দে ছিটকে পড়ছে আলোর টুকরোগুলো। আলো এক ঘোরগ্রস্ত রহস্যনিকেতন। ধরো আমার সামনে আলোর ফোয়ারা। আমার পিছনেও দিগন্ত ছোঁয়া আলোর ইশারা। অথচ আমার ভেতর স্থির দাঁড়িয়ে আছে নেগেটিভ মানচিত্র। এমনটা হতেই পারে। যদিনা আমার মাথার ভেতর রোদভর্তি কণাদের চলাচল আলোবিরহী হয়।
আসলে আলোরা কোথাও দৃশ্য রচনা করেনা। আমরা মাথার ভেতর প্রতিফলনের নকশা বুনি। সহস্রলোচন কাহিনী। ঢেউবার্তায় লেপটে থাকে যাপনের বন্ধনী। যখন বন্ধনী ফাটিয়ে অভিধানের ঘেরাটোপ টপকে বাজিহারা মানুষ বাজনদারের সিকিমিদিনি উৎসবে নেচে ওঠে তখনই দেখি উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা; উড়ে যাচ্ছে রাকস্যাক খুলে। পিঠের ওপর রুণরুণ করে ওঠে পালকের আলোয়ান। জাড়লাগা বোধ অবোধের দরজা খুলে খুলে ওম নিচ্ছে। কাঞ্চন তখন জঙ্ঘা মেললো কি মেললো না, রে পাতা রিদমিক বাজলো কি বাজলো না হিসেবের মধ্যে আনি। কারণ জীবন সম্পর্কিত পুরোনো
পোস্টকার্ডগুলো ভুল ডাকটিকিট হেতু বাতিল হয়ে যায়। কবির অবাক ডাকঘরে জমা পড়ে নতুন চিঠি। আবিষ্কারের উল্লাসে মাথার মধ্যে মোরামধ্বনি –
একদিন পাহাড় ঢুকেছে আমার ভেতর
একদিন আমি ঢুকেছি পাহাড়ের পেনসিল পেনে
গোপন ব্যথায় ফুলদানীতে জল ভরেছি
সাদা পাতার আবলুষে চার অক্ষর ফগফাগময় গালাগাল
স্ততইৎ স্ততইৎ করছে।[ সিকিমিদিনি-৬ ]
কবিতা চালিসার জানলায় উড়ে আসে বুনো হাঁস। তাদের ধূসর ডানায় নগ্ন স্নানদৃশ্যের মায়াবেণী। আকাশের কার্নিশে তখন চতুরঙ্গ খেলছে জ্যা খোলা মিতি। আড়াই পায়ে রং লাগলেই হিজমোনিয়াম টঙ্কার। ওংকারের ধ্বনি শুনতে শুনতে আমি আমার কবিতাটা পেয়ে যাই –
পুরোনো হারমোনিয়ামটা বর্ষার জল পেয়ে হঠাৎ হারমোনিক। বুকেপিঠে চারানো কচিপাতাগুলো সরল দোলনে খুলে রাখছে স্যাঁতস্যাঁতে পূর্ববাস…
আদুরে আঙুল রাখছি হারমোনিয়ামে
রিড তো নেই
খুঁড়ে খুঁড়ে পাঁজরের আদল
ঘুণ চড়ছে
নখের ভেতর ফাংগাস
অযোনিসম্ভুত বীজ রেখে যায় হিজমোনিয়ামে
তো এই পর্যন্ত আসতে গিয়ে বস্তুও ধারণে যাচ্ছে
১ এ লিঙ্গ
২ এ অন্তর
৩ এ নের্তৃকারক
বিভঙ্গ দেওয়া বিভক্তি থেকে খুলে রাখি অন্তর্বাস
শস্যদানা খুঁটে খুঁটে নিশ্চিন্ত পাখিটাকে
গড়িয়ে দিই হাতের পাতা থেকেবেলো টেনে টেনে শব্দ উঠছে জোড়পায়ে
শব্দের ভেতরহিং
. টিং
. ছট
আ বোল তা বোল
বোলবোলানো সংকীর্তনমুনিয়ায় কোনো স্বরলিপি দেখিনি কোনোদিন
স্বর আছে
অর্থ আছে অভিধানে
রাগিণীতে ঠিকঠাক বাজলেই
লোক লস্কর
সং
. বর্ধ
. না
শান্তিনিকেতনী ঝুলি থেকে পঞ্চম সংস্করণ উধাওতো একটা ডায়াস বুনছি
প্রত্যেকটা কোণে সাজানো থাকবেনরকঙ্কাল থেকে খুলে রাখা খুলি
খুলির ভেতর তোমার চোখ
ফাঁকা করোটির সঙ্গে চোখের কথা
উপকথন
মাইকের বিনিময়ে খুঁড়ছি প্রাচীন কবর
হাড়ের চোঙার ভেতর যোগাযোগ
কেমন মানুষিক হয়ে উঠছে, না! শরীর শরীর গন্ধ। একটু ডিও নাকি ধুনো, ভাবিনি এখনো। কিছু সূত্র কিছু নিয়ম মানোয়ারি হবার আগেই পা রাখছিল আনসার্টেনটি প্রিন্সিপিলে। জাকির হোসেনের তেহাই মাত্রাবরাবর পড়তেই চলকে উঠল নিশ্চিৎ মুহূর্তটা…
একপাত্র মুহূর্ত দিও
ইতিহাস গড়ে দেবো জলরঙে
জলের ভেতর সারি সারি
শ্যাওলাপ্রলেপ
তুলির সূক্ষ্মতা বিষয়ক প্রশ্ন নিয়ে প্রসাধনী শাখারা
ভরের নিত্যতাসূত্রে হরিণ খোঁজে
আসলে স্মৃতিরাও মুহূর্ত ছেনে
অ
. লী
. ক
নোঙরছেঁড়া যেকটা মুহূর্ত মুক্তো বোনে
জলপ্রপাত এঁকে রাখে ঝিনুকের ভেজা ভেজা গায়ে
তাদেরই নিশ্চিৎ শয়ানে দেখো
লেখা আছে অনিশ্চয়তা সূত্রের নিয়মাবলী
তো সেই সূত্রধরের পো কে চন্দ্রবিন্দুর টিপ দিতেই নেমে এলো চাঁদঢলানো সেতু। এপারে ওপারে ছক্কা ছক্কা করে ঠিক যখন গ্র্যাভিটির নয়ছয় হচ্ছে, আমি উর্ধবাহু সংকীর্তনে…
গৌরচন্দ্রিকায় ঢলছে চাঁদ
চকোরী উদ্গার থেকে গড়ানো নদী
রোদাক্রান্ত রাত শ্যাওলা জড়াচ্ছে জলজ রাগে
জোনাকির মৃতদেহ দেখিনি কোনোদিন
ওই সেতু আর চলমানতায় রাখা জোছনা
যেদিন আত্মাহুতি ডেকে আনেটুপ শব্দে ভেজানো টোপাজগুলো
খুলে রাখি অনামিকা থেকে
খুব সাবধানে ছিঁড়ে যায় যোগাযোগ সেতু
ডুবজলে রাখা দেনমোহরের ভেতর
রসায়ন খুলে কবন্ধ জোনাকিরা
মেতে ওঠে উদ্বাহু নৃত্যে
তো সেই নৃত্যনাট্য হারমোনিকপ্রবণ হয়ে উঠলেই গোপন রক্তস্রোতে আউলে ওঠে মেটামরফোসিস। চেনা আঙুল; নিশ্চিৎ স্বরলিপি; হারমানাহার বিতানবিলাস থেকে বারীন পর্যন্ত এই ঝঞ্ঝাবর্ত। সপ্তস্বর মুছে অনিশ্চিৎ আঙুলে জড়িয়ে নিচ্ছে গান্ধার ও ধৈবত। কুরুক্ষেত্রে সারি সারি চিতার আগুন থেকে জেগে উঠছে মৃত সৈনিকেরা…
রূপান্তর থেকে ঝরানো অন্তরা নিয়ে এই কাল
এই বসবাস
ব্যাঙেদের গর্ভাশ্রয়ের গোপন জীবনচক্র
অজস্র কুন্ডলের ভেতর নাভি বোনে
এই নাব্যতায় যেটুকু যাপন
তারই কলয়ড্ল মিশ্রণে গড়ে তুলি স্বর
স্বরগ্রন্থির চোঁয়ানো সারমনে
এই কবিতাযাপন
সত্যেরা স্বতঃসিদ্ধ হলে দেখো
অনিত্য বাঁধনের আমলানো আবেশে
নেমে যাচ্ছে সমস্ত শ্রুতিহীনতা
যে কবিতা প্রাণীর সংসর্গে আমার এই প্রাণায়াম তার পোষাকী পরিচয়:
বারীন ঘোষাল (৪ঠা ডিসেম্বর ১৯৪৪ – ২৮শে অক্টোবর ২০১৭) কবি, তাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক এবং পেশায় এঞ্জিনিয়ার জামশেদপুরবাসী বারীন ঘোষাল বাংলা সাহিত্যে অতিচেতনা তত্ত্বের পুরোধা। কাব্যিক ভাষার শব্দার্থ ও সংকেত নির্মাণের এই নতুন দিগন্তপ্রসারী ভাবনা ৯০ এর দশকে বাংলা সাহিত্যে এক অসাধারণ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই তত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত ও বহু আলোচিত রচনাসমূহ কৌরব থেকে অতিচেতনার কথা গ্রন্থে প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। তিনি কৌরব পত্রিকার গোড়াপত্তনকারী এবং কৌরব গ্রুপের একজন সহ-সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে মূলধারার বিপরীতে প্রতিষ্ঠানবিরোধী ও পরীক্ষামূলক এক নতুন সাহিত্যধারার সূচনা করেন। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: মায়াবী শিমুম (কৌরব, ১৯৮৫), হাশিস তরণী (কৌরব, ১৯৯২), গিনিপিগ, একটি তথ্যচিত্র (কৌরব, ১৯৯৫), লু (কৌরব, ২০০২), এঃ লুলু (কৌরব, ২০০৬), আলখাল্লার জেব (নতুন কবিতা, ২০০৮), কবিতা চালিশা (কৌরব, ২০০৯), বোরখাল্যান্ড থেকে (নতুন কবিতা, ২০১১), মাউসনামা (কৌরব, ২০১৪), পুব আর ফুরোয় না (কৌরব, ২০১৫), প্রণয়ধ্বনির সফট্ওয়ার (এখন বাংলা কবিতার কাগজ, ২০১৬) ইত্যাদি। উপন্যাস: মাটাম (কৌরব, ১৯৮৯), এক ভারতীয় শীত (কৌরব, ১৯৯৬), উদোম ডাঙা (কৌরব, ১৯৯৬)। তাঁর বহু আলোচিত গল্পগ্রন্থ: জিন্দাবাদ খালকো (কৌরব, ২০০৩), ব্যক্তিগত গদ্য (ভাষাবিন্যাস, ২০০৪)। প্রাবন্ধিক বারীনের কবিতা বিষয়ক গ্রন্থ: আমার সময়ের কবিতা-১ ও ২ (কৌরব, ১৯৯৬, নতুন কবিতা, ১০১৬), কবিতার ভবিষ্যৎ (কবিতা ক্যাম্পাস, ২০০৩), কবিতার উত্তরাধিকার ও খোঁজ (স্রোত প্রকাশনা, ২০১৬)। আত্মজীবনী: হারাতে হারাতে একা (অ্যাশট্রে, ২০১৬)। সংকলন সম্পাদনা: হার্ডকোর কৌরব-১ ও ২ (কৌরব, ২০০০, ২০১৩)। আর যেকথাটা না বললে তাঁর পরিচিতি অসম্পূর্ণ থেকে যায় তা হলো এই বয়সে প্রবীণ মানসে তরুণ বারীন বাংলা কাব্য জগতের ঘুরিয়ে পরা পায়ে চলা তরুণ কবির অন্তরঙ্গ বন্ধু।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..