চার্বাক

মৈ মৈত্রেয়ী
গল্প
চার্বাক

জলচৌকির ওপরে রাখা একটি রুলটানা খাতায় ছোট মেয়েটি লিখে চলেছে…”বর্ষা নেমেছে। গর্মি আর নেই। থেকে থেকে মেঘের গর্জন আর বিদ্যুতের চমকানি চলছে।“ আচ্ছা ‘চমকানি’র ম-র নিচে হসন্ত কেন দিয়েছে? মাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে ভাবল, থাক পরেই করে নেবে, মা এখন রান্না করছেন। সন্ধে হয়ে গেছে, বাবা এখনও ফেরেন নি। অনেক সকালে বেরিয়েছেন। রান্না ঘর থেকে মশলার গন্ধ ভেসে আসছে। বেশ জোরালো গন্ধ।

দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেয়েই, বিছানা থেকে নেমে একছুটে দরজার কাছে গিয়ে বলল – কে?

– বাবা… দরজা খোল।

দরজা খোলার আগেই, হাত মুছতে মুছতে মা চলে এলেন রান্না ঘর থেকে। বহু চেষ্টা করেও এখনও সে ছিটকিনিতে হাত পায় না। দরজা খুলতেই, মেয়েটি দেখলো তার বাবার সাথে আরেকজন মানুষ। এইরকম চেহারার মানুষ, আগে দেখে নি সে।

দুই.

– পছন্দ হয় নি তো?

– না। তোকে বলেছিলাম না, যে এই সব বই আমাকে দিবি না। প্রেমের গল্প সব একরকম। একঘেয়ে, বোরিং।

– সে কী রে! এটাই তো বাস্তব। তোর কি মনে হয় যে কেউ কারুর জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে পারে?

– এখানেই আমার প্রশ্ন। দ্যাখ ভাই, ঐ সব ভালবাসা-টাসা আমার এখনও হয় নি। কিন্তু যদি হয়, ঐ একজনই প্রথম আর একজনই শেষ। জামাকাপড় পাল্টানোর মত প্রেমিক পাল্টাতে পারবো না। আমার দ্বারা হবে না।

– তার মানে!!! তোর সাথে যার সম্পর্ক হবে, সে যদি দু-দিন বাদে তোকে বলে যে আমার জন্য অপেক্ষা করিস না, তাহলেও তুই তাকে মনে রাখবি?

– আমি আবার বলছি প্রেম জিনিসটা আমার বোধগম্যের বাইরে। কিন্তু হ্যাঁ, যদি বুঝি যে সম্পর্কটা নিখাদ তাহলে সেই মানুষটার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করতে রাজি আছি। আর তাছাড়া আমার যদি চাপ না থাকে, তোর কীসে আপত্তি বল তো?

– বাদ দে, তুই একটা পাগলি। এই নে তোর বাবলি। এই বইটা নিশ্চই তোর পছন্দ হয়েছে?

তিন.

– এই দ্যাখো কাকে ধরে নিয়ে এলাম। কিছুতেই আসতে চাইছিল না। ও নাকি স্টেশানেই একরাত কাটিয়ে দিয়ে পারবে।

তারপর ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললেন – এই হচ্ছে তোমার বৌদি, আর এই আমার মেয়ে। সামনের বছর ক্লাস থ্রি হবে। আর এই হচ্ছে চার্বাক।

মা বললেন – বোসো, আমি চা-জলখাবার বানিয়ে আনছি। সারাদিন তো পেটে কিছু পড়ে নি।

চার্বাক বলল – ও বৌদি, এত ব্যস্ততার কিছু নেই। তুমি ধীরে ধীরে করো। আমি ততক্ষণ ওর সাথে আলাপ জমাই।

মা হাসিমুখে রান্নাঘরে চলে গেলেন আর বাবা হাত মুখ ধুতে বাথরুমে ঢুকলেন। মেয়েটিকে নিয়ে এসে, চার্বাক বসলেন জলচৌকির সামনে। দুজনে মুখোমুখি।

– আমার নাম তো শুনলি, তো এবার তোর নাম বল।

– আমার ডাক নাম ভ্রমর, কাকা।

আলতো স্বরে ধমক দিলো চার্বাক – কাকা কী রে! আমি তো তোর বন্ধু। বন্ধুদের শুধু নাম ধরে ডাকতে হয়! পরের শব্দটার কোনও গুরুত্ব নেই।

মেয়েটি গোল গোল চোখে তাকিয়ে বলল – তুমি তো মাকে বৌদি বললে! তার মানে তো তুমি আমার কাকা-ই হবে। বড়দের কি নাম ধরে ডাকতে আছে নাকি? বাবামা শুনলে বকবেন তো।

– সম্পর্ক তো তোর আর আমার মধ্যে রে। তার আগে বল যে তুই কি আমার বন্ধু হবি? তার পরেরটা আমি বুঝে নেব।

চার.

– বাবলিটা নিশ্চই ভালো লেগেছে তোর?

– নাহ।

– মাইরি, তুই কি অসন্তুষ্টির রাশিতে জন্মেছিস নাকি রে? এই গল্পটা ভাল না লাগার কারণ?

– যদি কাউকে ভালবাসি তো তার জন্য নিজেকে বদলাতে হবে কেন? নিজের জন্য নিজেকে বদলানো যেতেই পারে কিন্তু অন্য কারুর কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করার জন্য নিজেকে যদি বদলাতে হয়, রোগা হতে হয় বা মুখে ময়দা ডলতে হয় তাহলে ঐ ধরণের সম্পর্ক না হওয়াটাই ভাল।

– সেটা তোর মনে হচ্ছে। ভালবাসার মানুষের জন্য নিজেকে বদলানোই যায়, তাতে খারাপের কিছু নেই। আমার মনে হয়, তুই নিজে মোটা এবং শ্যামলা বলেই নিজের স্বপক্ষে যুক্তি সাজাচ্ছিস।

হা হা করে হেসে মেয়েটি বলল- হয়তো তাই। আজ অবধি কোনও লেখককে দেখেছিস যে মোটা মেয়েদের নিয়ে প্রেমের গল্প লিখেছে। কালো মেয়েদের নিয়ে যদিওবা লিখেছেন, তার সাথে জুড়ে দিয়েছেন অপূর্ব সব বিশেষণ। কোমর, বুক, পেট আর তার সাথে পটল চেরা চোখ। মাইরি বলছি এই সব দেখে অক্সিটোসিনও ভাববে যে নিজেকে পাল্টে ফেলি।

– তোর জীবনে তাহলে আর প্রেম এলো না।

জোরে হেসে উঠলো ভ্রমর, বলল- প্রেম আসার দরকার নেই কিন্তু ভাল বন্ধুর অভাব হবে না। এই যেমন তুই।

পাঁচ.

প্রিয় চার্বাক,
আশা করি ভাল আছো। ১৫ বছর পরেও তোমায় ভুলতে পারি নি। তাই আজও তোমায় চিঠি লিখি। নাহ, খাতার পাতায় নয়। প্রথম যেদিন পেন্সিল ছেড়ে পেন ধরি, বাবা হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন চঞ্চূর মতো ছোট নিব যুক্ত একটা চাইনিজ পেন। খুব ভালবাসতাম সেই পেনটাকে। কালো, চকচকে মসৃণ ছিল তার বরণ। কায়দা করে জামার সাথে ঝুলিয়ে দিতাম। বুকের কাছাকাছি থাকত, আমার সঙ্গী হিসেবে। একদিন কালি বেরোতে শুরু করলো। নীল হলেও আমার কাছে রক্তের মতো লাগতো। অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে পড়েছিল রোগটা। রক্ত থামার পরে, চঞ্চূর মতো ঠোঁটটাও বেঁকে গেল একসময়। তারপর সব শেষ। পেনটাকে সমাধি দিয়েছিলাম একটা পুরনো পেন্সিলবাক্সে।

র পরের পেনগুলোকে যত্ন করি নি ঠিকই কিন্তু অবহেলাও করি নি। দিব্যি টিকে গেছে দিনের পর দিন। অনেক দিন বাদে আরেকটা জিনিস দেখে ভাল লেগে গেল। শ্রীলেদার্স থেকে একটি সুন্দর চটি আর আরেকটা পামশু কিনে দিয়েছিলেন বাবা, পুজোর সময়। পামশুটার থেকে চটিটা বেশি পছন্দের ছিল। চটিটার দুপাশটা গার্ড ওয়ালের মত। যেখানে রাজপথে চলতে গিয়েও আমার পা মচকে যায়, সেখানে ক্ষত বিক্ষত রাস্তায় কত চটি যে আমার শহীদ হয়েছে তার হিসাব রাখি নি। কিন্তু এই চটি জোড়া অন্যরকম। মচকালেও ছিঁড়বে না। ওগুলো বহুদিন তুলে রেখেছিলাম। বাক্সের মধ্যে থাকলেও, সেই বাক্সর ওপরে কিছু রাখতে দিতাম না। একদিন বার করলাম। শীতকালের ঝকঝকে সকালে বেড়াতে গেলাম গড়ের মাঠে। বৃষ্টি নামলো জোরে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝায় ভেসে গেল কলকাতা। কোনরকমে বাসে উঠে যতক্ষণে উল্টোডাঙ্গায় নামলাম, রাস্তায় জল জমে গেছে। বাড়িতে ঠিকঠাক পৌঁছলেও, আমার সাধের চটিজোড়ার মৃত্যু হয়েছে। আঠা খুলে গিয়ে, রং চটে সেগুলো তখন বিবর্ণ।

প্রথমে পেন তারপর চটি। সবাই হয়ত হাসবে। বলবে, আর কিছু পেলি না? পেনটা নাহয় মানা যায় কিন্তু তাই বলে চটি! কিন্তু তুমি হাসবে না আমি জানি। কারণ তুমি শিখিয়েছিলে যে কোনও কিছুতেই কিছু আটকায় না। তাই খাতার পাতায় আমি চিঠি লিখি না। কারণ তাদের আয়ু আমার সাথেই শেষ হবে। তারপর তাদের জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বা ফেলে দেওয়া হবে বাতিলের জঙ্গলে অথবা ঘুণ ধরে ধীরে ধীরে ধূলো হয়ে যাবে তাদের অস্তিত্ব। আর আমার কাছে থাকলে অত্যধিক যত্নেই হয়তো আরও তাড়াতাড়ি মৃত্যু ঘটবে আমার চিঠির স্পন্দনের।

ছয়.

প্রিয় ভ্রমর,

ক্যান্টিনে বসে তোদের কথা শুনছিলাম। ভাল করে গুছিয়ে কথা বলতে পারি না, তাই লিখতে বাধ্য হলাম। কিন্তু এই চিঠি, তোর কাছে পৌছবে না। আমিই দেব না কোনওদিন।

ভ্রমর, আমার চিলে কোঠার ঘরের শার্সি ভাঙ্গা। তোকে আর কিছু দিতে নাই পারি, জানলা চুঁইয়ে পড়া আলোর মাখন তোকে দিতে পারব। দার্জিলিঙের ম্যালে দাঁড়ালে দেখা যায়, যে আশেপাশের পাহাড়গুলো সন্ধে হলেই কেমন যেন জেগে ওঠে। ঢাল বেয়ে নেমে আসে জোনাকির মত আলো। অমাবস্যার রাতও অনেকটা সেই রকম। তারাগুলো যেন জানালায় এসে উঁকি মারে। বহুদিন ধরে একটা রংচটা গামলা পড়ে ছিল ছাদের কোনে। তাতে জল ভরে রেখেছি, যদি কোনও তারার ছায়া পড়ে… কিন্তু পড়ে না জানিস? এত দূরের জিনিসের ছায়াও ছোঁয়া যায় না। ঠিক তোর মত। তোকে দেখা যায়, তোকে নিয়ে কল্পনা করা যায়, কিন্তু কাছে আসা যায় কি? তোর ব্যক্তিত্বের কাছে আমার পরাজয় হবে না তো? আমি হারতে রাজি আছি ভ্রমর, হারাতে পারবো না তোকে।

সাত.

প্রিয় চার্বাক,
অনেক কিছু হারিয়ে আমার একটাই উপলব্ধি হয়েছিল যে ভালবাসা কে চেপে ধরে রাখা যায় না, তাহলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। তুমি আমার জীবনের প্রথম বন্ধু অথচ বাবার থেকে হয়তো বেশ কয়েক বছর ছোটই ছিলে। আমাকে শান্তিনিকেতন নিয়ে যেতে চেয়েছিলে, বলেছিলে ঐখানে আমাকে ভর্তি করিয়ে দেবে, তুমি আমার যত্ন নেবে। কিন্তু বাবা-মা ছাড়েননি। স্বাভাবিক, এক সন্তানকে হারিয়ে তার পরের সন্তানকে ছেড়ে থাকতে কোনও বাবামা-ই চাইবেন না । যদিও আমি এত সব জানতাম না, পরে শুনেছি। চার্বাক তুমি তোমার পদবি ত্যাগ করেছিলে, কেন করেছিলে সেটা আজও জানি না। জানার সুযোগ বা চেষ্টা কোনওটাই করি নি। তোমার এক চোখে ছিল ঝড়, আরেক চোখে শীতলপাটির ঠান্ডা পরিভাষা। হয়তো তোমার ঠোঁটের প্রয়োজন পড়ে নি কোনওদিন। তোমার বুক ছোঁয়া দাড়ি নিয়ে আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে শুনেছিলাম পরিযায়ী পাখীর গল্প। চার্বাক, তুমি আসলে কে ছিলে? আমার মনকে এত খানি প্রভাবিত করে চলে গেলে কেন? অনেক বছর পরে বাবার কাছে তোমার কথা জানতে চেয়েছিলাম। বাবা বললেন…মিলিয়ে গেছে…

আট.

প্রিয় ভ্রমর,
তুই বলেছিস, ভেবে বলবি। আমি অপেক্ষা করবো তোর প্রত্যুত্তরের। তিন বছর ধরে যে কথাটা বলতে চেয়েছিলাম সেটা যে এত আকস্মিক ভাবে সেদিন বলে ফেলবো, সেটা আগে থেকে বুঝতে পারি নি। আমি খুব সাধারণ, ভ্রমর। কিন্তু নিজেকে তুই এখনও চিনতে পারিস নি। তোর ঐ কালো টিপের আড়ালে, লুকিয়ে আছে তোর গভীরতা। সেই গভীরতা ছুঁতে পেরেছি কি না জানি না কিন্তু কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছি। আমি হারাতে চাই না তোকে। আগের মতই তোর পাশে বসে চা খেতে চাই, তোর সাথে গেয়ে উঠতে চাই

“কী আছে আর
গভীর রাতের নিয়ন আলোয়
আলোকিত যত রেস্টুরেন্ট
আর সব থেকে উঁচু ফ্ল্যাটবাড়িটার
সব থেকে উঁচু চাঁদ
তোমায় দিলাম আজ”

সেদিনের কথা ভুলে যা ভ্রমর। শুধু বল – বন্ধু হবি?

নয়.

প্রিয় চার্বাক,

আজকের চিঠিটা একটু বেশি বড় হচ্ছে জানি। কিন্তু অনেক কথা তোমাকে বলার আছে, অনেক কথাই হয়তো বারংবার তোমায় বলেছি। কিন্তু লেখা নেই তো তাই হয়তো মনেও নেই। এতদিন বাদে তোমাকে আরেকবার দেখতে ইচ্ছে করছে চার্বাক। কারণ আজকে আমাকে একজন তোমার মত করে বলেছে “তুই কি আমার বন্ধু হবি? আবার?” তাকে কী উত্তর দেব চার্বাক? ভালবাসার প্রত্যুত্তরে ভালবাসা না পেয়ে কেউ বন্ধু হতে চায়? তাহলে কি সব বই ভুল? সব লেখকেরা ভুল? হ্যাংলার মতো একবারও তো বলল না যে কেন আমাকে ভালবাসবি না? মোটা, কালো মেয়েদেরও তাহলে কেউ ভালবাসে? প্রত্যাখ্যাত হয়ে বন্ধুত্ব করতে চায়? এ যে নিয়ম না মানার শিক্ষায় শিক্ষিত চার্বাক। পুরো তোমার মত। শান্তশিষ্ট অবয়বে তুফানের আগমনী বার্তা বহন করে তার দুই চোখ। একবার হেরেছি, আবারও? পদক্ষেপের শেষ সীমানায় এসে যদি, তোমার মত হারিয়ে যায়! উত্তর দাও চার্বাক…উত্তর দাও।

প্রিয় চার্বাক,
তুমি ভুল ছিলে না। তাই আমিও সেই ভুল করি নি। তোমার সাথে, কল্পনায় ২৯ বছর কেটে গেছে। জেনে গেছি যে প্রেম ভালাবাসা এই সব শব্দগুলোর কোনও মানে নেই। আছে শুধু বিভিন্ন রঙের মিশেলে জলজ্যান্ত আলপনা। বিয়ে করেছি তাকেই। কিন্তু এত বছর পরেও, আজও ঝগড়া হলে একই কথা শুনতে পাই – ‘তুই কি আমার বন্ধু হবি? আবার?’

মৈ মৈত্রেয়ী। জন্ম কলকাতায়। পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। গদ্য ও কবিতা লেখার প্রতি দীর্ঘদিনের ঝোঁক। ছোটদের জন্য বাংলা গল্প প্রতিযোগিতায় 'অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস' থেকে সম্মানপ্রাপ্ত।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..