প্রেম ও দ্রোহের চিঠি
উলোট পূরাণ প্রেমঝিরি,, ‘তোমার আমার গল্পগুলো পথ হারাবে বসন্তের ধূলোয়….’ কত বছর আগে তুমি আমাকে…..
রবি,
তোমাকে পত্র দিবো বলিয়া বহুবার মন স্থির করিয়াছি। অথচ সংসারের নানাবিধ কাজে অকাজে সে ইচ্ছে কর্মে রূপান্তরিত হইয়া উঠিতে পারে নাই। বন্ধুত্বের মধ্যে যে ক্ষমার অবসর রহিয়াছে আমার অবচেতন মন সেই সুযোগটাই গ্রহণ করিয়া আসিতেছিল এতদিন। তবে একটা কথা কি জানো? তোমার সহিত মনে মনে এত কথা আমি বলিয়াছি এতদিন যে, কখনো আলাদা করিয়া কিছু লেখার অভিপ্রায় আমি বোধ করি নাই। এর অর্থ হচ্ছে, তোমার সহিত আমার মনের ভিতরকার যে সুর তাহা ঠিক তারেই বাঁধাছিল। আজ হঠাৎ করিয়া কী হইতে যে কী হইলো ঠিক বুঝিয়া উঠতে পারলুম না।
আজ সারাদিন আপিসে খুব কাজের চাপ ছিলো। যেহেতু আমি মাল্টিটাস্কে বিশ্বাস করি। অর্থাৎ, পাঁচমিশালি কাজ করি, তাই কাজের পরিমাণ বাড়িয়া ওঠে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো তাহা আমার টেবিলের সৈকতে ক্রমান্বয়েই আছড়িয়া পড়িতে থাকে। সকাল হইতে প্রচণ্ড শির পীড়ায় আক্রান্ত ছিলুম। অথচ, আপিসে সেটা এতটুকু প্রকাশ করিবার মতো জো নাই। এক হাতে মোবাইল ফোন, অন্য হাতে কলম লইয়া, কম্পিউটারের পর্দার এক্সেল শীটের নানাবিধ জটিল হিসাবে মনোযোগ ধরিয়া রাখিয়া, পাশের লোকের কথা শুনিয়া, তিন চারজন লোককে দাড়া করিয়া রাখিয়াও আজ সব কাজ শেষ করিয়া উঠিতে পারি নাই। আপিস শেষে দুই তিন ঘণ্টার জ্যাম সহ্য করিয়া একটু সকাল সকালই বাড়ি ফিরিয়াছিলুম। তাও নেহাত রাত আটটা বাজিয়া গিয়াছে।
বাড়ি ফিরিয়া স্নান, তারপর একটু আহার শেষে, সবে নতুন কেনা গীটারটা হাতে তুলিয়া লইয়াছি। তখনো মাথার ভিতরটা দপদপ করিতেছিলো। ভালো কথা, বাড়িতে আজ ইলিশের ঝোল বড় খাসা হইয়াছিলো। অমন ঝোল তোমাকে খাওয়াইতে ইচ্ছে করি। আমি জানি তোমার বাংলার পদ্মার ইলিশ বড় পছন্দের। আমিও আজ এক মুঠো ভাত পাতে বেশি লইয়াছি। সে যাহা হোক, আমি গীটার অনুশীলন করিতেছিলাম মাথা ব্যথা লইয়াই। ঠিক ঐ মুহূর্তে আমার দখিনা জানালায় প্রচণ্ড বেগে বৈশাখের ঝড়ের হাওয়া আসিয়া
যুদ্ধসেনার মতো ঝাপাইয়া পড়িলো। সেই সাথে কামান দাগার মতোই বিকট শব্দে বজ্রপাত। জানালার পাশেই কমলা রঙের শিখা দেখলুম। তারপর ভুবন কাঁপানো শব্দ। এরপর নামলো বৃষ্টি। অমন বৃষ্টি তুমি আর আমি একবার দেখেছিলুম। মনে পড়ে? ময়মনসিংহের শশিলজে। ঐ রাতে সে কী তুমুল বর্ষণ! তুমি একটি গান রচনা করেছিলে সেই রাতে। তোমার কি সেই গানটির কথা স্মরণ আছে?
মজার বিষয় কী জানো? সারাদিন বিচ্ছিরি দিনের শেষে এই যে ঝোড়ো হাওয়া, এই যে তুমুল বর্ষণ নামলো, এর সাথে সাথে আমার মাথা ব্যথাটাও ছাড়িয়া গেলো। হালকা লাগতে লাগিলো। আমার শোবার ঘরের ঘড়িটার সেকেন্ডের কাটাটা টিকটিক করে ঘুরছে। জানালায় প্রচণ্ড বৃষ্টির ছাট আসিয়া প্রথম সারির যুদ্ধসেনার বিক্ষিপ্ত ভাবে ঢাল তলোয়ারের সঞ্চালনের টুংটাং শব্দ সৃষ্টি করিতে লাগিলো।
ফ্রিজ হইতে খলসা ফুলের মধুর বৈয়ম বাহির করিয়াছি। তর্জনীতে মাখিয়ে বেশ রসিয়ে রসিয়ে খাচ্ছি। আমার মন প্রফুল্ল থাকিলে মাঝে মধ্যে আমাকে মধু চাখিতে দেখা যায়। এই মধু বহু যন্ত্রণা করিয়া আমার আপিস পিয়ন মারফত সুন্দরবন হইতে সংগ্রহ করিয়াছি। বন্ধু, এই মধুর কথা আমি তোমার কাছেইতো প্রথম শুনিয়াছিলুম।
মধু চাখিতে চাখিতে ইউটিউবে তোমার একটি গান শুনিতেছিলেম।
” আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার
পরান সখা বন্ধু হে আমার”…
গীটারটি হাতে লইয়া স্ট্রামিং করিতেছি। তোমার গান বাজিতেছে। বাহিরে সত্যই আজ ঝড়ের রাত। তোমার চেয়ে পরান সখা আমার আজো তো কেহ জুটিল না। তাই বোধ করি আজ অনেক বাহুল্য বকিয়া নিলুম। তোমার খবর নিত্য রাখা আমার বহু বছরের অভ্যাস। তাই আর তোমার কুশলাদি জিজ্ঞাসা করিলেম না। তোমার প্রতি আমার অনুভব প্রকাশ করিবার জন্যে তোমার প্রিয় উপনিষদের একটি শ্লোক বলিয়া এই পত্র সমাপ্ত করিলাম।
যেন রূপং রসং গন্ধং শব্দান্ স্পর্শাংচ মৈথুনান
এতে নৈব বিজানাতি কিমত্র পরিশিষ্যতে। এতদ্বৈ তৎ।।
অর্থঃ
‘তুমি যেখানেই থাকো, শুধু মনে রাখিয়ো- আমি তোমাকে এই ভাবেই আমার অস্তিত্বে ধারণ করি।’
তোমার বাল্যবন্ধু
– অনি।
১১ বৈশাখ, ১৪২৪ বঙ্গাব্দ।
রাত্রি ১১ঃ৩৬
ঢাকা।
(চিত্রাংকনঃ লেখক)
উলোট পূরাণ প্রেমঝিরি,, ‘তোমার আমার গল্পগুলো পথ হারাবে বসন্তের ধূলোয়….’ কত বছর আগে তুমি আমাকে…..
নতুন কোনো ভাবছি যখন পা বাড়াবো নতুন কোনো সড়কে, সামনে এক নারী এসে…..
মানুষটাকে ভালোলাগার অনেক অনেক কারণ রয়েছে। তার গুণের কথা বলে শেষই করা যায় না। কিন্তু…..
একসময়ে দূরের মানুষের সঙ্গে আনন্দ, দুঃখ ভাগ করার পদ্ধতিটা আজ বয়সের ভারে ঝুকে পড়েছে। বিয়ের…..