ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
ছোটবেলায় ভোটের আগে বেশ মজা হতো। ভোটের একমাস আগে থেকে পুরোনো দেয়ালগুলো দখল হওয়া শুরু হতো।
প্রথমে এলাকার দলীয় কর্মীরা নিজেরাই এলাকা ঘুরতো আর দেওয়ালের কোণের দিকে ছোট্ট করে নীল বা কালো কালি দিয়ে দলের নাম লিখে জানিয়ে রাখতো যে সেই দেয়ালে তাদের দলের প্রতিকচিহ্ন আঁকা হবে।
খুশি হতো পুরোনো দেয়ালগুলোও। কিপটে মালিকের সান্নিধ্যে থাকায় তার তো মেরামত, রঙ কিছুই হতো না, তাও যা ভোটের সময়ে একটু আধটু চুনকামের পরিচর্যা বিনামূল্যে হয়ে যেত। নইলে তো সারাবছর নোনা আর গুপ্তরোগ, নালীঘা, নেশামুক্তির কেন্দ্রের পোস্টারে তার অবস্থা থাকতো একেবারে জরাজীর্ণ।
যাই হোক, ধীরে ধীরে চুনকাম তো হল, এবার আঁকিবুকি হবে। বড়রা ভাবতো এমন একটা স্লোগান ভাবতে হবে যা সাধারণ মানুষের মনে গিয়ে লাগে। আর আমাদের ছোটদের মনে তখন অন্য ভাবনা। আমরা ভাবতাম কোন কোন নতুন চিহ্ন এবার দেখতে পাবো? কোন কোন নতুন দল দেখতে পাবো? এমনকী প্রার্থীদের নাম নিয়েও আমাদের মনে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে। বড়দের রাজনীতি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাতাম না।
বিকেলে কোনো বন্ধুর বাড়িতে খেলতে গেলে লুকিয়ে নিয়ে আসা হতো খবরের কাগজ। লুকানোর একটাই কারণ, পাড়ার চায়ের আসরের বিশিষ্ট রাজনীতিজ্ঞ আমার সেই বন্ধুর বাবার কাছে খবরের কাগজ ছিল তখন যখের ধন।
যাই হোক, লুকিয়ে কাগজ তো আনা হলো, এবার কী হবে?
তখন হতো কি, ভোটের মোটামুটি দু’সপ্তাহ আগে খবরের কাগজে সমস্ত কেন্দ্রের মূল মূল প্রার্থীর প্রার্থীতালিকা প্রকাশ পেতো। ব্যস ওইটুকুই। আজকালকার মতো প্রাথীদের energy diet এর তালিকার তখন অত চাহিদা ছিল না পাঠকদের মধ্যে। তা যা বলছিলাম, ছাপানো তালিকার নীচে পেন্সিল দিয়ে আমরা ছোট একটা ঘর একতাম। বাঁকা বাঁকা অক্ষরে তাতে লেখা হতো বন্ধুদের নাম। ছোটদের পার্টির প্রতিকচিহ্ন হয়ে দাঁড়াতো গাড়ি, লাট্টু, আনারস এইসব। শুরু হতো আমাদের নির্বাচনী প্রচার। বলা বাহুল্য, বন্ধুর বাবা আসার আগে কাগজে করা সেই কেরামতি রবার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করা হতো, অন্যথায় কিল ছিল অবধারিত।
ভোটের একসপ্তাহ আগে থেকে শুরু হতো মাইকিং, লোহার লাইটপোস্টগুলোর মাথায় বাধা হতো বিভিন্ন দলের রং বেরঙের পতাকা। তখন বাজারে নীল সাদা অটো ছিল। LPG লেখা সবুজ হলুদ অটো তখন আসেনি বাজারে। সেই নীল সাদা অটোতে করেই গ্রীষ্মের অলস দুপুরে ঘুম ভাঙিয়ে যেত অটোর মধ্যে থাকা মাইককাকু। স্লোগান থাকতো, ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল তারপর ড্যাস ড্যাস ড্যাস ড্যাস ড্যাস…’।
কয়েকজন তো ‘অমুক পার্টি জিন্দাবাদ’ এমনভাবে বলতো যে ‘জিন্দাবাদ’কে ‘চিনাভোট’ শুনতাম। আর আমরাও আমাদের ছোটদের লোকসভা, বিধানসভা বা পৌরসভায় ‘জিন্দাবাদ’কে ‘চিনাভোট’ বলে চালাতাম। তবে প্রশ্ন জাগতো, ভোট তো ভারতের, তবে তা ‘চীনাভোট’ কেন?
অবশেষে আসতো সেই দিন। মানে ভোটের দিন। হাঁফপ্যান্ট আর হাতাকাটা জামা পরে মা-বাবার সাথে যেতাম ভোট দিতে। তখনো EVM আসেনি। ব্যালটেই ভোট হতো। আমাদের আর ওসবে কাজ কী! তখন কি আর বুঝতাম EVM কী জিনিস? খায় না মাথায় দেয়? আমরা তো যেতাম দেয়ালে দেয়ালে আঁকা চিহ্নগুলো বাদে আর কোন কোন চিহ্ন আছে? বলাবাহুল্য আমাদের নিরাশ হতে হতো না। গয়না, ঢোল, কুঠার, আম এরকম প্রচুর নির্বাচনী প্রতীকের সঙ্গে আমাদের পরিচয় হতো। আসার সময় আঙুলে ছোট্ট করে একটা কালি আর আমরা তাতেই খুশি। ফিরে আসার সময় বুথের বাইরে বিভিন্ন দলের ক্যাম্প থেকে সৌভাগ্যবশতঃ দু’একটা একলেয়ার্সও জুটে যেত।
তারপর ধীরে ধীরে আরো কত ভোট চলে গেছে। পুরোনো দেয়ালগুলোতে আবার এসে জায়গা নিয়েছে গুপ্তরোগ, নালীঘা, নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিজ্ঞাপন। কত দেওয়াল তো এতদিনে ভেঙেও গেছে। আর সাথে ভেঙে টুকরো হয়ে গেছে আমাদের শৈশবও।
একটু বড় হলে একদিন মা সংশোধন করে দিয়েছিল। বলেছিল, ওটা ‘চিনাভোট’ নয়, ওটা ‘জিন্দাবাদ’। তাড়াতাড়ি বলার কারণে শুনতে ওরোম লাগে। আমিও সংশোধন করেছিলাম নিজেকে।
আজ আবার একটু বড় হয়েছি। আরেকটু বুঝতে শিখেছি আমি। এখন মনে হয় ছোটবেলায় ভুল কিছু বলতাম না। কথাটা ‘চিনাভোট’ই হওয়া উচিত।
কেন?
চীনাদ্রব্যের বেশিরভাগ জিনিসেরই ট্যাগলাইন-‘Use and throw’। তা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্কটাও অনেকটা সেরকমই। ভোটের আগে এই সম্পর্ককে ব্যবহার করো তারপর ছুঁড়ে ফেলে দাও।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..