চেতন বা অবচেতন (পর্ব-৩)

বর্ণালী মাহমুদ
গল্প, ধারাবাহিক
Bengali
চেতন বা অবচেতন (পর্ব-৩)

তরু চা খাবার আগ্রহ প্রকাশ করলে নিবিড় রান্নাঘরে চা বানাতে ঢুকে গেলো। তরু বল্লো উহু চা আমি বানাই।  নিবিড় হঠাৎ করেই তরুকে কোলে তুলে নিয়ে রান্নাঘর থেকে ডাইনিং রুমে নিয়ে এসে চেয়ারে বসিয়ে দেয়, তরু একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় এতে। নিবিড় এরপর বলে তুমি এখানে চুপ করে বসে থাকো, আমি থাকতে তুমি কোনো কাজ করবে, তা হবে না। এরপর চা বানিয়ে দুটো কাপ হাতে ডাইনিং টেবিলে চলে আসে সে। দুজনের চা সিগারেট পর্ব শেষ হলে নিবিড় তরুকে নিয়ে পাশের রুমে এসে বসে।

তরু জিজ্ঞেস করে, এটা কি তোমার রুম? নিবিড় উত্তর দেয় হুম, তারপর তরুর আরো একটু কাছে ঘেঁষে বসে। তরুর একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বলে, তরু আমি ভালো ছিলাম না, একদমই না, যখন থেকে তুমি আমার জীবনে এলে, আমি ভালো আছি, ভীষণ ভালো আছি। আমি চাই তুমি সবসময় আমার কাছে থাকো, আমার পাশে থাকো। কথা গুলো শেষ করেই আবেগে তরুকে জড়িয়ে ধরে নিবিড়, তরু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওকে চুমু খাবার চেষ্টা করে সে। আকস্মিকতা কাটিয়ে উঠে নিবিড়কে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় তরু। প্রচণ্ড রেগে বলে, এটা তুমি একদম ঠিক করলে না নিবিড়! একদম না। কথাটা বলেই হাত ব্যাগ তুলে নিয়ে এক ছুটে নিবিড়ের বাসা থেকে বের হয়ে আসে তরু, নিবিড় দরজার কাছে পৌঁছে দেখে লিফট ডেকে নিয়েছে তরু। নিবিড়কে কিছুই বলার সুযোগ না দিয়ে লিফটে উঠে পড়ে তরু, লিফটের দরজা বন্ধ হবার আগে এক মূহুর্তের জন্য দুজনের দৃষ্টি বিনিময় হয়, তরুর অগ্নি দৃষ্টি দেখতে দেখতেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

নিচে এসে দ্রুত একটা রিকশা ঠিক করে উঠে পড়ে তরু। হাত ব্যাগের ভেতর থেকে মুঠোফোন বেজে ওঠে। বের করে দেখে, নিবিড় কল দিচ্ছে। কেটে দেয় তরু কলটি। ফোন ব্যাগে রেখে দিয়ে একটা সিগারেট ধরায় ও। ব্যাগের ভেতর একের পর এক ফোন বেজেই যেতে থাকে। ঘন্টাখানেক পর বিষন্ন তরু বাসায় পৌঁছে।  ঘরে ঢুকে ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে। নিবিড় তখনও কল দিয়েই যাচ্ছে। তরু ফোন সাইলেন্ট করে চার্জে বসিয়ে দেয়। তারপর ফ্রেশ হতে চলে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা ঠাণ্ডা পানির নিচে দাঁড়িয়ে মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করে তরু। শাওয়ার শেষে  রুমে এসে  ল্যাপটপ খুলে বিছানায় বসে।

কানে হেডফোন গুঁজে জোর ভলিউমে গান শুনতে থাকে ও। ফাঁকে কিছু  ই-মেইল চেক করে, বিছানার এক পাশে হেলান দিয়ে বসে। নিবিড় এখনও সমানে কল দিয়ে যাচ্ছে, এস.এম.এস. পাঠাচ্ছে একের পর এক। তরু তাকিয়েও দেখছে না। মেইল চেক করা শেষ করে তরু মুভি ছেড়ে বসে। সাইন্স ফিকশন খুব পছন্দ তরুর, মুভিটা অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ডাউনলোড করেছে তরু। কিন্তু মেজাজ ভালো না থাকায় অল্প কিছুক্ষণ পরেই বিরক্ত হয়ে বন্ধ করে দেয় ও। একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে বসে, হঠাৎ ভীষণ রাগ চাপে মাথায়, নিবিড়ের একটানা বাজতে থাকা ফোন, তুলে দেখে একবার, তারপর রিসিভ করে ভারি গলায় জানতে চায়, এতো বার কল দিচ্ছো কেনো?

এতোক্ষণে নিবিড় একটু ভরসা পায়, অপরাধীর সুরে ক্ষমা চাইতে থাকে। বলতে থাকে, তরু প্লিজ একবার আমার কথা শোন। আমাকে একটু বলার সুযোগ দাও, আমি বেশিক্ষণ সময় নেবো না। তোর শীতল কণ্ঠে একবার শুধু বলে, বলো কি বলতে চাও। একটু আশ্বাস পেয়ে বেচারা এক নিঃশ্বাসে বলে, তরু প্লিজ আমাকে একটু বলার সুযোগ দাও। আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা করে দাও, এমন আর কখনো হবে না। রাগ করে আমাকে দুরে ঠেলে দিও না প্লিজ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

রাগে পাগল প্রায় তরু হিসহিসিয়ে বলে ওঠে, তোমার সাথে ভালো একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো আমার, আজকে তার সব শেষ করে দিলে, তুমি কি আমাকে রাস্তার সস্তা দরের মেয়ে ভেবেছিলে? যাই ভেবে থাকো তুমি, তাতে আর কিছু যায় আসে না। আজকের থেকে তোমার সাথে আমার আর কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে আর কখনও ফোন দেবে না।

বর্ণালী মাহমুদ। গল্পকার। জন্ম বাংলাদেশে, বর্তমানে স্পেনের বার্সেলোনায় বসবাস।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..