ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
নিবিড় তরুকে অনুরোধ করে বলে, প্লিজ এমন আর কোনদিনও হবে না। অনেক বড়ো ভুল হয়ে গেছে আমার। আমাকে ক্ষমা করো তরু, তবুও এভাবে আমাকে দূরে ঠেলে দিও না। তোমার কথার বাইরে, তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কোনোদিন কিছু করবো না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি।
নিবিড়ের কন্ঠে এমন কিছু একটা ছিলো, যেটা তরুকে চুড়ান্ত নিষ্ঠুর হতে বাধা দেয়। তরু হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে যায়। একটু স্থির হয়ে তারপর নিবিড় কে বলে, দেখো এই মুহূর্তে আমার মন ভালো নেই, মাথাও ঠিক মতো কাজ করছে না। এখন রাখি, আমরা কালকে কথা বলি? ঠিক আছে? নিবিড় ভয়ার্ত কন্ঠে বলে, কিন্তু কালকে তুমি ফোন ধরবে তো? তরু ওকে আশ্বাস দেয় কাল দিনের বেলা ফোন ধরবে। নিবিড় শান্ত হয়, তারপর বিদায় জানায়, আরও একবার সরি বলে ফোন রাখে। তরু চিন্তিত হয়ে ওঠে হুট করেই। তারপর দ্রুত হাতে কিছু কাজ সেরে নিয়ে ঘুমাতে যায়।
সকালে অফিসের জন্য বের হয়ে তরু নিবিড় কে বাইক নিয়ে অপেক্ষমান দেখে। কোনো কথা না বলে চুপচাপ বাইকের পিছনে উঠে পড়ে ও। পুরো রাস্তা চুপচাপ যায় ওরা। অফিসের সামনে তরুকে নামিয়ে দিয়ে নিবিড় বলে, আজ অফিসের পরে একটু ঘুরতে যাবে? তরু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লে নিবিড় অস্থির কণ্ঠে বলে, তুমি কি আমার সাথে একটা কথাও বলবে না? তরু মিষ্টি হেসে বলে, ঘুরতে গিয়ে কথা হবে, ঠিক আছে? নিবিড় খুশি হয়ে বলে, ঠিক আছে। আর একটা কথা, আজকে তোমাকে দেখতে অ-নে-ক সুন্দর লাগছে। তরু কোনো কথা না বলে হেসে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে অফিসে ঢুকে যায়। নিবিড় ওর যাবার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর তরু অদৃশ্য হয়ে গেলে মাথায় হেলমেট পরে বাইকে স্টার্ট দেয়।
ঠিক পাঁচটায় নিবিড় তরুর অফিসের নিচে উপস্থিত হয়। পাঁচটায় তরুর অফিস ছুটি। দশ মিনিট ধরে অপেক্ষা করেও তরুর দেখা না পেয়ে নিবিড় অস্থির হয়ে ফোন দেয় তরু কে। তরু রিসিভ করতেই বলে, কোথায় তুমি? আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি? তরু বলে, সরি নিবিড়, আজকে কাজ একটু বেশি, তাই দেরি হচ্ছে। আর খুব বেশি হলে ১০/১৫ মিনিট। তারপর আসছি। নিবিড় বড়ো করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে, ওহ্! তাই বলো, ঠিক আছে, আমি নিচে আছি, তুমি এসো।
দশ মিনিটের মধ্যেই তরু অফিস থেকে বের হয়। নিবিড় হাসি মুখে ওকে তুলে নেয় বাইকে। তারপর ছুটিয়ে দেয় বাইক। কিছুদূর যাবার পর তরু জানতে চায়, কোথায় যাচ্ছি আমরা? নিবিড় রহস্যময় কণ্ঠে বলে, অপেক্ষা করো, গেলেই দেখতে পাবে। আর ঠিক মতো ধরে বসো, আমি তোমাকে নিষেধ করেছি না? এভাবে না ধরে বসতে? তুমি না ধরলে আমি বাইক চালানোর কনফিডেন্স পাই না ঠিক মতো! তরু হেসে নিবিড়ের কাঁধে হাত রাখে। নিবিড় বলে, এভাবে কেনো? এভাবে ধরলে মনে হয় স্কুলে পিটির লাইনে দাঁড়িয়ে আছি! ঠিক ভাবে ধরো, যেভাবে সবসময় ধরো আমাকে। নাহলে কিন্তু এ্যাক্সিডেন্টের দায়ভার আমার না। তরু এবার হাহা করে হেসে দেয়, তারপর নিবিড়ের কোমর জড়িয়ে ধরে। তারপর বলে, এবার ঠিক আছে? নিবিড় বলে, কনফিডেন্স এখন ১০০%। বলেই স্পিড বাড়িয়ে বাইক ছোটায়।
কিছুক্ষণ পর ওরা পৌঁছে একটি নদীর পাড়ে। পাড় ঘেঁষে একটা মাত্র গাছ অনাথের মতো নুয়ে আছে পানির দিকে। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, সূর্য ডুবি ডুবি করছে আকাশ রক্তিম করে। হুহু বাতাস তরুর খোলা চুল নিয়ে তাণ্ডব করছে। তরু নুয়ে থাকা গাছটার গোড়ায় গিয়ে বসে। নিবিড় ওর পাশে বসে একটা হাত তুলে নেয় নিজের হাতে। তরু কিছু বলে না, নদীর কূল কূল শব্দ শুনতে থাকে। নিরবতা ভাঙে নিবিড়। বলে, তুমি এতো রাগ করতে পারো! আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি কোনো কিছুতেই তোমাকে হারাতে চাই না। তরু বেশ কিছুক্ষণ নিরব থাকে। তারপর বলে, এক জীবনে চাইলেই সব পাওয়া যায় না নিবিড়। তারপর ব্যাগ থেকে সিগারেট বের করে একটা নিবিড় কে দেয়, একটা নিজে ধরায়। সিগারেট শেষ করে উঠে দাঁড়ায় তরু, নিবিড় কে তাড়া দেয়, অন্ধকার হয়ে গেছে, এখানে আর থাকা ঠিক হবে না। চলো যাই।
ওরা বাইকে চড়ে বসে। নিবিড় স্টার্ট দেয় বাইকে, কিছুদূর যাওয়ার পর চোখে টর্চের আলো ফেলে কে যেনো, তারপর বাইক থামাতে নির্দেশ দেয়। অন্ধকারে কিছুই ভালো দেখা যাচ্ছে না। নিবিড় বাইকের হেডলাইট ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে। দুজন পুলিশ কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছে। বাইক থামানোর পর তারা এগিয়ে এসে নাম পরিচয় জানতে চায়। বাইকের কাগজ দেখতে চায়। সব ঠিকঠাক আছে চেক করার পর তাদের মধ্যে একজন বলে ওঠে, আপনারা এই সময়ে দুইজন ছেলে মেয়ে এখানে কি করেন? আপনাদের জন্য দেশটা খারাপ হয়ে যাইতেছে। আপনারা থানায় চলেন। তরু প্রশ্ন করে, থানায় যাবো কেনো? উত্তরে কনস্টেবল বলে, আপনার তো জামাই বউ না, এইভাবে ঘুরা ঘুরি করবেন আর পরিবেশ নষ্ট করবেন, তা তো হবে না। তরুর মাথায় চট করে রাগ উঠে যায়, রেগে কিছু একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিলো যখন, নিবিড় বুঝতে পেরে ওকে থামিয়ে দেয়। তারপর কনস্টেবল দুজন কে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে নিচু স্বরে কথা বলে। শেষমেষ মানিব্যাগ বের করে পুরোটাই উজাড় করে দেয়। তারপর বাইকের কাছে ফিরে এসে তরু কে নিয়ে উঠে পড়ে। বাইক স্টার্ট দিতে দিতে একজন কনস্টেবল এগিয়ে এসে তরু কে বলে, ম্যাডাম সার খুবই ভালো লোক। আপনি ভালো করে উনার মনের আবেগ মিটায় দিয়েন! কথা শেষ হতে না হতেই নিবিড় স্পিডে বাইক ছুটিয়ে দেয়, তরু কে কোনো উত্তর করতে না দিয়ে।
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..