চেতন বা অবচেতন (পর্ব ৫)

বর্ণালী মাহমুদ
গল্প, ধারাবাহিক
Bengali
চেতন বা অবচেতন (পর্ব ৫)

পূর্ব প্রকাশিতের পর…

তরুর রাগে গা জ্বলছে। কথা হারিয়ে ফেলেছে সে। নিবিড় একবার সিগন্যালে থেমে জানতে চেয়েছিলো ওর ক্ষুধা লেগেছে কি না? কিছু খাবে কি না? তরু রাগের চোটে কোনো কথাই বলতে পারেনি। নিবিড় ও তরুর মেজাজ খারাপ দেখে চুপ করে থেকেছে। শেষমেষ তরুর বাসার সামনে এসে বাইক থামায় নিবিড়। তরু শুধু বলে রাতে কথা হবে, এখন আসি। নিবিড় কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দ্রুত চলে যায় তরু। নিবিড় তরুর চলে যাওয়া দেখতে দেখতে বিড়বিড় করে নিজেকেই বলে, মামা তুমি কেমনে যে এই রাগী মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাও! তোমার না জানি কপালে কি আছে? তারপর হেলমেট মাথায় গলিয়ে নিজের বাসায় দিকে রওনা হয় সে।

তরু ঘরে ঢুকে ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে। এরপর মনে মনে ঐ কনস্টেবলের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। তাতেও মাথা ঠাণ্ডা হচ্ছে না দেখে শাওয়ারের নিচে গিয়ে দাঁড়ায়। ঘন্টাখানেক ভিজে কিছুটা স্থির হয় ও। আজ অফিসে কাজের প্রচুর চাপ ছিলো। বেচারি ঠিক মতো লাঞ্চ করার সুযোগ পায়নি। ক্ষুধায় বিরক্ত লাগছে তরুর। এদিকে কিছু রান্না করে খেতে ইচ্ছে করছে না ওর। শেষমেষ ফুডপাণ্ডাতে অর্ডার দিয়ে ল্যাপটপ খুলে বসে ও। খাবার ডেলিভারি দিতে ৩০ মিনিট সময় নিয়েছে ফুডপাণ্ডা। এখন যেভাবেই হোক সময় টুকু কাটাতে হবে ওর। মেইল চেক করতে গিয়ে দেখে ১৭ টা মেইল এসেছে, যার মধ্যে অন্ততঃ ৪ টার রিপ্লাই এখনি করা জরুরি। ইমেইল খুলে কি-বোর্ডের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তরু।

নিবিড় বাসায় ফিরে অস্থির মন নিয়ে। কনস্টেবলের কথায় বেশ মজা পেয়েছিলো ও। কিন্তু তরুর মুড দেখে হাসিটাও চেপে গেছে সে। আগের দিনের ঘটনার পর তরু কে বোঝাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে ওর। তাই মজা করে কিছু যে বলবে, সে সাহস ও পায়নি বেচারা। পুরোপুরি না হলেও কিছুটা বুঝতে পারে নিবিড়, তরু ওর অতীত জীবনে অনেক মানসিক যন্ত্রণা পেয়েছে। এজন্যই কিছু কিছু ব্যাপারে অনেক বেশি রিএ্যাক্ট করে। হয়তো ওকে একটু সময় দিতে হবে। সময়ের সাথে অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে। রোজকার রুটিন মতো বাবা মা কে ফোন দিতে হবে নিবিড়ের। ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার ডায়াল করে ও।

সময়ের ৫ মিনিট আগেই খাবার নিয়ে হাজির ফুডপাণ্ডা। তরু কাজে মগ্ন হয়ে খাবার কথা ভুলেই গিয়েছিলো, কলিং বেলের শব্দে একটু বিরক্ত হয়েই দরজা খুলে ও। ডেলিভারি বয়ের হাতে খাবারের ব্যাগ দেখে হুঁশ ফেরে। খাবারের দাম মিটিয়ে খাবার নিয়ে ঘরে এসে বসে ও। গরম গরম খাবারের ঘ্রাণ ওকে মনে করিয়ে দেয় কি ভীষণ ক্ষুধার্ত সে। সব ফেলে এবার খাওয়াতে মনোযোগী হয় ও। খাওয়া শেষে লাস্ট ইমেইল টা সেন্ড করে অনেক হালকা লাগে তরুর। ইউটিউবে পছন্দের একটা গান ছেড়ে দিয়ে ভাবতে বসে এবার। নিবিড়ের কথা মনে হতেই একটু খারাপ লাগা কাজ করে ওর। সন্ধ্যায় যা হয়েছে, তাতে নিবিড়ের কোনো দোষ ছিলো না। কিন্তু অস্থির তরুর সব রাগ ও বেচারাকেই সহ্য করতে হলো। তরু ঠিক করে সরি বলবে নিবিড় কে। ফোন হাতে নিয়ে কল দিয়ে নাম্বার বিজি পায় ওর। কিছুক্ষণ পরে আবার ট্রাই করবে ঠিক করে ও। এবার দৈনন্দিন ঘরোয়া কাজে মনোনিবেশ করে তরু।

ঘন্টাখানেক পর নিবিড় কল দেয় তরু কে। তরু ফোন ধরেই বলে, তুমি কিছু বলার আগে আমি একটা কথা বলতে চাই। নিবিড় একটু ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে, আচ্ছা বলো। মনে মনে ভাবে, হায় খোদা এবার আবার কি শুনতে হবে? এখন আবার আমি কি করলাম? না জানি কিসের আমলনামা নিয়ে বসছে! তরু বলে, সরি নিবিড়। আমার তোমার সাথে এভাবে রিএ্যাক্ট করাটা আমার ঠিক হয়নি একদম। তোমার কোনো দোষ ছিলো না আজকের ঘটনায়। কথা গুলো যেনো মধু বর্ষন করে নিবিড়ের কানে! ওর হিসেবে এটা অসম্ভব কিছু! তরু তাহলে সরি ও বলতে পারে? নিবিড় তাহলে ভুল ধারণা নিয়ে ছিলো ওর ব্যপারে! নিবিড় তরু কে বলে, তোমার সরি বলতে হবে না, আমি ও মুহূর্তে অন্ততঃ বুঝতে পেরেছিলাম যে তুমি রেগে গেছো, তাই তো স্পিডে বাইক ছুটিয়ে চলে এসেছিলাম ওখান থেকে।

আরো কিছুক্ষণ কথা বিনিময়ের পর নিবিড় তরু কে বলে, আচ্ছা শোনো আমি তো বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম! কাল সকালে আমি বগুড়া যাচ্ছি, কয়েকদিন থাকবো। অনেক দিন বাসায় যাই না, আজ মা ফোনে খুব কান্নাকাটি করেছে। তাকে কথা দিয়েছি কাল সকালেই রওনা দেবো। আমার মন খারাপ হচ্ছে, তোমাকে সকাল বিকেল দেখতে পাবো না! আর ভালো কথা, তুমি অফিসে কিভাবে যাবে আসবে এ কয়দিন? তরু বলে, তুমি নিয়ে না গেলে বুঝি আমার অফিসে যাওয়া হয়নি? আমি রোজ যেভাবে যেতাম, সেভাবেই যাবো। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা কোরো না তো। সাবধানে যাও, মা কে সময় দাও। মায়ের হাতের রান্না এনজয় করো। নিবিড়ের তবু আফসোস শেষ হয় না। অবশেষে ওদের কথা বলা শেষ হয়, একে অপরকে গুড নাইট বলে ঘুমাতে যায় ওরা।

চলবে…

বর্ণালী মাহমুদ। গল্পকার। জন্ম বাংলাদেশে, বর্তমানে স্পেনের বার্সেলোনায় বসবাস।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ