চেতন বা অবচেতন (পর্ব ৭)

বর্ণালী মাহমুদ
গল্প, ধারাবাহিক
Bengali
চেতন বা অবচেতন (পর্ব ৭)

নিবিড়ের মন একদম ভালো নেই। ভয়ানক অস্থিরতায় কাটছে ওর সময়। বাড়ি আসার আগে তো তরুর সাথে সব ঠিকঠাক ই ছিলো, হঠাৎ কি হলো নিবিড়ের কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে না হলেও ১০০ কল দিয়েছে তরুর নাম্বারে, রিং হয় কিন্তু তরু রিসিভ করে না। এদিকে তরু একা বাসা নিয়ে থাকে, আর কারো থেকে খবর পাবার আশাও নেই কোনো, না নিবিড় তরুর অফিসের ফোন নাম্বার জানে, যে সেখানে কল দিয়ে খোঁজ করবে। ঢাকায় থাকলে তো এক ছুটে চলে যেতো খবর নিতে। এখানে বসে তো আর সেটা সম্ভব না। তরুর চিন্তায় সকালে ভালো করে নাস্তাও খেতে পারেনি বেচারা। উল্টো মা ওকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছে। বারবার জিজ্ঞেস করছিলো শরীর খারাপ কি না? কোনোরকমে জার্নির ধকলের বাহানা দেখিয়ে তাকে ও বেলা মানিয়েছে।

দুপুরে খাবার টেবিলে বসে নিবিড় খাবার নাড়াচাড়া করছে দেখে ওর মা কাছে এসে মাথায় হাত রাখে। জ্বর এসেছে কিনা চেক করে নিশ্চিত হয়। তারপর প্রশ্ন করে: আচ্ছা তুই সত্যি করে বল তো তোর কি হয়েছে? সমস্যা টা কি? আমাকে খুলে বল? নিবিড় অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দেয়: কই? কিছু হয়নি তো! আমার আবার কি হবে? মা কপট রাগ দেখিয়ে বলে: তুই ইদানিং আমার মুখের উপর মিথ্যা বলতেও দ্বিধা করিস না? দুদিন ঢাকায় থেকে এতো বদলে গেছিস? আমার সাথে কথা শেয়ার করাও ভুলে গেলি? মায়ের ওষুধে কাজ হলো, নিবিড় তাড়াতাড়ি চেয়ারে থেকে উঠে এসে মাকে ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বল্লো: আহা মা, এতো রাগ করো কেনো? আমার আসলেই কিছু হয়নি, শুধু একটু টেনশনে আছি। সেও ঠিক হয়ে যাবে। এ কথা শুনে মা বলে: টেনশন? কিসের টেনশন? কে দিলো আমার ছেলেকে টেনশন? যার চিন্তায় আমার ছেলের খাওয়া, ঘুম সব বন্ধ? নিবিড় তাড়াতাড়ি বলে: মা প্লিজ আগে খেয়ে নাও, খাওয়া শেষে আমার রুমে গিয়ে কথা বলি? এখানে বাবা আছে যে! অবশেষে মায়ের মুখে কোমল হাসি ফুটে। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দেয় নিবিড়ের কথায়।

নিবিড়ের বাবা এতক্ষণ সব দেখছিলেন নিরব দর্শকের মতো। এবার খাঁকারি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে বল্লেন: কি খিচুড়ি পাকাচ্ছো তোমরা মা-ছেলে? সকাল থেকেই দেখেছি তোমাদের গোপন বৈঠক। তারপর নিবিড় কে প্রশ্ন করেন: এবার কয়দিন থাকবে ভেবেছো? নিবিড় উত্তর দেবার আগেই ওর মা ঝাঁঝিয়ে ওঠে: মাত্রই এলো ছেলেটা এখনও একটা দিন পুরো হয়নি আর উনি যাবার কথা তুলছেন! এসব কথা কি দুদিন পর করা যেতো না? বয়সের সাথে সাথে তোমার বোধ বুদ্ধি সব লোপ পেলো নাকি?  নিবিড়ের বাবা একজন উচা, লম্বা, চওড়া ও রাশভারী লোক। নিড়িড়ের মা কে হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে উনি বল্লেন: আহা সব ঠিক আছে কোনো অসুবিধা নেই। নিবিড় কে বলতে দাও। অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিবিড়ের মা কে চুপ থাকতে হলো। নিবিড় বলা শুরু করলো: এই তো ৩/৪ দিন থেকে চলে যেতে চাচ্ছি আব্বু। এ কথা শুনেই নিবিড়ের মা আবার উত্তেজিত হয়ে শুরু করে দিলো: মাত্র ৩/৪ দিন? তাহলে তুই আসলি কেনো? না আসলেই তো হতো। নিবিড়ের বাবা আবার তাকে থামান, তারপর তাকে  উদ্দেশ্য করে বলেন: তুমি থামবে? আমি নিবিড়ের সাথে কথা বলছি। এ কথা শুনে মা আবার চুপসে চুপ হয়ে যায়। বাবা আবার প্রশ্ন করেন: ৩/৪ দিনের বেশি থাকা সম্ভব না? নিবিড় উত্তর দেয়: সম্ভব কিন্তু উচিত হবে না। ক্লাস চলছে রেগুলার, বেশি গ্যাপ পড়ে গেলে ট্র্যাক হারিয়ে ফেলবো। কিছু গ্রুপ স্টাডি ডেট আছে ওগুলো মিস করবো, সামনে এ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে ওটার ডেডলাইন ও মিস করতে হবে।

সব শুনে বাড়া বল্লেন: আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যখন সুবিধা মনে হয় যেও। কিন্তু মা নাছোড়বান্দা, আবার শুরু করে দিলো: তাহলে আর থেকে কি করবি? খেয়ে উঠেই ব্যাগ গুছিয়ে নে। মায়ের ছেলেমানুষি তে বাবা-ছেলে একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। অতঃপর খাওয়া পর্ব শেষ করে বাবা বেডরুমের দিকে রওনা দিলেন, দুপুরে খাওয়ার পর উনি একটু বিছানায় গড়িয়ে নিতে পছন্দ করেন। নিবিড় মায়ের হাত ধরে নিজের রুমে নিয়ে গেলো। তারপর মাকে বিছানায় নিজের পাশে বসিয়ে নিয়ে বল্লো: মা, তুমি সবসময় সব কথায় এতো রিএ্যাক্ট করো কেনো? আমাকে পড়াশোনা করতে ঢাকা পাঠাও নি? তাহলে এখন যখন পড়াশোনা করতে চাচ্ছি তখন আপত্তি কিসে তোমার? মা অস্থির হয়ে উত্তর দেয়: তোর যা অবস্থা, তাতে আমার চিন্তা হয় না? কিভাবে এ অবস্থায় তোকে যেতে দেবো? নিবিড় অবাক হয়ে প্রশ্ন করে: আমার আবার কি হয়েছে? মা বলে: তোর খাবার রুচি নেই, ঠিক মতো খাস না, এ নিশ্চই কোনো কঠিন রোগের লক্ষণ। এবার নিবিড় হেসে দিয়ে বলে: আমি একদম সুস্থ আছি মা, উফ্ তুমি ও, কিভাবে পারো এতো কিছু মূহুর্তেই ধরে নিতে? মা বলেন: তাহলে বল খাওয়া দাওয়ায় অমনোযোগী কেনো? নিবিড় বলে: আরে বল্লাম না একটু টেনশনে ছিলাম? সঙ্গে সঙ্গে মায়ের প্রশ্ন: কি নিয়ে টেনশন? বল আমাকে? নিবিড় বলে: বলছি, তার আগে কথা দাও চিৎকার করে উঠবে না?

বর্ণালী মাহমুদ। গল্পকার। জন্ম বাংলাদেশে, বর্তমানে স্পেনের বার্সেলোনায় বসবাস।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ