প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
হ্যালো……..হ্যালো….শুনতে পাচ্ছেন কি ? হ্যা আমি রিফাত বলছি রকমারি.কম থেকে, কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি । আমি রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা এবং নৌকাডুবি বই দুটো অর্ডার করতে চাই । হ্যালো……..হ্যালো…. । আপনার নাম এবং ঠিকানাটা বলেন প্লিজ । অন্যন্যা আহমেদ, বাসা নং ২৭, ফ্ল্যাট ৯, রোড নং ৭ , কাকরাইল, ঢাকা । আপনি বইগুলো ২-৩ দিনের মধ্যেই পেয়ে যাবেন, ধন্যবাদ । ফোনটা কেটে গেলেও আমার অন্তরে কন্ঠসুরটা প্রতিধ্বনি হচ্ছিলো । রিফাত……. এই রিফাত, হ্যা রাকিব বল । কি হয়েছে তোর রিফাত এত ডাকছি শুনছিস না । কোন সমস্যা, শরীর খারাপ করেছে নাকি । শরীর তো ঠিক আছে কিন্তু হার্টবিট বেড়ে গেছে । কেন ? একটি মেয়ের কন্ঠ শুনে । সেটা তুই প্রতিদিনই শুনোস রিফাত, আজ আর নতুন কি । হ্যা কিন্তু আজকের কন্ঠটা আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল ছুয়ে গেছে যা কখনো হয় না । রিফাত, তুই প্রেমে পড়ে গেছিস নাকি মেয়েটির । মেয়েটির প্রেমে পড়েছি কিনা জানিনা কিন্তু মেয়টির কন্ঠের প্রেমে অবশ্যই পড়েছি । ঐ একি কথা হলো রিফাত । মানে কি রাকিব । মানে হচ্ছে কাউকে ভালোলাগা শুরু হয় কিছু বৈশিষ্ট্যে, যেমন কারো রুপ কাউকে মুগ্ধ করে, কারো চরিত্র কাউকে মুগ্ধ করে, কারো আচরন কাউকে মুগ্ধ করে । আর এভাবেই কারো বৈশিষ্ট্য একে অপরকে আকৃষ্ট করে । আর সেটাই আমাদের মাঝে ভালোবাসার সৃষ্টি করে । কিন্তু আমিতো মেয়েটিকে চিনি না রাকিব । ভালোবাসতে হলে কাউকে চিনতেই হবে এমন কোনো কথা নেই রিফাত, ভালোবাসার পরও চেনা যাবে বুঝলি । হ্যা, আজ আর কাজে আমার মন বসছে না রাকিব । আমি বসকে বলে চলে যাচ্ছি । আচ্ছা তুই যা রিফাত আমি কাজ শেষ করে আসবো । রাস্তায় হাটছিলাম কিন্তু আশেপাশের কোলাহল, গাড়ির শব্দ কিছুই আমার কানে যাচ্ছিলো না । নিজেকে নিজের কল্পনার গৃহে আবদ্ধ করে ফেলেছিলাম আর তাতে শুধু কন্ঠসুরটা বার বার শুনতে পাচ্ছিলাম । এই ভাই বলে একজন হাতটা টান দিলো । আরেকটু হলে গাড়ির নিচে পরতেন তো ভাই, কোন দিকে চাইয়া হাটেন, নেশা করেন নাকি । না ভাই ধন্যবাদ বাঁচানোর জন্য । থাক আর ধন্যবাদ দেয়া লাগবো না । রাস্তাঘাটে দেখে চলাফেরা করবেন, ঠিক আছে । জ্বি ভাই ধন্যবাদ । বাসায় খাবার সামনে নিয়ে বসে আছি কিন্তু খেতে ইচ্ছে করছে না, তবুও কিছু খেয়ে ঘুমাতে গেলাম । বিছানার এপাশ ওপাশ করছি কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছে না । আচ্ছা মেয়েটার নাম্বারতো নিয়েই এসেছি, কল দিবো কি একটা । কিন্তু কি মনে করবে । নিজের মনের সাথে বাগ-বিদন্ডা করে অবশেষে কল দিলাম । হ্যালো……..হ্যালো… কে বলছেন ? হ্যালো……..হ্যালো… আশ্চর্য কথা না বললে কল দিয়েছেন কেন । তারপর ফোনটা রেখে দিলো মেয়েটা । আমি কল রেকর্ডারটা অন করে নিশ্চুপভাবে কথাগুলো শুনছিলাম শুধু । কোনও কথা বলতে পারিনি । কন্ঠসুরটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম সেইটাও খেয়াল ছিলনা । সকালে অফিসে যেয়েই খোজ করলাম মেয়েটির বইগুলো পাঠানো হয়েছে কিনা । কিন্তু রবিন ভাই বললো বইগুলো আগামীকাল পাঠানো হবে । মেয়েটার কন্ঠ শুনতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । গত রাতের কল রেকর্ডটা কি শুনবো, নাকি কল দিবো আবার । অবশেষে ফোন দিলাম । হ্যালো কে বলছেন । জ্বি আমি রকমারি.কম থেকে রিফাত বলছিলাম, আপনি গতকাল যে বইগুলো অর্ডার দিয়েছেন সেগুলো কি পেয়েছেন । না পায়নি, আর আপনিই না বললেন বইগুলো পেতে ২-৩ দিন লাগবে । আমি এর প্রতিত্তুর কিছু না দিতে পেরে ফোনটা কেটে দিলাম । কিরে অন্যনা কে কল দিয়েছিল, ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসলি । বয়ফেন্ড নাকি ? তোরা জানোস আমার বয়ফেন্ড নেই তবুও বার বার মজা করিস কেন । নেই কিন্তু হতে কতক্ষণ, আচ্ছা তাহলে কে ফোন দিয়েছিল । গতকাল কিছু বই অনলাইনে অর্ডার করেছিলাম, সেগুলো পেয়েছি কিনা সেটা জানার জন্য ফোন দিয়েছিল । দেখিস আবার বইগুলোর বদলে মনটা যেন পাঠিয়ে না দেয়, বুঝলি অন্যনা । তোদের এই মজা আমার একদম পছন্দের না । সরে দারা আমাকে যেতে দে । কিরে রিফাত কি ভাবছিস । সেই মেয়েটাকে নিয়েই ভাবছি রাকিব । তুইতো প্রমে পড়ে গেছিস রিফাত । আমিও তাই ভাবছি । কিন্তু মেয়েটাকে তো চিনিস না তুই । হ্যা কিন্তু তাতে সমস্যাটা কোথায় রাকিব । সমস্যা হচ্ছে মেয়েটা বৃদ্ধ না ছোট, বিবাহিত না অবিবাহিত, বয়ফেন্ড আছে কিনা তুই তো কিছুই জানোস না । আমার যতটুকু ধারনা তাতে কোন সমস্যা নেই । মানে ? কন্ঠ শুনে যতটা বুঝছি তাতে বৃদ্ধ বা ছোট না আর বয়ফেন্ড নেই, যদি থাকতো তাহলে বইয়ের পিছনে সময় ব্যয় না করে বয়ফেন্ড সাথে কথা বলেই সময় পার করতো । যারা বই পড়ে তাদের কি বয়ফেন্ড নেই রিফাত । আছে কিন্তু যারা বেশি বই পড়ে সময় পার করে তাদের বয়ফেন্ড নেই । আমি অর্ডার চেক করেছি মেয়েটি প্রতি মাসেই অনেকগুলো করে বই অর্ডার করে । কিন্তু বিবাহিত কিনা সেটা । সেটাও আগামীকাল বের করবো রাকিব। কিভাবে । সেটা আগামীকাই দেখতে পারবি । হ্যালো আমি রকমারি.কম থেকে রিফাত বলছি, আপনি অন্যনা বলছেন । জ্বি বলছি, আপনি যে বইগুলো অর্ডার করেছেন সেগুলো কি পেয়েছেন । হ্যা পেয়েছি । আমরা একটা গ্রাহক জরিপ করছি, তাই আপনাকে যা প্রশ্ন করা হবে দয়া করে সেগুলোর উত্তর দিবেন প্লিজ । আচ্ছা বলুন ! আপনি কি করেন? আমি আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্কিটেকচার এ প্রথম বর্ষে পড়ছি । আপনার জন্ম তারিখ এবং সাল? ০৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫ । আপনি বিবাহিত না অবিবাহিত? আমি অবিবাহিত । ধন্যবাদ বলে আমি ফোনটা রেখে দিলাম এবং রাকিবকে সব বললাম । রাকিব সব শুনে বলল, প্রেমে যখন পড়েছিস রিফাত তখন দেরি করে লাভ কি । শুভ কাজে দেরি করতে নেই প্রপোস করেদে । আমি বললাম আজ না মেয়েটির জন্মদিনে কাজটা করব । এতদিন থাকতে পারবি রিফাত । যে জিনিসে যত দেরি সেই জিনিসটা পাওয়ার আনন্দ বেশি রাকিব । মেয়েটির জন্মদিনের দিন সকালে আমি তৈরি হয়ে একটি বই আর একটা চিরকুট নিয়ে মেয়েটির বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেই । বাসায় পৌছে জানতে পারলাম মেয়েটি বাসা চেঞ্জ করেছে কিছুদিন আগে এবং তারা কেউ নতুন বাসার ঠিকানা দিতে পারলো না । আমি তখন মেয়েটির নাম্বারে ফোন দিলাম কিন্তু নাম্বারটা গত চারদিন ধরে বন্ধ ছিল । আজও তাই । অবশেষে আমি মেয়েটির বিশ্ববিদ্যালয়ে খোজ নিলাম এবং পেয়েও গেলাম । আপনি অন্যন্যা, হ্যা । এই নিন আপনার জন্মদিনের উপহার । আপনাকে তো চিনতে পারলাম না আর আজ আমার জন্মদিন সেটা আপনি জানলেন কিভাবে । আমি কোন কথা না বলে দ্রুত বেরিয়ে পরলাম । মেয়েটি আমাকে পিছন থেকে আর ডাকলো না, কারন আমার আচরনে মেয়েটি হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। মেয়েটি ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে । আমাকে খোজছেন? হ্যা, খোজাটা কি স্বাভাবিক নয় । আমি তখন মেয়েটির হাতে চিরকুট ধরিয়ে দেই । আর তাতে লেখা-
“আমার নাম রিফাত, চিনতে পারছেন অবশ্য । আপনার কন্ঠসুর শোনামাত্রই আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাই । আপনি কেমন কি করেন এগুলো কিছু না জেনেই প্রেমে পড়ে গেছি । আপনার কন্ঠসুরটা আমার হৃদয়কে আপনার ভালোবাসার জগতে আবদ্ধ করে ফেলেছে । আপনি কি আপনার ভালোবাসার নৌকার মাঝি হিসেবে আমাকে মেনে নিতে পারবেন । দিতে পারবেন বিশ্বাস নামের বৈইঠাটা । কথা দিচ্ছি কোন কথা না বলেই শুনবো আপনার সব কথা । নিজে ডুববো কিন্তু ভালোবাসার নৌকা ভুবতে দিবো না ।”
মেয়েটি হেসে দিয়ে বললো- “মাঝি আমাকে নিয়ো চলো গন্তব্যে” ।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..