ছদ্মবেশ

সুতনু হালদার
কবিতা
Bengali
ছদ্মবেশ

অস্থির

প্রতীক্ষার ঝরনায় বঞ্চনা হেঁটে চলে

অদ্ভুত নেশায় দুবেলা ভরপেট খেয়ে
স্বাস্থ্যবতী হতে থাকা চোরাগোপ্তা আহুতি
চেতনা প্রবাহে গুরুচণ্ডালীর দোষ!
বাতাসের কলহ নিষ্ঠাবান গৃহস্থালিকে
চুপসে একদিন নিজেই নিজের
আটপৌরে কাঠামোটা মোহনায় মিশিয়ে দ্যায়!

হৃদপিণ্ডের গলিত অক্সিজেনে
মাংসল চাঁদ অস্থির পাউডার পাফের আকৃতি
নিতে গিয়ে দিয়ে ফ্যালে কয়েকটা অক্ষরের আঁচড়

অগণিত বিকেলস্রোতে ডুবুরির রূপ নিয়ে
প্রতীক্ষার হিমবাহে শুয়ে থাকে বিপন্ন সভ্যতা…

পত্রমিতালী

জরির গ্লেজ ফিকে হওয়ার সঙ্গে
সম্পর্কের ব্যবচ্ছেদে বৃষ্টিপাত শুরু হয়
এইকথার আগে মার্কারে দাগ লাগা একটা জীবন দরকার; যে জীবনের রোজনামচায় লেখা থাকে বেনিয়মী চৌম্বকীয় ত্বরণের প্লাজমা

তবু ওরা বেঁচে থাকে
কবিতা লেখে, সংসার করে

যেমন প্রতিটা গাছের পর্ণমোচন হয়ে
নতুন সন্ধ্যার অবকাশ পত্রমিতালী করতে ছুটে আসে

বহুবার ভেবেছি কবিতা লেখা ছেড়ে দেবো

বহুবার ভেবেছি কবিতা লেখা ছেড়ে দেবো
ভাবনার অন্তরালে যেসব ঘাস জন্মিয়েছিল প্রথমে সেইগুলোকে কাটতে কাটতেই সকাল সন্ধ্যের নিয়ন আলোর হিমাঙ্কে বিস্ফোরণ হত
বিস্ফোরিত শব্দের থেকে নেমে আসত এলিয়েন! ওরা আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে এসেছিল, নাকি কুয়াশার জঙে নিজেদের রাঙিয়ে নিতে এসেছিল, সেটা জানা হয়নি!
যেমন জানা হয়নি:- ১) প্রতিটা রাতের কোষবিন্দুর অনুপ্রাস আজও কেন প্রত্যেক মানুষের কাছে দামি হয়ে যায়?
২) নির্লিপ্ত পেণ্ডুলাম কেন প্রতিটা জীবনে শুধু দোলনের কার্যকাল নির্ণয় করে?
৩) ব্ল্যাকবোর্ডে তরঙ্গের অবকাশ আমার সকল কৃষ্ণকায় সত্তার গভীরে আকাশের চপলতাকে কীভাবে লুকিয়ে রাখে?

অজানা প্রশ্নগুলোই আবার নতুন নতুন শব্দের মোড়কে কবিতার ডালা খুলে নববধূর প্রথম ফুলশয্যায় মেতে ওঠে

ঘুম

গভীর রাতে কখনো কখনো যাদের ঘুম ভেঙে যায়, সেই ভাঙা ঘুম নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়, সমস্যাটা হ’ল রাতের গভীরতা নিয়ে

আজকাল অনেকেই এই সমস্যায় জর্জরিত! গভীরতা এখন শুধুমাত্র রাতের থাকে, আর থাকে সমুদ্রের তলদেশে; এককালে যদিও মানব মনেও…

মনের সঙ্গে পাতার যে সম্পর্ক সেটা মানুষের বোঝার কথা, গাছের কাছে ওই আশ্রয়টাই প্রাবল্য জরিপ করার চিহ্ন, সুতরাং চিহ্নের বহুগামিত্বে প্রজন্মের স্থির আক্ষেপ

স্থিরতার জাড্যধর্ম গোলমেলে সংকেত আনলে ঘুম ভাঙা রাতের আণুবীক্ষণিক কারণ মুদ্রাদোষের হতেও পারে, প্রকৃতপক্ষে প্রেমিকদের

ছদ্মবেশ

জড়তার প্রসঙ্গ এলে আজও কেমন যেন জড়সড় হয়ে যেতে দেখি অনেক উষ্ণতাকে, কিন্তু জড়তা শুধু স্থির হলেই বেগতিক! বিষয়টিতে ঘুরে ফিরে চলে আসে মানব মনের আলো আঁধারির বিশৃঙ্খল যোজ্যতা

হয়ত বিশৃঙ্খল যোজ্যতার জাড্যধর্ম বিছানার ব্যাকরণগত উপপাদ্যের গুণিতক; শিশিরের শৌখিনতায় সুখ সন্ধানী

অশ্বমেধের অবিভাজ্য এক পরিভ্রমণ

সুতরাং যে কোনো অবিভাজ্যতা অনুভূতিরই অবদমিত পারদের স্থানাঙ্ক, আমাদের জীবন দুধ আর জলের আলাদা আলাদা ক্যানভাস

আলাদা বলতে আসলে সীমারেখাকেও বলা যায়, মধুর বসন্তের মধ্যে আজ তোমার জ্বরের আচ্ছাদন আদৌ চুপচাপ ঘনিষ্ঠতার লীনতাপকে খণ্ডে খণ্ডে অভিসারিকার পোশাকে ঢাকতে চেয়েছিল

যে কোনো ভালোবাসার নিউক্লিক অ্যাসিডে মিশে থাকে নিষিদ্ধ ঘুণপোকার ছদ্মবেশী অভিযোজন

অনুমানভিত্তিক

এখনো কিছু কিছু কুয়াশা আনমনে হাঁটে, সেসবের সঙ্গে আমাদের তেমন পরিচয় হয়ত নেই! কিন্তু পরিচয় না থাকাটা বড় কথা নয়; নক্ষত্রের সংলাপ যখন নিলয় আর অলিন্দের কার্নিশে ঝড় তোলে তখন প্রতিটা মৌমাছির কান্নার শব্দ টের পাওয়া যায়

স্বধর্ম চ্যুত ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের দিকে তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে বলেই জলজোছনার বিয়োজন বয়ঃসন্ধিতেই যৌনতা চিনে যায়! এর আর একটি পরিভাষা হিসেবে যদি প্রেমকে ধ্রুবক ভাবি তাহলে সর্বদা বিয়োগফল শূন্য হয়; আসলে জীবনের বিপ্রতীপ কালাপাহাড়ে কোনো ধ্রবপদ নেই!

ধ্রুবক আর ধ্রুবপদ নিয়ে আমাদের সাংসারিক সালোকসংশ্লেষের অবিভাজ্য মৌলিক সংখ্যাগুলো বীজগাণিতিক সমীকরণে বেঁচে থাকে; অনুমানভিত্তিক…

সুতনু হালদার। কবি। জন্ম ভারতবর্ষের পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলায় অবস্থিত শান্তিপুর শহরে। লেখার অভ্যাস শৈশব থেকে হলেও সচেতনভাবে লেখালেখি একের দশকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে। বর্তমানে 'দেশ', 'কবিতাপাক্ষিক', 'মধ্যবর্তী', 'বাক্', 'অন্যনিষাদ', 'যুগসাগ্নিক'সহ বাংলা কবিতার বিভিন্ন মুদ্রিত ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের পত্রিকায় তাঁর কবিতা...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..