জনবসতির ওপারে জ্যোৎস্নাপল্লী

চিরঞ্জীব হালদার
কবিতা
Bengali
জনবসতির ওপারে জ্যোৎস্নাপল্লী

এই জনবসতির ওপারে কোন জ্যোৎস্নাপল্লী আছে কি?

ভিন্সেন্ট হেঁটে যাচ্ছেন।
সারি সারি মূক আলপথ।
তিনি কি শীর্ন জল ধারার ক্ষণপ্লাবী সাক্ষাতকার
আর কচি মাছের তাবুর কানকোতে লেগে থাকা হৃদবর্নের উপছানো আলেখ্য।

তার উলঙ্গ পায়ে কি রক্তের নুপুর বাঁধা ছিল।
এখন দুগ্ধবতী ধানক্ষেত।

ভিন্সেন্ট ও তার প্রেমিকার পোস্টমর্টেম সঙ্গম কার্ত্তিকের নিশাহাওয়ায় নিরুদ্দেশ ছিল কিনা
কে বলে দেবে।

দুই.

একটা মিথ্যাবাদী আর গাম্বাটকে দিয়ে
আজ সমস্ত জুতো সেলাই করিয়ে নেবো।
বিনিময়ে উলটে আমার কিছু মিথ্যের নজরানা
জড়ো হলো।
এরপর কি ভাবে বমি করতে হয় শিখলাম।
মুখে অতি দামী প্রাসাধন।
প্যণ্টালুন থেকে কেনা চড়া মেয়েদের পোষাক।
দুমাসের সুন্দরী অন্তস্বত্ত্বা যে ভাবে বমি করে
আমি সমূহ রোদদূর মেখে নিজের আত্মার গায়ে
বমি ঝেড়ে ফেলছি।
কি আশ্চর্য টক টক গন্ধ কখন যে
পাকা ক্যাডবেরির গন্ধ ছড়াচ্ছে
যতক্ষন না আমাকে সবাই সনাক্ত করতে পারে প্রকৃত।
আমার সোনার জুতোর মধ্যে হা – ক্লান্ত মোজা
যখন অস্ত যান আমার দামী চামড়ার বেল্ট
ওরফে বাংলা দড়ি প্যান্ট কারো কারো কাছে চুড়ান্ত পেশাদার খুনির হাতিয়ার।
মন্টোকে বলি-
দোহাই আমাকে আর একটুু ঝাঁড় পোঁছ করে নাও
অন্তত একটা কবিতার জন্য
খুবসুরত বিবির সাথে তুলকালাম হতে পারে।
আজ উলটো রথে তার জন্য হাড়কাটা গলিতে
সান্ধ্য পাঁপড় ভাজা নিয়ে অপেক্ষা করবো।

 

তিন.

আজ সারাদিন একখান গরুর কবিতা লেখার ইচ্ছায় গবাক্ষ পথে।
কি আশ্চর্য দেখি এক গাছ
গরুর মত হাম্বা দিতে দিতে মাথা দোলাচ্ছে।
এখন স্বায়ংকাল।
চতুষ্পাঠীর কচিকাঁচারা অনেক আগেই ফিরে গেছে।
পেঁচারা সান্ধ্য বর্নণা বুঝে নিচ্ছিল নিজেদের মধ্যে।

যা বাব্বা চারপেয়ে গরুর প্রকৃত ধারণা নতুন ভাবে
করতে গিয়ে নির্ঘাত গোস্পদে ডুববো।
আমার চারপাসে সারিসারি খড় ছাড়া আর কিছুই দেখছি না।
দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার আর নেমপ্লেট গুলো
চাপড়া চাপড়া ঘুটে তে ভরে উঠছে
সারি সারি ইমারত থেকে সমবেত হাম্বারর ভরে উঠছে।
অথচ কোন গোরুর দেখা নেই।

আমার আর ঠিক ঠিক গরু বিষয়ক কবিতা লেখা হয়ে উঠলনা

 

চার.

আজ আলোর কোন ভুমিকা নেই।
দিগন্ত বলয়ে পূর্ন বয়স্ক জ্যোৎস্নার কিছু অস্থি পাওয়া গেছে।

এসো।
গায়ে নামাবলি চাপিয়ে নাম কীর্তন ধরি।
সামর্থ মত প্রস্তুত থাকো নুলো হাত।
এই ভগ্ন কব্জায় কত কেচ্ছাবাজ
জামা খুলে হেঁটে গেছে গেদে সীমান্তের নিস্পৃহ রেল পাতের স্নেহের সন্ধানে।
এই যে আজান বৃক্ষ, সমস্ত পাতারা বলে দিতে পারে নাভি চন্ডালের মুছে যাওয়া সম্পর্কের স্রোত।

আজ আর টিকিট পরীক্ষক নেই।
পেতলের ঘন্টা নেই।
কেশোমোড়লের বেয়াদপি নেই।
দেখ দিগন্ত বলয়ে রাশি রাশি
রজনীগন্ধ্যা নাগচম্পা কান্নাকাকলি।
আত্মাবদলের সন্ধিক্ষনে প্রকৃত আবাসের ছাউনি রচিত হোক।

চিরঞ্জীব হালদার। কবি। মূলত ক্ষুদ্র পত্র -পত্রিকার লেখক। জন্ম- ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৬১, গাববেড়িয়া; দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পড়ালেখা করেছেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা। লেখালেখির শুরু গত শতাব্দীর আশির দশক। শুধু কবিতা আর ভালো কবিতাই তাঁর আরাধ্য। এপর্যন্ত নির্মিত কাব্যগ্রন্থ ষোলটি। প্রকাশিত সাতটি। যৌথ সংকলন একটি। সম্পাদিত কবিতা...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ