জনৈক বুদ্ধিজীবির শেষ চিঠি

সঙ্কর্ষণ ঘোষ
কবিতা
Bengali
জনৈক বুদ্ধিজীবির শেষ চিঠি

উপবাসী ঈশ্বর

আমাদের এতো ভয় করো কেন বলোতো
সত্যিটা মুখে না বলে রেখে’দি লিখতে,
হাতে রেখেছি কী ভয়জাগা কোনো অস্ত্র
দেখেছো কখনো মুষ্ঠি চালানো শিখতে?

ভাবনায় ডুব শীর্ণ স্বপ্নালু চোখ
ঈশ্বর নামে প্রণিপাত ছাড়া করিনি,
কলমের ধার কেতাবের বাকধারা স্রেফ
খোঁচায় রক্ত মাখেনি তো পুষ্করিণী।

তবু দিনশেষে বুক ফুঁড়ে হয় ঝাঁঝরা
গুটিকয় ঐ যান্ত্রিক বন্দুক নয়,
সত্য আর প্রতিবাদ মানে ঈশ্বর
নিশ্চুপ তবু অক্ষর কতো বাঙ্ময়।

সন্ধ্যের সাথে মাস শেষ হতে চললো
গোগ্রাস তবু জ্ঞানরূপ খিদে ঠাসা পেট,
বিভাজনটুকু রয়ে গেছে শুধু যুগভর
সন্ধান শেষে আত্মাই হাতে দিই ভেট।

জাকাতে হোক এইটুকু দান-খয়রাত
নতুনের হাতে মৃত্যু হোক পুরোনোর ,
কানাতে উপচানো হোক ঔদার্য
দু’কলম স্বাধীনতা চাই প্রাণ জুড়োনোর।

মানুষই শেষে উপবাস রেখে ভেঙেছে
ওপরে রোজা রাখছেন জগদীশ্বর,
বিজয়ী সেই কবিদের প্রাণ গুনছেন
উন্মুখ বাতায়নে খোঁজে যারা ঈশ্বর।

জনৈক বুদ্ধিজীবির শেষ চিঠি

আমাদের টিকে থাকাটুকু বুঝি তরজায়
চাইনা সেভাবে পৌঁছোতে সিদ্ধান্তে,
হই যতো বীরই ঠিক থেমে যাবো দরজায়
গর্বিত বহুবচনই তো যুদ্ধান্তে।

প্রেম পরিণতি পেলো শেষে নাকি পেলোনা
জয় কিসে দেবো ‘হিন্দেই’ নাকি ‘রামকে’,
ভুলে যাওয়া যারা ভোলবার মতো ছিলোনা
মুঠো-বিপ্লবে দিতে গেছেটা কে দামকে?

আলোচনা মানে আড্ডায় এক কাপ চা
পরচর্চাটা সমাজের কাজ নৈতিক,
দেশখানা শুধু আদপেই খোঁজে খোঁপচা
কবি বুঝেশুনে মত দিও রাজনৈতিক।

আইনের চোখে কলা ছোঁড়ে খুনি ধর্ষক
ভুখাদের খুঁদকুড়ো রোজই লুঠপাট হয়,
কলমের ডগা মানে সাদাকালো স্পর্শক
ক্যামেরার চোখ “ফিরে দেও” ছুঁতে পড়ে রয়।

বুদ্ধি থাক বন্দীই আমি বোদ্ধা
নৌকোতে বাই ঠিকবেঠিকের ঊর্মি,
আসলেই এক সাহসিক অতি যোদ্ধা
রাত্রে শহীদের প্রতি সহমর্মী।

লজ্জার মাথা খেয়ে বলে ওঠো পারিনা
মেকি বল রেখে পারো যদি হও নির্ভয়,
অকারণ তর্কেও কেউ জিতি হারিনা
বিপরীতে হাঁটো দুর্দম তুমি দুর্জয়।

 

সম্প্রীতি

আমাদের পূজা কাঠামোতে সমাপন
জানিইনা যাকে শ্রদ্ধা জানাবো কি করে
নেমে যাই শেষে ভক্তিখনন আকরে
রতনের নামে ভগবানে ক্ষমাপণ।

সুদ আমাদের গাড়ি বাড়ি সোনাদানা
রেণু রেণু নমি আসলের মতো দামে…

ঘুম ভেঙে যাওয়া পুরুষোত্তম নামে
মন দেবো কাকে আমরাই যদি কানা?

জানি নামাবলী চড়াবো চাদর ফেলে
গিনিটিকে সেই পাথুরে পায়েতে রাখা…

দুই চোখে সেই মোহন মূরতি মাখা
ইরাবতী নদী স্রোতস্বিনী তিনি এলে।

ভাগের ঈশ্বরে পাথরের অধিকার
ইমানের দাম দেয়াল না রাধিকার?

(শেক্সপিয়ারিয়ান সনেটের রাইম স্কিম ABBA CDDC EFFE GG প্রথম অক্ষরগুলো পরপর ওপর থেকে নীচ অবধি পড়লে নামকরণের কারণটা বোঝা যাবে। পুরোপুরি শেকসপিয়ারিয়ান সনেট এটা নয়। কারণ রিদম স্কিম ঠিক হলেও গঠনমূলক ৪-৪-৪-২ ফলো করা হয়নি। প্রত্যেক লাইনে ১৪টি অক্ষর বর্তমান)

 

চলিত-পুরাণ

কতোদিন বাদে দেখা হলো, বল অনিকেত?
অভিমুখ শুধু বিপরীতমুখী গতিপথ।
যুদ্ধাবশেষে আমি পরাজিত পদাতিক।
তুই বুঝি ঐ জয়ীপক্ষেরই অতিরথ?

থাকাটাই চোখে আঙুলের খোঁচা দিয়ে যায়।
বেতনের টাকা সব জুড়ে থাকে পকেটের,
স্যালারির চেক সেদিকের থেকে অচেনা।
উত্থান বুঝি দিতে পারে চাকা, রকেটের?

সারাদিন খেলে কখনো ভাবিনি বাড়ি যাই…
তবু ফেরা হতো সে শাসন মনে পড়লে।
বড়ো হয়ে গেছি… হঠাৎই কিভাবে জানিনা।
বড়ো কাঁদে বুক মা’র আঁচল মনে করলে।

অনিকেত, তুই বহুকাল বাড়ি যাসনা।
সেভাবেই বুঝি সমঝোতা করি আমিও,
অবহেলাটা তো অতীতের প্রতিনিধিদের।
সয়েছিলো যারা আমাদের বাঁদরামিও।

এখানেই ঠিক মিলে গেছি দু’য়ে বুঝলি?
চেনা দুটো ছাদ হারিয়েছি আমি অভাবে।
বিদেশের বালিয়াড়ি জুড়ে তোর একা ঘর।
আশ্রয়টুকু ছুঁড়ে ফেলে দিলি স্বভাবে।

নতুনের সাথে যুঝবোনা আর অনিকেত।
ভেবে দেখ, জয়ী বলে নিয়তঃ কী হারিনা?
জীবনের খেলা একই পথে কতো অভিমুখ।
ফেরারি তবুও ঘরে ফিরে যেতে পারিনা।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ