আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
সন্ধ্যের আগেই শীতের এইসব ক্ষীণ দিন
ঢেকে ফেলে ডাইনীর চুলের মত আঁধার।
দু’একদিন আমাকেও তো কেমন ভুতে পেয়ে বসে
রোজ রোজ অচেনা রিক্সাওয়ালাকে চেনা পথ
চিনিয়ে চিনিয়ে ঘরে ফিরতে ভীষণ একঘেয়ে লাগে।
আমি পথ হাঁটি গন্তব্যে যাবো বলে
অথচ আজন্ম বাউল মনের সাধ
যাযাবর জীবনের পথে।
গৃহে নয়, গন্তব্যে নয়
ভাবি,পথ আমাকে নিয়ে যাক
দূরে, বহুদূরে অচেনা অন্য কোথাও।
এই পথ কোনোদিন আর না ফুরাক।
মাথার ভেতরে উদ্ভ্রান্ত চিন্তা;
অবসন্ন পায়ে আমি হেঁটে চলি
আমার পাশে বিকেলের ছুটি হওয়া বিদ্যায়তন,
জনশূন্য খেলার মাঠ, মোড়ের চায়ের দোকান
সব কেমন বহুকাল আগের
স্থিরচিত্র বলে ভ্রম হয়।
মনে হয় কোনো পরিত্যক্ত ভৌতিক নগরে
আমি যেন সত্যিই হারিয়ে গিয়েছি এই শীতসন্ধ্যায়।
কুড়োনো কাগজ কিছু জড়ো করে
অদূরে পথশিশুরা আগুন জ্বেলেছে।
মনে পড়ে, এমন শীতরাতে
উনুনের আঁচে হাত সেঁকতে সেঁকতে
কত রূপকথা শুনেছি ছেলেবেলায়।
হয়তো শিশুদের দল গায়ে আলোয়ান জড়িয়ে
শরষে খেতের আলে আলে আজও
ছোঁটে ফড়িং হয়ে শীতের সকালে।
একদিন আমিও শামিল ছিলাম ওদের দলে!
কত বছর হয়ে গেল আমি শরষে ফুলের মাঠ দেখিনি।
ফুলের পাপড়ি থেকে রেনু তুলে গালে মাখিনি।
জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ভোরের শিশির,
হলুদ গাদার মৌ মৌ গন্ধ,
পানাপুকুর, ঢোলকলমির ঘাট
এমন আরও কত শত শীতের আনন্দ আমার।
এখনও এই শীতের কালে অনেকে হয়তো
খড়-কুটো জ্বেলে গল্পে গল্পে আগুন পোহায়
আমার দূর পাড়াগাঁয়ে গোল হয়ে বসে।
কিন্তু এই পাথুরে পথ, বহুতল ভবনের
বনসাই জীবন পেরিয়ে আমার আর
কোনোদিনই যোগ দেয়া হবে না ওদের দলে।
গোটা দেশটাকেই মনে হয় জরুরী বিভাগ
আমরা দু’জনেও যেন নিজস্ব অসুখে
শায়িত পৃথক কোনো ওয়ার্ডের বিছানায়।
আর এখন, এই হাসপাতালের একলা ঘরে
তোমাকে না দেখার ব্যাকুলতা আমাকে
অসুখের চেয়েও বেশি অসুখী করে তোলে।
অথচ তোমাকে দেখবো বলে পা বাড়াতেই
রক্তস্রোত ছুটে আসে আমাকে ভেজাবে বলে।
পথে পথে এত আহত-নিহত, আঘাতে-অপঘাতে
অকালে ঝরে পড়া প্রাণের ভিড় ঠেলে আমি
তোমার কাছে কিছুতেই পৌঁছতে পারি না যে!
এই আশ্চর্য হীরক রাজার দেশে দেখেছ
কী ভীষণ জীবন্ত প্রাণগুলো কত সহজে
মুহূর্তেই খবরের শিরোনামে হয়ে ওঠে স্রেফ কিছু মৃতের সংখ্যা!
এখানে অসভ্য অধর্মের উল্লাসে কাটা পড়ে
কত অদম্য সাহসী তরুণের প্রাণ।
এ শহরের প্রতিটি গোপন গলি-খাঁজে অথবা
গাঁয়ের পথেঘাটে আলোতে-আঁধারে
প্রকাশ্যে-গোপনে নিষ্ঠুর ঘাতকের দল
কত অসংখ্য তরুনীর শ্বেতপদ্ম বুকে
গেঁথে দেয় তীক্ষ্ণ ছুরির ফলা কেমন অক্লেশে!
কিছু প্রাণ আবার বড় অবহেলায় পুড়ে মরে
জ্বলন্ত চুল্লীতে কাঠকয়লার মত এখানে।
কেউবা আধমরা হয়ে পচেগলে দুর্গন্ধ ছড়ায় বাতসে।
এখানকার প্রতিটি সড়কের পাশে শৌচাগারগুলো
নর্দমার স্তুপগুলো ভরে যায় সদ্যজাত
পরিত্যাক্ত শিশু আর ভ্রুণে।
আর এতসব নির্মমতার ভয়াবহতায়
আমার স্নায়ুগুলো ক্রমশই অবশ হতে চায়,
আমি শুধু অস্থির প্রতিক্ষা করি
তোমার বুকের ছায়ায় মুখ লুকাবো বলে
অথচ পৌঁছতে পারি না পথ চিনে।
কোথায় তুমি? শিগগির কাছে এসো
আমাকে লুকিয়ে ফেল বুকের গভীরে অথবা
চোখের অতলে কোথাও নতুবা অসুস্থ উন্মাদ হবো
এতটা বিভৎসতা সয় না আমার তুমি তো জানো!
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..