ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
বুড়োর কথা শুনে এক গাল হাসল মমিন। ‘চাইল চাস খুড়া? দিমু দিমু। টেঁয়াও দিমু। তয় এককান কতা।’
‘হি হতা?’ জানতে চাইল বুড়ো।
‘কতা মানি অইল যে….’ মেয়েটার দিকে চোখ মমিনের। ‘মানি অইল যে, মানি….আইচ্ছা এদিগে আয়। তরে চুপে চুপে কই।’
বুড়োকে নিয়ে একপাশে গেল সে। সিরাজ আর ফয়েজ হাসছে মিটি মিটি করে। মেয়েটার দিকে একটা চোখ টিপুনি দিতেও দেখলাম সিরাজকে। মেয়েটা উসখুস করছে। চাউনি বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমাদের ভালোভাবে নেয়নি সে। আবার বিড় বিড় করতে দেখলাম ওকে। আমার কেমন জানি খারাপ লাগতে শুরু করেছে। যতই রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন হই না কেন, পুরো ব্যাপারটার মধ্যে একটা নোংরামিও আছে, হঠাৎ করে যেন বুঝতে পারলাম সেটা। আচ্ছা, মেয়েটা আমাদের কী ভাবছে? ওর ¤øান চোখে কি প্রচ্ছন্ন ঘৃণা?
অস্বস্তি বোধ করছি। তবু তার মধ্যে আবার একটা আকর্ষণও।
বুড়ো আর মমিন একটু দূরে গিয়ে কথা বলছে। কী বলছে বুঝতে পারছি না। তবে বুড়োর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে কোনো কারণে রুষ্ট হয়েছে সে। দু’হাত আর মাথা একযোগে নেড়ে নাকচ করে দেয়ার চেষ্টা করছে মমিনকে। তবে মমিনও নাছোড়বান্দা। মনে হচ্ছে, ওর বক্তব্যটা বুড়োকে না বুঝিয়ে ছাড়বে না।
হঠাৎ খুক করে কাশল সিরাজ। তারপর চাপা গলায় বলল, ‘হেই… হেই মিলাউয়া! আহ এদু আনা। আমা হাছে আনা। আহ, চ’ল দেবং চল। টেঙাও দেবং। পাঁচ টেঙা।’
‘আ হি!’ আচমকা চেঁচিয়ে উঠল মেয়েটি। ‘আহ, হি হাছে যেদ? মোগোদা বাঁআল। লের হা…ওয়াক থু…!’
সিরাজের ডাকাডাকি বন্ধ হয়ে গেল। ওদিকে হৈ চৈ শোনা গেল বুড়োর। সমানে গালাগাল করছে মমিনকে। কোত্থেকে জানি কাঠ একটা তুলে নিয়েছে। মাথার ওপর ঘোরাচ্ছে। মমিন দু’হাত তুলে সামলানোর চেষ্টা করছে বুড়োকে। মুখে সমানে বলে চলেছে, ‘আহ খুড়া! থামিয়ে না, থামিয়ে না। আমা হতা শুনিয়ে না….’
‘হি ছুনত ত’ কদানি। মোগোদা বাঁআল! গু হাইয়া বাঁআল। আমি বেচ্চা, ম মিলাউয়ারে বেচ্চা পাইয়ন? মোগোদা মুই, হে ন পাঙ…আ বাঁআল…’
সামলাতে পারল না মমিন। বুড়োর হাতের কাঠের বাড়িটা ওর কাঁধে পড়ল। উহ্ করে ককিয়ে উঠে চোঁছা দৌড় লাগাল নৌকা বরাবর। ডাক দিতে অবশ্য ভুলল না, ‘সিরাইজ্যা, ফয়জা, তালতো…’
সিরাইজ্যা, ফয়জার দিকে তাকানোর সময় নেই তালতো মানে, আমার। দৌড়াচ্ছি। হিলট্রাক্টসে যতই আনাড়ি হই, মিলা মানে বুঝতে যতই দেরি হোক, বিপদ টের পেতে কিন্তু এক সেকেন্ড লাগেনি।
আমাদের পেছনে বুড়ো সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। বুড়োর সাথে যোগ দিয়েছে একটা নেড়ি কুত্তা। সমানে খ্যাঁক খ্যাঁক চালাচ্ছে সেটাও। মনে হয় বুড়োর কুত্তা। এতক্ষণ কোথায় ছিল কে জানে?
কাঠের তক্তায় ধুপ ধাপ পা ফেলে নৌকোয় উঠে গেলাম সবাই। পেছনে তাকিয়ে দেখি, বুড়ো এবং তার কুত্তা কোনোটাই পিছু ধাওয়া করেনি।
নৌকোয় ওঠার আগে রশি খুলে দিয়েছিল সিরাজ। এবার লগি ঠেলে পাড়ের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিল। মমিন হালে গিয়ে দাঁড়াল। হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, ‘টান।’
বিড়ি ধরাতে ধরাতে খ্যাঁক করে উঠল সিরাজ, ‘ধের ব্যাডা। আগে জিরাই লই। দইড়তে দইড়তে জান শেষ। কী হইছিল রে মমিন ভাই?
কালো মুখটা আরো কালো করে ফেলল মমিন। ‘আর কইচ্ছা শালা বুইড়ার কতা। হালা কয়, আঁর মাইয়া বেশ্যানি?’
ফয়েজ কথা বলে কম। তবে এবার হেসে উঠল সেও। বলল, ‘হাতের কাছে এর চেয়ে মোডা গাছের ডেইল পায়নি বুইড়া। আরেক কানা মোটা হইলে মমিন ভাই…..হি হি হি…হা হা হা…’
এবার কাঁধে হাত বুলাল মমিন। ‘দূর ব্যাটা! ইয়ানও কম মোডা ন’। উহ, আসলে তো ব্যথা করের রে ফয়জা…..’
আবার দাঁড় বাইতে শুরু করলাম। সিরাজ ঠাট্টা করল, ‘তালতো, কোয়ালে মিলা নাই।’
কান দিলাম না ওর ঠাট্টায়।
মেয়েটার শরীর নিয়ে মজার আলাপ জুড়ে দিল ওরা। শুনে গা রি রি করতে লাগল। কোনো মেয়েকে নিয়ে এরকম বাজে আলাপ করা যায়, এদের আলাপ শোনার আগে জানতাম না। একবার ভাবলাম বাধা দিই। কিন্তু ওরা আমার কথা শুনবে না, উল্টো হয়তো আমাকে নিয়েই ঠাট্টা–মশকরা শুরু করবে। তাই চুপ করে রইলাম। চুপচাপ শুনে যেতে লাগলাম।
এক নাগাড়ে দাঁড় বেয়ে যাচ্ছি। আমার হাতের চামড়ায় জ্বলুনি শুরু হয়ে গেছে। লাল হয়ে উঠেছে দু’হাতের তালু। ফোসকা পড়েছে। কষ্ট হচ্ছে খুব। ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়ার উপক্রম। বার বার দাঁড় ছেড়ে দিয়ে হাত দেখছি। ফুঁ দিয়ে হাতের জ্বলুনি কমাবার চেষ্টা চালাচ্ছি।
সিরাজ ঘাড় ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কী অইল?’
‘হাত জ্বলছে। ফোসকা পড়ে গেছে।’
‘মাত্র তো শুরু। তখন কইছিলাম না পাইরতান ন’। এগিন ইসকুইল্যা পোলার কাম ন’। টানেন, টানেন। টাইনতে টাইনতে ঠিক অই যাইব।’
প্রচণ্ড অপমানে কান গরম হয়ে উঠল। ইচ্ছে হলো, কড়া করে দু’কথা শুনিয়ে দিই। কিন্তু কী বলব? এই ছেলেটা নৌকায় ওঠার আগে আমাকে এত ইজ্জত করেছে। অথচ এখন? কথায় কথায় ধমকাচ্ছে।
ফয়েজ আস্তে করে বলল, ‘তালতো দাঁড় মুঠো করে ধরে রাখবেন না। ভাঁপ ছেড়ে দেবেন। তাহলে আর জ্বলবে না। ফোসকাও পড়বে না। আর এরকম প্রথম প্রথম সবারই হয়। দেইকবেন দু’দিনে সব ঠিক অই গেছে।’
কৃতজ্ঞতা বোধ করলাম ফয়েজের কোমল কথায়। জবাব দিলাম না অবশ্য।
কিস্তি চলেছে ঢিমে তালে। এত টানছি, মনে হয়, জায়গা থেকে নড়ছেই না। অন্যমনস্ক হওয়ার জন্যে দু’পাশে তাকালাম। দু’দিকে সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের মাটি লাল। আর কাপ্তাই হ্রদের গভীর নীল জলরাশি নিচে। আমাদের তিনটি দাঁড়ের অবিরাম পানি সঞ্চালনে নৌকো এগিয়ে চলেছে তিলে তিলে। সামনের দিকে।
শুধু আমাদের একার নয়, আরো নৌকো–সাম্পান দু’পাশে। কেউ ওপর থেকে মাল বোঝাই করে কাপ্তাইয়ের দিকে আসছে, কেউ কাপ্তাই থেকে যাচ্ছে ওপরের দিকে। ওপর বলতে কর্ণফুলীর উজান। কিন্তু কাপ্তাই বাঁধের ওপাশে পানি ফুলে ফেঁপে উঠে এখন একাকার। বিশাল জলাধারে কর্ণফুলীকে আলাদা করে চিনে নেয়ার কোনো উপায়ই নেই।
হাত জ্বলছে, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে দাঁড় টানতে। ইচ্ছে করছে একটু জিরিয়ে নিই। দারুণ ক্লান্তিতে নৌকোর গলুইয়ের ওপর সটান শুয়ে পড়তে মন চাইছে। পারছি না। একবার সে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সিরাজের তাড়া খেয়ে ফের খাড়া হতে হয়েছে। সিরাজ ‘ইসকুইল্যা পোলা’র খোঁটা দিয়ে বলেছে, ‘আমনেরটা যেমন শরীল, আমারটাও তেমন শরীল। হয়রান–পেরেশানি আমগোও আছে। উডেন উডেন….’
ফোসকা পড়ে যাচ্ছে হাতে। দাঁড়ের গোড়াকে মনে হচ্ছে লোহার মতো শক্ত। অকরুণ আর নিষ্ঠুর।
জেটিঘাট থেকে নৌকো ছাড়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত নৌকোর চাকরিটা আমার কাছে ছিল অ্যাডভেঞ্চারের মতো। নৌকোর মালিক আবুল মাঝি সন্ধেয় অনেক আদর–কদর করে চায়ের দোকানে নিয়ে বসিয়েছিল। পাঁচসিকে করে পিস লাল বোম্বে হালুয়া খাইয়েছে। সাথে ডুবো তেলেভাজা পরোটা। অনেক কথা বলেছে সে আমাকে। বেশিরভাগই উৎসাহ–উদ্দীপনামূলক। আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি শুনে খুব আফসোস টাফসোসও করেছে। তারপর সান্ত¦না দিয়ে বলেছে, ‘আমনে ঠিক কামটাই কইরছেন। মরতপোলার জীবনে কত কষ্ট–সিজ্জত আসে। এগুলারে ডিঙ্গাই যাওন লাগে। আরে মিয়া, জেল–ফাঁসি মরতপোয়ারলাই….আমনে একদম চিন্দা গইরবান না। হে হে হে…।’
ঝোঁকের মুখে নৌকোর চাকরিতে নাম লিখিয়ে কিছুটা চিন্তিত যে ছিলাম না, তা কিন্তু নয়। যত কিছুই হোক, শিক্ষিত ছেলে। নৌকোর চাকরি শিক্ষিত ছেলেদের কাজ নয়। ইজ্জতেরও ব্যাপার স্যাপার। তবু কিছুটা অনন্যোপায় হয়ে এবং কিছুটা অ্যাডভেঞ্চারের লোভে অনেকটা জোর করে সিরাজকে বাধ্য করেছি আমাকে নৌকোয় নিতে রাজি হওয়ার জন্যে। এটা ঠিক, ও না হলে আমার মতো ‘ইস্কুইল্যা পোলা’কে কেউ সহজে নগদ টাকা বেতন দিয়ে চাকরিতে নিতে চাইত না।
আবুল মাঝির সান্ত¦না ভালো লাগল। তাকে বললাম, ‘হ্যাঁ, আমি জীবনকে অনুভব করতে চাই। সংগ্রাম করে মানুষ হতে চাই। আমি জানি, আমি তা পারব। কারণ মানুষ যা করেছে, মানুষ তা পারবে।’
আমার কথা শুনে খুব উৎসাহের সঙ্গে মাথা ঝাঁকিয়েছে আবুল মাঝি। কী বুঝেছে কে জানে। তবে বলেছে, ‘অবশ্যই। অবশ্যই। আমনে একদম চিন্দা কইরবেন না।’
সুতরাং নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম। ভেবেছি, আমি শিক্ষিত ছেলে। এরা আমার শিক্ষার দাম অবশ্যই দেবে। নৌকোয় ঠিক কী কাজ করব, তখনো ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। তবে যা–ই করি, এরা আমাকে দারুণ সমীহ করবে নিশ্চয়।
কিন্তু জেটিঘাট থেকে নৌকো ছাড়া মাত্র সিরাজের ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন। কথায় কথায় ধমক ধামক আর বিদ্রুপ। নৌকোর দাঁড় টানাটা অভ্যাসের ব্যাপার। নতুন কেউ একেবারে প্রথম থেকেই ঠিকভাবে টানতে পারে না। দাঁড়ের গোড়ার দিকটা দু’হাতের মুঠোয় ভরে শক্ত করে ধরতে হয়। তারপর সামনে ঝুঁকে দাঁড়ের পাতা ফেলতে হয় পানিতে। খাড়াভাবে। এরপর হ্যাঁচকা টানে পেছনে প্রায় শুয়ে যেতে হয়। দাঁড়ের পাতার ধাক্কায় পানি উথলে ওঠে। নৌকো এগোয় সামনের দিকে। কিন্তু পাতা চ্যাপ্টা করে ফেললে পানির প্রতিবন্ধকতা না পেয়ে পিছলে যাবে। টানের চোটে দাঁড়িও পড়বে উল্টে। সময়মতো সামলাতে না পারলে পেছনে পড়ে গিয়ে মাথায়ও চোট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আমাদের নৌকো তিন দাঁড়ের। জেটিঘাট থেকে নৌকো ছাড়ার সময় আমাকে দেয়া হলো মাঝখানের দাঁড়। ফয়েজ আর সিরাজ মিলে ভালো করে বুঝিয়ে দিল দাঁড় টানার কায়দা–কানুন। ফয়েজ একটু হেসে বলল, ‘তালতো, সমস্যার কিছু নেই। আমরা কীভাবে টানি দেখবেন। টাইনতে টাইনতে অভ্যাস হই যাইব।’
সিরাজ বলল, ‘মানুষ মায়ের পেট থেইক্যা কাম শিকি আসে না। আমরা হাইরলে আমনেও হাইরবেন।’
‘হারমু’ যে সে বিশ্বাস আমারও কম নয়। তবু ওরা যখন আমার হাতে দাঁড় ধরিয়ে দিতে গেল, কেমন যে লাগল! কোত্থেকে লজ্জা এসে ঘিরে ধরল। আমি স্কুলের ছাত্র, এএসসি পরীক্ষা দিয়েছি, সামনে কলেজে ভর্তি হবো…আমি দাঁড় টানতে যাচ্ছি? আমি নাইয়া? চট করে তাকালাম চারপাশে। না, কাছাকাছি কেউ নেই। নৌকো ঘাট থেকে লগির ঠেলায় অনেক দূরে চলে এসেছে। জেটিঘাটের লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত। একটা কিস্তি নৌকোয় কে কী করছে, ওটা তাদের মাথায়ও নেই।
অস্বস্তি আর লজ্জাকে কঠোর হস্তে দমন করলাম। মনে মনে নিজেকে বোঝালাম, সংগ্রাম করে মানুষ হওয়ার যে স্বপ্ন আমি দেখছি, এটা তার শুরু মাত্র। এখানে কষ্ট আছে, ক্লান্তি আছে, নিজেকে সহিষ্ণু করে তোলারও ব্যাপার আছে। সঙ্কোচ কেটে যেতে লাগল। দারুণ উৎসাহ বোধ করলাম এমনটা ভেবে।
কিন্তু দাঁড় টানতে গিয়েই হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে গেলাম। অসম্ভব কঠিন আর জটিল এক কাজ। প্রথমত বাকি দু’জনের সাথে তাল মেলাতে হবে। আগে পিছে ফেললে হবে না। দ্বিতীয়ত, দাঁড় ফেলতে হবে ঠিক মতো। আমার সমস্যা হচ্ছে, তাল মেলাতে গেলে দাঁড় ঠিক মতো পড়ছে না, আর দাঁড় ঠিক মতো ফেলার চেষ্টা করতে গেলে তাল মেলানো হচ্ছে না। দু’একবার দাঁড়ের পাতা পানিতে চ্যাপ্টা হয়ে পড়ার কারণে পেছনে চিৎ হয়ে পড়তে পড়তে অল্পের জন্যে বেঁচে গেলাম।
হালের গোড়া থেকে মমিনের খবরদারি, ‘হেই তালতো, সাবধান! পিছনে পড়ি গেলে মাথা ফাডি যাইব। দেখি শুনি কাম করেন।’
পেছনের দাঁড়ি সিরাজ। ‘ধেত্তেরি মিয়া!’ গর্জে উঠল সে। ‘কী ঘোড়ার ডিমের কাম গরেন। আমরা কেমনে টানি চোগে দেখেন না?’
অপমান বোধ করলাম ভীষণ। সিরাজ এভাবে কথা বলছে কেন আমার সাথে? ও না আমাকে সম্মান করে ‘ভাইসাবজি’ ডাকত? আমি তো ওদের মতো মূর্খ না। লেখাপড়া জানি। এখন ওদের সঙ্গে নৌকোর কাজ করলেও আমার লেখাপড়ার একটা দাম আছে না? আমাকে কাজ শেখাতে এলেও সেটা ওদের মাথায় রাখতে হবে নাকি? হাসিমুখে কথা বলবে, একবার না পারলে আবার দেখিয়ে দেবে। ওরা আমাকে ধমকানোর সাহস দেখাবে কেন? ওদের এটা বুঝতে হবে যে, আমি ওদের চেয়ে অনেক বেশি জানি। বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘মিয়া, নতুন নতুন এক আধটু ভুল তো হবেই। আপনারাও কি একবারেই শিখে ফেলেছিলেন নাকি? ভুল করেননি একবারও?’
আমার কথার ঝাঁজে একটু থমকে গেল সিরাজ। হাল থেকে মমিন বলল, ‘এই সিরাইজ্যা, রাগারাগি করছ কিয়েরলাই? আস্তে আস্তে শিখক না? দেখাই দে, দেখাই দে…..’
ফয়েজ মৃদুস্বরে বলল, ‘তালতো, আমনে টাইনেন না। আগে দেখেন আমরা কীভাবে টানি।’
কৃতজ্ঞতায় মন ভরে উঠল মমিন আর ফয়েজের ওপর। সিরাজ অবশ্য আর উচ্চবাচ্য করল না। তবে আমি খুব মাইন্ড করলাম ওর আচার–ব্যবহার দেখে। নিজের দেশের ছেলে হয়েও বুঝতে চাইবে না সে আমার সমস্যাটা? ধ্যাৎ!
সূর্য পাহাড়ের আড়ালে চলে গেছে অনেকক্ষণ। কাপ্তাই হ্রদে সন্ধে ঘনিয়ে আসছে। হ্রদের জলে পাহাড়ের ছায়া। সবুজ পাহাড়ে কালো অন্ধকার; জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। ভেবেছিলাম সন্ধে হতেই নৌকো চালানো বন্ধ করে দেবে মাঝি। দাঁড় টানার এ কষ্টকর কাজ থেকে আজকের মতো রেহাই পাব। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দেখতে না পেয়ে হতাশ হলাম। শরীরে কাটছে না আর। ইচ্ছে হচ্ছে ছইয়ের নিচে গিয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিই। কিন্তু তার উপায় নেই। হাতের জ্বলুনি অসহ্য হয়ে উঠলেও কাউকে বলে যে লাভ হবে না, সেটা বুঝে গেছি। নৌকো এতক্ষণ সোজা চলেছে। এখন বাঁক নিচ্ছে উত্তর দিকে। বাম পাশে পাহাড়। পাহাড়ের গা ঘেঁষে যাচ্ছে। ডানপাশেও পাহাড়। তবে কিছুটা দূরে। সামনেও পাহাড়। সামনে মানে আমাদের পেছনে, মাঝির জন্যে সামনে। বুঝতে পারছি না শেষ পর্যন্ত পাহাড়ের গোড়ায় গিয়ে থামবে কিনা? মনে হচ্ছে তাই হবে। পাহাড়ের ওপর তো আর উঠতে পারবে না। মন প্রফুল্ল হয়ে উঠল।
রাতের আকাশে চাঁদ। হ্রদের জলে উত্তুরে বাতাসে জাগা ঢেউ। চাঁদের আলো ভেঙে পড়ছে যেন ঢেউয়ের ওপর। বিশাল নৌকোর গলুইয়ের দু’পাশে ঝপাঝপ শব্দ। দাঁড়ের ক্যাঁ কোঁ…। হাল থেকে কান্নার শব্দ শুনে সচকিত হলাম। কে কাঁদছে? কান খাড়া করেই হেসে উঠলাম মনে মনে। কান্না নয়, গান। মাঝি গান গাইছে চিকন গলায়।
কিছু বলব কিনা ভাবছি, তার আগে সিরাজই বলে ফেলল, ‘মমিন ভাই, বউ মারা গেল কবে?’
গান থেমে গেল। একটু পরে প্রশ্ন করল মমিন, ‘কার বউরে, সিরাইজ্যা? কার বউ মারা গেছে?’
‘আরে তোমার বউ।’
‘যাশ শালা! আমি তো আইজও বিয়াই গরি ন’। বউ মইরব কেমনে?’
‘কী কও? তোমার গান হুনি মনে অইতাছে বিয়া গরি বউ হুদ্দা মরি গেছে গৈ…’
ফয়েজ হেসে উঠল খিক খিক করে। অন্ধকারে মুচকি হাসলাম আমিও।
পানিতে ঝপাঝপ শব্দ তুলে নৌকো এগোচ্ছে সামনে। আমাদের পেছন থেকে এগিয়ে আসছে একটা ছোট নৌকো। এক সময় পাশে চলে এল। তারপর এগিয়ে গেল পেছনে রেখে। আমাদের বড় নৌকোর গতি কম। মনে হচ্ছে জায়গা থেকেই নড়ছে না।
‘মমিন ভাই,’ সিরাজের গলা শোনা গেল। ‘নয়াবাজার ধরবা নাকি নৌকা?’
কেশে গলা পরিষ্কার করল মমিন। ‘নাকি বালুখালি চলি যাবি? কিয়া কছ রে, ফয়জা?’
‘ওহোঁ।’ ফয়েজ আপত্তি জানাল। ‘ধানপাতার ফোঁড়ে দি শান্তিবাহিনী ধইরব। কাইলকা বলে ফইজার নৌকারে ধরছিল।’
‘কে কইছে? কাত্তে হুইনছস তুই?’
‘মোস্তফা মাঝিয়ে কইছে। দরকার নাই। নয়াবাজার থাকিয়েরে বেইন্না ভোরে উডি…’
‘আইচ্ছা। ঠিক আছে, টান টান। তালতো, জোরে টানেন। সামনে নয়াবাজার, চা খাওয়ামু কইলাম।’
তালতো মানে আমাকে বলা কথাটা। সিরাজ আচমকা হাঁক দিল, ‘হেইয়ো…..জোরসে জোয়ান হেইয়ো….সাবাইস….!
ফয়েজ সাড়া দিল, ‘হুঁ…উ! আরে….জ্জোয়ান, হেইয়ো।’
পরের পাঁচ মিনিট দাঁড়ের ঝপাঝপ, ছইয়ের ওপর থেকে মাঝির হুম…হাম আর সিরাজ–ফয়েজের হেঁইয়া–হেঁইয়ো ছাড়া আর কিছু শোনা গেল না। ওদের জোশ ছড়িয়ে পড়ল আমার মনেও। নিজের অজান্তেই যেন বলে ফেললাম, ‘সাবাস….!
হাতের জ্বলুনি ভুলে কিছুক্ষণের জন্যে মনে হলো, আরে এটাই তো হলো জীবন। পুরুষের জীবন, সংগ্রামী তরুণের জীবন।
আরেকটু সামনে এগোতেই ঘাড় ফিরিয়ে দেখি, নৌকো পাহাড়ের গোড়ায় যাচ্ছে না। আস্তে আস্তে মোড় নিচ্ছে পশ্চিম দিকে। ওদিকে যেন একটা পথের আভাস জাগতে শুরু করেছে।
ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছে পথটা। নৌকো চলছে তিন দাঁড়ের টানে। হালের গোড়ায় মাঝি আবার গান ধরেছে। সুরটা বুঝতে পারছি এখন। ‘ও দাই মা, কিসের বাদ্য বাজেরে….’ রূপবানের গান।
নৌকোর সামনের দিকটা দাঁড়িদের জন্যে পেছন। বারবার ঘাড় ফিরিয়ে সামনে, মানে পেছনে তাকাচ্ছি।
পথের যে আভাসটা ফুটতে শুরু করেছে, সেটা ক্রমে ক্রমে প্রসারিত হচ্ছে। সে দিকের আকাশটাও কেমন যেন একটু বেশি আলোকিত। চাঁদের নয়, আলগা লালাভ একটা আলোর আভাস। ব্যাপারটা নিয়ে ভাবার অবকাশ পেলাম না। হঠাৎ পশ্চিমের পানি আর পাহাড়ের গোড়ায় একটা–দুটো বাতি জ্বলে উঠতে দেখলাম। পর মুহুর্তে আরো কয়েকটি। মিনিটখানেক পরেই বোঝা গেল পরিষ্কার। সামনের বাতিজ্বলা জায়গাটা একটা টিলা। টিলার মধ্যে ঘর–বাড়ি। আরেকটু এগোতে ছোট–বড় নৌকোর সারি দেখা গেল। নৌকোয় বাতি জ্বলছে মিট মিট করে। মানুষজনের কথাবার্তা আর কাশির আওয়াজও শোনা যেতে লাগল। ছইয়ের ওপর থেকে মমিনের গলা ভেসে এল, ‘ফয়জা, লগি ল’। সিরাজ দাঁড় আটকা। তালতোরেও আটকাইতে ক’। নৌকোর গঁ (বেগ) বেশি।’
দাঁড় বন্ধ করে গলুইয়ে গিয়ে দাঁড়াল ফয়েজ। নৌকোর ভেতর শুইয়ে রাখা লম্বা একটা বাঁশ নিল সিরাজ। বাড়িয়ে দিল ফয়েজের দিকে। তারপর আচমকা খিঁচে উঠল আমার দিকে চেয়ে, ‘হাঁ করে খাড়াই রইছেন কিয়েরলাই। সরেন না গলুইরতন। দেখেন না লগি ধইরব। যান যান, ভিতরে যান।’
ঝাড়ি খেয়ে বেদিশা অবস্থা আমার। জানি না এরা কী করতে চায়। তবে বাঁশের লগি নিয়ে টানাটানি করার অর্থ যে নৌকোর বেগ সামলানোর জন্যে এটা বুঝতে পেরে স্বস্তি পেলাম। সিরাজের অনর্থক বকুনি তাই গায়ে না মেখে নেমে এলাম গলুই থেকে।
লগি হাতে দাঁড়িয়ে আছে ফয়েজ। হালের গোড়া থেকে মমিন চেঁচাচ্ছে, ‘সামনে চা সিরাইজ্যা। নৌকা কোনানদি ভিড়ামু ক’।’
সিরাজ বাঁদিকের কথা বলল। পানিতে লগি ফেলতে শুরু করল ফয়েজ। আস্তে আস্তে ভিড়ে গেল নৌকো টিলার গায়ে।
একটু পরে সিরাজ আর মমিনসহ বাজারে উঠলাম। ফয়েজ রয়ে গেল নৌকোয়। টিনের চুলোয় রান্না চড়িয়েছে সে।
বাজারটা টিলার ওপর। রাতের বেলা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে পাহাড়ের একটা অংশে গড়ে উঠেছে এটা। বাঁধ দেয়ার ফলে কর্ণফুলীর পানি ফুঁসে উঠে সমতল জায়গাগুলো ডুবিয়ে দিয়েছে। পানির নিচে চলে গেছে ছোট ছোট পাহাড়–টিলা। মাথা তুলে আছে কেবল বড় বড় পাহাড়। আর সেগুলো এখন দেখাচ্ছে ছোট–বড় বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। নয়াবাজার নামের এই বাজারটাও তেমনি এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের একাংশ মাত্র।
পানির কাছ থেকে পথ উঠে গেছে ওপরের দিকে। দু’পাশে চায়ের দোকান আর মুদি দোকান। ইলেক্ট্রিসিটি নেই। কুপি বাতির আলোকে বিষণ্ন দেখাচ্ছে চারদিক। আমার কাছে অবশ্য দারুণ লাগছে। আজন্ম পরিচিত পরিবেশ থেকে রাতারাতি আরেক পরিবেশে এসে পড়েছি। পাল্টে গেছে আমার পরিচয়ও। আমি এখন আর ছাত্র নই, একজন নাবিক। বিকেল বেলা কাপ্তাই থেকে নৌকো ছেড়ে এসেছি। দাঁড়টানার কারণে হাতে ফোসকা পড়ে গেছে। মুঠো করতে গেলেই লাগছে। মনে পড়ছে বন্ধুবান্ধব আর ক্লাসমেটদের কথা। তারা কোথায় আর আমি কোথায়? তারা সম্ভবত দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারবে না যে, তাদের একজন সহপাঠী এ মুহুর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক প্রত্যন্ত টিলার ওপর গড়ে ওঠা একটি বাজারে আর দু’জন নাইয়ার সাথে চা খেতে যাচ্ছে।
চড়াই বেয়ে ওপরে উঠতেই একটা সমতল চাতাল। ছোট ছোট সব দোকানপাট। দোকানিদের সবাই বাঙালি। দু’একজন পাহাড়িও দেখছি অবশ্য। বেশিরভাগই নেঙটি পরা। দোকানে দোকানে ঘুরে সওদাপাতি কিনছে। কারো কারো পিঠে কপাল থেকে রশি দিয়ে আটকানো বাঁশের তৈরি ব্যাগ। নিজেদের মধ্যে কীসব বলা কওয়া করছে বুঝতে পারছি না। অবাক হয়ে চেয়ে দেখছি তাদের। তারা অবশ্য আমার দিকে তাকাচ্ছেও না। তাতে বরং সুবিধে হয়েছে। আমার হাঁ করে তাকিয়ে থাকাটাও তারা দেখছে না।
একটা চায়ের দোকানে ঢুকলাম। নোংরা ছ্যাতাপড়া টেবিল আর বেঞ্চি। খানদুয়েক চেয়ারও আছে। কালো কোটের মতো কী একটা পরে বসে আছে দোকানী। সামনে ক্যাশ টেবিল। টেবিলের ওপর বিস্কুটের কৌটো, মুড়ির টিন। তেল চিটচিটে সিলভারের একটা ট্রেতে ঠাণ্ডা পরোটা আর গুলগুলা। বিড়ির ধোঁয়ায় দোকান আঁধার করে দিয়ে আড্ডা মারছে কয়েকজন। আমরাও বসলাম একটা টেবিল দখল করে। দোকানীর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাঁক ছাড়ল সিরাজ, ‘এই ব্যাটা, চা দে রে।’
‘কী খাইবান, তালতো?’ মমিন আমার দিকে তাকাল।
‘আপনারা যা খান।’ মৃদু হেসে বললাম।
গুলগুলা না পরোটা, তা নিয়ে কথা কাটাকাটি ধরনের সংক্ষিপ্ত আলোচনা হলো মমিন আর সিরাজের মধ্যে। শেষে পরোটা খাওয়ার সিদ্ধান্ত হলো।
দাঁড় টানতে টানতে খিদেটা কেমন লেগেছিল টের পেলাম খাওয়ার সময়। পরোটার চেহারা যা–ই হোক, খেতে ভালোই লাগল। খিদের কারণে কিনা কে জানে।
চা খেয়ে পান মুখে দিয়ে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে তিনজন নেমে এলাম ওপর থেকে। নৌকোয় উঠেই হাঁক দিল মমিন, ‘ফয়জা, ভাত অইছে না রে?’
খ্যাক করে উঠল ফয়েজ, ‘হইছে! ঘরের বউ পাইছ তো। পাঁচ মিনিটে ভাত–তরকারি রেডি।’
আমাদের নৌকোর পাশে আরেকটা নৌকো এসে ভিড়েছে। কিস্তি নৌকো। সেটা থেকে একজন ডাকল মমিনকে, ‘মমিন ভাই, কোনাই যাইবান এইবার? মাইনি নি?’
‘কে?’ সাড়া দিল মমিন। ‘জাফর ভাইনি ও?’
‘হ। কোনাই যাইবান এইবার?’
‘আমরা এইবার সুবলং যামু। আমনেরা কি মাইনি নি? গোফরান মেম্বরের মাল?’
‘না, কামাল চেয়ারম্যানের।’ বলতে বলতে চাদর মুড়ি দেয়া অসম্ভব বেঁটে একজন উঠে এল পাশের নৌকোর ছইয়ের ওপর।
অবাক হয়ে তাকালাম লোকটার দিকে। এত বেঁটে লোক আমি আর দেখিনি। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট হচ্ছে না লোকটার মুখ। তবে বয়স বোধ হয় চল্লিশের নিচে না। আমাদের মাঝি মমিনও উঠে বসল নিজের নৌকোর ছাইয়ের ওপর। আলাপ জুড়ে দিল সমপদস্থ প্রতিবেশীর সাথে।
আমি আর সিরাজ ঢুকে গেলাম ছইয়ের ভেতর। সিরাজ বিড়ি ধরাল। ধোঁয়া ছেড়ে তাকাল আমার দিকে। ‘কী তালতো, চাকরি কেমন লাগের?’
ওর কথায় যে সহানুভূতি নেই, বুঝতে কষ্ট হলো না। তবে ওকে দোষও দেয়া যাচ্ছে না। স্বীকার করতে আপত্তি নেই, দশহাতি দাঁড় টানার ব্যাপারটা আমার কল্পনার ’কঠোর সংগ্রাম’এর চেয়েও কঠিন। কল্পনার কঠোর সংগ্রামে দশহাতি দাঁড় টেনে হাতে ফোসকা পড়ার অভিজ্ঞতা নেই, সহকর্মীর ব্যঙ্গ–বিদ্রুপের ধারণা নেই। কল্পনার কঠোর সংগ্রাম শেষে সাফল্যের আনন্দ আছে, কিন্তু এখানে কঠিন দাঁড়টানার পর আছে আবার সে দাঁড় টানার আতঙ্ক। সবচেয়ে বড় কথা হলো, কল্পনার কঠোর সংগ্রামের নিয়ন্ত্রক আমি নিজেই। কিন্তু এখানে আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, বরং মনে হচ্ছে এদের নিয়ন্ত্রণেই চলতে হবে আমাকে।
সিরাজের কথার জবাব দিলাম না।
চলবে…
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
পরিচ্ছেদ ৩ শীত শেষ হয়ে আসছে।রাঙ্গালীবাজনা ঢোকার মুখের রাস্তাগুলো পলাশ ফুলে ভরে গেছে।অথচ ঠান্ডাই।…..