জাহিদ সোহাগের ছয়টি কবিতা

জাহিদ সোহাগ
কবিতা
Bengali
জাহিদ সোহাগের ছয়টি কবিতা
২০ জুলাই 

ঘাড় ফেরাতেই দেখি, ওদের বেঁধে নিচ্ছো শক্ত করে, পথে কত জলকাদা, রাগী হর্ন; তার চেয়ে এই অনুশাসন ভালো, রাবারের জঙ্গলে থাক, থাক ঘুমিয়ে। আবার ঘুমিয়ে পড়ি, ঘুম তো আসবে, নাকি?

সে চলে যায় তড়িঘড়ি। আমি ঢুলতে ঢুলতে বন্ধ করি দরোজা। এমনই সকাল হয়, প্রতিদিন আটকে থাকি পিচুটিতে। তবে আজ কেনো বালিশের নিচে উটের কুজ; মুঠোভর্তি বালু শূন্যে উড়াই! সারারাত তো ছিলো সে, পায়ের কাছে ফেলে রেখে রাতের পোশাক; আমি কোথায় ছিলাম, হে রাত্রি ভাইবোনের মতো দুটো বাঁশে বেঁধে নিয়ে জাল, খুঁজেছি কি লুপ্তপ্রায় মাছ, অন্যের ফাঁসেও কি দিয়েছি উঁকি? জানি না, সত্যি জানি না।

মনে হলো, তার পায়ের শব্দ ডেকে আনলে ঘরে, বলতাম, আয়নায় দেখো হুক খুলে আছে ব্লাউজের; নীল নীল…


বিবাহিত কবিতা

বাকি আছে আমার শরীরে র্যঁদা টেনে সমান করে নেয়া। যাতে তোমার সাথে আমার ক্ল্যারিকাল প্রেম আরো সহজ হয়।

তুমি ডালভাতে আর একটু আলুভর্তা মেখে নিতে পারো।

বাগানে পোষা ফোয়ারাটিকে দেখে দেখে ভাবতে পারো পদ্মাপাড়ের ছেলেও কেনো শহরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে!

আর তুমি সুযোগ বুঝে, র্যঁদা টেনে টেনে, প্রয়োজনে বাটালি দিয়ে নকশা কেটে, পেরেক ঠুকে দিও, যাতে তোমার সাথে আমার মহিমান্বিত দাম্পত্যের প্রদর্শনী হয়।


ইনসমেনিয়া

অথচ একটাও ওষুধ নেই পাকস্থলি থেকে লতিয়ে উঠবে ঘুমের ডালপালা,

আমি ভাবি, এইমাত্র পুনঃপুন ব্যর্থতা নিয়ে যে অটো স্টার্ট নিল,

তারও নির্ঘুম আছে

ফুটে থাকে তারও কয়েকটি বাতি; আর আকাশের শিশুরা ‘ওই তো, ওই তো খসে গেল’ বলে আঙুল তুলে দেখায় ছোট বোনকে, মানুষের নক্ষত্র। 

ওষুধ পেলে এইসব গল্প গরুর চামড়ার ভেতর

লবণ দিয়ে রাখা যেত। আর অচেনা কেউ, দূরের বা কাছের,

কোনোদিন জুতা পায়ে ইটপাথর ভেবে, আকাশে, ঠুকে ঠুকে যেত

দেবশিশুদের চোখ।


ডোমের সামনে

ডোমের সামনে পড়ে থাকবো না ভেবে

আত্মহত্যাও করি না

 

আমি জানি আমার পাঁজরে কুড়াল

চালাবার আগে সে আমাকে প্রশ্ন করবে

আর আমাকে নিশ্চুপ দেখে

মগজে দুহাত ডুবিয়ে খুঁজবে

শিং কৈ কুঁচো মাছ

গনগনে ঘৃণায় সে মাছ রান্না হলে

খেতে আসবে নেকড়েমুখো শিশুর দল

যারা নার্সিংহোমে এসেছিলো

টুকরো টাকরো রক্তমাংস নিয়ে


ব্লেড 

হাতের শিরা ছুঁয়ে দেখি, এই স্পন্দনের নিচে মালবাহি গাড়ি

টেনে নিয়ে যায় পাথরের ঘোড়া, যাদের খোঁদাই শেষে বাটালিসমেত

ভাস্কর উধাও, হয়ত অপযশ হয়ে গেছে, ভেবে একটু অপেক্ষা করে

সমুদ্রে নামার।

আমি কেনো বারবার এই ইস্পাতের প্রিয়তার কথা ভাবি

কেনো মোড়ক খুলে চুমু খাই শিশুযোনি

এই স্পন্দনের নিচে

দড়ি বাঁধা একটি ঝড় নিশ্চুপ ঘুমায়


মনীষা

আমার চোখে দুটো টর্চ ঠেসে দিয়েছি। ফলে এই রাত্রি পায়ের পাতার উপর ভ্রাম্যমান। গলির মুখে দীর্ঘ পাম গাছ চেনা আঁধার ফুঁড়ে উঠে গেছে, যেন আমি কাঁধে হাত রাখবো, বলবো চলো ভাই একসাথে।

রাত্রি, তুমি কি শরীর? লাবণ্যপ্রভার ছদ্মবেশ? নাকি আমাকে নিয়ে যাবে অন্য কোনো প্ররোচনায়?

দূরে উল্টে আছে কুমিরের তলপেট, যাকে আপাতত টি-স্টল ভেবে খানিকক্ষণ বসি।

চারপাশে শিশ্ন উচানো খদ্দের আর ক্লান্ত বেশ্যা-ভর্তি এই রাত আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করে, যেনো আমি এসেছি কপর্দশূন্য;

আমিও ঠিক সন্দিগ্ধ হই। তোমাকে পাবার পিপাসা এখনো আছে, এখনো বেলপাতা ছিঁড়ে দিতে পারো চোখে, বা নিজের করতল, যদিও পৃথিবীতে তোমার সঙ্কেত নেই, বা যা আছে তা লোকশ্রুতি সেইসব নিয়ে আমি কী করি?

আমি ব্রেইল শিখেছি তোমার শরীর পেয়ে; তুমি নেই, অনেক অক্ষর রয়েছে পাঠহীন। আর এইসব নারী-পুরুষ সামান্য মাংসের দোকান খুলে বেচতে চায় মনীষা!

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..