আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
বাড়ি ফিরে ফের কথা হবে বলেছিলে
শাদামেঘ কালোমেঘ পেঁজাতুলাভরা মেঘ
রাজহাঁস প্রজাপতি মৌমাছির দল ফেরে ঘর
উড়ন্ত ফড়িঙ আর কর্মক্লান্ত অফিসার উঠানের শ্রান্ত শিশুরাও
তুমিও নিশ্চয় আজ ফিরেছো ঘরেই কাজ সেরে
গায়ের গরমটুকু ডলে ডলে তুলে নিচ্ছো ঠাণ্ডা জলে
সাবানের সফেন উল্লাসে
সতেজ হয়েছ মুছে ঘামের গন্ধটুকুন
ঠোঁটেও ছড়িয়ে গেছে চায়ের উষ্ণতা হয়তোবা
চোখ বুঁজে ঘুরে এলে মুঘলি আজম থেকে
অথবা নিজেকে ভেবে আফ্রোদিতি অপ্সরা কিন্নরী কেউ
গুনগুন গলা ভাঁজো আকতারী বাই
বাড়ি ফিরে কতো কাক নিদ্রামগ্ন এতক্ষণে
সন্ধ্যাতারা শুধু রাত জাগে আর ওপারে আরেকজন
প্রতীক্ষার ঘামে নেয়ে ঘন ঘন উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে
মুঠোফোন দেখে, যদি কোনো গান গেয়ে ওঠে
বলেছিলে কথা হবে, কতো কথা বলা হয়ে থাকে
হেমন্তের মেঘের মতোন বলো এসব কথার কথা
একপল্কা বাতাস পেলে উড়ে যায় মন থেকে
উড়ে যায় কোথায় কে জানে…
ঈমানের জোরে মেনে নিতে হয়
তাদের ঘন্টা বেজে গিয়েছিল
আয়ুবৃক্ষের গাছে হতে পাতা
চল্লিশ দিন আগে ঝরেছিলো বুঝি
তবু এত প্রাণ একসাথে যাবে
শিকারের কোনো খেলনা পাখির
বেশে ঝরে যাবে এমন কি ছিলো
লেখা দয়াময় নিয়তির কড়িকাঠে
তবে যার হাতে স্টেনগান ওঠে
যার আঙুলের কারুকাজে আজ
ঊনপন্চাশ বায়ু উড়ে গেল
সেকি দয়াময় নিয়োগ প্রাপ্ত দূত!
সে কি তবে আজ স্বর্গের থেকে
রক্ত রঙিন নকশার স্রোতে
পৃথিবীর রঙ পাল্টাবে বলে
মহাসময়ের ঈশ্বর নিয়োজিত!
তাদের বুঝিবা গায়েবে এলেম
আমাদের নেই দিন শেষে ঘর
শাদা ভাত আর প্রেয়সীর বুক
সন্তান সুখ শান্তিতে টিকে থাকা
খোদা যা করেন মঙ্গল তরে
বান্দা খোদার ইশারার দাস
তবে আর কেন এতো হাহুতাশ
ডঙ্কা বাজাও শঙ্কা না করে আজ
ক্ষুদ্রতা হেতু ভয়ে ভয়ে থাকি
কালো রঙ নিয়ে শরমে লুকাই
দারিদ্র হেতু নম্র কণ্ঠ
ভাগ্যের দিকে দৃষ্টি বদ্ধ রই
বিরাট শিশু কি খেলিছে আজিকে
মানুষ নামের দাবার গুটিকে
অনাসৃষ্টির চাল চেলে চেলে
প্রলয় সৃ্ষ্টি পুতুলের খেলা যার?
স্বপ্ন তো ছিল রেল রাস্তার ধার দিয়ে যাবে
ঝোপঝাড় ঢাকা গলি
পেরুলেই এক ছোটখাটো ঘর ভেঁপু বাজলেই
দৌড়ে দৌড়ে ছুটবে রেলের দিকে
রেল দেখে আর কী এমন হবে
লোহালক্কর ঝপাঝপ ছোটে
মানুষ দেখব নানা রকমের
নানা কিসিমের নানান রঙের নানা বয়সের লোক
নামছে কেউতো উঠছে কেউবা ঝুলে ঝুলে হয় লাল
কিছু গোঁফঅলা কিছু দাঁড়িয়াল
কিছু চকচকে কপোলের লোক
কেউ শিশুতোষ কেউতো রমনী পরম লাস্যময়ী
বড় সখ ছিল একদিন ঠিক
এভাবেই বহুদূর-দূর দেশ
মিরেরসরাই কিংবা চিনকি আস্তানা ফেলে ঠেলে
যেতে চাই আরো যোজনের দূরে
আখাউড়া কিবা ভৈরব ধরে ঘোড়াশালও যেতে পারি
কুঝিক কুঝিক সর্পিল ট্রেনে
কত লোক ওঠে নামে
কেউ বাবুসা’ব কেউ কুলি-মুটে কেউ চানাচুর বেচে
বাদাম ভাজাতে কিন্তু আমার আগ্রহ খুব বেশি
সখ জেগেছিল ট্রেন থেকে যেন
হাটুরে কবিতা কবিগান বই
উড়ে আসে ঘরে ঘরে
অথবা অন্ধ ভিখারির গান
আমার কণ্ঠে বাজে
কখনো মলম বাতের ব্যথাকে মৈনাকে নিয়ে যায়
হকারের হাঁক সাত খুন মাপ
কখনোবা ফের ফাঁসির আদেশ শুনি
কত কত সখ
সব উড়ে যায় ঘোরের গহন কালে
বাড়ি উড়ে যায় শহরের বুকে
ঝোপগুলো ঝরে কোথা
লোকাল ট্রেনের রমরমা স্মৃতি
ম্লান হয়ে পড়ে শীতে —
স্বপ্নে এখন নেই বাড়ি নেই
রেলপথ নেই
ঝোপঝাড় গলি ভুতের গলিতে
হাতিরপুলেতে ঘোরে
আন্তনগর চলে ধেই ধেই
মাঠ প্রান্তর নদী নর্দমা গলি ঘুপচিরা
নিমেষেই সব দূরদূর করে
সরিয়ে সটকে পড়ে
মহকুমাগুলো জেলার ঝোলাতে ঝুলে
সাঁই সাঁই করে সুবর্ণ আর তূর্ণানিশীথা ছোটে
ঝুলে পড়ে সখ স্বপ্নের রং
ছোট ছোট যত রেলের ঠিকানা
ছোট মানুষেরা আম মানুষেরা গ্রাম মানুষেরা
স্বপ্নের দেশে ঝুলে ঝুলে মরে যায়
আমার স্বপ্ন ঝোপ জঙ্গল রেলগাড়ি ছেড়ে
মিল্কি পথের খোঁজে ছুটে যায়
স্বমেহনে রাত কাটে অনিদ্রায়
পাশে বউ কাতরায় ঘোরে
কামজ্বরে — এমন অদ্ভুত
দেশে কেউ মদ বেচে দুধ
খায়, কেউ দুধ বেচে মদ —
এমত দুর্মদ যতো লোক
অনাহারে যদি কারো কাটে
কেউ বসে থাকে ভাণ্ডারের
পাশে, অনর্থক রুচিহীন —
বিবমিষা বিষম ভোগায়
ছায়াপথে আলো খেলে গেলে
কোথাওবা ভালো কেউ বাসে
কেউ মত্ত কেউবা উল্লাসে
মাতে, কারো দিন অর্থহীন
ঝিঁঝির সঙ্গীতে কানে তালা
লেগে গেলে, চোখ মেলে দেখো
পাহাড়ের গায়ে গায়ে কতো
অদ্ভুত আলোর ঝলকানি
কিছু তার দেখিবার কথা
কিছু অনুভবে ধরা দেবে
মনের দুয়ার খুলে দিলে
দিলের ভেতর তার আলো
অনায়াস পথ খুঁজে পায়
তবু ঝোঁপে কোণেকানে কিছু
অন্ধকার জেগে বসে থাকে
অন্ধকার মনে ও মাথায়
মারাত্মক বোবায় ধরায়
মাঝেমধ্যে আঁধারের আলো
বেশ ভালো বিচ্ছুরণ করে
অন্তর্গত যতো আচরণে
জনে জনে চিত্র তার ভিন্ন
তবে, আঁধারের মুগ্ধ রূপ
অভিন্ন ঔদার্যে আমি দেখি
লিখে রাখি, এখানে আলোর
তবু দেখা মেলে, কী কপালে
কে জানে – জীবন যখন সে
স্বমেহনে বেছে নিল পথ
তখন আবার সম্মিলিত
কোন্ গান গেয়ে গেয়ে নাচে
চোখের তারায় দিন রাত
এমন সন্ধ্যায় কোন্ রাগ
বিলাবল কেউ ধীরে গায়
কেউবা হৃদয়ে তার ভোরে
ভৈরবী রাগিনী বিলায়
তবু আমি মুক্তি খুঁজি পথে
মুক্তি বন্ধ্যা স্বমেহন হতে
যৌথস্বর যৌথঘর যদি
জোনাকের আলোর আভাস
আসে, আমাদের আঙ্গিনায় –
ক্লান্তশ্রান্ত অবিশ্রান্ত সুরে
সারাক্ষণ গুন্জরে খাম্বাজ
বিষন্ন রাগিনী মুগ্ধ ঠাট
কোন্ রাগ কোথা হতে বাজে
কোন্ সুরে জাগাবে প্রভাত
পাহাড়ে পাথর ঠেলি কিংবা
পাথরে পাহাড়
একুশ শতকে
চোখে স্বপ্ন ডলতে ডলতে
উদয়াস্ত
হাজার হাজার আমরা
অন্তহীন
স্বেদবিন্দু যথা
ঝরে আয়ু
ঝরে মায়া, মরে প্রেম
যূথবদ্ধ
সর্বনাম
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..