ঝরা শিউলি
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
হাওড়া স্টেশনে নামতেই এক লোক পান চিবুতে চিবুতে বলে, এ তো কেলে করেচেন; এতো মাল-পত্তর কেন সাথে! আরে বাবা এতো আর কাশিযাত্রা নয়। পথে পথে চেকিং এর ভয়। ফেলে দিন ওসব।
জোছনা ধমক দিয়ে বলে, আমরাও যাবো মালপত্তরও যাবে।
লোকটা হাঁ হয়ে যায়। মোবাইল ফোনে কাকে যেন বলে, আজ রাতে একটা বিজলির খাম্বা পার হবে।
রামনগর গ্রামের মোজাফফর নাপিতের দোকানে দৌড়ায় একটু কলপ টলপ করে যৌবনটাকে ঝালিয়ে নিতে।
ভাঁড়ের কাপে চা খেতে খেতে জোছনার বৃদ্ধ বাবা চশমার ঘষা কাঁচ জামার খুট দিয়ে মুছতে মুছতে বলে, আমারে রেখে গেলেই পারতি জোছনা।
–তুমি কী খাট নাকি আলনা যে ফেলে যাবো। এন আর সি-তে নাম নাই তোমার। তোমাকে ধরে ক্যম্পে নিয়ে যাবে যে।
–যাই বল জোছনা এদেশে আয়-উপার্জন ভালোই হতো।
–এদেশে আর সাপের খেলা কে দেখবে বলো! মোদি যে সাপের খেলা দেখাচ্ছে।
–মোদি তো আমাদেরই মতো বেদে তাহলে; আমরা বেদে জানলে নিশ্চয়ই রেখে দিতো।
–ক্যাম্পে রেখে দিতো। জেলখানা বুঝেছো জেলখানা; বেদেরা কী কখনো জেলখানায় থাকতে পারে।
জোছনার বাবা স্মৃতির মাঝে হারিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। জনপদ থেকে জনপদে সাপের খেলা দেখিয়ে বেড়ানোর সময় তার কখনো মনে হয়নি; পৃথিবীতে কোন সীমান্ত আছে। অবশেষে এই বৃদ্ধ বয়সে এসে সে বুঝতে পারলো; মানুষের সঙ্গে মানুষের মাঝে অনেক উঁচু কাঁটা তারের বেড়া হয়েছে।
বিমল সিন্ডিকেটের ধ্যাড়ধেড়ে লোকটা কোত্থেকে একটু চুল আঁচড়ে এসে জোছনাকে খোঁচায়,
–সাপগুলো রেখে যাও বলচি। নইলে প্রবলেম হবে। তা ছাড়া আমাদেরকে যে টাকা দিয়েচো; তাতে তুমি আর তোমার বাবা পার হবে। সাপের টাকা তো দাওনি।
জোছনা একটা পুটলি থেকে একটা ছোট্ট সাপ বের করে; তাকে আদর করতে করতে বলে, টাকা দিয়ে কী করবে; সাপটাকে একটু কিসি করে দেও।
সিন্ডিকেটের লোকটা ভয় পেয়ে ছিটকে যায়।
একটা মাইক্রোবাসে তোলা হয় জোছনা আর তার বাবাকে। সেখানে ভীত চোখে মুখে বসে আছে আরো একটি শরণার্থী পরিবার। সবাইকে নিয়ে যাওয়া হয় রামনগরে। মোজাফফর এসে রিসিভ করে। তার চোখ আটকে যায় বিজলির খাম্বায়। তড়িতাহতের মতো বলে,
–পথে কোন কষ্ট হয়নি তো আপনাদের!
জোছনা ধমক দিয়ে বলে, আমরা সাপের খেলা দেখাইগো। আমাদের কষ্ট হয় না।
মোজাফফর বাপ-মেয়েকে একটা ছনের ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বলে, আপনারা এইখানেই একটু বিশ্রাম নেন। গ্রিণ সিগনাল পেলেই আপনাদের মহেশপুর সীমান্তে নিয়ে যাবো।
খাবার দিতে দিতে এক মধ্যবয়েসী নারী জোছনাকে বলে, একটু সাবধানে থেকো গো। এরা কিন্তু সাপের চেয়েও বিষাক্ত লোক। গত কয়েকদিন যাদের পার করেছে, সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। অনেক মেয়ের ইজ্জত লুটে নিয়েছে গো। এইগুলো মানুষ না রাক্ষস গো রাক্ষস।
মোজাফফর গলায় একটু রাম ঢেলে সাহস সঞ্চয় করে। তারপর জোছনার বিশ্রামঘরের উঠোনে হোন্ডায় বসে দুইপাক ঘুরে। হোন্ডার শব্দে জোছনা ঘর থেকে বের হলে তার দিকে প্রেমিকের হাসি হেসে বলে,
–ভারত থেকে জোছনা চলে গেলে তো অমাবস্যা নামবে গো। তুমি থেকে গেলে কেমন হয়। এসো হোন্ডার পিছে বসো। তোমাকে রামনগর দেখাই। যদি দেখে পছন্দ হয় তোমার।
জোছনা তাকে চমকে দিয়ে বলে, দাঁড়াও একটু সেজে আসি গো।
মোজাফফরের বুকের মধ্যে ধুকপুক করে। জোছনা চোখে কাজল পরে ঠোঁটে লিপিস্টিক দিয়ে পারফিউম দিতে দিতে বেরিয়ে এসে কান্তা সেইন্টের শিশিটা মোজাফফরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
–কী খেয়েছো গো; ভক ভক করে গন্ধ বের হচ্ছে!
–আমরা জয়শ্রী রামের লোক; একটু রাম টাম খাই আর কি!
হোন্ডার পিছে জোছনাকে নিয়ে গর্বে বুকের ছাতি ফুলিয়ে মোজাফফর রামনগর ঘুরে দেখায়। পথে দু’ একজন হোঁদল কুতকুতে লোক জয়শ্রী রাম বলে ওঠে।
একটা পুলিশ জোছনাকে দেখে প্যান্টের জিপারটা খুলতে এবং বন্ধ করতে থাকে। এ যেন জিপারের আপ-ডাউন আপ-ডাউন মার্চ পাস্ট। মুখে বলে, জয়শ্রীরাম জয়শ্রীরাম।
পুলিশের চোখে-মুখে কাল-কেউটের লকলকে জিভ দেখে জোছনা মোজাফফরকে বলে, কই সীমান্তে নিয়ে যাবে না!
–সীমান্তে গিয়ে কী আর করবে; রামনগরেই থেকে যাও না আমার সঙ্গে। দেখলে তো সবাই আমাকে কত সম্মান করে। এরা তোমাকেও সম্মান করবে।
–এমনিই ঘুরে দেখতাম সীমান্ত কীরকম হয়! মায়ের কোলে চড়ে অনেক ছোট কালে পার হয়েছিলাম; বুঝতেই পারিনি সীমান্ত কী! ছিলাম তিনজন। মা মরে গেলো চিকনগুনিয়ায়। বাপ-বেটি রয়ে গেলাম। দিল্লিতে সাপের খেলা দেখিয়ে ভালোই ছিলাম গো। কিন্তু এবার দিল্লির রাস্তায় জয়শ্রীরামের সাপের খেলা দেখে আর থাকতে মন সায় দিলো না। মোদির মতো বড় সাপুড়ের সঙ্গে লড়ে আমরা টিকে থাকতে পারবো না গো।
জোছনার চোখ ছল ছল করে; চোখের কোণাটা মুছে মনটাকে শক্ত রাখে জোছনা।
ভট ভট শব্দ করে হোন্ডা এগিয়ে যায় সীমান্তের দিকে। মোজাফফর গর্ব করে বলে, মানুষ পারাপারের ব্যবসার আমিই রাজা। পথ-ঘাট আমিই কন্ট্রোল করি। আমি না থাকলে বিমল সিন্ডিকেট কিছুই না। তুমি রাণী হয়ে থাকবে রামনগরে।
নো-ম্যানস ল্যান্ডে গিয়ে হোন্ডা থামিয়ে মোজাফফর বলে, এর চেয়ে ভালো প্রেম করার জায়গা আর হয় না। আই লাভ ইউ জোছনা।
জোছনা মোজাফফরের চিবুকে নেইল পলিশ দেয়া নখের স্পর্শ বুলিয়ে বলে, এইটা ভারতও না; এইটা বাংলাদেশও না; এইটা হইলো গিয়ে জোছনাপুর।
জোছনার হাসি যেন আর কিছুতেই থামেনা।
মোজাফফর শিহরিত হয়ে বলে, আমার যে আর দেরি সয়না গো বিজলির খাম্বা।
জোছনা তার প্রিয় ছোট সাপটা মোজাফফরের গলার কাছে রাখে আর দিল্লিওয়ালির লাস্যে শব্দে হাসে।
পেটে রাম থাকায় মোজাফফর ভয় না পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে, আমাকে কী বিমল সিন্ডিকেট পেয়েছো দিল্লিওয়ালি; যে ভয় পেয়ে যাবো।
কী যেন একটা হয়; তড়িতাহতের মতো লাগে মোজাফফরের।
নো-ম্যানসল্যান্ডে পড়ে থাকে দালালের লাশ।
এক মেয়েটা মুঠো মুঠো জ্যোৎস্না কুড়িয়ে অপরের মুখমন্ডলে চাঁদ দেখত। মানুষের উপকার করার ক্ষেত্রে,…..
শেষ থেকে শুরু। আমি রজকিনী রামী,ধোপার বংশে জন্ম আমার।ঘাটে সখিদের সঙ্গে কাপড় কাচি। একাজটা আমি…..
মালঞ্চার পথে ভোরবেলা। সূর্য সবে উঠছিল। বৈশালী দূর থেকে দেখতে পেল,বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ডে বালুরঘাটের দিকে মুখ…..
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..