ইমন কল্যাণ
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা
সেই চারকোণা ছোট্ট কপাল- ফরসা বাজুতে হালকা পশম, ঝরণার মতো ঢলে পড়া রেশমী চুলের গোছা, তুমি কী সেই! লাল ইটের ছোটো ছোটো বাক্স বাড়ি। ঠাসাঠাসি। তাতে এক চিলতে উঠোন- আমগাছের কাঁপা কাঁপা ছায়ার পাশে সোনালী রোদের হাঁটাচলা। আহা, ঐতো আমার কৈশোর। বলতে না বলতেই বাদামী ফ্রেমের চশমাপরা রোগা ছেলেটা হেঁটে আসে। অংকে ৫৮ আর ইংরেজিতে প্রতিবার ৩০ পেয়ে ফেল করে, বাবা রাতভর আটকে রাখে কলতলার ছোট্ট ঘরে। কিনকিনে সাইরেনের চাবুক খেয়ে ঘুম ভাঙে পাড়াটার। বাবারা দলে দলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে যায় সার বেঁধে। কারখানার রাক্ষুসে গেটটা একটা একটা করে মানুষ গিলে। পিঁচুটি জড়ানো চোখে আমি শুধু আমগাছের ছায়াটা দেখি। মুহূর্তে সে কতো কিছু হয়ে যায়। একটু আগে যে দিব্যি আরবি ঘোড়ার আদল নিয়ে চিঁহিহি করছিল, সামান্য হাওয়াতে তা হয়ে গেল মেমসাহেবের ছাতা। ততক্ষণে মায়ের হাতে গুড়ের চা। তাতে লাল আটার রুটি চুবিয়ে পেট ভরে পানাহার। কখনো মটরশুটির তরকারি…
উফ্…. নিজেকে বড়ো অপরিচিত-বিভ্রান্ত লাগছে। একি স্বপ্ন দেখছি, নাকি স্মৃতির মুখোমুখি আমি? কে বলবে এই পোকা-খাওয়া ফসিলটাও একদিন ডানা মেলেছিল আকাশে! থামো- প্যাথেড্রিনটা দিও না, প্লিজ…। তোমাকে আর ক’পলক দেখতে দাও, প্রিয়তমা। ওই প্যাথেড্রিন আমার যন্ত্রণা থামাতে পারেবে না, অযথাই একটা শিশি নষ্ট হবে। বরং পাশের বেডের যুবকটিকে দেখো, সারা রাত চিলচিৎকার শেষে এখন মুরগীর ছানার মতো চিঁচিঁ করছে- ওকে স্বস্তি দাও, জীবন এখনো ওর জন্য অবারিত। এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? কী ভাবছো। নীল মাস্কে ঢাকা মুখে সেই স্বপ্নালু দুটি চোখ। সেই চোখ! যে চোখে ডুব দিলেই রেল পাড়ার এঁদো-গলিটাকে পেয়ে যাই সুড়ঙ্গের মতো করে।
আমি তখন টেনে, তুমি আরো দু-ক্লাস পেছনে। ততদিনে বগলের তলায় কঁচি লোমের চুলকানি। তোমাকে বিভোর হয়ে দেখি। কখনো গালর্স স্কুলের গে’টে, কখনো পাড়ার রাস্তায়, কিংবা সোহেল ভাইয়ের ক্লাসে। তোমাকে দখলেই গরু-ভেড়ার অংকটা ভুল হয় বারবার। ভাইয়া চোখ পাঁকিয়ে ধমকে দেন। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের পিচকারি মারা হাসি। আর তুমি শুধু তাকিয়ে থাকো- কি জানি তাচ্ছ্বিল্যে নাকি বিস্ময়ে। আমি আড়চোখে তোমাকে দেখি। আকাশে অনেকগুলো রঙিন মুনিয়া উড়ে যায়। মনটা কেবল উড়– উড়–। খাতা ভরা বীজগণিতের ফাঁকে ফাঁকে এলোমেলো কবিতার লাইন। না-না, কবিতা নয়, সে ছিল আমার হৃদয়ের নীরব রক্তক্ষরণের চিহ্ন। একদিন দু:সাহস উঁকি দিল মনের ভেতরে। কতোগুলো ভাঙাচুরা কবিতার লাইন চিরকুটের বুকে বুকে হেঁটে গেলো তোমার টেবিলে। তারপর তোমার কোচিং বন্ধ, বাবা ছাড়া স্কুল আসো না। এক সন্ধ্যায় তুমি নিতুদের সঙ্গে হাঁটছিলে গলির রাস্তায়। আমাকে দেখেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলে, অন্যদের সেকি হাসি। বড়ো মায়া হলো তোমাকে দেখে। ছবির পর্দার মতো এসে দাঁড়ালাম তোমার সামনে। তোমার মুখের একপাশে চুরি যাওয়া গোধূলির আলো। কী নিষ্পাপই না লাগছিল তোমাকে! তুমি যথারীতি তাকিয়ে রইলে। ফ্যালফ্যাল করে। স্বপ্নালু দুটো চোখ।
ব্যস এতটুকুই তো ঘটনা। কে জানত তোমার বড়ো মামা গাইবান্ধার ডিসি। ভাগ্নীর ভবিষ্যৎ নিষ্কন্টক করে তুলতে তৎপর হয়ে উঠলেন তিনি। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায়, বলা নেই কওয়া নেই ওরা এসে তুলে নিল ৫৪ ধারায়। তারপর শক্ত একটা মামলা দেখিয়ে চালান দিল কোর্টে। তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হলো আদালতে। সুবেশী ম্যাজিস্ট্রেটের ঠাণ্ডা গলার ধমক একটা দস্তখত বাগিয়ে নিল অনায়াসে। তারপর কিশোর সংশোধন কেন্দ্রর ৪২টি মাস…. যেন একটা দীর্ঘশ্বাস… শুধু তোমাকে ভেবেই কেটে গেলো। যখনই বুক ফেটে কান্না এসেছে, তোমার স্বপ্নালু চোখ দুটিতে ডুব দিয়ে ছুটে গেছি রেল কলোনির কড়ই গাছগুলোর তলায়। মুঠো মুঠো শীতল হাওয়া এসে ভুলিয়ে দিয়েছে সব অনুযোগ। সংশোধন কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে এসে দেখি পৃথিবী অন্যরূপ। বাবা এরিমাঝে আমাকে কাগজে কলমে ‘ত্যাজ্য’ করেছেন, মার ঠোঁটে সেই হাসির ঝিলিক নেই, মামারা চান তাদের গ্যারেজে গিয়ে কাজ শিখি। কোথায় গেলো এশিয়ার খনিজ সম্পদ আর কোথায়বা জার্নি বাই ট্রেন! একবার গোল্লা থেকে উল ছড়িয়ে পড়লে সেকি সহজে আর ফেরে? হিংস্র বাঘের মতো অন্ধকার আমার ঘাড়ে কামড়ে একটু একটু করে টানতে লাগল। একটা দুটো করে মানুষের রক্তে ভিজতে লাগে দুটি হাত। থানার দারোগা আমাকে চেনে, ওসির বাসায় গিয়ে চা খাই, তারপরো ওরা আমাকে ফর্দ করে খোঁজে। আগুন নিয়ে খেললে আগুন তো একদিন স্পর্শ করবেই। তাই হলো। কতগুলো লোক এসে তুলে নিল আমাকে। চোখে পট্টি, হাতে কড়া। অনেকক্ষণ ধরে গাড়ি ছুটল। হয়ত ঘন্টা কিংবা তারো বেশি। একটা বিরাণ মাঠের ধারে এনে নামানো হলো আমাকে। তারপর সব বন্ধন টুটিয়ে দিয়ে কষে একটা লাত্থি মারল পাছায়। যা, ফুট শালা…। আমি ছুটলাম প্রাণেপণে। পেছনে পেছনে কতগুলো ফুটন্ত বারুদের দানা।
তারপর ঘুম ভেঙেই দেখি তুমি। সেই তুমি…. বান্ধবীদের উপহাসে বিচলিত অথচ আমার জন্য কতোটাই না উদগ্রীব! আমি আর তুমি- যেন পাড়ার রাস্তায় মুখোমুখি। তোমার চোখে প্রশ্নের বাণ, হয়ত তার পাশে কিছুটা অনুশোচনাও। নাহ, আমি আজ কিছুই বলব না। কোন অভিযোগ নেই আমার। এক জীবনে পেলাম না তাতে কি, ভয় নেই প্রিয়তমা, আর জন্মে নিশ্চই দেখা হবে…
তোমার জন্য নতজানু
লক্ষ্মীছাড়া সুজনটা এখনো গান গায়। সুরের তালে এজিবি কলোনির এপার থেকে ওপার কাঁপে। সেই আলোড়নে লনের দুব্বা ঘাসগুলোও ঘুম ঘুম চোখে ঘাড় ফিরিয়ে তাকায়। তারপর ‘ও সুজন’ বলে মুখ গুঁজে নেয় মাটির ওমে। তিন শ দুইয়ে তিন বছর জেল খেটে এখন আবার গান ধরেছে। মরার গান!
চৈতি ছিল এফ-ফাইভের ছাদে। হিমেল একবার চৈতির দিকে তাকায় আরেকবার সুজনের গানের কথাগুলো ধরার চেষ্টা করে। চৈতিটা দেখতে দেখতে কতো বড়ো হয়ে গেল। এই তো সেদিন, ওর বাবা আরফান সাহেব সাদা ফুটফুটে একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে এলেন, এখন ওরই কোল ভরবার সময় হয়ে এসেছে। চোখাচোখি হতেই ‘হিমু চাচা হিমু চাচা’ বলে হাত নাড়ালো। হিমেল হাসলো। অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে। টেলিগ্রাম অফিসের চাকরি। সারা দিনেও দু’শ টাকার টেলিগ্রাম হয় না। তারপরও হিমেল হন্তদন্ত হয়ে অফিস যায়। চারদিকে টাস্কফোর্সের হইচই, কখন কোন প্যাঁচে পড়ে। এফ-ফাইভের পেছন দিয়ে ডি-নাইনের নর্দমা ধরে শর্ট-কাট যে রাস্তাটা গেছে আরামবাগের দিকে, সে পথেই এগুচ্ছিল হিমেল। সান্টুদের দেয়ালে অনেক শেওলা পড়েছে। অনেকদিন থরো রিপোয়ারিঙের কাজ হয় না। শেওলাগুলো কেমন আগ্রাসী রূপ পেয়ে বসেছে। মনে হয় পুরো দালানটাকে একসময় গিলে ফেলবে। সাজনা গাছটা কতো বড়ো হয়ে গেছে। সান্টুদের তিন তলার কোয়ার্টারটার দিকে তাকাতে গিয়ে চোখ পড়ল সাজনা গাছের দিকে। গাছের ডালে দুটো বুলবুলি। বুলবুলি দেখেই তার মনে হলো ছেলেবেলার সেই অপত্য বাণীটা: বুলবুলি তোর পুটকি লাল। হেসে ওঠে হিমেল। হিমেলের হাসি দেখেই যেন সান্টুদের বারান্দায় সেই বারো বছরের ছোট্ট সান্টুটা এসে দাঁড়ালো। মাথা ভর্তি ‘গোবরা চুল’। শব্দটা শাহেদের। যার মাথায় গোবর বেশি তার চুল নাকি তত ঘন হয়। এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ সান্টু। সান্টুর মাথা হয় ফাঁপা না হয় গোবর জাতীয় পদার্থে ভরপুর। বেশি মাথাওলা ছেলেকে কখনোই ভালো চোখে দেখতো না হিমেল। তাই সান্টুকে সবসময় কাছাকাছি রাখত। সান্টু কানখাড়া কুকুরের মতোই হিমেলকে কাভার দিয়ে রাখত।
হিমেল এখনো যেন সান্টুর গা থেকে ঘামের দুর্গন্ধ পাচ্ছে। সান্টু কাছে এলেই মাধবী ওড়না দিয়ে নাক ঢেকে নেয়। কিন্তু বাইক তো মোটে একটা। তাই মাধবী আর হিমেলের মাঝামাঝি বসাতে হয় সান্টুকে। সান্টুর দু-চোঁয়া মদের মতো ঘামগুলো মাধবীর শরীরে লাগে। রাগে হিমেলের শরীর চিড়মিড় করে। ইচ্ছে হয় গাধাটাকে ছুড়ে মারতে রাস্তায়। অস্বস্তি আর উত্তেজনা কিছুটা হেলে পড়ে চন্দ্রিমার সবুজ লনে এসে। জুৎসই একটা আড়াল দেখে বসে পড়ে দু’জন। আর কান-খাড়া দুটো চোখ থাকে দু’দিকের গেটে।
‘ইশ, এরকম করতাছিস ক্যান?’ মাধবী বিরক্ত হয়ে হিমেলের চুল ধরে টানে।
হিমেল গোঁ-ধরা বালকের মতো মাধবীর বুক থেকে কিছুতেই মাথা সরায় না।
শেষমেশ মাধবী পিছলে যায়।
অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসা মাধবীর হাত ধরে টানে হিমেল।
‘তুমি আমারে এতো দিনেও বুঝলা না।’ অপ্রস্তুত হিমেল সব গুলিয়ে ফেলে; কি প্রসঙ্গে কথাটা বলল ঠিক করতে পারে না। ‘এরকম করলে কিন্তু আমি খুব কষ্ট পামু মাধবী।’ অনুগত সৈনিকের মতো যেন মহারানীর কাছে ধরণা দেয়। রাগে লাল হয়ে যাওয়া মাধবীর গালে আলতো হাত ছোঁয়ায়। ‘তুমি যদি বুঝতা তোমারে আমি কত্ত ভালোবাসি।’
বর্ষায় বিস্ফারিত ঝিলিমের মতো ফেটে পড়ে মাধবীর দুই চোখ।
সজোরে একটা চড় দেয় হিমেলের গালে।
‘এ্যাই জানিস না আমি হিন্দুর মেয়ে।’ তারপর হাউমাউ করে কেঁদে ভিজিয়ে দেয় হিমেলের বুক। এমনই একটা হিট সিনে ক্যামরা জার্কিং দিয়ে যেন ঢুকে পড়ে সান্টু।
‘দোস্ত চল চল আজরাইলগুলা…’
পাততাড়ি গুটিয়ে ছুট দেয় তারা তিনজন। ডাবল এক্সেল পঙ্খীরাজ। মগবাজার-রাজারবাগ-খিলগাঁও সাঁই সাঁই করে উড়ে যায় দুই পাশে। তারা যেন উড়ে চলে বৈজয়ন্তীর পথে। ভালোবাসার বৈজয়ন্তীর পথে। তারপর গোলাপশাহ’র মাজার। সন্ধ্যার ফিনফিনে আলোয় ‘গুডবাই মাধবী’। মাধবী চলে যায়। আবার আসে। একদিন দুদিন গ্যাপ দিয়েই মাধবী আসে। ডি-নাইনের দোতলার মাধবী। সান্টুকে দিয়ে খবর দিলেই আসে। কিন্তু একদিন খবর এলো মাধবী আসবে না। মাধবী আর আসে না। ডি-নাইনের পেছনের সাজনা গাছটার তখন শৈশব। পুরোটা আকাশ হুমড়ি খায় বিরাণ চত্বরে। এতো আলোর মাঝেও বিকেলে একটা পান্ডুর মুখ এসে দাঁড়ায় দোতলার ব্যালকনিতে। হিমেলের বুক ফেটে যায়। কিন’ বোবা দুটো চোখ তাকিয়ে থাকে সেই মুখটার দিকে।
লিউকেমিয়া নামটা তখনো চাউর হয়নি মুখে মুখে। শুধু মানিকের দোকানে গেলে শোনা যায়; সুধীর কাকার মেয়েটা বোধ হয়…
‘বিধাতা যদি পাশের পাড়ার কোনো মাস্তান হত, মায়ের দুধের কসম, শালার নলা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিতাম। …এ কোন খেলায় নামালে আমারে।’ হিমেল মনে মনে ভাবে। ঔষধ কম্পানিতে কাজ করে মগবাজারের আফজাল ভাই। একদিন তার কাছে গিয়েছিল। মাধবীর বিষয়টা বলতেই বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায় সে। হিমেলের কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘মাইয়াটার আশা ছাইড়া দাও। কঠিন রোগ। যতদিন বাঁচব অন্যগোরে মাইরা বাঁইচব।’
‘মানে কইতাছেন ও বাঁচব?’
‘বাঁচব না ক্যান? পয়সা খরচ করলে অবশ্যই বাঁচব। তয় চিকিৎসাটা বড়ো এক্সপেনসিভ। পত্তেক দিন মনে করো তিন হাজার টাকার ইনজেকশন দেয়া লাগব।’
হিমেল কিছু বলার আগেই যেন কোমরের নাইন এমএম-টা বলে ওঠে, ‘ইউরেকা।’
টাকাই তো কথা! সে টাকা কামাবে। এই শহরের আকাশে টাকা পক্ষির মতো উড়ে। খালি পুট্টুস কইর্যা গুলি মাইর্যা নিতে হয়।
কিন্তু মানুষ ভাবে এক নিয়তি করে বসে আরেক খেলা।
’৮৮। বছরটা বড়ো যাদুময়। আট মামলার আসামী হিমেল ঢাকা মেইলের সেকেন্ড ক্লাসে। তারপর টাইগারপাসের ঘুপচি ঘরটায় দিবাবন্দি। রাত হলে বের হয়। ট্রাংক কল। ওপারে সান্টুর মেয়েলি কণ্ঠ। ‘তোর মাধবী আর বাঁচবো না বন্ধু’
‘কিছু একটা কর সান্টু।’
ওপারে বসে সান্টু শুধু ভাবেই। প্রতিদিন নতুন নতুন প্ল্যান দেয়। এর মধ্যে একদিন শুনে শাহেদ ফুট। পাম গাছের গোড়ায় জল দিতে মালয় গেছে। সুজনের সঙ্গেও কথা হয় মাঝে মাঝে। রাতে গাঁজায় চুর হয়ে থাকে। কথা ভেঙে যায়। তারপর যতটুকু বোঝা যায়, সুজনরা ট্রাই করছে একটা কনসার্ট আয়োজনের। গুরু রাজি হয়েছেন। পাড়ার মেয়ে বলে কোনো টাকা নেবেন না। খালি দু-বোতল এলবোলো’র খরচ দিলেই হবে। এভাবেই আলো-অন্ধকারে একটি বছর কাটল। শেষের দিকে এসে সান্টুও আর ফোন ধরে না। পিডাব্লুতে চাকরি হয়ে গেছে তার। মাস্টার রোলের চাকরি। তাই চাকরির মায়ায় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগটা শিথিল করে দিয়েছে।
৮ টা মামলার ওয়ারেন্ট নিয়ে একদিন এজিবি কলোনিতে হাজির হয় হিমেল। সুধীর বাবুর বাসায় একটা শীতল নিস্তব্ধতা। শরতের শেষ বিকেলে ড্রইংরুমের দেয়ালে তাজমহলের ছবিতে এক টুকরো রোদ এসে পড়ে। তাতে ছবিটার পাণ্ডুর ভাব যেন আরো প্রকট হয়ে ওঠে। তার নীচে একটা ফ্যাকাসে বিবর্ণ মুখ। মাথায় বীজতলার চারার মতো কচি কচি চুল। হিমেলের বুকের ভেতর একটা হাহাকারের ঝড় ওঠে। ‘মাধবী, মাধবী আমার!’ সাজনা গাছের মাথা থেকে বুলবুলি দুটো উড়ে গেছে। এখন শুধু সুজনের গান ছাড়া কোনো শব্দ নেই চারপাশে।
… তোমারই জন্য নতজানু আমি দুই হাত প্রসারিত
অস্ফুটে যদি ভালোবাসা ঠোঁট আড়ালেতে ডেকে নিত…
হিমেল যেন ফিরে যায় ৮৭-তে। ডি-নাইনের নর্দমার পাশে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ওই শালা সান্টু, নাম্।’
তিন তলার ব্যালকনিতে দাঁড়ানো পিচ্চিটা ফিক করে হেসে ভেতরে চলে যায়।
পরিচ্ছেদ ৬ অনেক রাতে ফিরেছিল কল্যাণ ওরফে শহীদুল।গাড়িটা শেডে রাখার পর দু’বার হালকা করে মা…..
পরিচ্ছেদ ৫ আকাশে এখন আর মেঘ নেই। হাওয়া হচ্ছে।কদিন পরেই বর্ষা নামবে।একদিন হাসপাতাল থেকে ফিরতে…..
পরিচ্ছেদ ৪ ভোর হয়ে আসছে।রাতে ভালো ঘুম হয়নি।ঘুমের ঘোরে মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে আসছে।এরকম…..
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..