লেখক: মাশিকুর সাগর
মাজহারুল ইসলাম সৈকত একটি বেসরকারি ব্যাংকের হেড অব হিউম্যান রিসোর্স পদে চাকুরিধীন আছেন আর তার স্ত্রী সেজুতি ইসলাম টুম্পা শুধুই গৃহিনী, ৪ বছরের একমাত্র কন্যা প্রার্থনা’কে নিয়ে তার দিন কেটে যায়।
.
আগামীকাল টুম্পা আর সৈকতের বিবাহের ৭ বছর পূর্ণ হবার দিন। পারিবারিক ভাবেই ৭ বছর আগে সৈকতের সাথে টুম্পার বিয়ে হয়, দিনগুলো যে কখন কিভাবে এতোবছরে রূপান্তর হয়ে গেলো, কত কত রাগ – অভিমান – হাসি – আনন্দে বছরগুলো কেঁটে গেলো টের’ই পায়নি। বাড়ির ছাদে মেয়ে প্রার্থনা’কে নিয়ে কথাগুলো ভাবছিলো টুম্পা। এইসব ভাবতে ভাবতে হটাৎ টুম্পার ফোন বেঁজে উঠে, ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই দেখে ছোট বোন রুম্পা’র কল।
.
ফোনের ওপাশ থেকে …….
রুম্পা : হ্যালো আপু কেমন আছিস, প্রার্থনা আর সৈকত ভাই কেমন আছে আর আগামীকাল তোদের প্ল্যান কি ?
টুম্পা : হুম আমরা সবাই ভালো আছি। আর আগামীকাল তোর ভাইয়ার নাকি খুব কাজের চাপ তাই কোন প্ল্যান থাকছে নাহ। তবে আমি কাল সকালে বাসায় আসতেছি কিছুদিন থাকবো, তুই আম্মাকে বলে দিস।
ফোনের ওপাশ থেকে রুম্পা হতাশ কণ্ঠে উত্তর দেয় আচ্ছা। তাহলে কাল দেখা হচ্ছে আর সাবধানে আসিস।
.
ফোনে রুম্পা’র সাথে মিথ্যে বলতে চাইনি টুম্পা, সত্যি বলতে সৈকত আর টুম্পার সম্পর্ক খুব ভালো কাটছে নাহ দেড় বছর যাবৎ। কারণ ছাড়া এখন আর কথা’ই হয়না, ঠিক কবে দুইজন চোঁখের দিকে তাকিয়ে কথা বলেছিল মনেই পরে নাহ। সময় আছে ঠিক’ই কিন্তু দুইজন দুইজনকে সময় দেয়ার মতো সময় হয়ে উঠে নাহ। আর সেখানে ঘটা করে বিবাহ বার্ষিকী পালন করার কোন মানেই হয়নাহ।
.
সন্ধ্যায় অফিস শেষ করে সৈকত বাসায় আসে, ফ্রেশ হয়ে পেপার হাতে প্রার্থনাকে নিয়ে টিভির রুমে চলে যাই। টুম্পা রাতের খাবার রান্না করার জন্য রান্নাঘরে ব্যস্ত। রান্না শেষ করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে তার রুমে চলে যায়। প্রার্থনার সাথে নিজেও কখন জানি ঘুমিয়ে পরে টের’ই পায়নি টুম্পা।
.
রাত ২ টা ২৬ মিনিট, শীতের রাত চারদিক নিস্তব্দ হয়ে আছে চারপাশ হঠাৎ টুম্পার ঘুম ভেঙে যায়। নিজের অজান্তেই সে নিজেকে খুব একা মনে করতে লাগলো, আর নিজের কাছে প্রশ্ন করতে লাগলো এই ভাবে আর কতদিন। টুম্পা ড্রয়ার খুলে কাগজ আর কলম বের করে সৈকতের কাছে একটা চিঠি লিখতে বসে গেলো।
.
সৈকত,
আজকাল আর তোমাকে আগের মতো অনুভব করি নাহ, তুমি ও আমার থেকে যথেষ্ঠ দুরত্ব বজায় রাখো নিজেকে। শেষ কবে এক সাথে দুজনে বিকেলে বারান্দায় চা শেষ করেছিলাম মনেই পড়ে নাহ। ইদানিং বিকেল বেলায় বারান্দায় একা থাকতে ভাল লাগে নিজের মতো করে, তুমি ও থাকো নিজের মতো করে নিজেকে নিয়ে মত্ত। হ্যা কথা হয়, এক সাথে ঘুমায়, হাসি ভালো ও বাসি তবে তা শুধু লোক দেখানো বা জানানোর জন্য, প্রকৃত পক্ষে আমরা দুজন দুই মেরুর পথচারী সঙ্গী কেবলই দির্ঘশ্বাস। সংসার জীবনের অনেকটা সময় দুজনে পার করে এসেছি, বিপরীতে বাড়িয়ে গেছি শুধু এই সংসার, পরিবার এবং দায়িত্ব, শুধু খেয়াল করিনি আমাদের দুজনের টানাপড়েনের চিহ্ন। সবকিছুরই একটা শেষ আছে হয়তো আমাদের সম্পর্কের ও, কি লাভ শুধু শুধু প্রাণহীন, দায়িত্বহীন, ভালোবাসাহীন এই সম্পর্কে জড়িয়ে থেকে। এর চেয়ে বরং চলো বাঁচি দুজন দুজনের মতো করে, খুঁজে দেখি জীবনের অন্য মানে।
আগামীকাল আমি প্রার্থনাকে নিয়ে আম্মুর বাসায় যাচ্ছি। সম্পর্কটা এইভাবে শেষ হবে কখনো কল্পনা করিনি, ডিভোর্স লেটারটা খুব শিগ্রীই পাঠিয়ে দিব আশা করি তুমি অমত বা অসুখী হবে নাহ।
ইতি, টুম্পা।
১১.১২.২০১৬
.
টুম্পা জানে প্রতিদিন সৈকতের ঘুম সকাল ৮ টাই ভেঙে, তাই খুব সকালে সাবধানে চিঠিটা টিভির রুমে সৈকতের মোবাইল ফোনের পাশে রেখে দিয়ে প্রার্থনাকে নিয়ে টুম্পা তার মার্ বাসায় রওনা দিলো, সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নামক উপন্যাসের শেষ পাতার শেষ অক্ষরের পরিসমাপ্ত ঘটলো।
.
প্রতিদিন এই শহরে ঠিক এইভাবেই অথবা আরেকটু ভিন্ন ভাবে আমাদের চারপাশের শত শত সৈকত আর টুম্পার মতো দীর্ঘ সময়ের সাজানো সংসার ভেঙে যাচ্ছে নিমিষেই, শুধুমাত্র সম্পর্কটাকে ভালো করে রক্ষনাবেক্ষন না করার ফলে। আসুন সম্পর্ক’কে শ্রদ্ধা করি এবং ভালোবাসতে শিখি। পরিবারের প্রতি মায়া, ত্যাগ, ভালোবাসা সকল নারী পুরুষ সবার মাঝে বিদ্যমান থাকুক এবং বিরাজ করুক। পৃথিবী হোক ভালোবাসাময়।