টোপ

আদনান সৈয়দ
গল্প
Bengali
টোপ

বৃষ্টির ঝাপটায় জানালার কপাট শব্দ করে খুলছে আবার বন্ধ হচ্ছে। খুলছে আবার বন্ধ হচ্ছে। এই তো জীবন! বৃষ্টিভেজা জানালাটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একথাগুলো ভাবছিল তরুণ লেখক এবং প্রকাশক রুদ্র আসিফ। জীবন তার সামনে পরে আছে। প্রকাশক হিসেবেও নতুন। কিন্তু এখন সময়টা খারাপ। করোনার কারণে ব্যাবসাপাতি নাই। এই দুঃসময়ে ভালো কোন লেখকের পান্ডুলিপি সংগ্রহ করাও কঠিন। অথচ বাপের রেখে যাওয়া জমিজামার কিছু অংশ বিক্রি করে এই নতুন প্রকাশনী। এটাও যদি এই কঠিন করোনাকালে মুখ থুবড়ে পরে যায় তাহলে আর কোন পথ খোলা রইল না। কিন্তু পথ একটা তৈরি করতে হবেই। মিরপুর পল্লবীর শেষ প্রান্তে তার বাড়ি। এই এলাকায় মানুষজন কম। রাত বিরাতে শিয়ালের ডাকও মাঝে মাঝে শুনা যায়। আর বর্ষকাল থাকলেতো কথাই নেই। রাস্তাঘাট তখন পানিতে ডুবে থৈথৈ করে। হাটু অব্দি পেন্ট গুটিয়ে অফিস ফেরতারা তখন ঘরে ফিরেন। রুদ্র চারতলা এপার্টমেন্টের তিনতলায় ভাড়া থাকেন।বয়সে তরুণ। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে নতুন প্রকাশনার ব্যাবসায় নেমেছেন। চোখমুখে বুদ্ধিদীপ্ত একটা ভাব লেগে আছে। মুখে কায়দা করে রাখা চাপদাড়ি। গায়ের রং ফর্সা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমার আড়ালে কুতে কুতে ধরন্ধর চোখদুটো ঢাকা পরে আছে। বাসায় আসবাবপত্র বলতে আছে সুন্দর একটা বই এর আলমারি। সেখানে দেশি বিদেশি নানা জাতের গ্রন্থ। বৃষ্টি দেখতে রুদ্র যখন মগ্ন ঠিক তখনই রিয়ার কল। রিয়া রুদ্রের বন্ধু। বড়লোক ব্যাবসায়ীর একমাত্র মেয়ে। রিয়া আবার উঠতি লেখকও। রুদ্রের সাহায্য নিয়ে সে বেশ কিছু গল্প আর কবিতা কয়েকটা ওয়েব জিনে ছেপেছে। এখন একটা অন লাইন সাহিত্য পত্রিকায় ধারাবাহিক উপন্যাস  ছাপা হচ্ছে। তার খুব সখ বড় একজন কথাসাহিত্যিক হওয়া।

 ‘কী খবর রুদ্র? বৃষ্টি দিনে কি কর’? মোবাইল এর ওপাশ থেকে রিয়ার কৌতুহলী কন্ঠ।

 ‘নাহ! কিছুই করি না। বৃষ্টি দেখি। বৃষ্টির শব্দে গোটা শহর কেমন জানি অন্যরকম বিষন্ন লাগে!’। রুদ্রের বিষন্ন কন্ঠ।

 ‘হুম, বৃষ্টি আমারও খুব প্রিয়। বৃষ্টির দিনে জানালার গ্রিল দিয়ে কত রকম দৃশ্য যে দেখা যায়! আল্লাহ, কি যে সুন্দর!’

 ‘তা ঠিক, কিন্তু বৃষ্টি দিয়ে কি জীবন চলে? কাব্য চলতে পারে? তাই না?’ রুদ্র আলোচনাটা ইচ্ছা করেই অন্যদিকে ঘুরাতে চায়।

 ‘কাব্য তো জীবনেরই অংশ। জীবন থাকবে জীবনের জায়গায়’। রিয়ার ঝটপট উত্তর।

 ‘তা ঠিক। এখন আমার একমাত্র চিন্তা প্রকাশনীটাকে দাঁড় করানো। ভালো কিছু পান্ডুলিপি পেলেই উৎরে যাই’। এবার রুদ্র তার মূল আলোচনায় আলো ফেলে।’

শোন, প্রকাশনী ব্যাবসা এত সহজ না। ভালো কিছু রাইটার তোমাকে ধরতে হবে। ক্রেডিবিলিটি তৈরি কর, বুজলে?।

হুম, তা ঠিক কিন্তু কীভাকে কী করি?

ভালো কোন লেখকের পান্ডুলিপি বাগাও। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।

হু, সেই চেষ্টাও করছি। কথাসাহিত্যিক রিফাদ হোসেন অনেক বড় লেখক। তার পেছনে ঘুরত ঘুরতে টায়ার্ড হয়ে গেছি। তার একটা পান্ডুলিপি পাওয়া আর আশমানের চাঁদ হাতে পাওয়া একই কথা।

এইতো হল তোমার সমস্যা। আগে থেকেই একটা জিনিস অনুমান করে বসে থাকো। আরে বাবা চেষ্টাতো আগে করবে। ২০২১ এর বইমেলাতো আর বেশি দেরি নেই। এখন আবার করোনায় সবাই হাত গুটিয়ে বসে আছে। এই মোক্ষম সুযোগটাই তোমাকে কাজে লাগাতে হবে রুদ্র, বুজলে? দ্যাখো একটা উপন্যাস ম্যানেজ করতে পারো কিনা। অন্তত ৩০০ পৃষ্ঠার উপন্যাস। তাইলে পুষিয়ে নিতে পারবে।

দেখি, কি করা যায়। তবে হালায় দুনিয়ার মহা তেদর। আমার মত নতুন প্রকাশকরে বই দিব কিনা সন্দেহ।

আরে ধূর, ওসবে কান দিয়ো না । কাজ উদ্ধার করার ধান্দা কর।

 “কাজ উদ্ধার” শব্দদুটো রুদ্রর খুব পছন্দ হল। সেই নিজেও পাকা ব্যাবসায়ী। কীভাবে কাজ উদ্ধার হয় সেই নামাতা তারও জানা আছে। এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে সে এবার কথার বাঁক পরিবর্তন করে।

 ‘ঠিক বলেছ। কাজ উদ্ধার করতে হবে। এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়া মানেই সব শেষ। কাওরান বাজারে আলু পটলের ব্যাবসার ধান্দা করা ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না।

 ‘দ্যাখো, কাজ উদ্ধার করতে হইলে একটু আধটু ডিপ্লোম্যাট হলে অসুবিধা কী? যদি রাফিদ হোসেনকে বাগে আনতে পার তাইলেতো শুধু ব্যাবসায়িক লাভ তা নয়। তোমার আমার সামাজিক সম্মানটার কথা ভেবে দেখেছ? রুদ্র আসিফ হয়ে যাবে দেশের পয়লা কাতারের প্রকাশক আর রিয়া চৌধুরী হবে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখক।

 “বাহ! রিয়ার মাথায়তো অনেক বুদ্ধি? মনে মনে রুদ্র হিসাবটা কষে নেয়। কিন্তু মুখটা স্বাভাবিক করে বলে, “এই কাজ উদ্ধার করতে লাগবে ৫ লাখ টাকা। এর নীচে নাকি সে কথাই বলে না। ৫ দিলে আমি পান্ডুলিপি ম্যানেজ করতে পারবো। কারণ রাফিদ ভাই আমার এলাকার লোক। না করতে পারবো না।’

 ‘দ্যাখো। তাইলে। আর আমিতো বলছি। আমি তোমাকে আড়াই দিব। তোমার আড়াই আর আমার আড়াই। ব্যাস! ফিফটি ফিফটি ব্যাবসার পার্টানার। তাই না? কাল আমরা যখন যাব তখন আমি আমার আড়াই সঙ্গে করে নিয়ে আসব।

ওয়াও! ইউ আর সো সুইট! সত্যি তুমি মন মানসিকতায় এত আধুনিক ছিলে বলেই কিন্তু সবকিছুর আপাত একটা সহজ সমাধান হয়ে গেল!

আরে মিঞা আগে কাজ বাগাও পরে বক্তৃতা দিও। যাও তুমি তোমার বৃষ্টি দেখ। আমি গেলাম। এই বলে রিয়া তার মোবাইলটা কেটে দেয়।

মোবাইলটা টেবিলে রাখতে রাখতে রুদ্র মনে মনে একটা অংক কষে ফেলে। রিয়ার টাকা দিয়েই যাত্রা শুরু হোক। ব্যাবসার পুঁজিতে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভাঙাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের লক্ষণ! ব্যাবসা পরিকল্পনা ঠিকঠাক মত এগুচ্ছে দেখে রুদ্র তার দুহাতের তালু ঘষতে ঘষতে আরো গভীর কোন পরিকল্পনায় ডুব দেয়।

দুই

কথা সাহিত্যিক রাফিদ হোসেন এর বয়স ষাট ছুই ছুই। চরিত্রে আলুর দোষ থাকায় স্ত্রী তাকে অনেক আগেই ত্যাগ করেছে। একটি মাত্র ছেলে সেও থাকে আমেরিকায়। অতবএব এত বড় একটা এপার্টমেন্ট পুরোটাই তার দখলে। এখন করোনাকাল। গালভর্তী দাড়ি থাকার কারণে তার চেহারাটায় একটা রাশভারি ছাপ পরেছে। চোখে গান্ধী ফ্রেমের চশমা। গায়ের রং শ্যামলা। মাথায় টাক থাকায় বাইরে বেড় হলে পরচুলা পরতে হয়। তবে চেহারা তার খারাপ না মোটেও। মেয়ে পটানোর বুদ্ধিটাও সে ভালো জানে। লেখক হিসেবে তার বেশ নামডাক। বড় বড় সব প্রকাশকরা আগেই এই লেখককে বুকিং দিয়ে রাখে। সে এক দেখার মত প্রতিযোগীতা। রাস্তায় খাবার নিয়ে দাড়ালে ভিখারীর দল যেভাবে ছুটে আসে রাফিদের অবস্থাও হয়েছে ঠিক তাই। এই লেখককে আগাম টাকা দিয়ে বুকিং করে রাখেন প্রকাশদল। আর কেনই বা করবে না? প্রতিবছর বইমেলায় তার বই এর বিক্রি পরিমান রীতিমত ঈর্ষনীয়। সে খবর সবাই জানে। যেমন গত ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি বইমেলায় রাফিদ হোসেন এর উপন্যাস “ দরজায় কড়া নাড়ে কে?” মেলার প্রকাশ হওয়ার সাত দিনের দিনের মাথায় সব কপি ফুরিয়ে গেল। এক মেলাতেই যদি একটা গ্রন্থের চারটা সংস্করণ প্রকাশ পায় তাহলে বুঝতে হবে সেই লেখকের কলমের জোড় আছে। রাফিদ হোসেন তার জনপ্রিয়তা নিজেই খুব এনজয় করেন। এখন করোনার লকডাউন শিথিল হয়েছে। প্রায় শুক্রবার বিকেলে ফিনফিনে পাঞ্জাবী গাযে চাপিয়ে, নাকে মাস্ক এটে চলে যান আজিজ সুপার মার্কেটে। সেখানে পুরনো কিছু বন্ধুরাও আসেন। কিছু তরুণ কবি কথাসাহিত্যিক, লিটল ম্যাগ এর সম্পাদকরাও সেখানে তাকে ঘিরে ছোট একটা জটলা তৈরি করে রাখে। নিজেকে ঘিরে এই জটলা সে এনজয় করে।তবে রাফিদ হোসেন সবচেয়ে বেশি এনজয় করেন নতুন উঠতি লেখকদের চামচামি আর তোষামোদী। তিনি ভালো করেই জানেন এই ভক্তকুলদের কীভাবে ম্যানেজ করতে হয়। যেমন গত শুক্রবার এক তরুণ লেখক সালাম দিয়ে রাফিদের সামনে এসে দাড়ালেন। একটা চেয়ার খালি থাকলেও রাফিদ ইচ্ছা করেই তাকে সেখানে বসতে বললেন না।

”স্যার আমি আপনার লেখার খুব ভক্ত। আপনার এবারের উপন্যাস ‘দরজায় কড়া নাড়ে কে?” পড়ে  আমি রিতিমত অবাক হয়ে গেছি! এভাবেও একজন লেখক চিন্তা করতে পারে?

রাফিদ প্রথমে তার কথার কোন পাত্তাই দিল না।উল্টো এমন একটা ভাব দেখাল যে কোন কথাই যেন সে শুনতে পায়নি। তার ধারণা পাঠককে কখনো মাথায় যেমন চড়তে দেওয়া ঠিক না আবার পা দিয়ে দুরেও ঠেলে দিতে হয়না। এদেরকে মাঝিমাঝি একটা অবস্থানে ঝুলিয়ে রাখাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এসব ভেবেটেবেই কপাল কুঁচকিয়ে শুধু জিঞ্জেষ করলেন,

”উপন্যাসটা ভালো লেগেছে বলছেন? তা আপনার নাম?”

 “স্যার, আমার নাম অনিন্দ্য আকাশ। আমাকে তুমি করে বলবেন। আপনার অনেক ছোট। গল্প কবিতা লিখি। বরিশাল থেকে প্রকাশিত লিটল ম্যাগ ”আড়িয়াল খাঁ” চালাই। ঢাকা থেকেও কয়েকটা পত্রিকায় নিয়মি ..

কথাটা শেষ হতে না হতেই রাফিদ তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন। “ভালো ভালো। লিখে যাও। বাংলা লিটের জন্যে প্রচুর কাজ করতে হবে। সাহিত্য এত সহজ না, বুঝলে?

”জ্বী স্যার। এই বলে অনিন্দ্য আকাশ কায়দা করে লেখক রিফাদ হোসেন এর সঙ্গে একটা সেলফি বাগিয়ে নিতে ভুলে না।

এদিকে হঠাৎ করে মিষ্টি বিকেলটার গলা চেপে ধরে যেন স্বৈরাচার রাত তার জায়গা দখল করে নেয়। কোন এক অদৃশ্য জাদুমন্ত্রের ছোঁয়ায় রাস্তায় টপ টপ করে হলুদ নিয়ন বাতিগুলো জ্বলে উঠতে শুরু করে। রিফাদ হোসেন সেই দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ঠিক এমন সময় এই শান্ত নিরাবতা ভেঙে হাতের মোবাইলটা ঝনঝনিয়ে বেজে উঠে।

হ্যালো, রাফিদ ভাই?

বলছি। কে বলছেন?

রাফিদ ভাই, আমি রুদ্র প্রকাশনী থেকে রুদ্র আসিফ। কেমন আছেন? আপনার সঙ্গে পান্ডুলিপি নিয়ে একটা কথা হয়েছিল।

ও আচ্ছা।কি খবর বল! কিন্তু তোমাকে মনে হয় এই বছর কিছু দিতে পারব না!

রাফিদ ভাই, বলেন কী! একটা পান্ডুলিপি আমাকে দিতে হবেই। আমি খুব যত্ন করে বইটা ছাপবো। আপানার এলাকার লোক বলেও আমি কিন্তু আলাদা একটা জোড় খাটাতে পারি। আর আপনি সেদিন আমাকে বললেনও।

রাফিদ হোসেন ঝানু শিকারি। কীভাবে মাছ কায়দা করে ডাঙায় তুলতে হয় সেই কৌশল তার বেশ জানা আছে।এবার কন্ঠস্বর একটু নামিয়ে বললো, হুম! বুজলাম। তোমার দিক থেকে সব ঠিক আছে?

সব। কোন সমস্যা নাই। নগদ আড়াই নিয়ে আসছি। পান্ডুলিপি হাতে নিয়ে বাকি আড়াই।

আচ্ছা। আস। কাল সন্ধ্যায় বাসায় চলে আস।। আসার আগে একটা কল দিয়ো, ক্যামন?।

জ্বী ভাই, স্লামালেকুম

ওলাইকুম।

রাফিদ মোবাইলটা বন্ধ করে তার ঈগলের মত তীক্ষ্ণ চোখে চোরা হাসি ফুটিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন।

তিন

২৩/২  নিউ ইস্কাটন এপার্টমেন্ট ৫ এইচ। একটা সাদা কাগজে টুকে রাখা সাহিত্যিক রাফিদ হোসেন এর বাড়ির ঠিকানাটায় আবারো চোখ বুলাল রুদ্র। রুদ্রের সঙ্গে রয়েছে রিয়া। রিয়াকে আজ বেশ সুন্দর লাগছে। নীল রং এর শাড়ি তার উপর ম্যাচিং করে টিপ আর কাঁচের চুড়ি। সত্যি বলতে মেয়েরা শাড়ি পড়লে মনে হয় যেন বেহেশতের পরিগুলো পৃথিবীতে নেমে এসেছে। রুদ্র আড় চোখে রিয়ার সব সৌন্দর্যকে তার চোখ দিয়ে চেটে নেয়। রিয়াকে দেখে বেশ বোঝা যায় সে খুব এক্সসাইটেড! এত বড় একজন লেখকের  সামনা সামনি হওয়ার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। রুদ্র আর রিয়া তাদের দুজনের চোখেই অনেক স্বপ্ন! অবশ্য দুজনের স্বপ্ন দুজনের মত করেই। রুদ্র ভাবছে,  “প্রকাশনীটা একবার দাড় করাতে হলে যে কোন মূল্যে পান্ডুলিপি বাগাতে হবে।  রিয়া ভাবছে,  “আহা! এত বড় লেখকের সান্নিধ্য পেলে লেখালেখির পথ খুলে যাবে। এই সুযোগ কে ছাড়ে!”। ঠিকানাটায় আবারো চোখ বুলায় রুদ্র। লিফট এর পাঁচ এ উঠে এপার্টমেন্ট এইচ এর কলিংবেল বোতামে টিপ দেয় সে। পেছনে ভোরের সুর্যেরে মত একরাশ আশাবাদী আলো ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকে রিয়া। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর  রাফিদ হোসেন নিজেই দরজাটা খুলে দেন। গায়ে তার সিল্কের ফিনফিনে পাঞ্জাবী। মুখে এক রাশ শেফালি ফুলের মত পবিত্র হাসি ফুটিয়ে অতিথিদেরকে স্বাগত জানান। “আরে রুদ্র। তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। আস আস। বস বস।

রুদ্র আর রিয়া পাশাপাশি দুটো সোফায় বসতে বসতেই রুদ্র রিয়াকে পরিচয় করিয়ে দেয়, ‘রাফিদ ভাই, পরিচয় করিয়ে দেই। ওর নাম রিয়া চৌধুরী। তরুণ কবি এবং গল্পকার।

রিয়া একটু লজ্জাবনত হয়ে রাফিদ হোসেনের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাকায়।

এই ফাঁকে রাফিদ হোসেন কায়দা করে রিয়ার ধবধবে সাদা খোলা পিঠটায় তার ক্ষুদার্ত চোখ দুটো দ্রুত চড়িয়ে নিয়ে আসে। তারপর ধূর্ত নেকেড়ের মত লেজ নাড়তে নাড়তে বলে, বাহ! বেশ বেশ! একজন লেখকের সঙ্গ পাওয়াতো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া। এই বলে বুদ্ধিমান মাকড়শার মত সাবধানি জাল বুনতে বুনতে কথা শুরু করে রাফিদ হোসেন।

তা সম্প্রতি কী লিখলেন? রিয়ার পাশের শূন্য সোফাটায় বসতে বসতে জিঞ্জেষ করলেন রাফিদ। এভাবেই ধিরে ধিরে তাদের কথা এগিয়ে যেতে থাকে।

কিছুক্ষনের মধ্যেই দেখা যায় রিয়া আর রাফিদ হোসেনের মধ্যে বেশ একটা নরম তুলতুলে আড্ডা জমে উঠেছে। সেই আড্ডায় রুদ্রও মাঝে মাঝে টুকটাক অংশ নিচ্ছিল। আড্ডার এক ফাকে রাফিদ হোসেন রিয়াকে বললেন, “ ভালো কিছু সাহিত্য সম্পাদক আমার পরিচিত বন্ধু-বান্ধব। আপনি তাদের কাছে লেখা পাঠাবেন। আমি বলে দিব। আমি চাই আপনার প্রতিভার যথাযথ বিকাশ ঘটুক”।

 রুদ্রের কানেও কথাটা এল। যাক গুটি ঠিকঠাক মত চালা হচ্ছে দেখে সে  মনে মনে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলল। তারপর আসল কথায় এল। “রাফিদ ভাই, এই যে খামটা। পান্ডুলিপিটার জন্যে এডভান্স। ঝানু ব্যাবসায়ী রুদ্র আগেই রিয়ার কাছ থেকে টাকার খামটা নিজের পকেটে এনে রেখেছিল।

রাফিদ হোসেন পাকা ব্যাবসায়ীর মত খামটা পাঞ্জাবীর পকেটে রেখতে রাখতে   আস্তে করে বললেন, “আড়াই?”

হ্যাঁ, আর বাকি আড়াই দিব পান্ডুলিপি বুঝে পাওয়ার পর।

রাফিদ কি যেন ভেবে একটু চুপ করে রইলেন। তারপর একবার রুদ্র আবার রিয়ার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বললেন “রুদ্র। বাকি আড়াই তোমাকে আর দিতে হবে না। হাজার হলেও তুমি আমার গ্রামের ছেলে। তোমাকে আমি অনেক স্নেহ করি। আগামী সপ্তাহেই পান্ডুলিপি তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি। রিয়াতো বাসাটা চিনেই গেল। রিয়া আসলে তার কাছেই না হয় দিয়ে দিব!

প্রকাশক রুদ্র আসিফের চোখে তখন রহস্যময় হাসির রেখা!

আদনান সৈয়দ। লেখক ও প্রাবন্ধিক। জন্ম ঢাকা, বাংলাদেশ। পড়াশুনা করেছেন বাংলাদেশ এবং উত্তর আমেরিকায়। উত্তর আমেরিকা থেকে ফাইনান্স এর উপর এমবিএ করেছেন। নিউইয়র্ক মুক্তধারা বইমেলা, নিউইয়র্ক ফিল্ম সেন্টার, নিউইয়র্ক সাহিত্য একাডেমিসহ নিউইয়র্ক ভিত্তিক বিভিন্ন শিল্প-সাহিত্য সংগঠনের সঙ্গে তিনি জড়িত। পেশায়...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

বালির বেহালা

বালির বেহালা

বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..

তদন্ত

তদন্ত

  এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..