তবুও শুধু একবার

শ্বেতা সরকার
কবিতা
Bengali
তবুও শুধু একবার

তবুও শুধু একবার

অনেক দেরি করে দেখা হল আমাদের।
সুর্যাস্তের পড়ন্ত আভায় স্মিত হেসে
হাত ধরলে আমার।
হাত ধরলে, নাকি ভার নিলে!
আমার সমস্ত বিষাদের,
আমার বিষন্ন নিঃসঙ্গ লাঞ্ছিত দিনযাপনের ভার নিয়ে
আমায় দিলে এক অপূর্ব আলো।
যে আলো একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়লো
আমার বদ্ধ শ্যাওলা ধরা মন কুঠুরির আনাচে কানাচে।
যখন হাতড়ে হাতড়ে আঁধারে
একলা খুঁজেছিলাম আলো,
তখন হাত ধরে বলেছিলে
‘পাশে আছি, ভালো থেকো’।
প্রানের আলোয় জেগে উঠেছিলো ফসিল,
যে আলোয় আজও মুছে যায় সবটুকু আঁধার।

অনেক দেরি করে দেখা হল আমাদের।
একসাথে হাঁটা হলোনা সমুদ্র সৈকতে
নিয়নের মায়ায় ভিজলোনা কিছু মুহূর্ত
নির্জন পাহাড়ী বাংলোয়
তোমার বুকে মাথা রেখে
দেখা হলোনা সূর্যাস্ত।
শ্রাবণের ধারায় হলোনা বৃষ্টিস্নান,
মোমের আলোয় নগ্ন উষ্ণতায়
ডুব দেওয়া হলোনা দুজনের।
তবুও তুমি মিশে আছো অস্তিত্বে,
সমস্ত অপ্রাপ্তির পরেও
তুমি আমার পরম পাওয়া।
অনেক দূরে থেকেও
তুমি কত কাছে, কত আপন, কত ভরসার।

অনেক দেরি করে দেখা হল আমাদের।
প্রথমে ভীষণ ভয় পেয়েছিলাম।
‘ভালোবাসি’ বলতে গিয়েও চেপে ধরেছি মুখ,
ভয় পেয়েছি দাম্পত্যের সমাজতন্ত্র নির্দিষ্ট গণ্ডী ডিঙোতে।
বারবার এই খাঁচাকেই মনে করেছি জীবন।
আজ আর কোন ভয় নেই আমার
আজ ভুলতে পারি সমস্ত বিধিনেষেধ,
ছিঁড়তে পারি শালীনতার সমস্ত আগল।
জানি, তোমার কোন চাওয়া নেই!
শুধু আলোটুকু দিয়েই তুমি ভীষণ খুশি।
তবুও আজ আমি স্পর্ধিত আকাঙ্ক্ষায়
একবার ছুঁতে চাই তোমায়,
মিশে যেতে চাই নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে
ডুবে যেতে চাই চরম ব্যথার সুখে।
জানি জানি, অনেক দেরি করে দেখা হয়েছে আমাদের।
তবুও একবার, শুধু একবার
তোমাকে ছুঁতে চাই অতল গভীরে।
তারপর, সেই ছোঁয়ার আলোটুকু নিয়েই
জীবনের বাকি পথ হেঁটে যাবো আমি।

এই তো দিব্য ভালো আছি

কালবোশেখির অঝোর ধারায়
আনন্দে আজ ভিজছি আমি,
অশ্রুকণা যাচ্ছে ধুয়ে
বুঝলে না তো অবুঝ তুমি।

একটি দুটি সুখের মানিক
কুড়িয়ে গাঁথি মুক্তোমালা,
অবহেলায় ছিঁড়ে ফেলো
মিটিয়ে তোমার মনের জ্বালা।

তোমার জন্য যত্ন করে
রঙ সাজাই ফুলদানিতে,
ওসব ভীষণ তুচ্ছ ব্যাপার
তোমার জটিল ভাবনাতে।

তোমায় বলেছি অনেকবার
ছোট ছোট সব ইচ্ছে খুশি,
তাচ্ছিল্য আর বাঁকা কথায়
ভুলেছি আজ আনন্দ হাসি।

নিজেকে তাই গুছিয়ে নিয়ে
দিয়েছি ঢেকে কষ্ট ক্ষত,
নিজের বৃত্তে বাঁচি আজ
জীবন গোছাই নিজের মত।

এই তো দিব্য ভালো আছি
চুপ করে বেশ মানিয়ে নিয়ে,
তুমিও তো এই চেয়েছিলে
থাকি বোবা পুতুল হয়ে।

তোমার আমার মাঝে আজ
অভিযোগের কাঁটাতার,
ঠিক বেঠিকের কোন প্রমাণ
চাইনা দিতে আজ আবার।

সীলমোহরেই চাপা থাকুক
কষ্ট দিনের ইতিকথা,
এটাই হয়ত মুক্তি আনবে
থামিয়ে যতো বাড়তি কথা।

চলার স্রোতে চলবে জীবন
জমবে ধুলো সীলমোহরে,
ঠিক বেঠিকের দ্বন্দ্ব জীবন
দিন ও রাতের ছন্দে ঘোরে।

আজ শ্রাবণে

বৃষ্টি আমায় জ্বালায় ভারি
তুমি পোড়াও আরও,
কিছু আগুন সুখের ঝাঁপি
কিছু আঁধার ভালো।

কিছু আঙুল ছোঁয়া মিঠে
ফোঁটায় ফোঁটায় গাঁথা,
তোমার আবিষ্কারের নেশায়
আমি লিলিথ কথা।

তোমার আমার আদর মেখে
নিয়ন হলো গাঢ়,
ভিজে ফুটপাথে তবু
আঁধার নামে আরও….।।

 

জলসই দুপুর

টুপটাপ টিপটিপ
জলসই দুপুরে,
রুমঝুম রিমঝিম
বাঁশপাতা নূপুরে,
এলোচুল এলোমেলো,
ঐ বুঝি ঝড় এলো,
এই চল, একসাথে ভিজবি ?
হুটোপুটি ঝুটোপুটি,
ভিজে হাওয়া মেখে ছুটি,
ভিজে ক্ষণ তনু মন,
অপলক আনমন,
চলনা, একসাথে ভিজি আজ।
এলোচুল এলোমেলো,
ঐ বুঝি ঝড় এলো,
আজও ভেজে এই মন,
শাপলার ঝাঁকে ডুবে,
একমুঠো পানিফল।
ভিজে হই একসা
স্মৃতির আঙুল ছুঁয়ে,
ঝরে যাওয়া স্মৃতিজল,
বড়ো বেশী একগুঁয়ে।
ভিজে হাওয়া মেখে গায়,
আজও হাতছানি দেয়,
রিমঝিম নূপুরের জলসই দুপুরে
চল তবে, একসাথে ভিজবো।

শ্বেতা সরকার। জন্ম ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি। স্থান, বাবার কর্মস্থল টিকিয়াপাড়া রেল কোয়াটার, হাওড়া,বাংলা, ভারত। পাড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে হাওড়া নরসিংহ কলেজ থেকে বায়ো-সায়েন্সে স্নাতক। ছোট বেলা থেকেই নাচ,গান, আবৃত্তি, ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফিতে ছিল শখ। বিবাহসূত্রে খড়্গপুরের বাসিন্দা। আঞ্চলিক...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..