দৌড়
একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..
শ্রীমতী রায়চৌধুরী, পুরুলিয়ার এক বর্ধিষ্ণু রাজ পরিবারের বধূ। সুন্দরী, শিক্ষিতা আর অত্যন্ত ভালোমনের মানুষ। রাজ পরিবারে বিয়ে হবার ভাগ্য সবার হয় না। তাই বিয়েরদিন পূজারী বামুনের একমাত্র কন্যাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, সংসারে সবকিছু মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চলতে। শ্বশুর-শাশুড়িকে দেবতা হিসাবে জ্ঞান করতে আর মদ্যপ স্বামীর দোষ গুণ মানিয়ে নিতে। সেদিন সুন্দর বড়ো বড়ো কালো চোখে লুকানো চোখের জল কারুর চোখে পড়েনি। তাই বিয়ের দু’বছর ধরে প্রাত্যাহিক নিয়মের মত স্বামীর অত্যাচার, শ্বশুর শাশুড়ির কটু কথা আর বাড়ির পরিচারিকার জীবন সে মানিয়ে গুছিয়ে নিয়ে চলছে। তাই সবার চোখে সে লক্ষ্মীমন্ত। সাত চড়ে রা নেই। চোখের নিচের কালি, গালে কালশিটে দাগ, শাশুড়ির দেওয়া খুন্তির ছেঁকা লুকিয়ে সবার মাঝে সে রাজ রানী।
গ্রামের মানুষের কাছে সে মায়ের মতো। রান্না ঘরের পাশে আসা গরীব ছেলেগুলো যখন খাবারের আশায় বসে থাকে, শ্রীমতী সবার অলক্ষে নিজের হাতে খাবার মেখে তাদের মুখে দেয়। নিজের পাতে খাবার কম হোক তাতে ক্ষতি কী! ওদের না খাওয়া শুকনো মুখগুলোতে তৃপ্তির ছোঁয়ায় মনের ক্ষিদে মিটে যায় শ্রীমতীরায়চৌধুরীর। তবে হতভাগ্য শ্রীমতীর সন্তান হবার শখ তার মেটেনি।
প্রথমবার তার শরীরে ছোট্ট প্রাণের উপস্থিতি যখন পেলো সে, কতো স্বপ্ন বুনেছিল মনে মনে। সুন্দর একটি মেয়ের আশা তার বরাবরই। ছোট্ট ছোট্ট রাঙা পায়ে সারা মহল্লা ঘুরে বেড়াবে। পায়ে তার দুটো রুপোর মল গড়িয়ে দেবে, আর ঝুম ঝুম শব্দে আর মা ডাকে সারা বাড়ি হেসে উঠবে।
শ্রীমতীর স্বপ্ন পূরণ আর হলো না! রাজবাড়িতে মেয়ে জন্ম হওয়া পাপ। তাই গ্রামে হাতুড়ে ডাক্তারকে দিয়ে যখন জানা গেলো শ্রীমতীর গর্ভে কন্যা সন্তান, তখন স্বামী ও তার রাজ পরিবারের ইচ্ছায় গর্ভস্থ সন্তান হত্যা করা শ্রেয় মনে করা হলো। সঠিক দিনে শ্রীমতীকে সবকিছু মানিয়ে নিতে সবথেকে প্রিয় জিনিসকে হারাতে হলো। এভাবেই স্বপ্নের দু’হাতে গলা টিপে মারলো সে। দম বন্ধ করা পরিবেশে তার একমাত্র সঙ্গী ছিল, প্রিয় খাতাটা। যেটা শান্তিনিকেতন থেকে তার প্রিয় বন্ধু পূজা তাকে উপহার দিয়েছিল। রাজ পরিবারে সমস্ত ঐতিহ্যের মাঝে তার খাতাটা ছিল প্রাণের থেকেও প্রিয়।
দুপুরবেলায় সেই খাতায় চোখের জলের ফোঁটায় আর কালির আঁচড়ে ছোট্ট মেয়ের একটা ছবি আঁকলো শ্রীমতী। আর তার নিচে লিখলো… ক্ষমা করিস মা…
এভাবেই সময় ঘুরতে লাগলো, তারপর তিনবার অন্তঃসত্ত্বা হলো শ্রীমতী। কিন্তু কন্যা ভ্রূণের অনুপ্রবেশ পরিবার মানতে রাজি না।এভাবেই একের পর এক সমাধি সৌধ নির্মাণ হলো শ্রীমতীর মাতৃগর্ভে। আর দিন দিন স্বামী আর পরিবারে চোখে সে কুলটা নারী। পুত্র সন্তান দিতে পারে না। সারা শরীরে স্বামীর ভালোবাসার দাগ, কোথাও লাথি, কোথাও চড়, না সবকিছু সহ্য করতে হবে রাজ পরিবারের ঐতিহ্য বলে কথা… দিনগুলো বোবা আর অন্ধের মতো মনে হতো শ্রীমতীর। আলো নেই, ভীষণ অন্ধকার।
খাতার পাতায় ছোট্ট চারটি মেয়ের ছবি আঁকা। আর তার নিচে লেখা…
রাগা, রোহিণী, রাজরুপা, রাই..
খুব তাড়াতাড়ি আসছি মা…
পঞ্চম বার অন্তঃসত্ত্বা হলো শ্রীমতী।
আজ সে এক জল জ্যান্ত পাথর। খাতার পাতায় অনেক না পাওয়া কথা সেজে উঠেছে।
এবারো সেই মেয়ে…
পরিবারের সিদ্ধান্ত, নারায়ণ রায় চৌধুরীকে আবার বিয়ে দেওয়া হবে…
সারারাত শীতের রাতে পরিত্যক্ত বারান্দায় ঠাঁই হলো শ্রীমতীর। কলঙ্কিনী এর মুখ দেখলে সবার খারাপ হবে যে।
আজ খুব শান্তিতে আছে শ্রীমতী… খুব শান্তি, যা এতবছরে একদিনের জন্য আসেনি তার জীবনে…
বুকের কাছে জড়িয়ে আছে তার খুব প্রিয় খাতা টা…
মনের মধ্যে অনেক নাম ঘুরছে…
রাগা
রোহিণী
রাজরূপা
রাই…
শেষ নাম শেষ বারের মতো লিখলো শ্রীমতী…
রিধিতা
বারান্দা থেকে উঠে, এগিয়ে চললো শ্রীমতী…
পিছন পিছন পাঁচ জোড়া নুপুর পড়া ছোট্ট পায়ের শব্দ… কিছুটা এগিয়ে দীঘির পাড়ে পলাশ গাছের নিচে বসলো সে.. চারদিকে ঘিরে বসে আছে তার ছোট্ট ছোট্ট পাঁচটি মেয়ে… বুকে জড়িয়ে অনেক আদর করলো শ্রীমতী তাদের… চোখের জলে মা ও সন্তানদের মিলন ঘটলো যার সাক্ষী,পূর্ণিমার চাঁদ, শীতল বাতাস আর দীঘির জল…
শ্রীমতী এর মা হওয়ার সাধ পূরণ হলো…
তার যন্ত্রণাগুলো একে একে মিলিয়ে গেলো…
কিছু যন্ত্রণার প্রকাশ নীরব…
কিছু প্রতিবাদের ভাষা শব্দ চয়ন মানে না….
কিছু কান্না, বোবা
শ্রীমতী তার নীরবতায় শান্তি খুঁজে পেলেন…
একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..
সকালে উঠে মায়ের মমতামাখা মুড়ি ও লিকার চা খেতাম। তারপর দাদু বলতেন, এবার পড়তে বোস।…..
রোজকার সূর্য ওঠার মত বেলি ভোরে উঠে দরজায় সামনে জল দেয়,ঝাঁট দেয়, ফুল তোলে। তারপর…..
একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কর্পোরেট অফিসের চাকরির ইন্টারভিউয়ে জটিল একটি প্রশ্ন করা হলো। প্রশ্নটি হচ্ছে –…..