তিনটি কবিতা

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
কবিতা
Bengali
তিনটি কবিতা

আমার মনের ঘরে

একান্ত ইচ্ছাগুলো আর গোপন থাকছে না,
না বলা ভাবনাগুলোও অজান্তে পাঁচ কান হয়ে যায়।

সেদিন খুব কেক খেতে ইচ্ছা হল,
সন্ধ্যায় কলিংবেল শুনে দরজা খুলে দেখি,
নিচের তলার প্রতিবেশী এসেছেন,
হাতে একটির উপরে আর একটি প্লেট ঢাকা,
আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
‘আজ একটু কেক বানিয়েছিলাম,
আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম’।
আমি বাকরুদ্ধ হয়ে হাত বাড়াই।

এই যে দিনের পর রাত
আর রাতের পর দিন, একই নিয়মে বাঁধা,
দিনকয়েক কোথাও ঘুরে এলে হয় না?
এমন ভাবতে ভাবতে মোবাইলে ভেসে এল
একগুচ্ছ বেড়ানোর ঠিকানা,
অজস্র সুবিধা, অনন্ত আরাম
আর আশ্চর্য আনন্দের হদিশ নিয়ে।

দেওয়ালেরও কান আছে জানতাম,
কিন্তু বেহুলার বাসরের মতো মনেরও যে ছিদ্রপথ আছে
তা কখনও নজরে আসেনি,
এখন আমার মনে ভেসে আসা কবিতার লাইন
আমার আগেই লিখে ফেলবে অন্য কেউ,
মনশ্চক্ষে ফুটে উঠল কোন মুখ
তা আর গোপন থাকবে না,
আমার ভালোবাসা, আমার ঘৃণা
রাষ্ট্র হয়ে যাবে আমার অজান্তেই।

ভালো হোক, মন্দ হোক
আমার মনের ঘরে কতজন যে বসত করে
আমি তার কিছুই জানি না।

পারাপার

এত কাছে গিয়েও আমি সমুদ্রে নামিনি
উত্তাল ঢেউগুলি যেখানে এসে মিলিয়ে যাচ্ছে
সেখানে একটু হাত রেখেছি মাত্র।

পাহাড়ের কাছে গিয়েও আমি পাহাড়ে উঠিনি,
পাথরের শেষ খণ্ডটি যেখানে সমতল ছুঁয়েছে
সেখানে দাঁড়িয়ে তাকে স্পর্শ করেছি।

আমি পাহাড় আর সমুদ্রের মাঝে
একটি খরস্রোতা নদী চেয়েছিলাম,
আমি সেই নদীর ওপারে যেতে চেয়েছিলাম।

 

দেখা হলে

যেদিন আবার কোথাও দেখা হবে
সেদিন উঠোনের কোনে
অনেকগুলি ফুল ফুটবে।
দুপুরের ঝড় থেমে গেলে
এরকমই বলেছিলে তুমি।

তারপর তোমার সঙ্গে
দেখা হয়েছে অনেকবার,
কখনও মোহনায়
কখনও মাঝ-নদীতে
কখনও চাদরের নকশায়।

উঠোনের কোনে ফুল ফুটেছে কিনা
কেউ খেয়াল রাখিনি।

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। কবি ও গদ্যকার। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের বাঁকুড়া জেলায়। এবং কর্মসূত্রে কলকাতায় বসবাস। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। লেখালেখি শুরু সত্তরের দশক থেকে। প্রকাশিত বই: ‘মার্কিন মুলুকে, মফস্বলে’(২০২০)। যৌথভাবে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: ‘রক্তাক্ত চন্দনের বনে’(১৯৭৭) এবং ‘সপ্তর্ষির আলো’(২০১৫)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..