যাযাবর
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
তোমাকে দেখিনি সে কতদিন!
পাকরা যখন ঘুমন্ত মানুষের উপর
এলোপাথারি ঝাঁপিয়ে পড়লো
তখন পালিয়ে এসেছিলাম আমি
তোমাকে কোনকিছু না বলে
ওদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার।
জানি, না বলে আসাতে তুমি
কিচ্ছুটি মনে করোনি
তুমি সামনে থাকলে তুমিও বলতে
এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন?
যাও। এখনি যাও। আরে যাওনা।
এই নাও আমার জমানো
সুপারি বিক্রির টাকা
কত আছে জানিনা
একেবারে কম তো নয়
কাজে লাগবে তোমার পথে।
এই ধর নারকেলের নাড়ু ক’খানি
বানিয়ে ছিলাম গতকাল
ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিও তখন
তোমার কিন্তুু পানি খাবার অভ্যাস কম
বেশি করে পানি খাবে
এত দৌঁড়ঝাপে তোমার তেষ্টা পাবে প্রচুর
হয়তো পানিও পাবেনা কোথাও
এই নাও পানির বোতল।
এই সময়ে রশি পাব কোথায়?
শুকোতে দেয়া পাজামার ফিতা দিয়েই
বেধে দিলাম পিঠে বোতলখানি
হাতড়ে পাবে তো পিছে?
ভাল করে বেঁধে দিয়েছি
খুলে পড়বেনা কোথাও
শুধু মনে রেখ পানি আছে তোমার সাথে।
আমার জন্য ভেবোনা একদম
আমার জন্য ভাবনার সময় এটা নয়
দেশ স্বাধীন হলে তবে দেখা হবে ক্ষণ
ততোদিন বেশ ভালই থাকতে পারবো।
আগে তো আমার মাকে বাঁচাও,
ভাইকে বাঁচাও, বোনকে বাঁচাও
আমার মাটি তো বাঁচুক আগে
আমার আকাশ, আমার জলাভূমি
সূর্য তো উঠুক আগে ঘন লাল হয়ে
পতাকাটা উড়ুক নির্ভয়ে
ঝিরঝির বাতাসে।
বীর হয়ে ফিরে আসবে তুমি
দূর থেকে দৌঁড়ে এসে ঝাঁপটে ধরবে আমায়
আদরে অাদরে ভরিয়ে তুলবে আমায়
তারপর, সারাদিন ধরে শুনবো যুদ্ধ জয়ের গল্প
আমাদের ভালোবাসার গল্প করবো প্রাণ ভরে
তারপর আমরা একছাদের তলায় বাঁধবো ঘর
তখন আমাদের খুনসুঁটিতে হাসবে চারপাশ।
তোমাকে বড্ড ভয় করছে আমার
আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারছিনা
শুধু এটুকুই বলতে পারি
ওরা আমার বুক ঝাঁঝড়া করে দিয়েছে
তোমার দেয়া পানির সেই বোতল
রক্তে লাল হয়ে গেছে বোধ হয়
কি রঙ ছিল বোতলের
ধবধবে কালো, নাকি রঙিন?
ওদের সাথে লড়তে লড়তে
কখন যে তেষ্টা উবে গেছে
বিশ্বাস কর, একদম টের পাইনি
ওদের শায়েস্তা করার তেষ্টা
পেয়ে বসেছিল আমার।
আমার আর হলোনা ফেরা
তোমার জন্য রেখে গেলাম তোমার দেশ
কেমন আছ তুমি স্বাধীন?
তোমার কাছে দেশ মানেই তো আমি
জড়িয়ে রেখ আমায় তোমার বুকে
নিরেট ভালবাসার উষ্ণ আঙিনায়।
রাগ করোনা লক্ষীটি
হারাইনি আমি
তোমার বেঁধে দেয়া পানির বোতল
রেখে দিয়েছি তোমার ওইচোখে
টপটপ করে যখন জল গড়াবে
তার প্রতিটি কণাতেই আছি আমি
স্পর্শ পাবে আমার, আমার মতোই
যখন তোমার দু’আঙুল ছোঁয়াবে চোখের নিচে
চোখের পানি নাকের পানি যখন মিশবে মোহনায়।
কাঁদছো কেন তুমি এখন সাহসিনী?
তখন তো তুমি কাঁদনি একরত্তিও
তাহলে গৌরবের কান্নাই কি
নামলো তোমার দু’চোখ বেয়ে?
আমারও আজ কান্না পাচ্ছে ভীষণ
কেঁদেই ভাসুক না হয়
তোমার আমার স্বাধীনতা
নোনাজলে সিক্ত হোক জমিন
মায়ের উদর, বিরান মাঠ
একসাথে কাঁদতে পারিনি বলে
বড্ড অাফসোস হচ্ছে আমার।
তোমারও কি তাই?
আমাদের ভালবাসা চোখের কোণায়
কানায় কানায় ভালবাসার জল
নামছে গড়িয়ে কবর পাড়ে
শাদা শাড়িতে আরেক কফিন।
তোমার বুকের উপর আমার আবাসন
এই নাও, পানি খাও এক ঢোক
নি:স্তব্দ নিথর তুমি আর আমি
আর আমাদের স্বাধীনতা প্রোজ্জল
এই, এই তো পেয়েছি তোমায়
তুমি, তুমিই তো আমার সেই তুমি।
যাযাবর যাযাবরদের ছোঁড়া কাঠে আগুনও অসংযত,ঝড় উঠে ইত্যবসরে কিছু লবণ দানাও জমা পড়েছে… উদ্বাস্তু রোমে…..
কবি গো ওওও,আর যত গুণীজন কি দিয়ে পূজি তোমাদের চরণ আমি যে অভাগা জানি না…..
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..