প্রেম এবং অপ্রেমের কাব্য
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
এ শহর ফেলে রেখে দূরতম আরেক শহর
একফালি চাঁদ ওঠে আকাশের চোখের সীমায়
ওঠে যেন বালুঝড় হিম বায়ু স্রোতের নহর
নিমফুলে ঝড় ওঠে থোকা- থোকা কামিনি ঝিমায়।
জানি, ভালবাসলে এমন ছুটে চলে অন্তহীন ঝড়
তটিনী পেছনে ফেলে শতাব্দির সব ইতিহাস
বুকের গভীরে খোদাই ব্যাকুল ঠিকানার ঘর
টগর বকুল বেলী হাস্নার মাতাল সুবাস।
অশ্বথ গাছেরা যেমন আঁধার রাতের কোন গল্প অনেক
অথবা পাহাড় যেমন সুউচ্চ মধুময় শানিত টনক
তেমনি তুমিও আমার তন্দ্রা-মদিরার নেশায় ক্ষনেক
ভেননিভ ঢেউ যেন দুঃখ মুছে দেয়া স্মৃতির কনক।
সীমাহীন মীকরণ ক্লান্তির শান্তির দশটি আঙুল
বুনে যাই অবিরাম আলোকিত প্রেমময় নকশার ফুল।
তুলসি পাতার জতুগৃহে ইতিহাসের বরপুত্র
যেদিন প্রথম কেঁদে উঠেছিল-
তখন বিশ্বময় হেমলকের এক নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছিল।
তৈরি হয়েছিল কপোতাক্ষের এক অমিমাংসিত বিস্ময়!
যে বিস্ময়ে আজও অবাক যেন ফুটন্ত গোলাপের জয়মাল্য।
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের পরষ্পরবাহী তরঙ্গে ঠাঁসা
শোকগাঁথার দুর্জ্ঞেয় সম্রাট হয়ে আজ
আলোকজ্জ্বল পৃথিবীর কর্ণধার এক!
অথচ তোমারই পদতলে শুয়েছিল মধ্যযুগ
কি নিবিড় মায়ায় তাকে সরিয়ে আধুনিকতার নিপুন সাজে
নিজেকে সাজিয়েছিলে ভীষণ আক্রোশে এবং প্রচণ্ড আঘাতে
মেলেছিলে অমিত্রাক্ষরের নতুন প্রত্যাশা।
তাই মধ্যাহ্নের ঝকঝকে রোদে চিরকাল বাঙালির শব্দাবলী
শর্তহীন দুর্বিসহ দিন শেষে হেসে ওঠে-
পৌষের মেলা এখন প্রতিটি বাড়িতে!
যদিও তোমার ভক্তের আবেগ উচ্ছ্বাসে শুকনো কপোতাক্ষে বান আসে না
তবুও পৃথিবীর সমস্ত সীমানা পেরিয়ে আর্য-অনার্যের
যে ভেদাভেদ তুমি মুছে দিয়েছিলে
তা আজ প্রযুক্তির ভেদহীন সংস্কৃতির স্বপ্নে পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিটি অন্তর-প্রান্তরে
কল্পনার ঘোড়দৌঁড়ের লাগাম টেনে
তার অপরিমেয় স্রোতউৎসারে বাঁধা দেবার কে বা আছে?
যে পথ তুমি এঁকেছিলে লক্ষ অধিপতির বারণকে উপেক্ষা করে…।
আকাশ ফুলেদের সাথে তার ছিল সখ্যতা
নদী আর মেঘের সাথে মিতালী
ধান আর গানের সাথে আজীবন
লেগেছিল জীবনের সাজানো ডালি।
যদি আমরা ইতিহাসের কথা বলি,
যদি সাহিত্যের কথা বলি
যদি বলি স্থাপত্য অনবদ্য স্তুতির কথা
সেখানেও একেকটি স্মারক হন তিনি।
সুন্দরবন থেকে সিলেট, পঞ্চগড় থেকে পাহাড়পুর
এবং বাংলাদেশের নিজস্ব প্রাণ টুঙ্গিপাড়া
সবখানেই ঝিঁ ঝিঁ পোকা তার নামে ডাকে
তাঁর নামে ভোর আসে আঁধার সরায়
তাঁর কণ্ঠে জনতার কণ্ঠ বাজে জানি
তাঁর কণ্ঠে থাকে নিপীড়িত মানুষের ছবি
নদীগুলো বয়ে যায় বিরামহীন পথ
সুরমা, যমুনা, ধলেশ্বরী, পদ্মা, মেঘনা, কপোতাক্ষ, মধুমতির মধুর হৃদয়
সবখানে ছেয়ে আছে তার গতিস্রোত
পাহাড়ের উচ্চতায় আকাশের সীমানায় পাখিদের গানে বঙ্গোপসাগরের উর্মিমালায়
শঙ্খচিল সবুজ বাগানে আর তুমি আছো চিত্রের মায়াজাল রেখায়
তুমি আছো গানে গানে সুরের লালিত্যে
তুমি আছো কবিতায় ছন্দের কঠিন বন্ধনে
এবং তুমি আছো নাটকের পুরো বাংলাদেশ
তোমার কণ্ঠস্বর ঝংকারে বেজে ওঠে সাতান্ন হাজার বর্গফুট জুড়ে
ভেজানো পাটের গন্ধে তোমার ঘ্রাণ পাওয়া যায় সাজানো সবুজে থাকো আজীবন
সোনামুখী ধানে তোমার হাসি থাকে ঝলমল
সোনালী আঁশের মতো দিগ্বিদিক ছড়িয়েছো নাম তোমারই হাস্যস্রোতে ফুটে থাকে সীমফুল নীল
আর নীমফুলে ওঠে নিয়মিত ঝড়।
তোমারই জন্য আজ বাংলাদেশ নাম
মানচিত্রে হেসে ওঠে, হেসে ওঠে ষোল কোটি মানুষের প্রাণ।
পুকুরটা ছিল আমার দাদার। আমার দাদা মো.দুদু মিয়া।
ঠিক আমার দাদার একার নয়, তার তিন ভাইয়ের।
তার আগে ছিল তার দাদার। তার একার, নিজস্ব।
মো. খবির, মো.নজির এবং সবচেয়ে ছোট ভাই মো.দুদু মিয়ার।
এক মায়ের পেটের আপন তিন ভাই।
মা যেমন সবার সমান, ভাগযোগ্য নয়।
তেমনি পুকুরটাও ছিল এজমালি। সকলের।
ভাগ হয়নি কখনও।
আমার শৈশব খুঁজতে গতকাল গিয়েছিলাম কামারখালীর মছলন্দপুরে।
আমার সান বাঁধানো পুকুরপাড়ের সেই ঘাটে।
আজ সান বাঁধানো ঘাট ঢেকে ফেলেছে কচুরিপানা, শ্যাওলায় ছেয়ে আছে আজন্ম শৈশব আমার।
থকথকে শৈশব চুপচাপ, ঠিকঠাক, নিশ্চুপ ঘুমিয়ে ছিল বিশাল পুকুরের কচুরিপানার নীচে।
আমি পাড়ে যেয়ে দাঁড়াতেই নিঃশব্দ পাশ ফিরে শোয় তারা।
তারপর আড়মোড়া ভেঙে ভেঙে স্বশব্দ জেগে ওঠে একে একে সব।
এলোমেলো স্মৃতির শৈশবে ঝড় ওঠে।
কি থিরথিরে চমৎকার কাকচক্ষু জল ছিল তখন। স্বচ্ছ স্ফটিক যেন।
পা ফেললে চকচকে ফরসা পায়ে ছোঁয়া সবুজ ঘাসের ডগা,
এটেল বালির মাটি,
মাটিতে লেগে থাকা কুঁচো চিংড়ি,
পানিতে সাঁতার কাটা ডানকানা মাছ
সব দেখা যেত আয়নার মতো স্বচ্ছতায়।
সারাদিন লুটোপুটি, ডুব সাঁতারের স্নিগ্ধ দিনে পুকুরের এ মাথা, ও মাথা,
মধ্যপুকুরের বিরামহীন হৈ হুল্লোড়,
জল খেলা আমার স্মৃতিতে ঘাঁই মারে বিরামহীন।
বড় সোল মাছ তার এক ঝাঁক বাচ্চা পোনাসহ কিভাবে পুকুরের কিনারে কিনারে বুড়বুড়ি কাটতো,
পুকুর ভর্তি লাইলোটিকার ছুটোছুটি, মাখামাখি।
কিভাবে কাতলা মাছ মুখে বর্শি গেঁথে সারা পুকুর ঘুরাতো ভনভন।
বর্শিওয়ালা বাতেন ভাই হাতে ছিপ নিয়ে সাতরে মরতো মাছের পিছে সারা পুকুর।
অবশেষে বাবু ভাইয়ের সাহায্যে সেই মাছ তোলা হতো ঘন্টা খানেক পর।
দশ কেজি ওজনের মাছে দাদাদের পরিবারের বিশাল পিকনিক হতো
চাঁদনী রাতে পুকুর পাড়ের সিঁদুরে আমতলায়।
সব স্মৃতি হুমড়ি খায় একে একে।
শীতকালে অল্প ঘোলা পানিতে মাছ মারার সে দৃশ্য। সেখানে ছোট্ট এই আমিও থাকতাম ঝুড়ি হাতে
ঘোলা পানিতে মুখ ভেসে থাকা বড় পুঁটিগুলো
ঝুড়িতে আটকে ফেলার স্বর্গীয় আনন্দগুলো
নতুন করে হাজির হলো গতকাল।
পানি সেঁচা পুকুরের থকথকে কাঁদায় আটকে থাকা বাইন মাছ
আমাকে ডাকে যেন আগের মতোই।
ঘন কাঁদায় জিয়ল মাছের গাদাগাদি নড়াচড়া আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখি।
জালে আটকে পড়া বড় কুঁচে মাছে জেলেদের চকচকে চোখ।
ঝুম বৃষ্টিতে উঠে আসা কই মাছের ঝাঁক আমার হাতকে রক্তাক্ত করে আগের মতোই।
আমি অবাক হয়ে বর্শি নিয়ে বসে থাকি আনমনে আমড়া গাছের তলে, আতা গাছের ডালে।
মনে মনে ছন্দ বানাই, ছন্দ ভাঙি, কবি হয়ে উঠি, গান গাই গুনগুন।
পুকুরের থিরথিরে পানির স্রোতে আমিও ভাসতে থাকি নির্মিমেখ।
আমার শৈশব সুপারি গাছের মতো লম্বা হয় আমার সম্মুখে
আমার শৈশব হাঁসের মতো সাঁতার কাটে অনবরত আমার শৈশব ধরা পড়ে মেঝে মামার পলোর নিচে বড় বোয়াল মাছ যেন!
দিশেহারা বোয়াল যেমন ঘোলা পানিতে সবার তাড়া খেয়ে ডাঙায় এসে ওঠে
তেমনি আমার শৈশব গতকাল তাড়া খেয়ে ডাঙায় এসে উঠেছিল আনন্দে।
কিন্তু মেঝে মামা এখন পৃথিবীতে নেই।
তার ঘাড়ে উঠে, কোলে চড়ে যাওয়া হয় না মামাবাড়িতে যখন তখন।
দেখা হয় না ঋষি বটতলার বৈশাখী মেলা।
কিন্তু শৈশব শুয়ে থাকে পায়ের নীচে। সে গড়াগড়ি খায়।
সে সাথে থাকে অনন্ত অনাবিল সময়ে আমার।
এ-এক প্রেমের শহর, এ-এক প্রেমের শহর, এখানকার বাতাস প্রেমের সৌরভ বয়ে আনে। হাজারো প্রেমের কলি…..
পতাকায় মিশে যায় ফেলানির নাম উড়তে থাকে কাঁটাতারে; মানুষের মনে জমে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ বিকল্প মেঘের…..
প্রেমিক হয়তোবা তাকে আমি গড়তে পারতাম তার বুকের ভিতর এপাশ থেকে ওপাশে উল্টে নতুন একটা…..
চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..