প্যাটাক্যুয়রিক্যাল নাইটশোয়ে আপনাকে স্বাগতম (শেষ পর্ব )
ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Last Episode) পূর্ববর্তী পর্ব এখানে>>>…..
সেই ছেলেবেলা থেকে আজ অবধি কুমারের গড়া তৈজসপত্রে আমার অবাক করা টান। বাড়ি থেকেই কুমার পল্লী দেখা যায়। কারনে অকারনে আমি সেদিক যাই। নগেন মামুর দাওয়ায় বসে থাকি। নগেন মামুর বৌ কাঠের পিড়ি পেতে বসতে দেন। হাতে ধরিয়ে দেন এক কাঠা মুড়ি–বাতাসা। কাঠা মানে হচ্ছে বেত দিয়ে বানানো ছোট ঝুড়ি। আমি মুড়ি বাতাসা খেতে খেতে নগেন মামুর কাজ দেখি। মামী কাজের ফাঁকে এসে চালার নিচে রাখা মাটির স্তুপে ময়ান দিয়ে যান। এই বিষয়টা আমাকে অবাক করেছিলো। এতো সহজ তাহলে নয়! নদীর পাড় থেকে তুলে আনা বেলে মাটিতে কাজ হবে না। এঁটেল মাটিতেও না। লাগবে দো আঁশ মাটি। যেভাবে আমরা ময়দায় খামির দেই, সেভাবেই ময়ান দিতে হবে মাটিকে। সেই মাটির এক খাবলা চাক্কির ওপর বসিয়ে ঘুরিয়ে দিতে হবে সেটা। সামনে থাকবে পানির বালতি। এবার মাটির দলাকে আকৃতি দেবার পালা। অসংখ্যদিন চেষ্টা করেও আমি পারিনি। নগেন মামু হেসে একাকার হতেন, ” ও মিয়ার বেটি, উইয়া তোমাগের কাম না। এইহানে বইসা দেহো।” আমি তাই করতাম।
একবার মামুকে খুব করে ধরলাম আমার একটা মুর্তি গড়ে দেবার জন্য। নানা কারনে সেটা হয়নি। মাচাইন ঘোনাপাড়া থেকে চলে আসার পর বছরে দুই–তিনবার আমি যেতাম। নইলে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতো। একবার গেলে পুরো মাস থাকতাম। যখন ক্লাস নাইনে পড়ি, নগেন মামুকে বলেছিলাম আমার একটা মুর্তি গড়ে দিতে। লক্ষীর আদলে। বলেছিলাম, এই চর্চিত জীবনের রঙ ঢঙ যে শৈশবকে হত্যা করেছে সেই শৈশবের নিষ্পাপত্বের রঙ দিয়ে যৌবনকে ফুটিয়ে তুলতে। মামু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
কুমার কোকাপাল মূলত দেবদেবীদের নির্মাণ করতেন। কোকাপাল আবার ছিলেন ভেষজ চিকিৎসকও। সেবার যখন গ্রীষ্ম টগবগ করে ফুটছে, আমরা মাইঠালে নামলাম মাছ ধরতে। গ্রামে বড়ো হয়েছি। তবু্ও আমি গাছে চড়তে শিখিনি। গর্তে হাত দিয়ে শিং মাছ ধরতেও পারতাম না। আমার ভাই বোনেরা কি দক্ষ ছিলো এসবে! সেবার আম কাঠালের ছুটিতে বরিশাল থেকে সবাই এসেছে। বাবা-মাও এসেছেন। সবার দেখাদেখি আমিও মাইঠাল মানে ডোবায় নেমেছি মাছ ধরতে। একটা সাপ আমাকে কামড়ে গেলো। সে যে কি কষ্ট আর জ্বালাপোড়া! কোকাপাল নানা এলেন। কি এক অদ্ভুত কান্ডকারখানা করে বিষ নামিয়ে দিলেন। এরপর পুরো একটা মাস বিছানায় পড়ে ছিলাম আমি। সাপের কামড় খেয়ে টাইফয়েড! বাবা-মা সেবার অনেকদিন গ্রামে ছিলেন। এতো যন্ত্রণার মাঝেও বাবা–মায়ের সঙ্গ আমাকে সুখী করে তুলেছিলো।
সবাই চলে যাবার পর আবার এক প্রগাঢ় নিঃসঙ্গতা ঘিরে ধরলো আমাকে। কখনই কাউকে বলতাম না সেই একাকীত্বের কথা। পরিবারের বাইরে বড়ো হওয়ার মাঝে ইতিবাচক অনেক কিছু আছে। হয়তো সেই ছেলেবেলাই আমাকে স্বাধীনচেতা হতে শিখিয়েছে।
দিনগুলি অলসভাবে চলে যাচ্ছে। আমি আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। বিকেল হলে নদীপাড়ের উঁচু সড়কে বসে ভাইবোনেরা, গল্প করি। বাবলার ফুলরেনু উড়ে এসে চুলের উপর পড়ে। কৃষ্ণচুড়ার ডালে বসে ঝুল খাই, আকন্দের ফুল দিয়ে মালা গাঁথি। ঢালে গড়িয়ে নদীর মাঝে পড়ি, সাঁতার কাটি, পুরনো জমিদার বাড়িতে গুপ্তধন খুঁজি। শিমুর সাথে মারামারিও। এরই মাঝে মমতাদের বাসা থেকে খবর আসে, মমতার বিয়ের। আমি থ হয়ে যাই। এই কিশোরীর বিয়ে! মাসিমার কাছে অভিযোগ করি। কাজ হয় না। গৃহস্ত বাড়িগুলোতে দেখেছি, সাবালিকা হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। আমি মৃয়মান হয়ে পড়ি। নগেন মামুর কাছে যাই। মাটির নির্মান দেখি। আমার কিছু ভালো লাগে না। সেই অস্থিরতা কে পুঁজি করে একটা কবিতা লিখেছিলাম ক্লাস নাইনে পড়ার সময়। সেটা দিচ্ছি।
কুমার পল্লীতে সূর্যোদয়।
আমার শৈশবের বিস্ময় ঐ নকশাকাটা মাটির কলস!
দক্ষ আঙুলের বিমূর্ত ভালোবাসায় যেমন
বদলে যায় একতাল মাটি
তেমনি বিশ্বাসে একদিন
দাঁড়ালাম নগেন কুমোরের দাওয়ায়, বললাম,“আমাকেও বদলে দাও নগেন,
এই পুরোনো শরীর আর ভালো লাগেনা,
কাজল পাউডার পারফিউমে ক্লেদাক্ত
শরীরের ছাঁচগঠন পাল্টে
দাও আটপৌড়ে অঙ্গশোভা………………”নগেন হাসে না
তার বিস্মিত চোখ জিজ্ঞাসায় বদলে যায়, যেন
আমার যৌবনের শৈশবকে সে ঠাহর করে
উঠতে পারেনা।জেদী চাওয়া থেকে নতজানু হই
আর্তিতে
ভিক্ষায়……………তখন
সে রহস্যময় হেসে প্রশ্ন করে,
“মন বদলাতে পারবি মা? যদি
মন তোর বশ হয়, আসিস সেইবেলা
আমি তোকে লক্ষীর বসন দেব।”কুমার পল্লীতে সন্ধ্যা নেমেছে
শরীর ঢেকেছে মনের লজ্জা।
ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Last Episode) পূর্ববর্তী পর্ব এখানে>>>…..
ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Episode-5) পূর্ববর্তী পর্ব এখানে>>> শেষ…..
ইংরেজি ভার্সান এখানে >>> Welcome to the Pataquerical Night Show (Episode-4) পরবর্তী পর্ব পড়ুন এখানে>>>>…..
আগের পর্ব পড়ুন এখানে: >>> বাদল মেঘের আলোয় (পর্ব ১২) কবির আর গওহর স্বাভাবিক দাম্পত্য…..