প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
তুষার ভাস্কর্য
বাইরে থেকে সবাই আমাকে কেমন ভাবে জানিনা, তবে এটা বুঝি- আমি যে ভিতরে ভিতরে কতটা বোহেমিয়ান তা
কেউ বুঝতে পারে না। আমার চরিত্রের এই দিকটাকেই ভীষণ পছন্দ করেছিল লিলিয়ান, যার সাথে দেখা হওয়াটা
আমার কাছে যেন জলকল্লোল- উচ্ছ্বলতায় পূর্ণ। তাইতো লিলিয়ানের সাথে দেখা করবো বলে বেরিয়ে পড়েছি।
অষ্ট্রিয়ার সালজবার্গ থেকে ট্রেনে চেপে আল্পস এর পাশ দিয়ে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে যাচ্ছি। জানালা গলিয়ে
আল্পসের দিকে তাকাতেই তার একটি শৃঙ্গ সদ্য যৌবনা নারী হয়ে মুহূর্তেই আমার শরীরের অভ্যন্তরে এক
অদ্ভুত তরঙ্গ প্রবেশ করিয়ে দিল। একান্তচারী মনের আনাচে কানাচে সেই তরঙ্গ নেচে নেচে একটা নামকে
স্বাগত জানাতে থাকলো-লিলিয়ান। মনে হলো এখানেই লিলিয়ানকে আমার বড় বেশী প্রয়োজন। ঠিক একই ভাবনা
কালবোশেখীর তীব্রতায় আঘাত হেনেছিল সেদিনও, আকাশ পথে মিলান থেকে জুরিখে যেতে। সবিস্ময়ে
দেখছিলাম, নীল জলের ক্ষীণকটি স্রোতস্বিনীর পাশে ধবল সাদা তুষারের উপর দাঁড়িয়ে, জলে প্রতিবিম্বিত
সূর্যকিরণ সর্বাঙ্গে মেখে দিগঙ্গনার মত সেখানে দাঁড়িয়ে আছে লিলিয়ান।
ট্রেনের কম্পার্টমেন্টে বসে বাইরেটা দেখতে দেখতে আমার দু’চোখ জুড়িয়ে গেল। সাড়ে পাঁচ ঘন্টার উপভোগ্য
জার্নিতে বার তিনেক ক্যাপাচিনো চালান করেছি পেটে। স্নায়ুর গতি অত্যন্ত দ্রুতগামী মনে হলো। আমি
নেশাগ্রস্থ হয়ে তাকিয়ে আছি। আল্পসকে পাশে রেখে চলছে দ্রুতগামী রেল। সবুজ কুঞ্জ কাননের মাঝে অল্প
বিস্তর দ্বিতল-ত্রিতল বাড়ী, তার ফাঁকে ফাঁকে চোখ রাখলেই সেই সম্মোহনী পর্বত। বরফ পাহাড়ের ডানায়
ভাসছে নীলচে সাদা মেঘ, ওরা উড়ছে হাওয়ায় ভেসে ভেসে। হ্যা, এখানেই, এই চূড়ায় আমি লিলিয়ানকে নিয়ে যেতে
চাই। লিলিয়ান পাহাড় এবং সমুদ্র ভালবাসে, যদি পাহাড়ের পাদদেশে থাকে সমুদ্র তাহলে সে সেখানেই জীবন
কাটিয়ে দিতে চায়। বড্ড উদাস উদাস লাগছে নিজেকে। নীল, সাদা ও সবুজের ত্রিমাত্রিক আবহের এই পরিচ্ছন্ন
বিকেল আর অস্তে চলা রবির কিরণ লিলিয়ানের জন্য হাহাকারের দাউ দাউ আগুনকে আরও দীপ্যমান করে
তুলল।
মনে পড়ল প্রথম দেখা হওয়ার দিনটির কথা। সেবার প্যারিস থেকে মিলানের পথে সিঙ্গেল বার্থ পেলাম না।
কিন্তু একাকী ট্রেনের জানালায় বসে যেতে ভীষণ ইচ্ছে করছিল, মনে হচ্ছিল যেন একটা অর্থহীন জীবন টেনে
নিয়ে যাচ্ছি। নিজের কাছে কিছু প্রশ্ন ছিল, যা খুঁজে পেতে আমার এই যাত্রা। উদ্দেশ্যহীন একাকী অনেক দূর
চলে যাওয়া আমার চির দিনের অভ্যাস। সামনের বার্থটা ফাঁকা দেখে মনটা প্রসন্ন হলো, ভাবলাম হয়ত সেটি
খালিই থাকছে, কিন্তু তা আর হবার নয়। মুহূর্তেই এক তরুনী এসে হাজির-Hello, this is Lillian। নিজের পরিচয়
দেয়ার জন্য তার দিকে তাকাতেই আমার দুই চোখ স্থির হয়ে গেল, মনে হলো পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। ক্ষণিক
আগে যে ভাবনায় নিমজ্জিত ছিলাম সেখানে আর নিজেকে ধরে রাখা গেলনা। আমার জন্য সিঙ্গেল একটা বার্থ
রাখেনি বলে ইউরেলকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম।
পরিচয় পর্ব শেষ হলে লিলিয়ান কথার ফুলঝুরি ছোটাতে লাগলো, জড়তাহীন চমৎকার বাচন ভঙ্গি। এই সুইস
তরুনীকে দেখেই বোঝা যায় সে খুব সরল আর প্রাণোচ্ছ্বল, যার কোন কষ্ট থাকতে নেই। তার সৌন্দর্যের
বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করা অর্থহীন। উচ্চ শিক্ষিত লিলিয়ান আমার মতোই বোহেমিয়ান। তাই হয়ত ঈশ্বর পথে
যেতে যেতে আমাদের মিলিয়ে দিলেন। জুরিখ থেকে কিছুটা দূরে তার নিবাস। ইতোমধ্যে সে সবাইকে হারিয়ে একাকী
জীবনে অভ্যস্ত হয়ে আছে। বিশাল ফার্ম হাউস থেকে তার বার্ষিক আয় যথেষ্ট ভাল, তাই ইচ্ছে হলেই বেরিয়ে
পড়ে পথে পথে ঘুরতে। ওর সাথে কথা বেশ জমে উঠল। আমি জানালার বাইরের সৌন্দর্যের কথা বেমালুম ভুলে
গিয়েছিলাম, কেননা আমার সামনে তখন অনন্য এক সৌন্দর্যের আঁধার স্বেচ্ছায় এসে ধরা দিয়েছে। আর এই
প্রাপ্তি উপভোগ করতে না পারলে হয়ত সারা জীবন এক ধরণের কষ্ট তাড়িয়ে বেড়াবে আমাকে। লিলিয়ানের
ক্লান্তিতে ঘুম এসে যাচ্ছিল, বললাম, কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে পারো। প্রসন্ন মনে অনুমোদনের জন্য জানতে
চাইল-Sure? আমি বললাম-Certainly। তুমি কিছু মনে কোরো না, আমি ঘুমানোর সময় বেশী কাপড় গায়ে রাখতে
পারি না-এই বলে সে জ্যাকেট আর জিন্স প্যান্ট খুলে তার সিটে শরীর ভাঁজ করে এলিয়ে পড়ল। আমি দেখছি সে
তখন শর্টস আর ট্যাঙ্কটপ পড়ে আছে, শরীরের অনেকাংশই অনাবৃত। দেহটাকে বাংলা “দ” এর মতো করে,
দু’হাত জোড় করে মাথার নীচে চাপা দিয়ে রাখলো তার পর আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে
ধীরে ধীরে টানা টানা চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো।
অর্থহীন জীবন কখনো কখনো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় বুঝি! জানিনা কেন এমন মনে হতে থাকলো। মনে
হলো আমি জীবনের অর্থ খুজে পেয়েছি, আমার দু’চোখ পার্থিব সৌন্দর্য ভাসছে। লিলিয়ানের সাথে দেখা হবার
পর থেকে প্রতিটা মুহূর্তের রেকর্ড বুকে ধারণ করে যাচ্ছি, যা কখনো মুছে যাবে না। লিলিয়ান একটা দেব শিশুর
মতো পবিত্রতা নিয়ে কী নির্ভরতায়-দ্বিধাহীন চিত্তে সুখের নিদ্রায় ডুবে আছে, আর আমি তার দিকে নিস্পলক
তাকিয়ে আছি। একবার মনে হলো আলতো করে ওর কপালে একটা আদরের চুমু দিয়ে আসি। নিজেকে সংবরণ
করলাম বটে কিন্তু মুহূর্তেই আমার ভিতরের কবি সত্ত্বা স্বতেজে জেগে উঠল। নোট বুকে লিখে ফেললাম
লিলিয়ানকে উদ্দেশ্য করে কবিতাঃ
I don’t have right to touch you
I don’t have right to kiss on your
Forehead- eyes and lips…..
I don’t have right to kiss
On upper part of palm of your hands
I don’t have right to hug you;
I am not entitled to hold tightly your mouth
On my thorax………
But I have right to love you
From the deepest part of my heart
Even from long away-
Across the rivers and oceans
Over the hills and mountains
From long away
I have the right to love you!!
কতক্ষণ নিস্পলক তাকিয়ে ছিলাম জানিনা, লিলিয়ান ঠিক সেই মিষ্টি হাসিটাই মুখে নিয়ে জেগে উঠল। আর
কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা মিলান এসে যাব, লিলিয়ান চলে যাবে তার মত-ভাবতেই বুকের ভিতরে মোচড় দিয়ে
উঠল। নোট বুকটা এগিয়ে দিয়ে বললাম, তোমার জন্য একটা কবিতা লিখেছি। লিলিয়ান অত্যন্ত কৌতুহলী হয়ে
কবিতা পড়তে লাগলো। আমি দেখছি তার চোখে-মুখে রক্তিম আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে চোখ তুলে সে
সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। সেই মুহূর্তে মনে হলো আমরা পরস্পরের অনেক আপন। লিলিয়ান
পাশে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আমার হাত নিয়ে তার নরম গালে ছুঁইয়ে দিল। বললো, “আমাকে নিয়ে এত চমৎকার করে
কেউ কখনো কিছু লিখেনি, তোমাকে ধন্যবাদ দেব না, কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম, অটোগ্রাফ সহ কবিতাটা আমাকে
দেবে?” আমি স্বাক্ষর করে নোটবুকটা তাকে দিয়ে দিলাম। লিলিয়ান জানতে চাইল, এর পর আমার গন্তব্য
কোথায়। বললাম, তিন দিন পর আমার টিকেট করা আছে মিলান থেকে জুরিখ হয়ে অষ্ট্রিয়ার সালর্জবার্গ।
লিলিয়ান বলল, আমি যদি পাশাপাশি সিটে টিকেট পাই তাহলে তুমি কি মিলান-জুরিখ সেগমেন্ট টিকেট রিটার্ন
করবে। বুঝলাম লিলিয়ান জুরিখ পর্যন্ত আমার সাথে যেতে চায়, এর থেকে মধুর বিষয় আর কি হতে পারে আমার
কাছে। বললাম, নিশ্চয়ই, তুমি দেখ পাও কি না। লিলিয়ান তার সেল ফোনের SBB Apps দিয়ে দুটো টিকেট
কনফার্ম করে ফেললো, দেখলাম তার চোখে মুখে আনন্দের বন্যা।
তিন দিন পর যথারীতি মিলান সেন্ট্রাল থেকে ট্রেনে চাপলাম। লিলিয়ানকে বেশ চনমনে আর স্মার্ট লাগছে।
যদিও তাকে কখনোই আনস্মার্ট বলা সম্ভব নয়। কিন্তু মনে হলো আজ একটু বাড়তি মনোযোগ দিয়ে নিজেকে
সাজিয়েছে। স্কার্ট আর টপস পড়েছে সে, হালকা পারফিউমের সুবাস ভেসে আসছে। পাশাপাশি সিটে বসে মাঝে
মাঝে বাইরের সৌন্দর্য দেখছি আর বেশীর ভাগ সময়টা দেখছি লিলিয়ানকে। কখনো পাহাড়, কখনো নীল জলের
লেকের একদম কাছাকাছি আর অজস্র সবুজ তরু পল্লবের মাঝ দিয়ে যেতে যেতে আকাশে ভাসমান খন্ড খন্ড
মেঘের ওড়াউড়ির মাঝে নিজেকে পুরোটা উজাড় করে দিতে পাচ্ছিনা। কেননা আমার কাঁধে মাথা রেখে আছে অনন্য
সৌন্দর্যের আঁধার লিলিয়ান, তাকে উপেক্ষা করা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। লিলিয়ান
বললো, তুমি কি আমার ফার্ম হাউসে একবার আসতে পারবে? আমি যেন স্বর্গের চাবি হাতে পেলাম। বললাম,
তুমি চাইলে অবশ্যই আসবো। লিলিয়ান ওর ফার্ম হাউসের ঠিকানাটা আমার হাতে গুজে দিয়ে বলেছিল, “চলে
এসো, অপেক্ষায় থাকব।” জুরিখে নেমে কিছুটা মলিন মুখে সে বিদায় নিয়েছিল, গন্তব্য তার ফার্ম হাউস, টাশ
থেকে বেশ কাছে। আমার ট্রেন ছুটে চললো সালজবার্গের পথে। লিলিয়ান তার সেল ফোন নাম্বারটা আমাকে
দেয়নি বা আমারটিও চায়নি। অথচ সে পরিমান ঘনিষ্ঠতা আমাদের তো হয়েছেই। তবে কি এটা ছিল ইচ্ছাকৃত!
মাঝে বেশ ক’বার ট্রেনে এবং আকাশ পথে জুরিখ অতিক্রম করেছি, প্রতিবারই ইচ্ছে করেছে লিলিয়ানের কাছে
যেতে। অনেক দিন পর লিলিয়ানকে কাছে পাওয়ার ইচ্ছের লাগামটা যখন আর টেনে ধরে রাখা যাচ্ছে না তখনই এই
যাত্রা-সালজবার্গ থেকে জুরিখ হয়ে টাশ। নিরবচ্ছিন্ন ভাবনায় ডুবতে ডুবতে কখন যে জুরিখে এসে গেলাম!
তড়িঘড়ি করে নেমে টাশ এর পথে আবাও ট্রেনে উঠলাম। আমার উত্তেজনার পারদ যেন চরমে। অবশেষে
লিলিয়ানের ফার্ম হাউস। লিলিয়ান আহ্লাদে আটখানা, আর আমার উচ্ছ্বাস তুঙ্গে। ওর কথার ফুলঝুরি আর
খুনসুঁটিতে কেটে গেল সারাদিন। ফার্ম হাউসের প্রাকৃতিক আবহে এত চমৎকার সময় আগে কখনো কাটানো
হয়নি। লেকের ধারে বসে দূরের পাহাড় আর তুলোর মত মেঘের ওড়াউড়ি দেখে লিলিয়ান কে হিংসে হতে লাগলো।
রাতের খাবারের পর কটেজের বারান্দায় বসে জ্যোৎস্নালোকিত একই প্রকৃতিকে ভিন্ন রূপে আবিস্কার করে
সম্মোহিত হয়ে গেলাম। আর লিলিয়ানের পিয়ানোর সুর সেই চরাচরকে বানিয়ে দিল স্বর্গ। আমার বোহেমিয়ান
জীবনে এ এক অনন্য পাওয়া। সমস্ত দিনের আনন্দ আমার চিত্তকে এতটাই আমোদিত করে তুললো যে অনেক
দিন পর অবসাদে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম।
দুই।।
টাশ থেকে মন্টেরোজ শৃঙ্গ জয় করতে যাব কাল, আল্পসের সর্বোচ্চ চূড়া। কিন্তু একা যেতে হবে ভেবে মনটা
বিষণ্ণ হলো, আমিতো লিলিয়ানকেও সেখানে নিয়ে যেতে চাই। টাশ এ নেমে হোটেল সিটিতে আস্তানা গেঁড়ে বেরিয়ে
পড়লাম। এই ছোট্ট নগরীর পথে পথে মনের অজান্তেই আমি খুঁজে ফিরছি লিলিয়ানকে। কেন জানিনা এই শহরটা
আমার ভীষণ ভাল লাগছে, মনে হচ্ছে যেন কত পরিচিত। রাতের নিয়ন আলোর মায়াবী আবহে নিজেকে হারিয়ে
ফেললাম। আচ্ছা, এই শহরটার একটা নাম দিলে কেমন হয়! তাহলে লিলিয়ানের নামেই নাম করণ হয়ে যাক-
লিলিয়ান সিটি। নামটা দিতে পেরে এক ধরণের আনন্দের বাতাস চিত্তকে নাড়া দিয়ে গেল। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত
আর তন্দ্রালু হয়ে গেলাম। লিলিয়ান সিটির প্রথম রাত ভরা বর্ষার স্রোতের মত আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল
অজানা পুলকে।
প্রতি পনের মিনিট পর পর সিটি রেল আসছে আর যাচ্ছে। হোটেলের কাছের স্টেশন থেকে চেপে বসলাম, গন্তব্য
জারমাট স্টেশন-বিশ মিনিটের পথ। তার পর হাঁটা পথে মন্টেরোজ শৃঙ্গ। নিজের আসনে বসতেই পড়ি মরি করে
ছুটে এসে আমার পাশের আসনে ধপ করে বসে পড়ল লিলিয়ান। তার কন্ঠে উচ্ছ্বাস- সারপ্রাইজ! সে তো দেখছি
মন্টেরোজ ওঠার জন্য পূর্ণ প্রস্ততি নিয়েই এসেছে, পড়েছে কার্গো প্যান্টের এর উপর সাদা টি-শার্ট আর
ভারী জ্যাকেট, পায়ে পর্বতারোহী জুতো। আমার যেন আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার অবস্থা। বিস্ময়ের ঘোর
কাটতে না কাটতে এসে গেল গন্তব্য। ট্রেন থেকে নেমে মন্টেরোজের পথে এগুচ্ছিলাম। পৃথিবীটাকে এত সুন্দর
আগে কখনো লাগেনি, মুক্ত স্বাধীন আকাশ, সামনে দাঁড়িয়ে মন্টেরোজ, তুষার মাড়িয়ে লিলিয়ানের সাথে
আল্পসের চূড়ায় অভিযান- কী যে রোমাঞ্চকর দুর্দান্ত উচ্ছ্বাস! কখনো সোজা-সুজি, কখনো চড়াই-উৎরাই
আর জমাট বরফের পিচ্ছিল পথ বেয়ে এগিয়ে চলেছি। লিলিয়ান অতি উৎসাহে অসাবধানীর মতো পা ফেলছে, আমি
বার বার সাবধান করছি। সে কখনো তা মানছে, কখনো না মেনে হাসছে। দিগন্ত ছুঁয়ে যাচ্ছে ওর প্রাণোচ্ছ্বল
হাসির শব্দ, যেন স্বর্গ থেকে এই মাত্র এক উর্বশী হাসতে হাসতে নেমে এলো।
মন্টেরোজ শৃঙ্গের চূড়ায় উঠে গেলাম। এত উঁচু থেকে পাদদেশের সব কিছু অতি ক্ষুদ্র দেখাচ্ছে। দূরে সবুজ
বনের সমাহার। আমরা দাঁড়িয়ে আছি মেঘের দেশে, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়, চারিদিকে সাদা বরফের আচ্ছাদন।
আরোহণের ক্লান্তিতে তেষ্টা পেয়ে গেছে। লিলিয়ানকে বলতেই, ওর কোমরের বেল্টের সাথে আটকানো ছোট্ট
ফ্লাস্ক থেকে ক্যাপটা খুলে তাতে কফি ঢেলে এগিয়ে দিয়ে বললো, আমি জানতাম মশাই আপনার এখন কফির
তেষ্টা পাবে। অমৃত হাতে পাওয়ার উচ্ছ্বাসে দুটো চুমুক দিতেই মনটা বিষণ্ণ হলো, কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
বললাম, লিলিয়ান আমার ধারণা তোমার ঠোঁট জোড়া এর থেকে অনেক বেশী উষ্ণ। হাতে ধরে রাখা ফ্লাস্কটাকে
শূন্যে ছুঁড়ে মেরে দুহাত বাড়িয়ে গগণস্পর্শী চিৎকারে লিলিয়ান বলে উঠল, তবে তাই হোক আজ!
দুজনে দুজনকে তীব্র আবেগে জড়িয়ে ধরেছি। লিলিয়ানের ঠোঁটের সমস্ত উষ্ণতা শুষে নিচ্ছি। আল্পসের চূড়ায়
দুটো শরীর মিশে এক হয়ে গেছে। স্বর্গের সাথে যোগাযোগ স্থাপিত হয়ে গেল, অপ্সরা ইভের সাথে এডাম মিলেছে
অতঃপর। ছুঁড়ে ফেলা হলো সমস্ত বসন, তবুও কি উত্তাপ দুজনের! কেউই আলিঙ্গন মুক্ত হতে চাইছি না-যেন
এক বিন্দু ব্যবধান কাম্য নয়। বরফের চাঁইয়ের উপর জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছি দুটো মানব মূর্তি। তুষারপাত
শুরু হলো, শরীর বেয়ে ঝিরি ঝিরি গড়িয়ে পড়ছে, তুষারের স্তুপ জমে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে বাড়ছে তার উচ্চতা। ঢেকে
যাচ্ছে পায়ের গোড়ালী, হাঁটু, উরু সন্ধি, নিতম্ব, কটি থেকে বুক অব্দি। লিলিয়ানের হৃদয় কথা বলছে, এসো,
ভাস্কর্য হয়ে যাই। আমি বললাম, নিশ্চয়ই। ততক্ষণে কাঁধ সমান তুষারের মাঝে ডুবে গেছি আমরা। ধীরে ধীরে
চোখ খুলে লিলিয়ান আমার চোখে তাকিয়ে থাকল, আমি ডুবে গেলাম ওর গাঢ় কাল চোখের গভীরে। তুষারে ঢেকে
গেল আমাদের পুরোটা শরীর। আল্পসের চূড়ায় নিথর দাঁড়িয়ে রইল তুষার ভাস্কর্য।
পরদিন সকালে রাতে দেখা স্বপ্নটার কথা লিলিয়ানকে বলতেই ও বললো, পাজি কোথাকার, তুমি আসলে কি চাইছ
আমি তা জানিনা ভেবেছ?
আমি বললাম, তবে তাই হোক…….
লিলিয়ান বললো, জ্বি না মশাই, যেদিন আল্পসের চূড়ায় নিয়ে যাবে, সেই দিন……..
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..