তোমাকে এই বৃষ্টিতে

তীর্থপতি গুপ্ত
কবিতা
Bengali
তোমাকে এই বৃষ্টিতে

তোমাকে এই বৃষ্টিতে

তুমি যখন সদ্য স্নান সেরে স্কুলে যেতে,
আমি অনেক দূর থেকেও তোমার চুলের গন্ধ পেতাম,
মনে মনে,
কোনদিন চামেলির তেলের গন্ধ,
কোনদিন তোমার প্রিয় স্যাম্পুর গন্ধ,
কোনদিন তোমার গায়ের মিষ্টি গন্ধ,
প্রতিদিন তোমার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতাম আলাদা আলাদা ভাবে,
গন্ধের মতই পাল্টেও যেত তার শিহরণ,
কোনদিন বলা হয়নি এসব কথা,
বলতেও নেই,
যদি সেই গন্ধ না মেলে আমার কল্পনার সঙ্গে,
এখনও সেই গন্ধ আমি পাই ভোররাতে শুকতারার আলোয়, নব্বান্নের চালে।

 

দুই.

আন্দোলন কি সমাধান আনে জানিনা
কিন্তু হঠাৎ কলেজ ছুটি হয়ে গেলে বেশ লাগে,
একটু নিভৃতে বসা যায়,
দূর থেকে ভেসে আসে দাবিদাওয়ার আওয়াজ,
তুমিও ওসব বলতে বলতেই এক দমকা হাওয়া এসে পালটে দেয় সবকিছুই
মুখের কথা কেড়ে নেয়
ঈষৎ সোনালী চুলের আড়াল তখন তোমার চোখে মুখে।
আমি মুচকে হেসে আলতো হাতে সরিয়ে দি তাদের,
গন্ধে বিভোর হয়ে নাক ডোবায় মহুহার জঙ্গলে,
ভাল লাগায় তুমি বুজে ফেল চোখ।
আন্দোলন পালটায়, পালটায় হাওয়ার রেশ
পালটায় আলতো করে সরিয়ে দেওয়ার ধরন
পালটায় তোমার ভাল লাগা, আমার নেশাও।
ভেজা চুলের গন্ধে আবেশে সময় কাটে আমাদের।
এখনও সেই গন্ধ মাঝে মাঝে পাই
পুরাতন অ্যালবামে কলেজ ফেস্টের ছবিগুলোর মাঝে।

 

তিন.

সেদিন ছিল বৃষ্টির দিন,
ভিজছিল গাছ ভিজছিল পাখি ভিজছিল বাড়ি
ভিজছিল রাস্তা, ভিজছিল সভ্যতা, ভিজছিলে তুমিও
সভ্যতা ভিজলে কী অসভ্যতা হয়?
জলে আর আনন্দে ভিজে হঠাৎ তাকালে আমার দিকে,
ভিজে চুল বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে জল
ভিজে গোড়ালির আলতা ধুয়ে যাচ্ছে জলে,
সিঁথির সিঁদুরে গালে ঠোঁটে নাকের পাটায় এঁকে দিচ্ছে আলপনা,
হাতের মুদ্রায় বৃষ্টির ছন্দ, চোখের পাতায় বৃষ্টির গান
গানে গানে ছুঁয়ে যাচ্ছ আমাকে,
আমি তোমার আলতার গন্ধ পাচ্ছি,
গন্ধ পাচ্ছি তোমার গালে লেপ্টে থাকা চুলের,
তোমার গানের সুরে নড়াচড়া করা ঠোঁটের।
আজও সেই গন্ধ আমি পাই
পুজোর আগে রোদে দেওয়া পুরাতন বইয়ের পাতায় আর হারমোনিয়ামের রিডে।

 

চার.

বাইরে তখন অঝোর বৃষ্টি আসার অপেক্ষা,
তুমি দ্রুত স্নান সেরে শুকনো কাপড় তোলায় ব্যস্ত,
আলগোছে বাঁধা তোয়ালে মাথা থেকে খসে পড়েছে অজান্তেই,
উন্মুক্ত কাঁধে টুপটুপিয়ে পড়ছে জল,
ঝোড়ো হাওয়া ওলটপালট করে দিচ্ছে সব,
স্মৃতি, বেদনা, ভালবাসা, সংসার
আমি বুক ভরে গন্ধ টেনে নি মনে
স্মৃতির গন্ধ
বেদনার গন্ধ
ভালবাসার গন্ধ
সংসারের গন্ধ।

তীর্থপতি গুপ্ত। কবি ও চিকিৎসক। পেশায় ফিজিওথেরাপিস্ট হলেও নেশায় কবিতা, ক্যামেরা, কালার। নিজেকে যখন দমবন্ধ লাগে তখন কবিতাই প্রাণ দেয়। মুর্শিদাবাদ জেলার সদর শহর বহরমপুরেই জন্ম কর্ম ও বেড়েওঠা। তাঁর মতে, একটু ভালো থাকা একটু ভালো রাখার জন্যই বেঁচে থাকা,...

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..