দর্শন
‘কী ভাবছো ?’ শুধালো সে । বললাম, ‘কই?
কিছু নাতো।’ ‘উঁহুঁ ।থাকতে থাকতে তোমার কী যে সব হয় ?’
—বললো সে ,’শূণ্য দৃষ্টি কোথায় হারিয়ে যায় ? বড়ো ভয় হয় ।’
ভাবলাম , ‘এহে ! অভিমান শুরু হলো ওই !’
বললাম, ‘ দ্যাখো , জীবনের শুরুতে আমরা পৃথক
ছিলাম এবং শেষেও হয়তো তাই
থাকবো , বরং নিশ্চিতই তাই বলা যায় ,
তবু সংসারের বাঁধাধরা বকবকম্ ছক
অতিক্রম ক’রে আপাতত চুপচাপ
দেখে যাও দেখি প্রকৃতির স্তূপ অপরূপ নিজস্ব সংলাপ
প্রত্নকলা লিপি লেখ লীলার সঞ্চয়
অনাদি অনন্তকাল , আমরা কেবল তার ক্ষুদ্র সমন্বয় ;
শুধু ভয় ক’রে লাভ নেই ,
আমাদের সকলেরই সেই
এক পরিণতি ।’ আলগোছে হাতখানি
ধরলো সে , আর কিছু বলবে না জানি ।
অতঃপর পরস্পর আনমনা হ’য়ে কতক্ষণ
দেখছি জানিনা কোন্ নিয়তির অমোঘ লিখন ,
হাতখানি ধ’রে আছি পরস্পর নিথর নির্বাক,
মুখোমুখি ব’সে আছি , চারিপাশে রাতের জোনাক;
ভূত ভবিষ্যৎ দুই আঁধারের রূপ
ঘিরে আছে আমাদের অস্থাবর সত্ত্বার স্বরূপ
পাদপের মগডালে ঠিক যেন নাজুক দোদুল্যমান ক্ষুদ্র মায়াময়
পাখির বাসার মতো , আমরা জানিনা ঠিক পাখির প্রণয় ।।
সংকীর্তন
ক্ষোভে দুঃখে কেঁদে উঠি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে , মধ্যযামে
বারি ঝরে বসন্তের নক্ষত্র-সভায় , উলু-খাগড়ার বনে
দীর্ঘশ্বাস মোচড়ায়, প্রেম আর প্রতিশ্রুতি
উভয়ের প্রতীক্ষার কারাগারে কেশে ওঠে ক্ষয়গ্রস্ত অতন্দ্র প্রহরী
যেন এটাই নিয়ম সম্পন্ন প্রেমের , সহজ সরল পরিণয় অনিয়ম ,
ভালবাসা একরাশ দুরাশার পাশাখেলা , অনভিজ্ঞ দৌড় ।
তবু দেখি ঝোপঝাড়ে ফুল ফুটে নির্দিষ্ট নিয়মে ,
ময়দানে মানব মানবী প্রজাপতি হয় ,
‘সাধু সাধু’ ব’লে সুন্দরের সংকীর্তন ক’রে উঠি
ঠোকরানো বুকে পবিত্রতা ছেয়ে যায় আতরের মতো
তপোবন ব’নে যায় দাহময় নিঃসঙ্গতা , সংযমের
আশ্রমে মন্দিরার মাহাত্ম্য ছড়ায় , বিদগ্ধ দুঃসময়ে
বাতাস বসন্ত বন তারকা আকাশ
ঐশী বিষয়বস্তুর অভিধায় দাঁড়ায় দূষিত
সংশয় কবলিত মনে মৃত্যুঞ্জয়ী প্রেরণা দেওয়ার জন্য
বিরহের বন জুড়ে হেসে ওঠে ফেরেস্তারা
দুরাশায় আশা রাখি জোনাকি জীবনে , পথ-হারা পাখি
খড়কুটো জড়ো করি কড়ি-বরগার স্বপ্নের বাসায় ।
সম্ভাষণে স্বাগত জানাই সে ভালবাসাকে আবার নতুন সকালে ,
তার ডালে ডালে অনুভূতির ফসিল দুলে
ব্যথার মুকুল ।।