দশমী

বৈশালী নাগ
অণুগল্প
Bengali
দশমী

“মাগো, আমি হুরজান ।”

“সেই কদ্দূর থিক্কা আইসি তোমার কাসে!”

“আমাদের গেরামে তো পুজো হয় না, খালি আজান পড়ে,নামাজ চলে, দোয়া ওঠে, রোজা রাখা হয়।”

“আমরা যে আল্লাহ্ মেহেরবান !”

“জানো মা , আল্লাহ্ কেও কইয়া আইসি গিয়া ।”

“আমার বন্ধু পরি তো কইল, তুমি নাকি অসুরদলনী!”

“তাই তো আইসি মা! ”

তুমি শুনবা আমার কথা?”

“পরি কিন্তু কইসে তোমারে আম্মি না কইতে!”

“তাই তো মা ডাকতেসি ।”

“মাগো, শুনবা আমার কথা?”

“আমার আম্মি নাই, আপি ছিল, এহন আর নাই।”

“মাগো, তিন ক্রোশ আইসতে পায়ে ছালা পইরা গেছে!

“খাড়া হইয়া থাইকতে পারতেসি না যে!”

“তোমার দালানে বইসলে যে পাপ হবে মা।”

“আমি যে মোছলমান!”

“আমি না হয় খাড়াই থাইকি।”

“পরি কইসে তোমার নাকি ঐ চক্ষু দিয়া আগুন বের হয়!”

“পারবা মা ঐ পশুগুলারে জ্বালাইয়া, পোড়াইয়া শেষ কইরা ফ্যালাইতে? পারবা মা ?”

“আমার আপিরে উরাই মাইরা ফ্যালাইছে আমি জানি।”

“জমির কাগজটার লেগে সই চাইছিল উরা ।”

“আপি করলো না কিচ্ছুতেই ।”

“অনেক ট্যাহার লোভ দেখাইলো উরা!”

“আপি কইল পেরান থাইকতে ঠাকুরদার জমিখান দিব না।”

“পরদিন সকালে দ্যাখলাম, বোসপাড়ার দীঘিটায় আমার আপির শরীর জুড়ে পদ্ম ফুটে আছে।”

“পরি কইছে ,পদ্ম তোমার খুউউউব পসন্দ!”

“তাই তো কোঁচোল ভরে আইনসি তোমার লগে।”

“এবার যাবার আগে ঐ অসুর গুলারে বধ করবা তো মা?”

“বড্ড ডর লাগে মা! ডর লাগে বড়!”

” আপি কইত তুমি হিঁদুর দেবী, আমাদের নও!”

“কিন্তু পরি কইল তুমি জগতজননী।”

“কাইর কথা সত্যি মা?”

” হিঁদু -মোছলমানে এত ভেদ কেন্ মা?”

“তোমার মুখখান যে এক্কেরে আমার আম্মির মতন।”

“চুপি চুপি একখান্ কতা কই তোমারে, পরিরে যেন কইও নি!”

“তুমি না আমার দুগ্গা আম্মিজান!”

“পরি তোমারে আম্মিজান কইতে মানা করসে যে!”

“শুনবা তো মা আমার কথাগুলান?”

“এখন যাই।

আমি আবার পরে আইবোখন।”

দশমীর সকালে ” দুগ্গা আম্মিজানের” কাছে আবার এল হুরজান—–

“মনে আছে তো মা?

অসুরগুলান বুক ফুলাইয়া ঘুইরা ব্যাড়াইতেছে মা!

আইজ আমারে কইসে, জমি ওদের না দিলে আমারও আপির মতই অবস্থা হইব।

তুমি কি এহনও চুপ থাকবা মা?”

বিমর্ষ চিত্তে ফিরে গেল হুরজান ।

পরির কাছে সব শুনে এগিয়ে এল তার বাবা ব্যারিস্টার শিবপ্রসাদ গাঙ্গুলী । হুরজানকে বিচার পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি বেজে চলেছে বিজয়ার ঢাকের নিনাদে ।

বোসপাড়ার দীঘির ঘাটে হুরজান তার দুগ্গা আম্মিজানকে বিদায় জানাতে এসেছে।

শুধু বলল, “মা গো আমার আম্মিও যে হিঁদুর বেটি, নাম দুর্গা।

পরি জানে না কিন্তু আমি তো জানি, তুমি আমার সেই দুগ্গা আম্মিজান । ”

“আমার কথা তুমি ফ্যালবা কেমন কইরা!”

দশমীর সিঁদুরে জয়টীকা জ্বলজ্বল করছে নবমবর্ষীয়া হুরজানের কপালে।

বৈশালী নাগ। কবি। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের বর্ধমানে। পেশাগত জীবনে তিনি স্কুল শিক্ষক।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

দৌড়

দৌড়

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..