দহন

তপনকান্তি মুখার্জি
কবিতা
Bengali
দহন

দহন

এখন তুমি কবরে শুয়ে নুসরাত,
শুয়েই থাকবে ততোদিন যতোদিন না
মনুষ্যকীটদষ্ট শরীরটাকে বন্ধু কীটেরা মুক্তি দেয়।
এখন কেউ আর বিরক্ত করবে না তোমাকে –
না ঝড় – তুফান না সোনালি রোদ না মানুষ
না জানোয়ার।
মনুষ্যত্ব হারিয়ে আমরা ডুবছি , তুমি কিন্তু
একই জায়গায়।
আমাদের হাত ততো বড়ো নয় যা দিয়ে আদর
করতে পারি তোমার কপাল,
আমাদের আঙুল ততো ক্ষিপ্র নয়
যা কালস্রোতে ভাসমান খড়কুটোকে ধরে
অাঁচলাভরা বকুলফুল বানাতে পারে।
তোমার অভাব গুলিয়ে দিচ্ছে জীবনবোধ,
ঠেলে দিচ্ছে চিলেকোঠা ঘরে।
তবু আশা জাগে শুদ্ধ মননে –
শয়তানের যাবতীয় হিসেব চোকাবো আমরাই,
নইলে বাঁচা হয়ে যাবে অর্থহীন –
ঠিক একটা ভয়ানক ভেংচির মতো।

 

বিস্ময়

বিস্ময় নিভতে নিভতে রাত্রি দ্বিপ্রহর।
তারপর আরও কিছুটা সময় গড়ালো
আপন গতিতে। পুব আকাশে ফুটছে
রজতাভ আলো, ত্বকে কুচি কুচি বরফ
পড়ার অনুভূতি। নবজাতকের প্রথম
কান্না কানে বাজছে। ক্ষীণতনুখানি সাদা
কাপড়ের মোড়কে, মুখে তুলকালাম ছন্দ –
মাঝে মাঝে দাঁড়িকমাহীন। এ এক নিটোল
ধ্রুপদী, কখনও দুখিমুখি, কখনও রবীন্দ্রঘন
বিমর্ষ বৈরাগ্য। বিস্ময় নিভতে নিভতে …।

জীবন

জীবন যতো গড়ায়, জীবনের পরতে পরতে
ততো জমা হয় নিজস্ব কিছু গল্প – বেশিটাই
হেরে যাওয়া আর অপমানের। দৃষ্টি খুঁজে
ফেরে নদীর ওপার। সন্ধ্যা ঘনায়, সন্দেহ
কুড়ে কুড়ে খায়। তবু আবার ফুল ফোটে,
পুষ্পবৃষ্টি হয়, গল্পেরা ডানা মেলে শাখায়
শাখায়। যুদ্ধক্ষেত্রেও পাখি ডাকে, ভোর হয়,
বাতাস সুবাস ছড়ায়। জীবনের একদিকে বৃষ্টি
হলে অন্যদিকে ভাসে কাগজের নৌকো।
হেরে যাওয়ার পরও তাই ফিরে আসা যায়
জীবনে – জীবনে জীবন যোগ করে।

মৃত্যু

মৃত্যু মৃত্যুর মতো আসে –
আগাম জানান দিয়ে নয়, ঢাকঢোল পিটিয়ে নয়,
চুপিসাড়ে একাকী হঠাৎ।
ধসে পড়ে ভিত, নড়ে যায় সংসার,
বেসামাল ঝড়ে জীবন আঁধার।
জীবন – হ্রদের তরঙ্গ থেমে যায়,
বেলাশেষে নীড়ে ফেরে পাখি,
মানুষও আপন কুলায়।
পড়ে থাকে কিছু স্মৃতি,
দেয়ালে টাঙানো মালাদেওয়া ছবি
আর ব্যবহৃত জিনিস নিশ্চয়।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

ঝরা পাতা

ঝরা পাতা

  চারিদিকে কোলাহল শূণ্যতা করেছে গ্রাস, বেদনা বিধুর অতৃপ্ত বাসনায় হাহাকার, অজান্তে নীরবতা তোমার স্পর্শে…..