দিদিমণি

রিকেল
কবিতা
Bengali
দিদিমণি

বিজ্ঞাপন

আমার ভেতর একটা নিঃসঙ্গ সমুদ্র আছে— নেবেন?
যেমন ইচ্ছে হাঁটা যায়, ভাসা যায় জলে
ডুব দেয়া যায় ইচ্ছে মতো মৎস্য পাড়ার দলে
সাঁতার কাটা যাবে ভোরে, শোয়া যাবে সকালের রোদে
রাতের পুরো আকাশটাও আপনার হয়ে যেতে পারে

কখনো হারিয়ে যাবার ভয় আছে
যেহেতু— ভালোবাসা চিরকাল নিজেকে হারানোর
ইচ্ছে নিয়ে এগিয়ে যায় গন্তব্যে
মূলত আপনিই হবেন সমুদ্রের একমাত্র অধিকারিণী
পৃথিবীর সমস্ত সূর্যোদয় হবে আপনার
প্রতিটা সূর্যাস্ত আপনাকে ভালোবাসার নতুন প্রেরণা দেবে
থরোথরো ঢেউ আপনাকে দেবে মুহূর্ত ভাঙার অভিজ্ঞতা
কেবল একটাই শর্ত—
ভালোবাসায় নিজেকে এক জন্ম উজাড় করে দেবার যোগ্যতা থাকতে হবে

 

স্মৃতি উৎসব

যে গেছে চলে
ঘর উঠোন ফেলে
নিয়ে কিছু অতীত, কিছু ক্ষত ভুলে
তারে কেন ডাকো মন চোখের জলে?

যে জীবন যায়
কোন দূর অজানায়
নিয়ে কিছু ব্যথা, রেখে স্মৃতি হাওয়ায়
তারে কেন নিয়ে মন এত দুঃখ গায়?

যে গত হৃদয়
গেছে রেখে শূন্য আলয়
নিয়ে ঘর ভরা আলো, ফেলে কিছু সঞ্চয়
তারে কেন নিয়ে মন এত কথা কয়?

 

দিদিমণি

একদিন এই আশ্রম ছেড়ে আমিও চলে যাব
কোথায় যাব আর বাঁশখালী ছাড়া
কোথায় যাব আর আমার দিদিমণির কাছে ছাড়া
ওখানে আমার স্বপ্ন থাকে জীবন থাকে
আমার দিদির শ্মশান থাকে ওখানে
আমার তো আর আনিসুল হকের মত আম্মা নেই
আমার জন্য কেউ পথ চেয়ে থাকুক বা না থাকুক
আমার দিদিমণি থাকবেন
মাসের টাকা ফুরিয়ে এলে আমার খুব জ্বর লাগলে
আমি ব্যাগ গুছিয়ে চলে যাব দিদিমণির কাছে

তার যে কোমর ব্যথা বুকে ব্যথা
কারা যেন দিদিমণির দাঁত কামড়ায়
আমি বাড়ি গেলে তার সব ব্যথা তিনি ভুলে যাবেন
আমি বাড়ি গেলে তিনি আবার হাঁটতে পারবেন
আমি বাড়ি গেলে ফ্রিজে জমিয়ে রাখা মাছ মাংস
ভাল সব খাবার রান্না করে খেতে দেবেন
জ্বর নিয়ে খাটের এক কোণে শুয়ে থাকলে
বারবার দিদিমণি আমার খাটের পাশে এসে
কপালে জলপট্টি দেবেন
চুলে বিলি কেটে দেবেন

আমাকে কেউ ভাল না বাসুক
একে একে সবাই দূরে চলে যাক
দিদিমণি আমার পথ চেয়ে বসে থাকবেন
কবে আমার ক্লাস বন্ধ পড়বে কবে আমি বাড়ি ফিরব
দিদিমণি এর কাছ থেকে ওর কাছ থেকে ফোন করে জানবেন
জকিকে জিজ্ঞেস করবেন আমি ফোন করেছি কিনা
নীলকে জিজ্ঞেস করবেন আমার সাথে কথা হয় কিনা
আমার কথা কারো জানতে ইচ্ছে করুক বা না করুক
দিদিমণির ইচ্ছে হবে আমায় জানতে
দিদিমণি আমাকে স্বপ্ন দেখবেন
আমার শরীর ভাল আছে কিনা
দিদিমণি আমাকে স্বপ্ন দেখবেন
আমার মন খারাপ কিনা
আমাকে তিনি স্বপ্ন দেখবেন
স্বপ্ন দেখবেন আমাকে

 

মাননীয় স্পিকার

আমি সেই শয়তান— যিনি ঈশ্বরের যোগ্য
যিনি হেসে আপনাকে খুন করেন
আঙুলে যিনি প্রতিবাদ করেন
যার কণ্ঠ আপনি কেটে ফেলেছেন বিগত সন্ধ্যায়
আমিই সেই মহামান্য শয়তান

আমি সেই পাপী— যিনি পৃথিবীর অধীশ্বর
যার অভিশাপে আপনি সুস্থ হয়ে ওঠেন
যার অসুন্দরে আপনি সৌন্দর্যের শোভা পান
যার চিৎকার আপনার অহংকার
যিনি নিঃসঙ্গ তবু আপনার কথা বলেন পবিত্র সংসদে
আমিই সেই মহান পাপী

আমি সেই প্রেমিক— যিনি ভালোবাসার প্রথম সন্তান
যার অশুদ্ধতায় আপনার শুদ্ধতার চাষ
যার প্রবল বর্ষণে আপনার তৃষ্ণার্ত জল
যার কঠিন অন্ধত্বে আপনার সহজ উদ্দীপ্ত
আপনার ঘরের দুঃখ যিনি নিজের ভেতর লালন করেন
যিনি প্রেমিকার নিষ্ঠুরতাকে সযত্নে প্রশ্রয় দেন
আমিই সেই নির্মম প্রেমিক

আমি সেই কবি— যিনি আপনার ভাষায় লেখেন
যার ছড়া আপনাকে মা মা শৈশব দেয়
যার কবিতা আপনাকে ভালোবাসতে শেখায়
যার রয়েছে উড়ে যাবার দুটি হলুদ ডানা
মাননীয় স্পীকার,
আমিই বাংলার সেই বেকার কবি
আমাকে আত্মহত্যা করবার তিন মিনিট সময় দিন

 

ভালোবাসতে না পারার দুঃখ

মা
আমি তোমাকে ভালোবাসি
তোমার ঘর-আসবাব, বড় টেলিভিশন, সুন্দর সোফা
বাবার বইঘর আর বাবার চিন্তা
আমি ভালোবাসি মা
কাঁচের দেয়াল পুরনো সংগ্রহ রান্নাঘরের
বাসনকোসন আর তোমার ফ্রিজ ভর্তি ঠাণ্ডা
আমি ভালোবাসি

টেবিল ভরা নাম না জানা খাবার
গ্লাসে জল ঢালার টক টক শব্দ
খেতে খেতে তোমাকে আমার বলতে পারা গল্প
আমি ভালোবাসি
আমাকে পাঠানো তোমার যাবতীয় উপহার
নতুন শহরে ঘুরতে গিয়ে পাখি হাতে তোমার ছবি
আমি ভালোবাসি মা
মেঘলা আকাশ তোমার একলা অবসর
জানলা দিয়ে বৃষ্টি ধরার বর্ষা
আর আনমনে গেয়ে ফেলা তোমার একটা দুটো গানের কথা
আমি ভালোবাসি
মা, আমি কি কখনো তোমার দুঃখ ভালোবাসতে পেরেছি?

রিকেল। কবি। জন্ম ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৪, বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে। লেখাপড়া করেছেন একাউন্টিং-এ স্নাতকোত্তর। বর্তমানে লেখালিখি ব্যতীত কিছুই করছেন না। প্রকাশিত বই: 'জন্মান্তর' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৮)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ