করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
আধুনিক মানুষের ইতিহাস কমবেশি পঞ্চাশ হাজার বছরের পুরনো । এই লম্বা সময়ে মানুষের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে । আজ কিন্তু আমি একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের কথা বলবো যার ভয়াবহতা নিয়ে সাধারণত কোনো আলোচনাই হয় না। বিগত দেড়শো বছরে মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা হল – ঘুম, তার পরিমাণ আর সময় সরণিতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে । এই পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে মানুষ আর দশটা প্রাণীর মতই সূর্যাস্তের কিছু পরে ঘুমিয়েছে, উঠে পড়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে । এর ফলে মানুষ দৈনিক নয় ঘন্টা বা বেশি সময় ঘুমিয়েছে এবং তা রাত্রিকালে। আমাদের ভারতবর্ষে অন্তত গ্রামীণ জীবনে ষাট সত্তর বছর আগেও এটাই স্বাভাবিক ছিলো । যারা একটু বয়সে প্রবীণ, তাদের সকলকেই ছোটবেলার কথা মনে করতে বলি।
অবস্থার পরিবর্তন হয় দুটো কারণে । দুটো কারণকেই মানব সভ্যতার ইতিহাসে মাইল ফলক হিসেবে ধরা হয়। এক, শিল্প বিপ্লব । দুই, বৈদ্যুতিক আলোর আবিষ্কার । দুটি ঘটনাই যুগান্তকারী। কিন্তু আমার মতে দুটোরই সুযোগ্য ব্যবহার হয়নি , উল্টে তার দুর্ব্যবহার হয়েছে । ( কেন হয়েছে তা আলাদা বিষয় , এখানে আলোচ্য নয় )। নতুন ব্যবস্থায় শিল্প বিপ্লবের সুফল আর কর্তৃত্ব চলে যায় কারখানা মালিকদের হাতে। যাদের মূল লক্ষ্যই হয় বেশি বেশি লাভ করা। আর উৎপাদনের মূল মন্ত্র হলো – time is money. সুতরাং দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা কলের চাকা ঘুরতে থাকলো। মজুরদের জন্য দুই শিফট বা পরবর্তীকালে তিন শিফট ডিউটি। বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হলো যাদের খাওয়া ঘুমের সময় হলো অনিশ্চিত , অনিয়মিত এবং এত যুগের মানব প্রজাতির থেকে আলাদা। নিয়মিত শিফট বদলের ফলে মানুষের ঘুমের সময় প্রতি সপ্তাহে বদল হয়েছে, অনিয়মিত হয়েছে খাওয়ার সময়েরও। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মানুষ প্রজাতির এই অনিয়মিত ঘুমের সময়ের বদল শরীর স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিতে পারে নি। শরীর ও মনে তার বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। দিনে দিনে সভ্যতার উন্নতির নামের দোহাই দিয়ে মানুষের জীবন যাপন জটিল হয়েছে , কঠিন হয়েছে , অমানবিক হয়েছে ।
বৈদ্যুতিক আলো মানুষের কাছে এক চমৎকার বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এল। এর আগে দিন ছিল কাজের জন্য, আর রাত বিশ্রামের। উজ্জ্বল আলো মানুষের কাজের সময়সীমা বাড়াল। কিন্তু কেড়ে নিল বিশ্রামের সময়। বিশ্রামের সময়সীমা অনেক কমে গেল। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষ প্রজাতির অভিযোজনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সব পরিবর্তনই ঘটেছে অতি ধীরে ধীরে। মানুষের বংশ গতির ধারা একটু একটু করে এই পরিবর্তনকে চিনেছে, শরীর খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছে। কিন্তু এই নতুন পরিবর্তন এতো দ্রুত এবং আচমকা অস্বাভাবিক ভাবে এসেছে যে মানুষের মধ্যে এক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এমন অনেক নতুন ব্যাধির জন্ম হয়েছে যেগুলোর অস্তিত্ব আগে ছিল না। নানারকম মানসিক রোগের উৎপত্তিও এই জটিলতা থেকে। শিল্পোন্নত এলাকাগুলিতে ঘন বসতি ও আলো হাওয়ার অভাবে সংক্রামক রোগের প্রকোপ বাড়ল নতুন করে। সভ্যতার অগ্রগতির মুল্য চোকালো বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী। বিশেষত কল কারখানার লক্ষ লক্ষ মজুরেরা।
একেবারে হালফিল সময়ে অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া, চিনে নব্য শ্রেণির এক বিশাল মজুরের বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই মজুরেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষিত, কারিগরি বিদ্যায় দক্ষ। তারা সংখ্যায় লক্ষ লক্ষ, নিজ নিজ দেশে উদ্বৃত্ত। যে কাজ ইউরোপ আমেরিকায় করাতে গেলে বহু ডলার বা ইউরো বেতন দিতে হয়, সেই কাজ তুলনায় অনেক সস্তায় এদের দিয়ে করানো যায়। তাই ইউরোপ আমেরিকার এইসব বহুজাতিক সংস্থাগুলো তাদের কর্মক্ষেত্র খুললো দক্ষিণ এশিয়ায়। ভৌগোলিকভাবে আমেরিকায় যখন কর্মব্যস্ত দিন, এখানে তখন গভীর রাত। তাই আমেরিকার কাজগুলো সস্তায় তুলে দেওয়ার জন্যে দক্ষিণ এশিয়ার লক্ষ লক্ষ তরুণ তরুণী সারা রাত জেগে থাকে। ভোরবেলা অবসন্ন দেহ নিয়ে কোনোমতে বিছানায় দেহকে ছুড়ে দেয়। যৌবনের দেহ এই ভার বহন করলেও শরীর ভিতরে ভিতরে ক্ষইতে থাকে। আজ আমরা বুঝতে পারছি না, এই ক্ষত আমাদের কয়েক প্রজন্ম ধরে বয়ে নিয়ে যেতে হবে। এখন আপনারা বিশ্বাস করতেও পারবেন না যে ব্যাপকতার দিক থেকে এই ক্ষতি জাপানে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের চেয়ে অনেক গুণ বেশি।
(এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক বিচিত্র খাদ্যাভ্যাস। কি সেই খাদ্যাভ্যাস, কিভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে, কেন হচ্ছে, সেও এক অদ্ভুত আখ্যান। তার স্বরূপও আর একদিন আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।)
জানি বলবেন , এ তো বর্তমান সময়ের জীবনযাত্রার অঙ্গ । এর থেকে ফেরা যায় নাকি ?
আমার প্রশ্ন , এর থেকে ফেরা দরকার সেটা আমরা মনে করি কি ? সভ্যতার নামে, প্রগতির নামে, আমরা একটা ফাঁদে পড়েছি , সেটা বুঝেছি কি ? যদি সত্যিই বুঝতে পারি, তাহলে এই ফাঁদ থেকে বেরবার রাস্তাও বেরোবে।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..