প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
অনেকটা হুট করে গেল বৃহস্পতিবার বিকেলে বেরিয়ে পড়লাম খুলনার উদ্দেশে। রাতে সার্কিট হাউসে কাটিয়ে সকালে রওনা দিলাম দুবলার চরের উদ্দেশে। প্রায় ১২ ঘণ্টা লেগে গেলো আলোরকোল বিচের কাছাকাছি পৌঁছাতে। এর আগে ১ ঘণ্টার একটা ব্রিফ দেয়া হলো। ব্রিফ বলতে এক গাদা ভয় সেঁধিয়ে দেয়া হলো। যেন ভয় পেতে আমরা এসেছি এ গহীন বনে। প্রথম ভয় ঘাটে নামলেই যেকোন সময় যেকোন ভাবে মামাজি আপনার ওপর হামলে পড়তে পারে। আপনি হয়ত বাঘ দেখছেন না। সে কিন্তু ঠিকই ঝোপের আড়াল থেকে আপনাকে দেখছে। দ্বিতীয় ভীতিটা হলো হাঁটার। হাঁটতে হবে প্রচুর। শব্দ করা যাবে না। নো রং চঙে কাপড়!
একটু পড়েই আলোকোল বিচে আমাদের নামিয়ে দেয়া হবে। তারপর দুই ঘণ্টা হেঁটে পৌঁছাতে হবে মেলা প্রাঙ্গণে। তারপর আরো আড়াই ঘণ্টা হেটেঁ ফিরতে হবে বিচে। মধ্যে ঘণ্টা খানেক থাকা যাবে মেলায়। ভোরে বিচে দেখা যাবে পুণ্যস্নান। ট্যুর অপারেটরদের ভয়ংকর বর্ণনায় অনেকেই পিছু হটে যাচ্ছিল। রাত জেগে এতো কষ্ট শরীর এলাও করবে তো! আমাদের বড়ো ভাই গুরুগম্ভীর হয়ে বললেন, ‘ভদ্রলোকের এক কথা, আগে বলছি যাবো না, এখন যাব। যাবই’। তাই যেতে হলো।
রাত ১০ টায় আলোরকোলের কাছাকাছি আসতেই মন হলো রূপকথার রাজ্যে এসেছি। প্রমত্তা নদীর বুকে ভাসছে শত শত দীপশিক্ষা। যেন কেউ শখ করে আলোর প্রদীপ ছেড়ে দিয়েছে নদীতে। শত শত নৌকা আর জাহাজ। নৌকোগুলোর সাজের বাহার চোখে পড়ার মতো। রং বেরঙের এলইডি লাইটের আলোয় সজ্জিত নৌকগুলো দেখে মনে হচ্ছে ইন্দ্রপুরি থেকে নেমে আসা রত্নশোভিত রথের সারি। খুলনা থেকে প্রায় শত কিলোমিটার দূরের এই গহীন বনে এই মধ্যরাতে এতো নৌকোর ভিড় অভাবনীয়। মাথার উপর পূর্ণিমার চাঁদ। আকাশ থেকে যেন দুধের নহর বইছে। তাতে ভেসে যাচ্ছে চরাচর। দূরের বনগুলো অনেকটা স্পষ্ট। মনে হয় পৃথিবীর কোন দৃশ্য নয়। সাগরে ভাসতে ভাসতে আমরা এসে পড়েছি কোন স্বপ্নের জগতে। ট্যুর অপারেটররা চামে ছিলেন কোন প্রকারে বিচে নামিয়ে দিয়ে তারা কেটে পড়বে। তারপর হাটো বান্দাগণ। কিন্তু প্রকৃতি ততক্ষণে আমাদের পক্ষে রায় দিয়ে দিয়েছে। সৈকতে ভিড়বার কোন জায়গা পেল না ইঞ্জিন নৌকটি। অগত্যা খাড়ি বেয়ে ছুটতে হলো ঘাটের পানে। দুপাশে ঝাউপাতা ঝকেঁ পড়ছে। তার ফাকে দেখা যাচ্ছে হরিণরা শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। একটা শূকরও দেখতে পেলাম। আমাদের দু’ঘণ্টা হাঁটার পরিশ্রম বেঁচে গেল।
আলোরকোল ঘাটে নামতেই মনে হলো এক মহোৎসবে এসে যোগ দিলাম। উপকথায় যেমন বনের ভেতরে পশুদের জাঁকজমক উৎসবের বর্ণনা মেলে ঠিক তেমনই এক আয়োজন। তবে এটা পশুর না মানুষের। রং বেরঙের এলইডি আলোয় সুশোভিত তোরণ আমাদের স্বাগত জানাল। ঢোকার মুখে মণ্ডপ। চলছে রাসপূর্ণিমার পূজা। এক মণ্ডপে এতো মূর্তি আমি আগে কখনো দেখিনি। মধ্যে পরিচিত দেবদেবী দেখা গেলেও দু’পাশে স্থানীয় দেবতারা। বামে বনবিবি। ডানে গাজী কালু নামে দুই ব্যক্তির মূর্তি। হিন্দু পূজার মণ্ডপে মুসলিম দুই দেবতা! জানতে চাইলাম গাজী কালুর কাহিনী। কী সহজভাবে বুঝিয়ে দিলেন বনবাসে আসা রাজকন্যা বনবিবিকে বাঁচানোর কারণে আজ তারাও পুজ্য। এখানে সকল ধর্মমত মিলে মিশে গেছে মানবতার পাটাতন। দেখে মনটা ভরে গেলো। এ অশিক্ষিত অল্পশিক্ষিত লোকগুলো যত উদারভাবে ধর্মকে দেখতে পারে, পুথিঁ ও স্বার্থের ভারে ন্যূজ্ব আমরা তা পারি না।
মণ্ডপের উল্টো দিকে চলছিল কীর্তন। কীর্তনিয়া মহিলা খুব নাটকীয়ভাবে বললেন, ‘সুন্দরবনের বুকে এক নব বৃন্দাবন গড়েছেন মেজর জিয়া’। দেখলাম আয়োজকদের বুকে বুকে মেজর জিয়ার ছবি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন ৭৫ এর পটপরিবর্তনের পর এখানে এসেই আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার উদ্যোগেই রাসপূর্ণিমার মেলা আজকের রূপ পেয়েছে। পুজা করছে লোকে এক মুসলিমের ছবি বুকে নিয়ে। এটা হয়ত আমাদের মতো তথাকথিত শিক্ষিতদের চোখে লাগতে পারে। কিন্তু বনচারী এসব মানুষদের কাছে এটাই স্বাভাবিক। মেলা দেখতে এসে যেন দেখে ফেললাম আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশকে। যেখানে সকল ধর্মমত মিলেমিশে একাকার হয়ে এক করেছে মানুষকে। যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি, সে বাংলাদেশ যেন রাতে আঁধারে জেগে উঠেছে গহীন বনের ভেতরে। রাত দুটো পর্যন্ত চলল মেলা। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখলাম মানবধর্মের জয়গান!
বি:দ্র:
আগ্রহীরা মেজর জিয়া সম্পর্কে এখানে পড়তে পারেন: Freedom fighter Maj Ziauddin who led 1971 battles in the Sundarbans dies
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..