গৌর (মালদা) – বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..
জীবন যাপনের ঘেরাটোপ থেকে বের হয়ে কার না ইচ্ছে করে একটু ঘুরতে যেতে। এমনিতেই বাঙালির ‘ঘরকুনো’ বলে একটা অপবাদ আছেই। যদিও ইদানিং সেটা কাটতে শুরু করেছে। বাঙালি এখন ঘর থেকে দু পা ফেলে বাইরে যেতে শিখেছে। এই যেমন আমার কথাই বলি, নানা সীমাবদ্ধতায় তেমনভাবে কোথাও যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে ইচ্ছেটাকে হত্যা করিনি। ওটা স্বপ্ন খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। স্বপ্ন দেখতাম একদিন হাতে অনেক সময় হবে, অনেক টাকা হবে তখন ঘুরতে যাবো। বিদেশ না হোক দেশেই ঘুরবো।
প্রত্যাশিত সে ‘একদিনটা’ এলো। অনেক টাকা, অনেক সময় না হলেও যা হয়েছে তাই যথেষ্ট মনে করি। তাই আর স্বপ্ন দেখা নয় এবার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার পালা। বাড়ির কাছে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর চালু হওয়ার পর ছেলেপুলে, ভাবী চাচিরা দল বেধে পাশের দেশ ভারতে যাচ্ছেন। দেখে খুব ভালো লাগে। বন্ধু বান্ধবেরা তো একটু মন খারাপ হলেই শুনি ওপাড়ে চলে গেছে। এ ও হাত ধরে টানে; চল যাই ঘুরে আসি। আমিও প্রস্তুতি নেই। পাসপোর্ট করি। ভিসা করতে রংপুরে গেলাম। তিনবার গিয়ে ৫ হাজার টাকা খরচ করেও যখন ভিসা পেলামনা তখন মনের কষ্টে দেশের ভেতরেই কিছুদিন ঘুরে নিলাম।
নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে ভারতীয় ভিসা সেন্টার চালু হওয়ার পর সবাই ধরলো আবার আবেদন করার জন্য। করেই ফেললাম এবং এবার ভিসা পেলাম। দিনক্ষণ ঠিক হলো। বন্ধু রাজুর সাথে যাচ্ছি। ভাগ্য বিরুদ্ধে চলে গেল। রওয়ানা দেয়ার আগের দিন মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে বিছানায় গিয়ে উঠলাম। কিছুতেই মন বেধে রাখতে পারছিনা। সুস্থ হয়েই প্রস্তুতি নিলাম, একা হলেও চলে যাবো। না, আমি একা নই। সাথে পেয়ে গেলাম দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক লতিফ ভাই এবং একসময়ের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা জাহাঙ্গীর ভাইকে।
ভোগান্তি দিয়েই এ যাত্র শুরু হলো।
সকাল ৭ টার মধ্যে আমরা বাসস্ট্যান্ডে চলে গেলাম। কথা ছিল ঢাকা থেকে বাংলাবান্ধাগামী শ্যামলী পরিবহনের গাড়িটি আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে তুলে নেবে। কিন্তু গাড়ির সুপারভাইজার রাস্তায় আমাদের দেখতে না পেয়ে গাড়ি না থামিয়ে চলে যান। পরে আমরা বোদায় গিয়ে শ্যামলীতে উঠি। সেখান থেকে সোজা বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর। ইমিগ্রেশনের পাট চুকিয়ে প্রবেশ করলাম ভারতীয় অংশে। সেখানকার ইমিগ্রেশন পর্ব শেষে মানি এক্সচেঞ্জ। অসংখ্য এজেন্ট আমাদের ছেঁকে ধরলেন কিন্তু সবার এক রেট। ওরা বললেন
“এখানে সিন্ডিকেট করা হয়েছে, কেউ যদি সিদ্ধান্তের বাইরে এক পয়সাও বাড়ায় তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে”।
অগত্যা ওরা যা বললো তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম।
ততক্ষণে খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। লতিফ ভাই বললেন “আগে খেয়ে নিই”। ভারতে প্রবেশ মুখেই রাস্তার পাশে বেশ কটি সাধারণ মানের খাবার হোটেল আছে। এগুলোর কোন নাম ধাম নেই। লতিফ ভাই প্রথম দোকানটাকে বলেন মাসির হোটেল। এখানে একজন মহিলা ভাতের হোটেলটা চালান। এজন্যই হয়তো এ নামটা দিয়েছেন। তিনজনেই দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে লম্বা বেঞ্চে বসে গেলাম ভাতের থাল সামনে নিয়ে। ছোট এক টুকরো মাছ, একটু ভাজি সাথে পাতলা ডাল এই মিলে ৭০ রুপি। আহামরি কোন খাবার নয় কিন্তু দেশের তুলনায় দামটা অনেক বেশিই মনে হলো। যাক সে কথা, তিনজনেই গোগ্রাসে গিললাম। পেট ঠাণ্ডা হওয়ার পর ইমিগ্রেশনের সামনে থেকেই শিলিগুড়ি এয়ারভিউ মোড় পর্যন্ত একটা টো টো (যেটা আমাদের দেশে ইজি বাইক) ভাড়া করলাম ২০০ রুপিতে। ইচ্ছে করলে আপনারা শেয়ার টো টো তে ১০ রুপি ভাড়া দিয়ে ফুলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে সেখান থেকে ১৫ রুপিতে বাসে অথবা ২০ রুপিতে টো টোতে চড়ে এয়ার ভিউর সামেন যেতে পারেন। আমরা কিছুটা আয়েশে যেতে চেয়েছি বলেই টো টো রিজার্ভ করেছি। এখানেও দামাদামি করলে ১৫০ টাকায় টো টো পাওয়া যেত। ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই আমরা এসে নামলাম শিলিগুড়ির এয়ার ভিউ হোটেল মোড়ে।
যে সমস্ত টুরিস্ট ফুলবাড়ি হয়ে ভারতে ঢোকেন তাদের কাছে হোটেল এয়ার ভিউ বেশ পরিচিত। বাংলাদেশিদের মধ্যে অধিকাংশই এ হোটেলে ওঠেন। তাদের অনুসরণ করে আমরাও সেখানে গেলাম। তিন বেডের যুঁতসই কক্ষ না পাওয়ায় আমরা সেখানে উঠলাম না। একটু এগিয়ে যেতেই দারুণ সুন্দর একটা হোটেল পেয়ে গেলাম। ভাড়াও কম। আপনারা যদি আসেন তবে একটা কথা মনে রাখবেন তা হলো তাড়াহুড়োর কিছু নেই। পুরো হিলকার্ট রোড জুড়েই অনেক হোটেল রয়েছে। যতো এগিয়ে যাবেন কিংবা খুঁজবেন ততই কম খরচে নিরিবিলি হোটেল পাবেন। যেহেতু শিলিগুড়ি হচ্ছে একটা প্রবেশ মুখ, এমুখ দিয়েই প্রবেশ করে আপনাকে দার্জিলিং, নেপাল, ভুটান, সিকিম, আসাম যেতে হবে। ইচ্ছে করলে এখান থেকে কলকাতা কিংবা অন্যকোথাও যেতে পারেন, তাই শিলিগুড়ি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেই বিবেচিত। সে বিবেচনায় এখানে হোটেল, বাংলো কিংবা রেস্ট হাউসের অভাব নেই।
হোটেলে ঢুকেই আমরা ফ্রেস হয়ে কাপড় পাল্টে নিলাম। বিকেলে হোটেল থেকে বের হয়ে ৫০ রুপিতে একটা টো টো রিজার্ভ করে তিনজনেই চলে গেলাম সিটি সেন্টারে। এটা একটা শপিং মল। এর ভেতরের বর্ণনায় পরে আসছি। আগে বলছি বাইরেরটুকু। জাহাঙ্গীর ভাই চা পান করার জন্য অস্থির হয়ে রয়েছেন। সিটি সেন্টার প্রবেশের আগেই গেটের বাইরে মূল রাস্তার পাশে অনেকগুলো ছোট ছোট দোকান রয়েছে। এগুলোকে ঠিক স্ট্রিটফুডের দোকান বলা যায়না আবার না বললেও হয়না। প্রতিটি দোকানেই নানা রকম ফাস্টফুড তৈরি করা আছে অথবা অর্ডারের সাথে সাথে তৈরি করে দেয়া হচ্ছে।
আমরা একটা দোকানে ঢুকলাম। চায়ের আগে কিছু খেয়ে নেয়া দরকার। তিন প্লেট ভেজিটেবল চাওমিন অর্ডার করলাম। একটু পরেই গরম ধোঁয়া ওঠা চাওমিনের প্লেট নিয়ে হাজির হলো একটা মেয়ে।সারা মুখে হাসি ছড়ানো। বার বার জানতে চাচ্ছে আমরা আর কি চাই। আমরা চিনি ছাড়া তিন কাপ চায়ের কথা বললাম। চিনি ছাড়া চায়ের কথা শুনে মেয়েটা একটু অবাকই হলো। কেউ একজন বললো “চিনি ছাড়া চা দেয়া যাবেনা”। মেয়েটা তাকে থামিয়ে দিয়ে আবার সেই রিনিঝিনি হাসি দিয়ে বললো “আপনারা বসুন, আমি বানিয়ে দিচ্ছি”। প্রায় পনের মিনিট পর মেয়েটা নিজ হাতে মাটির কাপে চা নিয়ে এলো। ছোট্ট একটা মাটির কাপ, তাতে নিয়ে এসেছে চা। দেশে কাপ ভর্তি চা পান করে অভ্যাস কাজেই এত ছোট কাপ দেখে মনটা খারাপ হলো। চায়ে চুমুক দিয়ে মন খারাপ কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। একই সাথে দেহ মন জিহ্বা শিথিল হয়ে আসছিল। মুখে চা নিয়ে গিলে ফেলতে ইচ্ছে করছিলনা। মশলা ফ্লেভারের অসাধারণ এক চা। চাওমিনটাও স্বাদের ছিল আর লা জবাব চা দিয়ে মেয়েটাতো আমাদের বিকেলটা ঝলমলে করে দিল। আমাদের প্রতি ওর এরকম আন্তরিকতা দেখে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছে পোশন করলাম। মেয়েটা হাত জোড় করে নমষ্কারের ভঙ্গিতে একটু মাথাটা নোয়ালো। আমরা আমাদের পরিচয় দেয়ার পর মেয়েটি তার নাম বললো রূপালী। ও নেপাল থেকে এখানে এসে কাজ করছে। আমি এ মুহূর্তে এর বেশি আর কিছু জানতে আগ্রহী ছিলামনা। বের হয়ে এলাম দোকান থেকে। রূপালী দু’কদম এগিয়ে এসে আবার হাত জোড় করে মাথা নোয়ালো। বের হয়ে আসার সময় জাহাঙ্গীর ভাই বির বির করে বলছিল “এক কাপ চায়ে মন ভরেনি, চল আর এক কাপ হয়ে যাক”। পরে আবার আসবো বলে বের হয়ে এলাম।
সামনেই বিশালাকৃতির শপিংমল সিটি সেন্টার। প্রবেশমুখেই মেটাল ডিটেক্টরে আপনাকে চেক করে নেয়া হবে। সর্বত্র ঝকঝকে তকতকে গোছানো এবং পরিপাটি। গ্রাউ- ফ্লোরেই বাচ্চাদের খেলনা ট্রেন। চারপাশে সারিবদ্ধ তৈরি পোশাক, জুতা সেন্ডল, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্স এবং চামড়া সামগ্রীর দোকান। আমাদের মতো মানুষের দেখার জন্য হলে ঠিক আছে, কেনাকাটা করতে গেলে খবর আছে। খুব সাধারণ মানের একটা শার্টও ২ হাজার রুপির কমে পাওয়া যায়না। একটা কসমেটিকস এর দোকানে লতিফ ভাইকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ৩শ পঞ্চাশ রুপিতে একটা তেলের বোতল ধরিয়ে দিল যেটা কি না দাড়িতে মাখতে হয়। সিটি সেন্টার থেকে বাইরে এসেই লতিফ ভাই বুঝলেন যে তিনি ধরা খেয়েছেন। কেন দাড়িতে মাখার তেল তাকে কিনতে হবে সেটাই তাঁর মাথায় আসলোনা।
পরেরদিন আমরা আবার সিটি সেন্টারের সামনে গিয়েছিলাম। রূপালীর দোকানে চায়ের অর্ডার দিলাম এক সাথে ২কাপ করে। সেখান থেকে বের হয়ে সন্ধ্যাার পর টো টোতে ৬০ রুপী ভাড়া দিয়ে চলে গেলাম বিধান মার্কেট। যারা দরদাম করে কেনা কাটা করতে পারেন তাদের জন্য এটা আদর্শ একটা বাজার। নুন তেল থেকে শুরু করে বিদেশি কসমেটিকস সবই পাওয়া যায় এখানে। জাহাঙ্গীর ভাই একটা ছাতা পছন্দ করে দাম জিজ্ঞেস করতেই দাকানদার ৬০০ রুপি চাইলেন। জাহাঙ্গীর ভাই ২৫০ রুপি বলে বসলেন। অমনি বিক্রেতা সেটা দিয়ে দিলেন। আশা করি বুঝতেই পারছেন কেমন দরদাম করতে হবে এখানে। কসমেটিকস কিনতে গিয়েও একই সমস্যা। অনেক নামি দামি কোম্পানীর প্রডাক্টও ভিন্ন ভিন্ন দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দাম। ব্যবধানটা দু চার টাকা হলে কথা নেই, ব্যবধান ৭০ রুপি পর্যন্ত। চা কিনতে গিয়ে পড়লাম আর এক সমস্যায়। হরেক রকম চা। কোনটা কিনবো, কোনটা ভালো হবে তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলাম। অভিজ্ঞ সেলসম্যানের চোখ সেটা ঠিকই ধরে ফেলে। হাস্যজ্জোল মুখে বলে “আমার ওপর ছেড়ে দিন,আমি একটা মিক্সড চা বানিয়ে দিচ্ছি”। অগত্যা তাতেই রাজি হতে হলো। এখন অনুভব করি ছেলেটা আমাদের ঠকায়নি।
বিধান মার্কেটে ঢুকলেই আমাদের গুলিস্থান, স্টেডিয়াম মার্কেট কিংবা পল্টনের কথা মনে পড়ে, এমন পরিস্থিতির জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলামনা। কেনা কাটা শেষ করে আমরা হোটেলে ফিরে গেলাম। কাল সকালেই রওয়ানা দেব গ্যাংটক।
আমাদের সিদ্ধান্ত হলো আগামীকাল সকাল ৭ টার মধ্যেই গ্যাংটকের উদ্দেশে রওয়ানা দেব। হঠাৎ করেই লতিফ ভাই বলে বসলেন অত সকালে তো এখানে কোন রেস্টুরেন্ট খোলেনা, নাস্তা করবো কীভাবে? অবশেষে আলোচনা সাপেক্ষে কিছু হালকা নাস্তা হোটেল কক্ষে নিয়ে রাখলাম।
গ্যাংটক যাওয়ার অনেক অনেক উপায় আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাকেজ ট্যুর,ভাড়া ট্যাক্সি, শেয়ার ট্যাক্সি, বাস সার্ভিস, এস এন টি (সিকিম ন্যাশনাল ট্যুরিজম)’র বাস সার্ভিস। এর যে কোন একটা আপনি পছন্দ করতে পারেন আপনার সামর্থ অনুযায়ী। প্যাকেজ ট্যুরে গেলে জন প্রতি ৮-১০ হাজার টাকা দিলে যাওয়া আসা, ৩-৫ দিন থাকা খাওয়া, ১০-১৫ টি স্পট সাইট সিয়িং ব্যবস্থা থাকে। তবে এতে প্রতারিত হওয়ার আশংকাও কম থাকেনা। ভালো করে না জেনে আপনারা প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
এস এন টি বাস টার্মিনাল থেকে কিছুক্ষণ পর পরই বাস ছাড়ে। ২শ রুপী থেকে শুরু করে ৩শ রুপীর মধ্যেই ভাড়া। ওদের এসি বাসটা বেশ ভালো। শেয়ার ট্যক্সিতে যেতে পারেন, ভাড়া পড়বে ৪-৬শ রুপী। গাদাগাদি করে বসতে হয় বলে এটা অনেকেই পছন্দ করেন না। সবকিছুই আপনি পাবেন এস এন টি টার্মিনালের সামনেই। আপনি যদি স্বাচ্ছন্দ্যমতো যেতে চান তবে নিজেরাই একটা ট্র্যাক্সি ভাড়া করে নিতে পারেন। সর্বোচ্চ ৪ জন এতে বসতে পারবেন। ভাড়া পড়বে ২ হাজার থেকে পঁচিশ শ রুপি। এসি ট্যাক্সি নিলে ৪-৫ শ রুপি বেশি ভাড়া পড়বে।
আমরা এস এন টি’র সামনে গিয়ে হতাশ হলাম। মাত্র দশ মিনিট আগেই ছেড়ে গেছে এসি বাস (আপনারা এ বাসে যেতে চাইলে আগে থেকে টিকিট কাটুন এবং সময় জেনে নিন)। পরের ভালো বাসটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২ ঘণ্টা। অপেক্ষা করা আমাদের চলবেনা, অতএব বিকল্প রাস্তা খুঁজতে শুরু করলাম। শেয়ার ট্যাক্সি দেখে পছন্দ হলোনা। তিনজনেই একটা ট্র্যক্সি ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এদিক ওদিক তাকাচ্ছি, অমনি চার পাঁচজন লোক ছেকে ধরলো। তারা প্রত্যেকেই নিজের ট্যাক্সির মডেল আর গুণকীর্তন শুরু করে দিল। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দিতে এগিয়ে এলেন একজন ট্যাক্সি চালক। তিনি বললেন
“ওরা সবাই দালাল,কারোই নিজের ট্যাক্সি নেই। আপনারা যে ট্যাক্সি নেবেন নিন। গাড়িটা আগে দেখে নেবেন। দামাদামি করে উঠবেন”।
ছেলেটার কথা আমাদের ভালো লাগলো। অবশেষে আমরা ওর ট্যাক্সিটাই ২ হাজার রুপীতে (ওয়ান সাইড/আপ) ভাড়া করলাম।
সকাল সাড়ে আটটায় আমাদের যাত্র শুরু হলো গ্যাংটকের উদ্দেশে। আমাদের গাড়ির চালকের নাম সন্দ্বীপ বিশ্বকর্মা। নিজের পরিচয় দিলেন বাঙালি বলে। বললেন বটে বাঙালি, কিন্তু অনর্গল কথা বলে চলছেন হিন্দী আর নেপালী ভাষায়। বাংলা যা বলছেন তা ভাঙ্গা ভাঙ্গা। শুধু সন্দ্বীপের ক্ষেত্রেই নয়, দু’দিনে অনেক বাঙালির সাথে দেখা হয়েছে কথা হয়েছে যারা অধিকাংশই কথা বলেন হি হিন্দিতে। স্বকীয়তা যে তারা রক্ষা করতে পারছেন না তা স্পষ্ট।
সন্দ্বীপ বিশ্বকর্মা শুধু আমাদের ড্রাইভার না, গাইডও বলা চলে। আঁকাবাকা পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি এগিয়ে চলছে আর ও আমাদের বর্ননা দিয়ে চলছেন। এখন কত হাজার ফুট ওপরে উঠলাম, সামনে কী, পেছনে কী সব কিছুরই পরিচয় দিচ্ছে।
ঘন্টাখানেক চলার পর গাড়ির গতি কমিয়ে আনলো সন্দ্বীপ। আকাশ যেন আমাদের পছন্দই করেনি,মুখ কালো করে রেখেছে তাই। মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হলো। গাড়ির গতি অর্ধেকে নামিয়ে আনলো চালক। একটু অসতর্ক হলেই চার হাজার ফুট নীচে ছিটকে যাবে গাড়িটা। গাড়ির জানালা দিয়ে নীচে তাকাতেই শরীর হিম হয়ে গেল। অনেক নীচে শাপের লেজের মতো একটা নদী একেবেকে চলে গেছে। সন্দ্বীপ আমাদের দিকে তাকিয়ে বললো “এটা আপনাদের দেশে গেছে”। আমরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। সন্দ্বীপ আমাদের চোখের প্রশ্নটা বুঝতে পারলো। বললো “এটাই তিস্তা”। আর একটু এগিয়েই পথের ধারে একটা রেস্টুরেন্টে গাড়িটা থামালো ও। বললো “চা নাস্তা খেয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিন, বৃষ্টি ততক্ষণে কমে যাবে”। আমরা গাড়ি থেকে নেমে রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।
আমাদের যেমন হাইওয়ের পাশের রেস্টুরেন্টগুলো এটাও অনেকটা এমনই। সবসময় ভিড় লেগেই আছে। খাবারের অর্ডার দেয়ার পরে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে। আমরা রুটি এবং সবজির অর্ডার করলাম। আমার ধারণা ছিল আমাদের দেশের মত একটা প্লেটে রুটি দেবে আর একটা বাটিতে সবজি বা ভাজি দেবে। ব্যাপারটা তেমন ঘটলোনা। প্রত্যেকের জন্যই একটা ট্রে আসলো। দুটো রুটি,তিন রকমের সব্জি,লাল মরিচের চাটনি, মুগ ডাল এবং টক চাটনি। দুটো রুটির সাথে এতগুলো জিনিস আসবে এটা কোন হিসেবেই মেলাতে পারছিলাম না। খাবার শুরু করেই টের পেলাম নানা পদের সবজির অসাধারণ স্বাদ। বলা যায় চেটে পুটেই খেলাম। সারা শরীরে খবর হয়ে গেল যখন টক চাটনিটা জিহ্বায় লাগালাম। ওরে বাপরে; টক মানে কি এমন টক! দুনিয়ায় এমন টক কোন খাবার থাকতে পারে সেটাই ছিল অজানা। বিল দিতে গিয়ে দেখলাম খুব বেশি হয়নি। জন প্রতি মাত্র সত্তুর রুপি। বিল চুকিয়ে বাইরে এসে দেখি বৃষ্টির প্রকোপ অনেকটাই কমে গেছে। আমাদের গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো।
গ্যাংটকের প্রায় ৩৬ কিলোমিটার আগে র্যাংপোতে এসেই ড্রাইভার সন্দ্বীপ মনে করিয়ে দিলেন এন্ট্রি করিয়ে নেয়ার বিষয়টি। সিকিম যেতে হলে আপনাকে র্যাংপোতে একটি ফরম পূরণ করে অনুমতি নিতে হবে। এখানে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হবে “কত দিন থাকবেন”? আপনি ফরমে যে তারিখ উল্লেখ করবেন ঠিক সে তারিখের মধ্যেই ফিরে আসতে হবে। যদি কোন কারণে আপনি সে তারিখটি অতিক্রম করে ফেলেন তবে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। একারণে আপনার যারা আসবেন তারা দুদিন বাড়িয়ে তারিখ উল্লেখ করবেন। আর হ্যাঁ , একটা কথা মনে রাখবেন সিকিম থেকে ফিরে আসার সময় এ অফিসটিতে আবার আপনাকে আসতে হবে এবং এন্ট্রি করতে হবে। যদি আপনি তা না করেই চলে আসেন তবে আপনাকে অনেক বড় ঝামেলায় পড়তে হবে। এমনকী অনুমতিপত্রটির মূল কপি হারিয়ে ফেললেও আপনাকে ঝামেলায় পড়তে হবে। তাই অনুমতিপত্রটি অবশ্যই সামলিয়ে রাখবেন। এবং নির্দিষ্ট সময়েই ফিরে আসার চেষ্টা করবেন।
বেলা একটা নাগাদ গ্যাংটকের উপকণ্ঠে সন্দ্বীপ আমাদের নামিয়ে দিলেন। সন্দ্বীপের গাড়িটি পশ্চিমবঙ্গের রেজিঃ করা একারণে এটা সিকিমে ঢুকতে পারবেনা। সিকিম জুড়ে শুধু সিকিমের রেজিঃ করা গাড়িগুলোই বিচরণ করে।
ওখানে দাঁড়িয়েই সন্দ্বীপ আমাদের জন্য একটা গাড়ি ঠিক করে দিল। এ গাড়িটা আমাদের শহরের কাছাকাছি দশটি দর্শনীয় স্থান (১০ পয়েন্ট)ঘুরিয়ে দেখাবে এবং সবশেষে শহরের কেন্দ্রস্থল এম জি মার্গে একটা ভালো মানের হোটেল খুঁজে দিয়ে বিদেয় হবে। গাড়ি চালকের সাথে চুক্তি হলো ১৫০০ শ রুপি ।
আমাদের নতুন ড্রাইভারের নাম ফুর্বা শেরপা। আমি ধরেই নিয়েছিলাম ও নেপালী। ফুর্বাকে জিজ্ঞেস করতেই বললেন “না না আমি সিকিমের”। হোক নেপাল অথবা সিকিমের তাতে আমার কিছুই আসে যায়না। ছেলেটা কথা বার্তায় বেশ চটপটে। তাকে শুধু ড্রাইভার বললে ভুল বলা হবে। তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন এবং আমাদের গাইড হিসেবেও কাজ করছেন। প্রতিটি পয়েন্টে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তার ইতিহাস ঐতিহ্য বুঝিয়ে দিচ্ছেন। হিন্দি ইংরেজি মিলিয়েই আমাদের সাথে তার কথা চালিয়ে যাচ্ছেন। কখনও খাড়া পাহাড়ে গাড়ি উঠছে তো কখনও ঢাল বেয়ে নামছে। গাড়িতে বসে বাইরে তাকালে কলিজা শুকিয়ে আসে ভয়ে। ফুর্বা সাবলিল ভাবেই গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন আর গল্প করছেন।
ফুর্বাকে জিজ্ঞেস করলাম,
: তোমাদের এখানে ট্র্যাফিক আইন ভাঙ্গলে কোন শাস্তি হয়?
একটু মুচকি হেসে জবাব দিল
: হুম, ওটাতে মাফ নেই।
: কেমন শাস্তি হয়?
: এই ধরুন সাত দিনের হাজত বাস অথবা কিছু জরিমানা।
আমি এবার ফুর্বাকে জিজ্ঞেস করলাম
: তোমরা পুলিশকে কিছু দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করনা?
লক্ষ করে দেখলাম ফুর্বার চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেল, মুখের সেই মুচকি হাসিটা নেই। ও আমার দিকে না তাকিয়েই বললো-
: আমরা কখনই এ কাজটা করিনা।
: কেন?
: আমি পঞ্চাশ রুপি দিয়ে তার লোভ ধরাবো আর একদিন ও আমার সন্তানের কাছে পাঁচশ রুপি নেবে। লোভ তো কমেনা, বাড়তেই থাকে।
আমি কিছুটা লজ্জায় পড়ে গেলাম ফুর্বার কথা শুনে। তবে কথায় কথায় যা বুঝলাম ওর এ গর্বটা সিকিমের স্থানীয় ড্রাইভারদের নিয়েই। বাংলার ড্রাইভারদের সম্পর্কে সে ভালো ধারণা পোষণ করেনা।
ফুর্বা একে একে Do- Drul Chorten, Namgyal Institiut Tibetology, Ban Jhakri Water Falls Park, Flower Exhibition Centre, National Hand Loom Development programme. Ganeshtakসহ আরো বেশ কটি পয়েন্টে ঘোরানোর পর একটা হাসপাতালের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। বললো ওটা এক হাজার বেডের একটা মাল্টি ইস্পেশালাইজড হাসপাতাল। আমরা এখানে বিনে পয়সায় চিকিৎসা করাতে পারি,ওষুধও বিনে পয়সায় দেয়া হয়। অন্য রাজ্যের কেউ চিকিৎসা করাতে আসলে তাদের জন্য একটা ফি নেয়া হয়।
ফুর্বাকে জিজ্ঞেস করলাম-
: তোমাদের টাকা নেয়া হয়না কেন?
ফুর্বা সেই হাসিটা মুখে রেখেই বললো
: এটা আমাদের রাজ্য সরকার করে দিয়েছেন।
সরকারের কথা যখন উঠলোই ভাবলাম ওর কাছ থেকে আর একটু জেনে নিই, কদিন পরেই তো ভারতের লোকসভা নির্বাচন। ফুর্বাকে আবার জিজ্ঞেস করলাম
: তোমাদের এখানে লোকজন কোন দলকে চাচ্ছে?
ফুর্বা গাড়ির গতি এক ঝটকায় কিছুটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো
: আমরা তো চাই SDF (সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট)সারা জীবন ক্ষমতায় থাক।
: তোমাদের এমন চাওয়ার কারণ?
ফুর্বা উচ্ছসিত হয়ে বললো
: SDF গত ২৫ বছর ক্ষমতায় আছে, ওরা সিকিমের সাধারণ মানুষের জন্য অনেক কিছুই করেছে।
আমি আবার জিজ্ঞেস করি
: তাহলে কি সিকিমে আর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল নেই ?
: আছে , সিকিম প্রান্তিক মোর্চা
আরো কিছুক্ষণ এদিক সেদিক ঘোরাঘুরির পর নিয়ে এলো এম জি মার্গের কাছেই একটা হোটেলে। বেশ পরিপাটি এবং পরিচ্ছন্ন হোটেল।তিন বেডের একটা রুম ৩ হাজার রুপি চাইলো। ভাড়াটা একটু বেশিই মনে হলো। আমাদের জানা ছিল ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে দামাদামি চলে। সামান্য জানার ওপর ভরসা করে শুরু করলাম দামাদামি করা। এক হাজার রুপি কমে এলো তাতে। আপনারা যে কেউ ইচ্ছে করলেই এম জি মার্গের দূরে, পাহাড়ের নিচের দিকে অনেক কম দামে হোটেল পাবেন কিন্তু সেখান থেকে এম জি মার্গে আসতে হলে কমপক্ষে ২শ রুপি ট্যাক্সি ভাড়া গুনতে হবে আবার ফেরৎ যাওয়ার সময় ২ শ রুপি। এখন হয়ত প্রশ্ন করবেন “কেন এম জি মার্গে আসতে হবে” উত্তরটা হলো এখানে শহর বলতে যা বা যতটুকু বোঝায় তা ওই এম জি মার্গ। আর একটা কথা, আমার লেখা পড়ে কারো ধারণা হতে পারে গ্যাংটক আর এম জি মার্গই সিকিমের সব। আসলে তা নয়। গ্যাংটক হলো সিকিমের পূর্ব অংশ।এবারের যাত্রায় এখানে এলেও পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ অংশেও রয়েছে প্রচুর নয়নাভিরাম দর্শনীয় স্থান। সেসবের বর্ণনা অন্য কোন লেখায় দিব।
এম জি মার্গে প্রচুর দোকানপাট আছে। সবই পরিপাটি করে সাজানো। অধিকাংশ পণ্যের দামই সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। বোঝাই যায় ট্যুরিস্টদের টার্গেট করেই এসব গড়ে তোলা হয়েছে। খাবারের দামও অনেক বেশি। ছোট আকারের একটা লুচি দশ রুপি দাম। সকালের নাস্তায় দশটা মুখে দিয়েও পেট ভরেনা। লাল আটার রুটি প্রতিটি বিশ রুপি। সবজি বলতেই আলু থাকবে। গ্যাংটকে যে কদিন ছিলাম রুটি সবজি অথবা ভাত সবজি খেয়েছি। মাংস বলতেই চিকেন। আর চিকেন বলতেই ব্রয়লার। প্রায় প্রত্যেক দোকানেই দেখেছি খাবারের সাথে টক থাকে। দুপুরে ভাতের সাথে টক দই। শাক পাওয়া যায়না বললেই চলে। একদিন দুপুরে এক রেস্টুরেন্টে অনুরোধ করে সামান্য শাক পেয়েছি, সেটারও নাম জানিনা। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, রেস্টুরেন্টে ওরা কখনও বিরক্ত হন না। অধিকাংশ দোকানে বিশেষ করে রেস্টুরেন্টগুলোতে পরিবারের সবাই মিলে কাজ করে। ভেতরের পরিবেশটাও অনেকটাই পারিবারিক।
ফেরার দিন এম জি মার্গ থেকেই আমরা ট্যাক্সি ভাড়া করলাম শিলিগুড়ি হিলকার্ট রোড পর্যন্ত। ২৫শ রুপী ভাড়া। নেপালী ড্রাইভার,ইনিও গাড়ি চালানোর পাশাপাশি গাইডের ভূমিকা পালন করে চলছেন। নাম জিজ্ঞেস করতেই এমন একটা শব্দ উচ্চারণ করলেন যে আমরা বার বার শুনেও সেটা নিজেরা উচ্চারণ করতে পারলাম না ফলে এ লেখায় তার নাম উল্লেখ করা গেলনা।
সিকিমের দুর্গম সড়কে ওভার টেক নিষিদ্ধ। আমাদের ড্রাইভার হালকাভাবেই গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন। কী মনে করে হঠাৎ করেই একটা জিপকে ওভার টেক করে ফেললেন। অমনি অপরাধ বোধে তিনি অনুতপ্ত হলেন। বার বার আমাদের কাছে ক্ষমা চাইলেন আর বললেন “মুঝে এইসা নেহি করনা চাহিয়েথা”। ভালোভাবেই শিলিগুড়ি ফিরে এলাম। যে হোটেলে এর আগে ছিলাম সেখানেই আবার উঠলাম।
পরের দিন সকালে লতিফ ভাই, জাহাঙ্গীর ভাইকে হোটেলে রেখেই আমি হাঁটতে বের হলাম। হিলকার্ট রোডে রাস্তার পাশে একটা ছোট টেবিল সাজিয়ে এক সুদর্শন তরুণ চা গরম করছে। টেবিলের উপর বয়ামে বিস্কিট রাখা আছে।অনেকেই চা বিস্কিট খাচ্ছেন। তরুণের স্মার্টনেসের সাথে কেন জানিনা ফুটপাতের চায়ের স্টলটা মানাতে পারছিলাম না হোটেলে ফিরে এসে লতিফ ভাই, জাহাঙ্গির ভাই সহ নাস্তা করতে বের হলাম। আমার মাথায় তখনও সেই তরুণ। নাস্তার পরে চায়ের অর্ডার করার আগে লতিফ ভাইকে বললাম “ভাই, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা পান করবো”। তাঁরা আপত্তি করলেন না।
এলাম সেই টেবিলটার সামনে। এখন সেই তরুণ নেই,তার পরিবর্তে একজন বৃদ্ধ চা বানাচ্ছেন আর একজন বৃদ্ধা তাঁকে সহযোগিতা করছেন। আমরা চায়ের অর্ডার দিতেই সেই তরুণ সেখানে উপস্থিত হলো। এখন সে আরো স্মার্ট। ইস্ত্রী করা প্যান্ট,ইন করা শার্ট,পায়ে চামড়ার জুতা, গলায় টাই এবং একটা পরিচয় পত্র ঝোলানো। তরুণ বৃদ্ধার হাতে চাবি দিয়ে চলে গেল। আমি এগিয়ে গিয়ে বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করলাম,
: ছেলেটা কে?
: আমার ছোট ছেলে।
: কোথায় গেল?
: ও বার ক্লাশে পড়ে, এখন কলেজে গেল।
আমার চা ঠান্ডা হতে লাগলো। বৃদ্ধার সাথে কথা বলে জানলাম,সকাল বেলায় রাস্তার ধারে চা বিক্রি করাই আয়ের একমাত্র উৎস। ছেলেটা সকালে এসে চুলা ধরিয়ে দোকান খোলে। ওরা বুড়ো মানুষ তাই আসতে একটু দেরি হয়ে যায়। ওরা এলেই ছেলে কলেজে চলে যায়।
আমার কথা বন্ধ হয়ে যায়। পথের ধারেই এমন এক শিক্ষা পাবো ভাবতেই পারিনি। ছেলেটার সাথে কথা বলতে না পারা আফসোস অনেকদিন থাকবে। অনেক দূর থেকেও এ তরুণের জন্য অনেক শুভকামনা থাকবে।
সেদিনই বাড়ির পথ ধরলাম।
বাংলার চিত্তাকর্ষক ইতিহাস সম্পর্কে জানার সময়, গৌরের মতো আর কিছু গন্তব্য হতে পারে না।…..
এপিসোড-১ (প্রথমাংশে রেল-জংশন) সে তিন যুগ আগের কথা।ঢাকা থেকে এসে বিল্টু মামা নেমেছেন কুলাউড়া জংশন…..
কবি কাশীরামদাসের জন্মস্থান পূর্ববর্ধমান জেলার সিঙ্গিগ্রামে বেড়াতে গেলাম।তাঁর জন্মভিটের ভগ্নাবশেষ দেখলাম।আমি,মিহির,রিমি,সোমা,রজত সকলে গ্রাম ঘুুুুরলাম। চারদিকে…..
ভ্রমণবিলাসী চারজন বেরিয়ে পরলাম ভ্রমণে। আমিও গেলাম।প্রথমে ওরা গেল মুকুটমণিপুর। সপ্তাহান্তে পিকনিক বা একদিনে ছুটিতে…..