দ্বন্দমূলক পথে

আমিনুল ইসলাম
মুক্তগদ্য
Bengali
দ্বন্দমূলক পথে

যতটুকু তাপে চামড়ায় ফোস্কা ওঠে। ঠিক ততটা তাপেই গলে যাচ্ছিল চোখ। ফোস্কা সহনশীল হলে অভ্যাস দানা বাঁধে। সে অভ্যাস অভিনয় নয়। অভিনয় হলো যা ঘটছে তার অভ্যন্তরে আর ১টি ঘটনার স্রোত। যে সময় মাপছে ঘড়ি তার মেরুদণ্ড নেই। সুষ্মাকাণ্ডের চার দেওয়ালে ব্যাবিলন সভ্যতার প্রলেপ। সংস্কৃতির ধারক বাহক বাদুড়ের সংস্পর্শে উল্টো রথ-যাত্রায় ঘোড়াগুলোর আহাম্মক প্রতিস্পর্ধা। স্পর্ধা থেকেই আস্পর্ধার জন্মগ্রহণ। একগুঁয়ে, রগচটাও বলা চলে। সব চলছে চলবে স্লোগানে এযাবৎ গলা সেধে একঘেয়ে হয়েছে জীবন। হওয়ারই কথা। তাই এই ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার কামার-শালে গলছে লোহার হৃদয়।

মানুষের কী দোষ বলুন! তুষার+উষ্মতা=গলতে থাকা সময়। যা জলের মতোই অপচয় হচ্ছিল ! অথচ জলই জীবন যখন- এই জানাশোনা স্ত্রুতি পাঠে বরফ গলবে না।চামড়ায় ফোস্কা নিয়েও তাই সমুদ্র স্নান সেরে উঠলাম। বৈভবের আরেকটি লেবেল ক্রসিং পেরিয়ে যেতেই মুখোশের নৈশ-চরাচরে আমিত্বের বিজয় উল্লাস। সর্বময় ক্ষমতার বাইনোকুলারে যে চোখের পিপাসা তাতে ছিল ভিটামিন-এর অভাব। হাঁপানির টানে বুকের ভেতর ঘরঘর পুরোনো ফ্যানের মোটর যেমন। কতো জল রুপান্তরিত হলো বরফে, পুনরায় আবার গলে যাওয়া। নদীও গরিয়ে যায় অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আশ্রয়ে।

আশ্রয়হীন, সহায় সম্বলহীন মানুষও একটু সম্বল এবং একটু আশ্রয় চায়। এর বেশি যে চায় সেতো আজ বড়ো বলেই পরিচিত। ইতিহাসও তাই বলে। ভবিষ্যৎ = অজানা অপেক্ষা। এই তো নিয়ম, পরিবার পরিজন সমাজ রাষ্ট্র। অংকের ঘোড়া ছুটিয়ে অনুমান অথবা যুক্তির ফাটলে আঁকা শিশু বটগাছের চোখে দেখা রাজনীতির নির্জলা উপবাস। গোধুলীও শিশুসুলভ ঘুমিয়ে পরে সন্ধ্যা মায়ের কোলে।

এ সবের বাইরেও ১টা প্রকৃতি আছে। যেখানে খুঁজে পাই নিজের আর ১ক রূপ। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর চোখের রাস্তা দিয়ে খুঁজে পায় চোখ। ১টি মাত্র অবশিষ্ট পথের দিকে ছুটে যাওয়া ছাড়া আর গত্যন্তর রাখা নেই। অতএব সেই দিকেই এগিয়ে ভেড়া রূপ নিলাম। মোজা কেটে জামা বানানোর পুরোনো অভ্যাস থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইনি সময়। এই না চাওয়ার অসন্তোষেও ছুটছে চাকা। চাকা=শূণ্য। আবার মহাশূণ্যতা = পাংচার হওয়া সহস্র চাকার স্তব্ধ আর্তনাদ। জানালায় চোখ উড়িয়ে দিলাম। সুদুর প্রসারী নীল রং ছুঁয়ে পায়রার পিঠে ভাসিয়ে দিলাম জলযান।

১টি পূর্ণাঙ্গ ফুল ঘিরে উড়ছে ভ্রমর। এখানে ফুলের কাজ চুম্বকের পাপড়ি মেলে ধরা। আকর্ষিত হয়ে ভ্রমর আসবে প্রিয়তমার কাছে। এ কেমন দীর্ঘশ্বাস! যা ফেলতেই প্রেমের আবির্ভাব! অথচ এ তো শুধু প্রেম নয়! কান্নার রোল কলে ফুলের ঠোঁটে হাসির ছোট্ট স্টিকার। দৃশ্যপট বদলে দেওয়ার চতুরতায় যখন মগ্ন হলাম তখন বিবেক নামক সরীসৃপটি ইঁদুরের গর্ত থেকে বেড়িয়ে পড়েছে। সহসা ঝাঁপি আলতো খুলে দিতেই ভেতরে প্রবেশ করলো সে। আমিই উত্তম মধ্যম এবং অধম। চাটুকার= (পূর্ণাঙ্গ কলম – কলমের বহিরাবরণ)। সুতরাং এখানে – চাটুকার=রিফিল।

বোঝাটা কাঁধে তোলার জন্য ঠিক নন্দ ঘোষকে খুঁজে আনা হয়েছে। হরিপদও তৈরী আছেন টেবিলে। নিত্য সত্যের সাথে সূর্য অস্ত গেল মিথ্যার উৎপাতে লাল হয়ে। আসলে মনের ভেতর জারিত হয়ে প্রকাশিত আলোর দৃশ্যপট। এই দৃশ্য দেখতে দেখতে একঘেয়ে ছবিগুলো হারিয়ে যাবে। মানেই মেমোরি লসের কথা বলা হচ্ছে ।

তৈরি হলো নতুন কন্ট্রাডিকশান ~ কনফিউশান থেকে একেবারে পৌঁছে যাবো নতুন কনফিগারেশনে। ১টি নতুন আইডেন্টিটি। আর ১টি মুখোশ। পুরোনো যা কিছু অবসোলিউট হয়ে গেছে। মুখ আর মুখোশ একাকার। এটাই টেকনোলজিক্যাল অ্যাডভান্টেজমেন্ট বা ডিস্অ্যাডভান্টেজমেন্ট। X ফ্যাক্টর রুপে অ্যালজেব্রার আগ্রাসনে আমরা পেরিয়েছি অনেকটা জনপদ। জনহীন শূণ্য গর্ভ চিড়ে আর ১ক পৃথিবীর জন্ম লগ্ন এখন। প্রতিটি পায়ের সূক্ষ্ম মাপে গড়ে উঠবে আগামীকাল।

“প্রত্যেক ক্রিয়ার ১টি বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে”- এই সত্যকে মিথ্যার কাজে লাগিয়ে প্রতিটি ক্রিয়াপদের চাকায় ফোটানো হলো আলপিন। স্তম্ভিত হলো সভ্যতা। ঘড়ির কাঁটা হাতদিয়ে থামিয়ে দিলেই সময় থামে না উল্টে যন্ত্রটি অকেজো হয়ে যায়।

তন্ত্রের মতোই প্রচলিত প্রতিটি সত্য এবং মিথ্যা রেলপথ হয়ে শুয়ে থাকে। এক চাকা সত্যে আর এক চাকা মিথ্যার উপর রেখে এগিয়ে চলছে সভ্যতার রেলগাড়ী । এমন হয়-  যখন চোখ শুধু তুলে আনে সত্যের দৃশ্যপট তখন সব সত্যের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে । আর যখন চোখ তুলে আনে মিথ্যার মায়াজাল তখন ডুবে যায় মিথ্যার অন্ধকারে।

বিবেচ্য বিষয় হলো- যদি বাম পা-টি সত্যে আর ডান পা-টি মিথ্যার উপর রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয় তাহলে নিরপেক্ষতা নামক টর্চ লাইটটি সেখানে জ্বালতেই হবে। তাহলেই এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়। আসলে জীবন যত কঠিন ঠিক ততটাই সহজ-সরল।

বিষয় থেকে ভুল পথে অনেকটা ঘুরিয়ে আনা হলো। ঘুরিয়ে দেখানো গাইডের কাজ। গাইড করার কোনো অভিজ্ঞতা বা অভিসন্ধির সাথে কলমটির কোন যোগসাজশ নেই বলেই আমার বিশ্বাস। যদি যোগাযোগ থাকে প্রশাসন আছেন, বিচার ব্যবস্তা আছে, নক করলেই খুলে যাবে সিংহদ্বার। আইন কোনো ভাবেই অমান্য নয়। যতক্ষণ অন্ন বস্ত্র খাদ্য  শিক্ষা ও বাসস্থান আছে।

ভাবার বিষয় হলো- ফুলের কথা বলতে বলতে গুলগল্প শোনালে ক’জন শ্রোতা আর পাওয়া যাবে। ১টা কথা বলা প্রয়োজন- এটা কোনো বক্তৃতা নয়, তাই শ্রোতা শব্দটির এখানে ছুটি ঘোষনা হলো। পরিবর্তে এখন পাঠকের সামনে রাখা হলো এই সমান্তরাল রেল পথ। দেখা যাক ‘কতো ধানে কতো চাল’- এই বাক্যের পিঠে সময় কতদূর প্রাসঙ্গিক  এগিয়ে যায়…

আমিনুল ইসলাম। কবি। জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে। প্রকাশিত বই: 'রক্তক্ষয়ী চুম্বন' (কাব্যগ্রন্থ, ২০১৩)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ