দ্রোহকাল

অনিন্দিতা মিত্র
ধারামুক্ত কবিতা
Bengali
দ্রোহকাল

ঝরাপাতা

তোমার চলে যাওয়া আমাকে ব্যথিত করে না, ঝরাপাতাদের নিঃশব্দ আর্তনাদে রয়ে গেছে তোমার উপস্থিতি। চোখের জল ঋদ্ধ হয় শরতের শিশির মেখে। একবুক শূন্যতাকে নিয়ে উড়ে যায় পাখি। স্বপ্নময় ধূসর বিকেল। বিষাদের গর্ভে মিলিয়ে যায় বিগত দিনের চালচিত্র। সব সম্পর্ক গতিহারা। হেমন্তকালের হিমে লুকিয়ে কাঁদে বিরহের সোহাগ, শব্দের রেণু ঝরে যায় আলোকবর্তিকা হয়ে। নীল আঁধারের মাঝে শুধুই নক্ষত্রের স্নান। বসন্ত খোঁজে মৃত্যুকে। মিলিয়ে যায় সব প্রত্নতাত্ত্বিক আলাপন। দ্রোহজাতক জন্ম নেয় মনে, চিতার আনলে পুড়ে যায় মনস্তাপ। বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে জন্ম হয় রোদের দিনের, শুরু হয় আগামীর দিন ।

দ্রোহকাল

এখনও স্বপ্ন দেখি আমি, হ্যাঁ হ্যাঁ এই আমিই এখনও স্বপ্ন দেখি। কোজাগরী পূর্ণিমার আলো যেমন আমাকে ভেঙেচুরে তছনছ করেছে তেমনই এই আলো আমাকে নির্মাণও করেছে। হেমন্তর গাঢ় অন্ধকার ক্ষোভ হয়ে বিস্ফোরিত হতে চেয়েছে বারংবার। ঘোমটা ছুঁড়ে ফেলে আমি হাত মেলতে চাই আকাশের দিকে, পায়ের বেড়ি ছিঁড়ে গাইতে চাই শিকল ভাঙার গান। তোমার ঘরের আলপনা হবে মিথ্যে যদি পোড়াও আমাকে অ্যাসিডে, জেনো নারী বর্ষা হয়ে ধুতে পারে সব অপমান। আমি কপালের লাল টিপ মূহুর্তে মুছে জ্বালতে পারি বিদ্রোহের আলো। চাঁদের আলোর কোনো ভেদ নেই, জাত নেই, লিঙ্গভেদ নেই কাস্তেরও। আমি হতে চাই না লক্ষ্মীমেয়ে, হতে চাই লক্ষ্মীছাড়া ভবঘুরে। বাঁধভাঙা মুক্তির উল্লাসে ভেঙে চুরচুর হয়ে যাক অসাম্যের দেওয়াল। রক্তস্নাত পৃথিবীতে গজিয়ে উঠুক বেঁচে থাকার নতুন শ্লোগান।

অনিন্দিতা মিত্র। কবি। জন্ম ও বাস ভারতের পশ্চিমবঙ্গরাজ্যের কলকাতায়। প্রকাশিত বই: 'এবং অপরাজিতা' (কাব্যগ্রন্থ)।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ