প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
আমি ভয়ে ভয়ে হেনা আপার দু’হাত ধরলাম। আপা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি তার উদারতায় মুগ্ধ হলাম! আপা আমার দুই বছরের বড়। আমি পড়ি ক্লাস এইটে। আপা টেনে। তার সাথে আমার এরকম সম্পর্ক হবে, আমি কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। দু’মাস আগেও না। আপার সাথে আমার সম্পর্কটা আসলে কেমন, আমি বুঝতে পারি না। আমি তাকে পছন্দ করি। কিন্তু ভালবাসিনা। আমি আছি বিরাট এক ধন্দের মধ্যে।
শরীরের একটা নিজস্ব ভাষা আছে। সেই ভাষা দিয়ে আমি বুঝেছি, আপা আমার আদর পছন্দ করেন। আমিও করি। এই পছন্দ শুধু শরীরের চাহিদার কারণে। অনেকটা কৌতুহল থেকে।
আমরা মফস্বল শহরে থাকি। হঠাৎ করে আমার মা মারা যাওয়াতে আমি ইদানিং সবার কাছে খুব সহানুভূতি পেতে শুরু করেছি। আমি এখন যে বাড়িতেই যাই, সবাই আমাকে কিছু না কিছু খেতে দেয়। স্কুলে পড়া করে না গেলেও শিক্ষকরা আর রাগ করেন না। মায়ের জন্য কষ্ট হলেও এদিক থেকে আমি বেশ আরামেই ছিলাম।
আমার আর কোন ভাইবোন নেই। ফলে সারাদিন আমি একাই থাকি। নিজের মত। কেউ দেখার নেই। আব্বা ব্যাংকে চাকরী করেন। সকালে যান। আসেন সন্ধ্যায়। কাজের বুয়া মরিয়ম খালা রান্না করে দিয়ে যায়। তার রান্না আমার মোটেও পছন্দ হয়না। বাধ্য হয়ে খাই। কোন কোনদিন নিজেই ডিম ভেজে নিয়ে ভাত খাই। মায়ের রান্না মিস করি খুব। তবে এখন ধীরে ধীরে মা হারানোর কষ্ট অনেকটা সয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া উপায় কী?
এখন বাড়ীর একটা ডুপ্লিকেট চাবী আমার কাছে থাকে। আমি দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে একাই ভাত তুলে নিয়ে খাই। তারপর টিভি দেখি। কোন কোনদিন ঘুমাই। বিকেলে খেলতে যাই বন্ধুদের সাথে। আর প্রায়ই সন্ধ্যাবেলা যাই হেনা আপাদের বাসায়। নাস্তার লোভে। আপা বোধহয় সেটা জানেন। তাই রোজই তিনি আমাকে কিছু না কিছু বানিয়ে খাওয়ান। নুডুলস্, পেঁয়াজু, ঝালমুড়ি, সেমাই। আমি তৃপ্তি করে খাই। মেয়েরা বোধহয় সব বুঝতে পারে। আমি যেদিন দুপুরে পেট ভরে খেতে পারিনা, সেদিনই আপা জিজ্ঞেস করেন, “মুখ শুকনো কেন? দুপুরে খাস্ নি?” আমি মাথা নীচু করি। চোখে জল আসতে চায়।
কখনও কখনও হেনা আপাই আসেন আমাদের বাসায়। আমার পড়া দেখিয়ে দেন। অভিভাবকের মত। পাশাপাশি বাড়ি। রাত-বিরেত যখন খুশী যাওয়া-আসা করা যায়। বাড়ীর দরজা খোলাই থাকে। এখনকার মত তখন প্রতিটা বাড়ীর দরজা বন্ধ থাকতোনা। আর আসা-যাওয়া করলে কেউ কিছু মনেও করতোনা।
মা খুব মিশুক মানুষ ছিলেন। আশপাশের সব বাড়ীর লোকেদের সাথে তার অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে পাশাপাশি বাড়ীর সবাই আমাকে বেশ পছন্দ করে। সব বাড়ীতেই আমার অবাধ যাতায়াত। তখনকার দিনে স্কুলের ছেলে বন্ধুরা কোন মেয়ের বাড়ীতে গেলে মেয়ের বাবামারা সন্দেহের চোখে দেখতো না। ফলে এখনকার মত তখন প্রেমের অত হিড়িকও ছিলনা। ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ভাল ছাত্র হিসেবে আমার বেশ সুনামও ছিল। এজন্যই সব বাড়ীতেই আমার যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা আছে। একদিন সন্ধ্যায় হেনা আপা আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপর থেকে সুযোগ পেলেই আমরা কাছাকাছি আসছি।
আমি ভাবতাম, শারীরিক সম্পর্ক মানেই জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া বা স্পর্শ করা। এর বেশী কিছু সম্পর্কে আমার ধারণা ছিলনা। এখনকার মত তখন ব্লু ফিল্ম দেখার সুযোগ পাইনি। ফলে আমি ওটুকুতেই চরম তৃপ্তি পেতাম। আর যেহেতু কেউ দেখে ফেলতে পারে, সেই ভয়ে ভয়ে থাকতাম, তাই খুব অল্প সময়ে নিজেকে হালকা করে নিতে চাইতাম। এভাবে চলল বছর দেড়েক। তারপর আব্বা বিয়ে করে নতুন মা বাড়ীতে আনলেন। আমার সব স্বাধীনতা হারিয়ে গেল। কেন জানিনা, হেনা আপার প্রতি আমার আগ্রহও কমে গেল।
এরপর যখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম, তখন আমার পরিবেশ পুরোপুরি বদলে গেল। আমি শরীরের বিষয়টা ততদিনে জেনে গেছি। কিন্তু আমি আর কোন মেয়ের কাছাকাছি আসতে চাইতাম না। কেন জানিনা, আমার ইচ্ছে করতো না। পাপবোধ হতো।
পড়ালেখা শেষ করে আমি চাকরী পেলাম একটা এনজিওতে। রিসার্চ উইং-এ। বেতন ভালো। পোস্টিং হলো কক্সবাজারে। সমুদ্রের কাছাকাছি অফিস। আমি মহাখুশী।
তারপর আমি পারিবারিকভাবে বিয়ে করলাম রিনিকে। আব্বাই ঠিক করলেন। রিনি দেখতে সুন্দরী। ভার্সিটিতে মাস্টার্সে পড়ে। বাসররাতে আমি মনে ভীষণ আতংক নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। আমি এর আগে পরিপূর্ণ সেক্স কখনোই করিনি। তাই আমি জানিনা, বিষয়টা আসলে কেমন হবে।
আমি লক্ষ্য করলাম, খুব অল্প সময়ে আমার দম ফুরিয়ে যাচ্ছে। যদিও তাতেই আমি নিজেকে তৃপ্ত মনে করছি। কিন্তু রিনির দিকটা ঠিকমত বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে এক বছর গেল নানা ঝামেলায়।
রিনি মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে আসার পরপরই কন্সিভ করলো। তারপর প্রায় দেড় বছর আমাদের মধ্যে তেমন কিছু ঘটলো না। তবে আমি এই পুরো সময়টা রিনির পরিপূর্ণ যত্ন নিলাম। ওর খাওয়া, বিশ্রাম, ডাক্তার, অষুধ সব। যেদিন আমার মেয়ে টুনির জন্ম হলো, সেদিন প্রথমবার মেয়েকে কোলে নিয়ে আমার মনে হলো, এতদিনে আমার জীবন পূর্ণতা পেল। মাকে ছাড়া বড় হওয়ার কষ্ট, মায়ের জায়গায় সৎমাকে মেনে নেয়ার যন্ত্রণা, নিমেষে সব ভুলে গেলাম।
এরপর একদিন রাতে রিনি ওর অনেকদিন ধরে চেপে রাখা বিরক্তি প্রকাশ করে ফেললো। “একটু পরেই তোমার কম্ম শেষ হয়ে যায়। তখন আমার অসহ্য লাগে। বাদ দাও।”
আমি হতবাক। কী বলব, বুঝতে পারছিলাম না। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম,
– তোমার কি এখন এরকমটা মনে হচ্ছে?
– না। শুরু থেকেই। আমি কখনোই পুরোপুরি তৃপ্তি পাইনি। ভেবেছি, পরে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে..।
আমার শিরদাঁড়া দিয়ে একটা শীতল প্রবাহ বয়ে গেল। বুঝলাম, আমার জীবন শেষ। এতদিনেও যখন বৌকে সুখ দিতে পারিনি, তখন বাকী জীবন কী হবে? সেদিন থেকে আমি রিনিকে এড়িয়ে যাওয়া শুরু করলাম। রাতে ক্লান্তি অথবা ঘুমের ভান করে এড়িয়ে যাই। ওকে সামান্য আদর করতেও ভয় লাগে। কারণ রিনি খুব দ্রুত উত্তেজিত হয়ে যায়। কিন্তু আমি জানি আমার দৌড়।
ভয়ানক দুশ্চিন্তায় আমার দিন কাটতে লাগলো। রিনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে বা পরকীয়া করবে, এই ভয়ে আমি রাতের পর রাত ঘুমাতে পারতাম না। ওর মোবাইল বেজে উঠলে নিজের অজান্তেই আমার কান খাড়া হয়ে যেত। কোন ছেলেমানুষ নয় তো? আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার এ অবস্থার জন্য আমার ভ্রান্ত ধারণা দায়ী। আর দায়ী আমার মায়ের অনুপস্থিতি। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান আমার জানা ছিলনা।
আমি রিনিকে না জানিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার অষুধ দিল। কোন লাভ হলোনা। আরেকটা ডাক্তার দেখালাম। ফলাফল জিরো। এক সাইকোলজিস্টের কাছেও গেলাম। সব খুলে বলে তার সাহায্য চাইলাম। ভদ্রলোক চশমার মোটা ফ্রেমের উপর দিয়ে আমার দিকে গোল গোল চোখে তাকালো। আমি বুঝলাম না, চশমার উপর দিয়েই যদি দেখবে, তাহলে চশমা পরার দরকারটা কী? আরেকটা বিরক্তিকর বিষয় হলো, লোকটার মাথায় পুরা টাক। কানের পাশ থেকে গোটা বিশেক চুল টেনে এনে টাক ঢাকার চেষ্টা করেছে। টাক কি কখনও কানের পাশের চুল দিয়ে ঢাকা যায়? আজব!
– আপনি সবকিছু আপনার স্ত্রীকে খুলে বলুন। তার সাহায্য চান। সে আপনার সমস্যাটা বুঝলে আপনাকে সাহায্য করবে। তখন আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। ধীরে ধীরে সমস্যাও চলে যাবে।
ভদ্রলোকের পরামর্শ আমার পছন্দ হলোনা। রিনিকে কিছুতেই হেনা আপার কথা বলা উচিত হবেনা। নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার কোন মানে হয়না। আমার দুশ্চিন্তা বাড়তেই থাকলো।
রিনির সাথে আমার সম্পর্ক খুব বেশী ফরমাল হয়ে গেল। আমি সকালে অফিসে যাই। রাতে ফিরে টুনির সাথে খেলি। নিজের টুকটাক কাজ করি। তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে যাই। মাঝে মাঝে সংসারের জরুরী বিষয় নিয়ে রিনির সাথে সংক্ষিপ্ত কথা বলি। যেমন – বাজার লাগবে কিনা, মেয়ের কিছু আনতে হবে কিনা, এইসব। দরকার নাহলে কথা বলিনা। ফোনও করিনা। এরমধ্যে আমি চাকরীতে প্রমোশন পেলাম। বেতন বেড়ে গেল অনেক। আমার বস আমার কাজে ভীষণ খুশী।
রিনিকে সবসময় বিষন্ন দেখি। প্রাণখুলে হাসেনা। রোবটের মত নিজের কাজ করে যায়। প্রমোশনের খবর শুনে শুধু বলল, “ও”।
মাসতিনেক পর একদিন রাতে আমি ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি। টুনি আমাদের দু’জনের মাঝখানে শুয়ে গভীর ঘুমে অচেতন।
– তোমার সমস্যা কী বলতো? তুমি কি অন্য কোন মেয়েকে ভালবাস?
রিনির প্রশ্ন শুনে আমি চমকে গেলাম। ও কী ভাবছে, অন্য কোন মেয়েকে ভালবাসি বলে আমার সেক্সুয়াল প্রবলেম? ওকে কী করে বলি, আমার সমস্যার কারণ কী?
নিজের স্ত্রীকে বেশীদিন এড়ানো কঠিণ। রিনি আমাকে ভুল বুঝছে। তাই পরের দিন যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট কিনে আনলাম। রিনিকে লুকিয়ে খেলামও। সে রাতেও তেমন কোন পরিবর্তন বুঝতে পারলাম না। রিনির কাছে আমার লজ্জার শেষ ছিল না। কী করব, ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে যাচ্ছিলাম। নিজেকে জিন্দা লাশ মনে হতে লাগলো। বেঁচে থাকা অসহ্য মনে হচ্ছিল।
এরমধ্যে রিনি বায়না ধরলো, সে বাবার বাড়ী যাবে। এক বছরের বেশী হয়ে গেছে, যায়নি। অনেকদিন থেকেই যেতে চাচ্ছে। কতদিন আর টালবাহানা করি? শেষে যেতে দিলাম। নিজেই সাথে করে নিয়ে গিয়ে ওর মায়ের কাছে রেখে এলাম।
বাসায় ফিরে গোটা বাড়ী কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা মনে হতে লাগলো। ঘরের এখানে ওখানে টুনির খেলনা পড়ে আছে। দেখে আমি মেয়েকে মিস করতে লাগলাম। বাথরুমে ঢুকে দেখলাম, টাওয়েল হোল্ডারে রিনির ম্যাক্সি, পেটিকোট, ব্রা ঝুলছে। যাবার দিন খুলে রেখে গেছে। আমি ওর ম্যাক্সিটা নাকে চেপে ধরে ওর শরীরের গন্ধ নেবার চেষ্টা করলাম। কাউকে আমরা কতটা ভালবাসি, সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায় মানুষটা দূরে চলে গেলে। আমিও টের পাচ্ছিলাম।
এই প্রথম রিনির শূন্যতা আমাকে এত বেশী কষ্ট দিতে লাগলো। আমার ভীষণ কান্না পেল। আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। ছোট বাচ্চার মত। তিনদিন জ্বরে ভুগে সেদিন সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ মা মারা যাবার পর এরকম অসহায়ের মত কেঁদেছিলাম। গোটা পৃথিবীটা তখন শূন্য মনে হয়েছিল। আজও ঠিক তাই মনে হচ্ছে।
রাতে শুয়ে আমার ভয় ভয় করতে লাগলো। রিনি যদি আর ফিরে না আসে? যদি আমাকে তালাক দিতে চায়? চাইতেই পারে। স্বামী শারীরিক সুখ দিতে না পারলে সে স্বামীর সাথে থাকবে কেন? তাছাড়া রিনি সুন্দরী, শিক্ষিতা। স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে। বয়সও কম। ওর গোটা জীবনটাই তো পড়ে আছে। চাইলেই আবার বিয়ে করে দিব্বি সুখে থাকতে পারবে। জীবনতো একটাই।
কিন্তু আমি কী করব? কী করতে পারি? চিকিৎসায় কাজ না হলে কী করার থাকে? দিন দশেক পর একদিন রাতে আমার মনে হল, একটা মেয়ে ভাড়া করে নিয়ে কোন হোটেলে যাই। দেখি, কোন পরিবর্তন ঘটে কিনা। ওসব মেয়েরা তো আবার নানা কৌশল জানে। কাজ হলেও হতে পারে। পরে আর মন টানলো না। আরেকটা মেয়ের সামনে সেধে অপমানিত হবার কোন মানে হয়না।
আমি রিনিকে ঘন ঘন ফোন করতে লাগলাম। বেশী বেশী ভালোবাসা প্রকাশ করতে লাগলাম। খেতে পারছি না। না খেয়ে আছি। তোমার রান্না না হলে চলে? ঘরবাড়ী নোংরা, বাড়ী ফাঁকা ফাঁকা লাগে, কতদিন মেয়েটাকে কোলে নেইনা, তাড়াতাড়ি আসো – এইসব।
এক মাস পর রিনির ফেরার কথা। রিনি ফিরলো না। আমার রাতের ঘুম পুরোপুরি চলে গেল। চোখের সামনে সব অন্ধকার দেখি। কিছুই ভালো লাগে না। আমার সন্দেহ হতে লাগলো। রিনি কি ওর বাবামাকে আমার সমস্যার কথা বলে দিয়েছে? অন্য কোন ছেলের সাথে ভাব হয়েছে? ওর ক্লাসমেটদের মধ্যে সাম্য নামের একটি ছেলে ছিল। সে রিনিকে বেশ পছন্দ করতো। রিনি আমাকে সেকথা বলেছিল। তার সাথে কি যোগাযোগ হচ্ছে?
আমি মেয়ের সাথে কথা বলার বাহানায় বার বার ফোন করি। মাঝে মাঝে রিনি বিরক্ত হয়। ফোন ধরেনা। কলব্যাকও করে না। নিজে থেকে ফোনও করেনা। কবে আসবে, পরিষ্কার করে তাও বলেনা। শুধু বলে “দেখি। জানাব।”
একদিন সন্ধ্যায় একা একা সমুদ্রের পাড়ে হাঁটছিলাম। আমার চারপাশে অনেক ট্যুরিস্ট। হাসিখুশী, সুখী মানুষের কোলাহল শুনছি। হঠাৎ পিছন থেকে কে একজন ডেকে উঠলো, “এই হাসান!” আমি চমকে পিছনে ফিরে দেখি শরিফ ভাই। আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। আমাকে তিনি খুবই পছন্দ করেন। হলে পাশাপাশি রুমে থাকতাম। ওনার মাস্টার্সের থিসিসের পুরোটা আমি টাইপ করে দিয়েছিলাম। চমৎকার খিচুড়ি রাঁধেন। মাঝে মাঝে রুমে ডেকে খাওয়াতেন। বড় ভালো মানুষ।
প্রায় বছর চারেক পর দেখা। আমি অনেকদিন পর প্রাণখুলে হাসলাম। অনেক গল্প হলো। একপর্যায়ে জানতে চাইলেন, ওনার প্রজেক্টে কাজ করার মত বাড়তি সময় আমার আছে কিনা। বেশীরভাগ কাজ বাসায় বসেই করা যাবে। লেখালেখি, রিপোর্ট তৈরী ইত্যাদি। মাসে হাজার বিশেক টাকা বাড়তি আয়। আমি রাজী হয়ে গেলাম।
আমি ঠিক করলাম, এই টাকাটার কথা রিনিকে বলবনা। প্রতি মাসে এই টাকাটা শুধু রিনির শখ মেটাবার জন্য ব্যয় করব। ওকে নিয়ে বেড়াতে যাব, না চাইতেই এটা-সেটা কিনে দেব, মাঝে মাঝে ওর পছন্দের খাবার কিনে আনবো বা হোটেলে খেতে নিয়ে যাব। কত পরিকল্পনা! কিন্তু রিনি যদি না ফেরে?
পরের সপ্তাহে আমি রিনিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠালাম। এর আগে ওকে কখনও একসাথে এত টাকা দিইনি। রিনি চায়ও নি। দরকারও হয়নি। টাকা পাঠিয়ে ফোন করে বললাম, “তোমার যতদিন ইচ্ছা থাকো। আসতে ইচ্ছা করলে বলো। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো। টুনির যত্ন নিও।”
তারও দিন দশেক পর এই প্রথমবার আমি একটা অদ্ভুত কাজ করলাম। যেটা আমি এর আগে কখনও করিনি। আমি রিনিকে একটা দীর্ঘ চিঠি লিখলাম। তাতে প্রকাশ করলাম, আমি তাকে কতটা ভালোবাসি, কতটা মিস করি। শেষ প্যারায় লিখলাম, “কোন মানুষই পূর্ণাঙ্গ না। কোন না কোন দিক থেকে প্রতিটা মানুষেরই কমবেশী ঘাটতি থাকে। হয়তো আমার একটু বেশী আছে। তবে বিশ্বাস কর, টুনির কসম খেয়ে বলছি, তোমার প্রতি আমার ভালবাসায় কোন ঘাটতি নেই। আমি তোমার পুরো বাড়ি পরিষ্কার করে গুছিয়ে রেখেছি। ওয়াশিং মেশিনে তোমাদের জামাকাপড়, বেডশীট সব ধুয়ে রেখেছি। কিচেন, টয়লেটও ক্লিন করেছি। এসে তোমাকে কোন কাজ করতে হবেনা। ফিরে এসো প্লিজ। লাভ ইউ। এন্ড মিস ইউ সো মাচ।”
চিঠিটা স্ক্যান করে ইমেইলে এ্যাটাচ করে পাঠালাম। রিনি কোন রিপ্লাই দিলনা। একটা ফোন পর্যন্ত করলো না। আমার খুব কষ্ট হতে লাগলো। তবে আমি ওকে দোষও দিতে পারছিলাম না। ওর জায়গায় আমি হলেও কি তাই করতাম না? ধরে নিলাম, রিনি আর ফিরবে না। আমি রিনিকে ফোন করা বন্ধ করে দিলাম। যখন রিনি বুঝবে, আমি তার ফেরার অপেক্ষায় আর নেই, তখন সে নিজে থেকেই ফিরে আসবে, যদি আমার প্রতি তার টান থাকে। নাহলে আসবে না।
সারাদিন অফিস করে এসে রাতে আমার আর রান্না করতে ইচ্ছা করতো না। আমি রোজ সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে সমুদ্রের পাড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকতাম। কখনও কখনও অন্ধকারে একা একা কাঁদতামও। তারপর একটা হোটেলে ঢুকে ভাত খেয়ে বাসায় ফিরতাম।
আজ বাসায় ফিরে খুব বেশী ক্লান্ত লাগছিলো। মানসিক ক্লান্তি থেকে শারীরিক ক্লান্তি। বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছা করলো না। বিস্কিট আর কলা খেয়ে শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম। কখন ঘুমিয়ে গেছি, টের পাইনি। অনেকদিন পর আজ আমার খুব ভালো ঘুম হলো।
সকালবেলা কলিংবেলের শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। এত সকালে কে এলো? দরজা খুলে দেখি, রিনি! কোলে টুনি!! আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমি রিনিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলাম। জোরে চেপে ধরেছি বলে টুনি কেঁদে উঠলো। আমি তাড়াতাড়ি ওকে কোলে নিয়ে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। রিনি বেডরুমে ঢুকে বলল, “কই ধুয়েছ? বিছানার চাদর তো ময়লা!”
আমি একগাল হেসে বললাম, “পরিষ্কারই ছিল। তোমাকে দেখে ময়লা হয়ে গেল। অসুবিধা নেই। আমি আবার ধুয়ে দেব। তুমি যা যা বলবে, সব করে দেব। শুধু..
– শুধু কী?
– না, কিছু না।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..