ধার্মিকতা জানতে হবে ধর্মান্ধদের

আর্শিনা ফেরদৌস
ধর্ম
Bengali
ধার্মিকতা জানতে হবে ধর্মান্ধদের

কোন মানুষ সে ধার্মিক হোক আর না হোক খুব বেশী পজিটিভ হতে পারে না। ধর্ম ছাড়া থাকেন যারা তারা ইচ্ছে করলেই যা খুশি করার অধিকার রাখেন এমন নয়। কোন বিষয় নিয়ে আলোচনায় অধার্মিক, নাস্তিক তাদের দক্ষতা থাকতে পারে, সেটি ধার্মিকদেরও থাকে। শুধু ধর্ম মানে জন্য ধার্মিকের যোগ্যতাকে অবহেলা করা অযৌক্তিক।
একজন ধার্মিক একজন নাস্তিকের কত কাছে আসতে পারছে সেটা তার যোগ্যতা।
আমার মনে হয়না কোন ধর্মে কোন বাউন্ডারি আছে, যা স্বজাতি থেকে আলাদা করে তাকে। যারা জবরদস্তি করেন ধর্ম নিয়ে তারা সন্ত্রাসী। কোন সৃজনশীল কাজে ধর্ম কখনো বাধা নয়।
অশালীনতা নাস্তিকেরও মানতে হয়। কোন নাস্তিক অযাচিত নিয়মের বাইরে নয়। বরং তার দ্বিধা বেশি। কোন দ্বিধা নিয়ে কেউ স্বাধীন হয় কীভাবে।

 

একজন শিক্ষিত মানুষ যা বলতে পারেনা অশিক্ষিতরা অনায়াসে তা বলতে ও সেইমত কাজ করতে সক্ষম। তারা হয়তো স্বশিক্ষিত, আমাদের দেশে গ্রামের নিম্নবিত্তরা নিজেদের জীবনে অনেক স্বাধীন। শুধু খাবার নেই বলে উচ্চবিত্তদের সাথে তাদের যোগাযোগ রাখতে হয় তা না হলে তারা আরও বেশী স্বাধীনতা ভোগ করে আসছে ও এসেছে অতীতে যখন তারা খেতে পারত। ধর্ম নিয়েই চলাফেরা তাদের।
ধর্ম তাদের কথায়, চলায় বলায়।
আমি নিজে দেখেছি নিম্ন ও স্বচ্ছল কেউ কারও বউকে পছন্দ হলে সরাসরি তার জামাইকে আরেকজন প্রস্তাব দিতে। ক্ষমতা হলে টাকা লেনদেন করতে। মহিলাটিরও পছন্দ থাকে কখনও। একজন মহিলা তিন চারটি বিয়ে করেছেন এমন প্রমাণ আছে।
এরকম ইতিহাস আছে বেশীরভাগ স্বচ্ছল পুর্বপুরুষদের দু তিনটে বিয়ে হয়েছে। এখনও ক্ষমতা হলে অন্য ব্যবস্থা করা হয়।
এটা তাদের স্টাটাস সিম্বল,বা ষ্টাইল।
যা পৃথিবীর উন্নত দেশে এখনও চালু আছে।
এখন অনেক গার্মেন্টসকর্মী লিভ-টুগেদার থাকে। একটা স্রেফ আশ্রয়ের জন্য। যতদিন তারা থাকতে পারে। বিয়ে হয় কখনও। সন্তান হলে কাছে রাখতে না পারলে গ্রামে পাঠায়। আর গর্ভপাত তো হয়ই হরহামেশা, এভাবে একটা অসুস্থতা ছড়াচ্ছে তারা।
নিজেরা কতটা কর্মক্ষম থাকে এটার কোন কেয়ার নেই তাদের । তাদের কাছে এটাই বাস্তবতা। ধর্ম কোন বাধা হয়না বাস্তবতায়।
পৃথিবীর সব ধর্মের মানুষই হয়তো একইরকম। যে বৈশিষ্ট নিয়ে তারা জন্মে তা অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কারো হয় না। শুধু মাত্র উপযুক্ত শিক্ষা তাকে সাহায্য করে পথ চলতে।
একটা দেশের নিয়মকানুন আইন সবাইকেই মানতে হয়।

কাকে বলব ধার্মিকতা আর কাকে বলব ধর্মান্ধতা? ধার্মিকতা আর ধর্মান্ধতা এক নয়।

• ধার্মিক বোঝে স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ধর্মের রীতিনীতিকে প্রয়োগ করার বিষয়টি। ধর্মান্ধ স্থান-কাল-পাত্র বোঝে না। সব সময় চোখ বন্ধ করে একই আইন প্রয়োগ করতে আগ্রহী।

• ধার্মিক ধর্ম সম্বন্ধে পড়াশোনা করে। ধর্মান্ধ অন্ধ আবেগে অজ্ঞানতা নিয়ে অগ্রসর হয়। পড়াশোনার ধার ধারে না।

• ধার্মিক আল্লাহর নির্দেশকে পালন করে। ধর্মান্ধ কখনও কখনও অতি আবেগে আল্লাহর বা নবীদের দেখানো পথকে ভুলে যায়। নবীর হাদিসকে দেখেও দেখে না।

• ধার্মিকের সবর বা ধৈর্য থাকে। সে হুট করেই সিদ্ধান্ত নেয় না। ধর্মান্ধ অধৈর্য হয় খুব দ্রুতই।

• ধার্মিক নিজে ধর্মীয় অনুশাসন মানে ও অন্যকে মানতে উৎসাহ দেয়। ধর্মান্ধ নিজে মানে না। কিন্তু অন্যকে দোষারোপ করতে পিছপা হয় না। নিজে ফরজ নামাজ পড়ে না। পর্নোগ্রাফি দেখে। চলাফেরার সময় নিজের চোখের পর্দা করে না। অথচ অন্যের বউ পর্দা করে কি-না, সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়। শুধু চিন্তিতই না। গালিগালাজ ও অশ্লীল কথা বলতেও পিছ-পা হয় না।

• ধার্মিক মানুষকে ভালোবাসে। তাকে সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থায় সৎকাজের উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করে, যুক্তি প্রদর্শন করে। আর ধর্মান্ধ মানুষকে ঘৃণা করে। ঘৃণার বিষ ছড়িয়ে দেয় চারপাশে।

• ধার্মিক ভাগ্যে বিশ্বাস রাখে, স্রষ্টার উপর আস্থা রাখে। তবে তাই বলে চলন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড়ায় না। অসুখ ছড়ানোর শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও জনসমাগম করে না। ধর্মান্ধ অতিভাগ্যবাদী। কর্মের দিকে তাই তার মনোযোগ যায় না। সে চলন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড়াতে পিছপা হয় না। অসুখ ছড়ানোর শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও মুমিনের করোনা হয় না বলে জনসমাগম করে।

ধার্মিক আর ধর্মান্ধের এই পার্থক্য বুঝতে আলেম হওয়া লাগে না। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে যে সাধারণ মানুষগুলো ওয়াকিবহাল তারাও এসব বুঝতে পারবে যদি মগজটাকে একটু খাটায়।

ধর্ম কখনো সন্ত্রাস হতে পারেনা যদি ধর্মান্ধতা না থাকে। প্রকৃত ধর্মশিক্ষা থেকে মানুষ বঞ্চিত। যখন প্রযুক্তি ছিল না তখন ধর্ম কেন্দ্রিক মানুষের শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল। কিছুটা বোধহীন সমাজচালকরা হলেও কিছু নিয়মে এসেছিল সমাজের অধিবাসীরা। অনেক বিজ্ঞানী, দার্শনিক জন্মেছেন সমসাময়িক ঐতিহাসিক বিষয়ের সঙ্গে। কোথাও সমাজ ব্যাবস্থা বদলেছে শিক্ষার উন্নয়ন ঘটে। সেটা খুব বেশি দিন আগে নয়। ধর্মের একটি সংজ্ঞায় আসতে পারি আমরা –

ধর্ম (বাংলা উচ্চারণ: [dʱɔɾmo] ধর্‌মো) হলো নির্দিষ্ট আচরণ ও অনুশীলন, নৈতিকতা, বিশ্বাস, বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি, গ্রন্থ, পবিত্র স্থান, ভবিষ্যদ্বাণী, ধর্মে নীতিশাস্ত্র বা সংস্থার একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা, যা মানবতাকে অতিপ্রাকৃত, অতীন্দ্রিয় এবং আধ্যাত্মিকতা উপাদানগুলোর সাথে সম্পর্কিত করে কিন্তু, কোনো অবিকল একটি ধর্ম গঠন করে তা নিয়ে কোনো পণ্ডিতের ঐকমত্য নেই।

আর্শিনা ফেরদৌস। কবি। জন্ম বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলা শহরে। বর্তমান নিবাস ঢাকা। প্রকাশিত বই: 'কাঠগোলাপের গাছে মেঘ নেমেছিলো' (২০২০)

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ