ফিরে এসো
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
পরিচয়টা ফোনে, ক্রসকানেকসনের মাধ্যমে। বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। বৃষ্টি হলেই রিমি বারান্দা অথবা জানালার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে থাকে। একটা নষ্টালজিয়া তাকে ছুঁয়ে যায়। মনে পরে ছোট বেলার দিনগুলি সাথীদের নিয়ে কী আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজতো। কখনও কোন ভেজা শালিকের এককোনে পরে থাকার দৃশ্য তাকে আপ্লুত করে দিতো। সন্ধ্যায় ডুবে যাওয়া সূর্যটা কি এক বিষন্নতা নিয়ে ফিরে যায় আহা ছেলে বেলা আরকি ফিরে পাবে? সাথীরাও আজ কে কোথায় যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। ভাবতে ভাবতে মোবাইলটা বেজে ওঠে। হ্যালো বলতেই ওপাড় থেকে অপরিচিত কন্ঠ। একটা ডিজিটের ভুলের কারনে প্রায় এমন হয়। রং নং বলে কেটে দিতেই আবারও বেজে ওঠে ফোন। ওপার থেকে সরি বলার পরই রিমি বলে না না ঠিক আছে দু একটা কথা বলার পর ফোনটা কেটে দেয়।
শ্রাবণ মাস বৃষ্টির আসাও যেন নিয়ম হয়ে গেছে।
পরদিন একই সময়ে আবার সে ফোন। অপরিচিত নং আর কে মনে রাখে। হ্যালো বলতেই আবার সেই একই উচ্চারণ সরি।
না না ঠিক আছে কিছু বলবেন?
কিছুটা কিউরিসিটি রিমির। ওপার থেকে আসা অপরিচিত কন্ঠটা বেশ। রিমি কিছুটা আগ্রহ দেখায় কথা বলার জন্য।
: আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি?
: কেন নয় আমার নাম সাগর।
শব্দ করে হেসে ওঠে রিমি আমার নাম নদী।
: বেশ নামতো আপনার নদীর মোহনা কিন্তু সাগরে জানেন?
: মোহনায় গেলেই নদীর মরন তাইতো! এবার দুপাশের হাসি মিলে যায় এক সাথে।
: আসলে আমি ফান করেছি আমার নাম রিমি।
: তাই বলেন।
কয়েক দিন একনাগারে বৃষ্টি বেড়েই যাচ্ছে থামার কোন লক্ষন নেই। আর রিমিও অপেক্ষা করে। ফোনের যেন এক সন্মোহিত শক্তি তাকে টানছে। বেশ কিছুদিন কথা হয় দুজনের কেউ কাউকে তেমন চেনেনা, তবু অপার মুগ্ধতায় গ্রাস হয় দুজনে। আপনি থেকে তুমিতে নেমে আাসে।
: এই শোন বৃষ্টিতে ভিজবে?
: ভিজবো মানে আমার এখানেতো বৃষ্টি হচ্ছে না।
: ধুর তুমিনা খুব বেরসিক ভিজবো বললে কি সমস্যা হয়?
আমার এখানে হচ্ছে।হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছোঁয় রিমি।
: এইযে তোমাকে ভিজিয়ে দিলাম।
: করছো কি আমার জ্বর আসবে।
:আসুক আমি চাই তোমার জ্বর আসুক, খুব ভীতু তুমি।
: তাই বুঝি?
: হুমম
: ওকে মেনে নিলাম। এতো সাহস দেখাতে চাইনা বাবা, তাহলে মরেই যাবো।
: একি কথা?
আচ্ছা শোন একদিন বৃষ্টিতে আমার হাত ধরে তুমি ভিজবে?
: ভিজবো সময় হোক।
আচ্ছা শোন আমাদের ফোনেই কথা হয় এখন ফেসবুকের যুগ তোমার আইডির নাম বলো। সাগর নাম বলতেই রিমি সার্চ দিয়ে দেখে তারা তারা অনেক আগে থেকেই ফ্রেন্ড।
দুজনের কতো কথা, হারিয়ে যায় তারা জনারণ্য থেকে অন্য এক পৃথিবীতে। কখনও পাখি হয়ে ওড়ে। পুরো আকাশ যেন তাদের দখলে।
একদিন কথা প্রসংগে রিমি জানায় তার ভীষন রাগ আর অভিমানও অনেক, তুমি খুব শান্ত তাইনা?
স্বভাব সুলভ দৃঢ় কন্ঠে সাগর জানায় সে শান্ত ঠিকই তবে রেগে গেলে ঝড়ের মতো সংক্ষুব্ধ।
: তোমাকে তেমন মনেই হয়না।
: ঠিক আছে আজ রাখো হাতের কাজগুলো সেরে নেই পরে আবার কথা হবে।
এভাবেই চলছিলো, সময় তার নিজের নিয়মে বয়ে যাচ্ছিলো।
হঠাৎ কোন এক প্রসংগে কথা কাটাকাটিতে রিমি প্রচন্ড রেগে গিয়ে কথা বন্ধ করে দেয়। তবু আশায় থাকে সাগর তার মান ভাঙাবে। অভিমান তার ভারী হয়ে আসে। অতঃপর অভিমানের পালা শেষ করতে সাগর মান ভাঙায়।না দেখা দুজন মানুষের ভালোলাগা ভালোবাসা গভীর থেকে গভীর হয়।
একদিন কথা প্রসংগে রিমি জানায় বাবা মা তার জন্য ছেলে দেখছে। রিমি দেখা করতে চায় সাগরের সাথে। নির্দিষ্ট একটি দিনে তাদের দেখা হয়। কথা হয় কিন্তু বিয়ের বিষয়টি সাগর এড়িয়ে যায়। তার পক্ষে এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়, সংসারে তার অনেক দায়িত্ব বাবা মা ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে কিছুই করবে না।
: আমি তোমার সাথে এক হয়ে দায়িত্ব ভাগ করে নেবো তুমি একটিবার আমার বাবা মায়ের সংগে কথা বলো।
: বিয়ের আগে অনেক মেয়েই এমন কথা বলে কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন রিমি, তুমি এত মানুষের মধ্য নিজেকে এডজাষ্ট করতে পারবে না।
: আমি পারবো তুমি আমাকে তোমার পাশে রাখো।
: এই মুহুর্তে আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তুমি এতোদিন অপেক্ষা করতে পারবে না আর আমার পক্ষেও এখন কিছু করা সম্ভব নয়।
: তাহলে তুমিকি এতোদিন আমার সাথে অভিনয় করে গেলে?
: ছিঃ এ কি বলছো তুমি। অভিনয় আমি জানিনা। শুধু আমার ব্যার্থতাটুকু বললাম। তোমার সব অভিযোগ নিয়ে আমি ফিরে যাচ্ছি। তোমাকে অপেক্ষা করতেও আমি বলবোনা সে দুঃসাহস আমার নেই। আমি অপরাগ আমায় ক্ষমা করে দিও।
বুক ভাঙা নিরব আর্তনাদ বয়ে রিমি ফিরে আসে তাদের কল্পিত স্বপ্নের পৃথিবী থেকে।
সাগরও এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। তার ভালোবাসা হারানোর কষ্ট কাকে বলবে? সে যে বাস্তবতার বেড়িতে বন্দি।
রিমি বাবা মার ইচ্ছের কাছে নিজেকে সমর্পন করে। বিয়ে করে চলে যায় অন্য সংসারে। সেখানে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করে।এ ছাড়া তার কি করার আছে? যার সাথে বিয়ে হয়েছে তাকে কষ্ট দেবার অধিকার নেই। সেতো নির্দোষ। তবে গোপন রাখে তার ফেলে আসা অতীত।
আজো শ্রাবণের বৃষ্টিতে সে ভিজতে চায় মনে পরে সাগরের মুখ খানি। তার হাত ধরে ভেজার ছিল সাধ। এ সাধ কোনদিন পূরণ হবার নয়। সেই মুখটি মনে পরতেই পৃথিবীর সব আবেগ এসে ভর করে হৃদয়ে।স্বভাব সুলভ ভাবে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ছুঁয়ে যায়। তার চোখেও বৃষ্টির অঝোরধারা। যা আটকে রাখার সাধ্য নেই।
একদিন দুজনের এক সাথে ভেজার কথা ছিলো। আজ সে প্রতিশ্রুতি কল্পনায় এক ধূসর রঙের ছবি হয়ে ধরা দেয়।।
আমার বাবা ছিলেন অত্যন্ত সাহসী একজন লড়াকু মনের মানুষ।শত অভাব অভিযোগেও তাকে কোনোদিন ভেঙ্গে…..
ভার্সিটির বাস ধরতে হয় আমাকে খুব সকালে। বাড়ি থেকে একটু হেঁটেই রিকসা। তারপর বাস। হাঁটা…..
আজকের সন্ধ্যাটা থমকে যাওয়া মেঘেদের। ঝিরিঝির বৃষ্টি ছিল দিনভর। ঢাকা শহরের পথঘাট জল কাদায় মাখামাখি।…..
জোছনা করেছে আড়ি আসে না আমার বাড়ি গলি দিয়ে চলে যায়, গলি দিয়ে চলে যায়…..