আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
আমাকে কথার বিষে, কত লোক ধরাশায়ী করে;
কতদিন আগের দেয়াল, মোছে নাম, নরোম রাবারে!
এতো ওড়ে হাওড়-কুয়াশা, এতো ধূলা, স্মৃতির কবজ;
এতো হ্রেষা, থেমে থেমে মেঘ, কাছে ডাকে পানের বরজ!
তোমাকে কোথায় খুঁজি, পেয়ে গেছি কোথাও আবার!
ভীড় থেকে দূরের ভিটায়, গান বাঁধে সোলার প্যানেল;
তুমি এক মিথের চাবুক, আমি এক ধূসর গাধার
ছানি পড়া দু-চোখ আবার, ধরণীতে হয়েছি নাজেল!
তোমার অসুখে আমি ইনসমনিক;
হেরার ভিতর যেমন অন্ধকার, বাতাসের বুলবুলে
জলের প্রকম্পন, আমাদের জোড়া দেয়া রুহু
কত না আহত জীনে, যেভাবে ছুতার দেখে
নকশার ক্ষয়-
যেন-বা পরাহত সুরের দ্বিতল, প্রখর রোদ্রে এসে
আনন্দকে বলে বলে দেয়, প্রশ্নোত্তর।
তোমার অসুখে আমি
ঘামতে থাকি, নিরাপদ পারাপারে ফুলে ওঠে নদীও নিচে!
আর তুমি কতখানি জানো?
সুতার গায়ে গায়ে কাঁচের টুকরা ফেলে
হৃদয়ের সমস্ত রঙ, কি ভেবে আজ তার
ঘুড়িটা ওড়ালো বলো!
আর ক’টা দিন
হেমন্ত বরাবর মেনে নিবো সব হাওয়া!
সহযাত্রীর কটাক্ষ উপচানো হাসি, মেনে নিবো আর ক’টা দিন।
তারপরে ধানের চিটা, খড়ের বিচালি গায়ে
যেনোতেনো মাখামাখি হয়ে, থেকে যাবো আমি
গাঁও গেরামে, যেখানে ক্ষুধাও কবিতা-কথা
ঘাম ঝরে প্রসন্ন হয় কৃষাণের তামাটে শরীর!
আমাদের সময় নগন্য, মিথ্যাও প্রসাধনী আজ;
যার বুকে গানের তাড়না থাকে, তার দিকে অজস্র তির
ছুটে যায় সমাজ-ধারণা হতে!
মানুষের স্মৃতির কাছে এসে, ইতিহাস খুলে দেয় গৌরব-গাঁথা
রাজদন্ডের গ্লানি, দিকে দিকে ধসে যায় পাথরের গম্বুজ, প্রাচীন ক্যাথিড্রাল-
সময় যেন সেই বৃদ্ধ গ্যালিলিও
গৃহবন্দিত্বের, দুপুরবেলায়, যার দরজায় থামে পদাতিক সৈন্য;
গুপ্তহত্যার আগে, বুক ধড়ফড়, দ্রুতগামী হয় পৃথিবীর৷
এত এতসব আঁতকে ওঠার ভিতর
মানুষের ফিসফিসানিটুকুও লটকে থাকছে গাছে, ফুলেল কার্পাসে৷
বিভীষিকা তবে এক জ্বর, হাম-নিঃশ্বাস ফুলে ফুলে ওঠে
শিশুদের ফুসফুসে, কোনো দেয়ালের কর্নারে-কোণে পাথরকুচির মতো
সংকীর্ণ জন্মের মধ্য দিয়ে উঁকি দিয়ে আছে যে অন্ধকার, তারই নাম মানবতা নাকি?
এতসব ক্ষণজন্মের গাঁথা, কোনো হিমবাহ থেকে এসে
যেনো পরিচিত গান, তর্জনী-বান!
আর, গান থেকে বেলিফুল, অচেনা শালিক এসে
ঘ্রাণ নেয় খুদ ভেবে;
আমাদের সাক্ষাৎগুলি, বাদল-দুপুরে
কোনো গাছতলা পেয়ে আশ্রয় নেবার মতো
রোমান্স-প্রবণ, এই দেখা কতকাল পর!
বরফ-বন্ধনী হতে এসে, পৃথিবীতে উড়িয়েছি ধুলা
পথে যেতে যেতে রণতরী-ডুবি, আর, হাত ধরে ধরে থামিয়ে রেখেছি
বন্দুকযুদ্ধের রাত;
বাঁ-দিকে শ্রমিক, না খেতে পাওয়া শিশুর শোকে কাঁদে;
ডানে, বিষন্ন পয়সার গায়, মালিকের লাল বুট উঠে
পিষে মারে গরীবি হালত!
চানখারপুল শেষে দেখি
সাইজ করে, কসাইয়েরা, গোস্ত কাটে;
মজুরের রানের ঘায়ে কষঝরা পেয়ে, বসে আছে মাছি!
এই ভীরুতার নাম জন্ম-জরুল, কখনো যেমন নিথরতা একা!
চোখ বড় বড় করে চেয়ে দেখে আমাকে, বিষ-দাঁতঅলা সমাজ-ব্যাবস্থাও!
যুগ-পঙ্কের দিকে ফিরে দেখি অতিমানুষের ভীড়
ঘাড় ছিড়ে ধড়ের উপর, পশুমুখ বসিয়ে দেবার কাল, কেউ কেউ টের পায় বুকে!
সিনা টান করো শ্যাম-
ডাহা রোদ পেয়ে ঝরে নাকি ফুলে
ফড়িঙের ঘাম, নাকি অর্ধবৃত্ত এঁকে
পুরো খাতাটাই ফের, ফাকা রেখে গেছো তুমি?
এইটারে জীবন ডাকো? হাপিত্যেশ?
মনটারে যদি সুতায় ঝোলানো যেতো
আর, যদি, রাধিকার কাঁধে, ভর দিয়ে যেতো
দুই কূল নিয়া, করতোয়া-গাঙ;
তারপর মনসার রোল, কই যেতে শ্যাম?
সিনা টান করো, সামনে তাকিয়ে দেখো
চৌচির মাঠের খড়ে, একা পড়ে আছে
চাষাদের সাধের হুকা। চারদিকে মিল-কারখানা;
যারা কয় শিল্পের তেজ, ইন্ডাস্ট্রিজ, জানে নাকি তারা
সুরেলা তোমার সিঁথিও?
সুর ধরো শ্যাম, জের-জবরে;
হাতে রাখো শুধু, পিতার হাসির স্মৃতি;
যেনো কোনোক্রমে, মেগা সিটি থেকে
ভিড় ঠেলে ঠুলে বাসে উঠছেন মা;
সুর সাধো শ্যাম, অবনত হও-
মাখরাজে-লামে, আলিফ-আয়াতে;
নদীবুকে বাড়ে কেনোই বা, ঢেউয়ের আকার?
পুকুরে যেভাবে ঢিল ছুঁড়ে দিলে
ব্যাঙ লাফ-দেওয়া-দৃশ্য রচিত হয়
চারদিকে চাকচিক্য, সবেমাত্র;
এমন শহরে তুমি জন্মেছো নাকি?
এইদেশে নাকি পালিয়ে যাবার
সোজা পথটার নাম আকাশ;
কারো বিক্রম ডাটে, কারো বিভ্রমে কাটে
পলাতক মন, লোক-সমাজের ধারালো ছুরিতে!
সিনা টান করো শ্যাম- দুপুরটাকেও, ছেড়ে চলে গেছে ট্রেন
হুইসেল শুনে শুনে, যে উদ্বাস্তু
মায়ের শিশুটি জাগে, দেখো তার দিকে চেয়ে, মহাবিশ্বের ফনা
তাক করে আছে সূর্য-সরোদ, শোনো কোনো সুর?
স্ত্রীকে, দিয়ে দাও ত্বকে, মাপা ইনসুলিন; কন্যাও দেখো আজ
তোমার অপেক্ষায়, জেগে আছে, ছিলো; এতসব অনিয়ম, ভবিতব্য?
চুপচাপ বসে, এখনো যে তুমি
নিজেই নিজেকে ডেকে, প্রশ্ন করছো একা;
এই ঘন-কালো বিজলীপ্রহর
একলা তোমাকে পেয়ে, খুটি গাড়ে, মগজভিটায়;
এর ধারে খুপরি-দোকান তুলে, বসে আছে এক তৃতীয় শ্রেণীর লোক
বিবাদ লাগে না? আত্মপরিচয়ে বলো, দ্বন্দ্ব বাধে না?
তুমি, নিজেই নিজেরে কতো, সামাজিক বলো?
চেনো কতোখানি ধুলি, ঢালু রাস্তার?
নেমে আসতেছে নীচে, গড়িয়ে পাথর;
আর, মেঘবর্ণে ছেয়ে, সিসিফাস ছোঁটে
পিছন পিছন সে’ও, ঘেমে একসা!
(কবি অমিত রেজা চৌধুরী-কে উৎসর্গ)
তিথি জুড়ে নকশাকাটা তারা-
যেনো আকাশ, তাম্রলিপির খাতা;
লিখে দিলাম অর্ধ-সকাল তোমায়
লিখে দিলাম গোলাপবর্ণ গান!
আজকে হাতের ইকোনমি সবুজ-
খাঁজ কাটা আর সপ বিছানো মেঝে;
তোমার ভিতর ঊর্ধ্বগামী ত্রিভুজ
তীর্থ-পলে, পড়ছি তোমার লেখা!
হাত এঁকেছি, হাতের মুঠোয় তোড়া;
ফুল এঁকেছি, ফুলের নামটি গাঁদা;
মৃত্যু কেমন, ছুটছে, তাহার তাড়া?
পাঁজর কি আজ শিশিরচোয়া, ধাঁধাঁ!
আমি জানতাম না চব্বিশের জুলাইটা এত দীর্ঘ হবে, আমি জানতাম না, অগাস্টকেও রাহুর মত গ্রাস…..
অভিশাপ মেঘের ভেলায় নিঃশ্বাসে ক্লান্তির ছাপ সবুজের নীড়ে আপন ঠিকানার খোঁজ এক ফালি সুখের নেশায়…..
পাখি দম্পতি পাখি গিয়েছিল কতদূর বনে তা কারো নেই জানা। ঠোঁটে ধরা লাল টুকটুকে ফল…..
তারা যেমন বলে, চোখে ধুলো দিলে থেমে যাবে আমার কাব্যময়তা অথচ আমি প্রামান্য দলিলের নই…..