নতুন গল্প

স্বাতী মুখার্জী 
অণুগল্প
Bengali
নতুন গল্প

আপনি ওকে যা ভাববেন ও তাই- ই হবে। ‌আপনি যদি ভাবেন ও পড়াশুনায় ভালো হবে, তাহলে ভালোই হবে। যদি ভাবেন খারাপ তাহলে খারাপ। আপনার ওপর ডিপেন্ড করছে ও কি হবে ভবিষ্যতে।“ মনোবিদ শুধু এইটুকু কথাই বলেছিলেন মন্দিরাকে।

মন্দিরার ছেলে সায়ন। ক্লাস নাইনে ওঠার পর থেকেই বিগড়ে গেল। পড়াশুনো করে না। চুলের কায়দা। সাইকেল নিয়ে চক্কর দেওয়া। লুকিয়ে সিগারেট । প্রথম প্রথম চেঁচামেচি অশান্তি করতো মন্দিরা, তারপর চোখের জলও । “তোর বাবা নেই । অনেক কষ্ট করে মানুষ করছি, শেষে এই? এত্ত অধঃপতন? নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে জীবনের হাল ধরা দূরে থাক, তুই তো বাবার করে দেওয়া এই বাড়িটাও রাখতে পারবি না! পথে বসব নাকি আমরা?”

চোয়াল শক্ত করে সায়ন ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো, “ বাবার করা বাড়িতে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই। আমি চোর হই, কি ভদ্রলোক, দ্যাট নান অফ ইওর বিজনেস। “

এত ঝাঁজ ঝাঁজ কথা কবে বলতে লিখলো সেদিনের বুদ্ধিমান ছোট্ট ছেলেটা?
কি করে যে এমন হয়ে গেল।

নিজের দিদির পরামর্শেই শহরের বিখ্যাত এক মনোবিদের সাথে দেখা করল মন্দিরা। একটাই সিটিং। মা আর ছেলে কে আলাদা ভাবে কথা বললেন তিনি। তারপর মন্দিরাকে আলাদা করে ডেকে, ওই কথা বলে দিলেন, যে, মন্দিরা ওকে যেমন দেখতে চায় ও তেমনি তৈরি হবে। শুধু মন্দিরা কে বিশ্বাস করতে হবে এই কথাটা, যে, মন্দিরা এমন ব্যবহার করবে ওর সাথে যেন ও সেই ভালো ব্যবহারটাই ডিজার্ভ করে।বলেছিলেন, “এক মাসের মধ্যে ম্যাজিকের মত পরিবর্তন দেখবেন। শুধু কোনোভাবেই মাথা গরম করবেন না ।“ মন্দিরা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল পকেটে সিগারেট দেখলে কিছু বলবো না? উনি হেসে বলেছিলেন, “আপনি কি বলবেন আমি বলে দেবো না, আমি শুধু আপনাকে এটাই বলে দিলাম ও খুব ভালো এটা ধরে নিয়ে আপনি ওর সাথে ব্যবহার করবেন।“

প্রথমে মন্দিরার মনে হয়েছিল পয়সাটা জলেই গেল। তারপর একটু ভেবে দেখল, চেষ্টা করে দেখা যাক ।

পরের দিন মন্দিরার কাজ গুলো ঠিক এরকম হলো । সায়ন বেলা পর্যন্ত বিছানায় পড়ে আছে মন্দিরা ঘরে ঢুকে কোন চেঁচামেচি করলো না জানলাটা খুলে দিয়ে মশারি টা ভাঁজ করতে করতে বলল বাবাই উঠে পড়। কি রে বাবাই? কত বেলা হয়ে গেছে। শোন না! আমাকে একা বসে চা খেতে হয়। বাবাই শুনছিস? তুই উঠে গেলে বেশ ফ্রেশ লাগে পরিবেশ টা।“ বাবাই মানে সায়ন শুধু পাশ ফিরে শুলো। “ উঠছি । এখন তুমি যাও।“

মন্দিরা নিজেই অবাক হয়ে গেল নিজের ধৈর্য্য দেখে। তাহলে বকাবকি না করেও ভালোভাবে ছেলেকে ঘুম থেকে ডেকে দেওয়া যায়। কিছু আর না বলে চলে এলো। সায়ন উঠে এলো ঠিক আধ ঘন্টা পরে। আর আশ্চর্যজনক ভাবে আজ ব্রেকফাস্ট নিয়ে কোনো এটা না কেন, ওটা কেন করল না। উল্টে বলল, এখন দুকাপ চা করো, আমার সাথে চা খাবে বলছিলে।“

রান্নাঘরে চায়ের জল বসিয়ে মন্দিরা একটু উদাস হয়ে গেল। সত্যিই নিজেদের সন্তানকে নিজেরা কত চিনি। ভাবছিলো। অন্যদিন ঘুম থেকে ডাকার সময় মন্দিরা বলতো, “এখনো উঠিস নি? আর কতটুকুই বা পড়বি সকালে? বেলা তো শেষ হতে চলল, কি হবে তোর , কিচ্ছু হবে না।“সায়ন চেঁচাতো “কি হবে না হবে আমার তোমাকে ভাবতে হবে না।“ সেই দিন গুলোতে মন্দিরার গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করত, “ কে ভাববে তাহলে? বই খাতা স্কুলের ফিজ কে যোগায় ?” মুখে মুখে কথা। শান্তি চৌপাট। পাঁচ কথা শুনিয়ে জলখাবার খেতো। অর্দ্ধেক ফেলে দিতো। রাগে মন্দিরার চোখে জল চলে আসতো।

আজকের ছবি পুরো আলাদা। সায়ন বেশি কথা বলল না, চুপচাপ চা খাবার খেলো মায়ের পাশে বসে। তারপর অতি আশ্চর্য বিষয় গান না চালিয়েই পড়তে বসলো।

রান্নাঘরের সামনের উঠোনের দরজায় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মন্দিরা। আজ সবজিওয়ালা আসবে। বেশ কিছু আনাজপত্র নিতে হবে। এই একমাস ছুটিতে বাবাই কি পারবে পিছিয়ে পড়া বিষয় গুলো মেকআপ করতে? মনোবিদের সেই কথাটা মনে পড়ল, “ওর সেটাই হবে যেটা আপনি ওকে ভাববেন। ও অলরেডি খুব ভালো সেই ভেবে আপনি ওর সাথে ব্যবহার করতে শুরু করুন, ম্যাজিকের মতো পরিবর্তন দেখবেন।‘ আজকের সকালটা শান্ত‌। সায়ন‌ মন দিয়ে পড়ছে। তাহলে কি এতদিন মন্দিরাই ভুল ছিলো? অতিরিক্ত এক্সপেকটেশান থেকে , কম্পিটিশানে পিছিয়ে পড়ার ভয় থেকে, ক্রমাগত সায়নকে তোর কোনো বোধবুদ্ধি নেই, তুই পিছিয়ে যাবি,,,,,এই কথা গুলোই ভুল ছিলো? এই প্রথম মন্দিরা নিজেকে বলল, “আচরণটা খুব বুঝে ভেবে চিন্তে করা উচিত।“ এই প্রথম মন্দিরা বুঝতে পারলো ওর আদরের বাবাইকে তৈরি করার আগে নিজেকে তৈরি করতে হবে।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ

দৌড়

দৌড়

একবার এক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার হয়ে দৌড়চ্ছিলেন আবেল মুতাই। খুবই ভালো দৌড়াচ্ছিলেন তিনি। সবাইকে পেছনে…..