স্মৃতিগদ্য : গালিভার ফিভার
নবম শ্রেণীতে জোনাথন সুইফটের গালিভারস ট্রাভেলস চিন্তাজগতটাকে পালটে দিয়েছিলো। ছোটবেলায় রঙ্গিন ছবি-অলা গালিভারস ট্রাভেলস-এর শিশুতোষ…..
চাঁদটা ভীষণ গোঁয়ার। কখনও বদরাগী মেয়ের মতো ধারালো কাস্তে। গায়ে জ্যোৎস্নার ছিটেফোঁটাও নেই। কেমন ডাইনি ডাইনি চোখ করে আকাশের গায়ে লেপ্টে আছে। উপরে তাকালেই সারা অনুভূতি জুড়ে খামচানি শুরু হয়। গঞ্জের বাজার থেকে আমার পিছু নিয়েছে, দয়ারামপুরের কালির থান পেরোলেও ছাড়ান নেই। সঙ্গ ছাড়ছেই না। আছে তো আছেই। চিনে জোঁকের মতো। যদিওবা একটু আড়াল হই তার কামড়ের দাগ থেকে টপ টপ রক্ত ঝরেই চলেছে। যত বলিপূর্ণ গোলাকার না হয়ে আমার পিছু নিওনা। তাহলেই সারাবছর পাকা ধানের গন্ধ টের পাই ভরা শ্রাবণেও।
তার গা থেকে কাঁচা সোনার জ্যোৎস্নাগন্ধ আমার সদ্য পরা টেরিলিনের জামা থেকে ঝরে পড়বে যেন। জামার চার পকেটে অনন্ত কাশ ফুলের দোলায় চাঁদটা যেন পরকিয়া প্রেমিকা। অনাবিল। এক পকেটে নিটোল মার্বেল কয়েকখানা, এক পকেটে বোম্বাই লাট্টু, এক পকেটে কুড়িয়ে পাওয়া পাশার ঘুঁটি। আর এক পকেট খালি রাখা। কখন কী রাখতে দরকার হয়। আমার নতুন প্যান্টের পকেটে ঠিকমতো সেলাই জমেনি।
ইতোমধ্যে পার্বনীর খুচরো পাঁচ পয়সা পড়েও গেছে। তা কি চাঁদের যড়যন্ত্র কীনা কে জানে। পঞ্চুকে জিজ্ঞেস করি তুই কোন পয়সা কুড়িয়ে পেয়েছিস। একটা এক পয়সা আর দুটো দু’পয়সা। সব সেলাইহীন পথে আমার থেকে মুক্তি লাভ করেছে। তবু যদি এই শারদ সন্ধ্যায় ডাইনিটার থেকে নিস্কৃতি পাওয়া যেতো। সুবিধা পেয়ে পঞ্চু বলে- ও পয়সাগুলো যে তোর তার কী প্রমাণ আছে! চাঁদকে বলি তোমার ওই সৎমা উৎপাদিত ম্যাড়ম্যাড়ে জ্যোৎস্না আর পাঠিওনা।
মুখপুড়ি। এই পূজোর বাজারে আমাকে ভিখিরি বানিয়ে ছাড়লে। সবাই ফুলুরি খাবে আর আমি দূর থেকে ভেরেণ্ডা গাছের হাওয়া খাবো। তখন এক পয়সায় ১০টা ফুলুরি। জয়দেবের বিখ্যাত ফুলুরি। কী স্বাদ আর কী বড়কা বড়কা! আমাকে কে আর ভাগ দেবে। সব কাস্তে মার্কা চাঁদের দোষ। এত লুকোচুরি খেলার বাই যে আমাকে না ভেড়ালে যেন তার অন্নপ্রাশনের ভাত হজম না।জানালা গলে কুটনি মন্থরার মত তীক্ষ্ণ ফলায় ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে। লক্ষ্য শুধু আমি। আজ পঞ্চমীর রাত। কাকার হারকিউলিক্স সাইকেলের পেছনের ক্যারিয়ারে পা দোলাতে দোলাতে বাড়ি ফিরছি। দুই পাশে ধল-ধলে ধানক্ষেত। ভরা আশ্বিনের মাঠে অল্প জল। ধানবাদায় শোল ল্যাঠার ঘাইয়ের ভেতর জ্যোৎস্না আমাকে নিয়ে অনভিপ্রেত মধুচন্দ্রিমায় যেন ঢুকে পড়বে।
গর্ভবতী ধানের চিকন পাতা থেকে পিছলে যাচ্ছে অল্প রাতের হিম। আর আমি পিছলে যেতে চাইছি মায়া জ্যোৎস্নার হাত ছাড়িয়ে প্রসারিত সবুজ নক্ষত্রে। দূর থেকে ভেসে আসছে আগমনির গান। জন্ম গাঁ’র যত কাছে আসছি চাঁদটা যেন আরোআমার নেওটা হয়ে উঠছে। আমি না তাকানোর ভান করে ‘নিঝুম সন্ধ্যায়…’ গানের ভেতর ডুবতে চেয়ে সাইকেলের ক্যারিয়ারটাকে আরও জাপ্টে ধরি। সারা সবুজ প্রান্তর। এয়োতির মত সবুজ। ঠেস বুননে সান্ধ্য প্রকৃতি নিজেই মাতোয়ারা। ফিচেল জ্যোৎস্না যেন তার সারা অঙ্গে ডাইনি পোচ লেপে দিচ্ছে। ও পেঁজা মেঘ তোমাদের আমি এক সাপুড়ে চটের বস্তা দেবো। ওই পাজিটাকে তার ভেতরে পুরে হিমালয়ের ওপারে ছেড়ে দিয়ে এসো।
গ্রামে ঢোকার আগে কৃষ্ণনগরের মোড়। শান বাঁধানো অশ্বখ গাছ। চাঁদটা তার সব গলানো প্রতিভা যেন আধভুতুড়ে অশ্বথ পাতায় ছড়িয়ে দিয়েছে। কোন পাতা আর দেখছিনা।
ডাইনিদের চুল যেন জ্যোৎস্নার মত। অলৌকিক খাঁদা নাকে নথ দুলিয়ে দুলিয়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি মাথা হেঁট করে হারকিউলিক্সের হ্যান্ডেলকে শক্ত করে ধরে থাকি। একটা ইটের গাড়ির পাস দিতে সাইকেলটা যেন হ্যাঁচ্চো বলে ঝাঁকুনি দিয়ে ওঠে। কাকার সাইকেল থেমে গেছে। পাশে বাবলা গাছ। পাছে কাঁটা গাছে হুমড়ি খাই তাই নামতে হলো। কিন্তু হাতটা সাইকেলটাকে শক্ত করে ধরে আছে। হাত ছাড়লেই আমাকে জ্যোৎস্না যেন জাদুমন্ত্রে সবার থেকে আলাদা করবে। উঃ পুরানো চটি ফুড়ে এই সুযোগে একটা কাঁটা আক্রমণ শানালো পায়ের পাতায়। আমি ল্যাংচাতে থাকি আধলা ইটের রাস্তায়।
ইটের এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় চাঁদটা ফিচেল জ্যোৎস্না কুঁচি যেন ছড়িয়ে রেখেছে। কোথায় পা রাখবো। বুঝতে বুঝতে সাতান্ন পার।
নবম শ্রেণীতে জোনাথন সুইফটের গালিভারস ট্রাভেলস চিন্তাজগতটাকে পালটে দিয়েছিলো। ছোটবেলায় রঙ্গিন ছবি-অলা গালিভারস ট্রাভেলস-এর শিশুতোষ…..
সিনেমা নিয়ে কারা লিখেন; যারা সিনেমা বানান, সিনেমা নিয়ে গবেষণা করেন, সিনেমায় অভিনয় করেন, সিনেমার…..
দুষ্ট লোকে বলে মাছ নাকি একটা হাবাগোবা প্রাণী। তার নাকি কিছুই মনে থাকে না। সেকেন্ডের…..
তিনতলা লাল ইটের দালান আমার শৈশব কৈশোরের স্কুলটার একটা বর্ণনা দেওয়া যাক। অবশ্যই প্রাসঙ্গিক। একটা…..