প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
শীলা ও কুহেলিকার সাথে মধুরিমার বছর কয়েকের পরিচয়। ২০২৭ সালে একবার কোন এক দেশের রাজধানী শহরে একটা সেমিনারে দেখা হয় ওদের সাথে। কথাবার্তা বলে তাদের পারষ্পরিক ভাল লাগা তৈরি হয়। তারপর নানারকম সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে চিন্তাভাবনার আদান প্রদানে সেটা আরো মজবুত হয়েছে। ফেসবুক টুইটারে মধুরিমার শেয়ার করা অদ্ভুত সব ছবি ও তথ্য দেখে ওদের কৌতুহলের অন্ত নেই। সেইসব কৌতুহল মেটাতে আজ এই ২০৩০ সালে এসে ওদের এ রাজ্যে আগমন।
হোটেলেই থাকতে চেয়েছিল ওরা। কিন্তু মধুরিমা জোর করে নিজের বাসায় নিয়ে এল। বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে ওরা প্রথমে চা পান করলো। চা পান করতে করতে তারা নানাবিষয়ে কথা বলছিলো- সাহিত্য সংস্কৃতি রাজনীতি ও বিনোদন নিয়ে। কিন্তু মধুরিমার সাথে ওদের মিলছিল না। বিশ্বায়নের সুবাদে এখন সারা পৃথিবীর সংস্কৃতি অনেকটাই মিল। সেখানে এই ছোট্ট রাজ্য বেশ ভিন্ন, যা অন্য রাজ্যের মানুষের সাথে কথা বললে তারা সেটা টের পায়, কুহেলিরাও বুঝতে পারছিল।
যাই হোক খাবার তৈরি হলে বাবুর্চি তাদের খাবার টেবিলে ডাকে। খেতে খেতেও কথা চলছিল। মধুরিমার গৃহকর্মের সহকারী হিসেবে নিয়োজিত লোকটি-যে তখন খাবার পরিবেশন করছিল, সে সবসময় একটু বেশী মাত্রায় লাজুক থাকে। শত চেষ্টা করেও সে ওর লজ্জা কমাতে পারছিল না। ও খাবার পরিবেশন করে পাশের রুমে দাঁড়িয়ে পর্দার ফাঁকে উঁকি দিয়ে ওদের দেখছিল। কুহেলি সেটা লক্ষ করে হেসে ফেলে। লোকটি লজ্জা পেয়ে সরে যায়।
আসলে শুরু থেকেই কুহেলি বেশ কৌতুহলী। শীলার চেয়ে বয়সে বেশ ছোট বলে ওর তুলনায় একটু বেশিই ছটফট করে। হয়তো সেজন্য কৌতুহল চেপে রাখতে পারছিল না। বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে গাড়ি করে আসতে আসতে সে মধুরিমাকে প্রথম যে প্রশ্ন করেছিল, তা হলো – তোমাদের এখানকার পুরুষগুলো আমাদের দেখে এমন করছে কেন?
কেমন করছে বোন? মধুরিমা পাল্টা প্রশ্ন করে।
এই যে আমাদের দেখে কেমন লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছে। মেয়েদের দেখে পুরুষরা এত লজ্জা পায় এরকমতো কখনো দেখিনি? এটা যদি সত্যি হতো তবে কতই না ভাল হত।
কিন্তু আমাদের দেশে এটাই সত্যি।
তাই?
হ্যাঁ তাই।
তাহলে তোমরা কত ভাল আছো বল।
ভালই তো আছি আমরা। একদম নিরাপদ।
মনে হচ্ছে কি অবাক কাণ্ড? তা তোমাদের কাছে এটা বেমানান লাগতেই পারে কিন্তু আমাদের কাছে এখন এটা কোন ব্যাপার নয়। মাত্র তো এলে। কয়েকদিন থাকো, ঘুরে ফিরে দেখো। অবাক হওয়ার জন্য এত্তোসব পদের উপকরণ পাবে যে, শেষে প্রশ্ন করতেও ক্লান্তি লাগবে।
তোমাদের এই এলাকা তবে অবাক রাজ্য নাকি? এবার শীলাও প্রশ্ন করে।
তা বলতেই পারো তুমি।আমাদের এই এলাকা জগৎ-সংসারের আর সব এলাকা থেকে একটু ভিন্নই বটে।
শীলার সঙ্গী কুহেলী বলল,আর কি কি অবাক লাগার বিষয় হতে পারে তা আন্দাজ করতে পারছি না।তবে এটা বুঝে গেছি যে এখানে লজ্জা পুরুষের ভূষণ।
ভূষণ নয়,ভূষণ নয়। ঠেকায় পড়ে ওরা লজ্জ্বিত হয়েছে। এ লজ্জা ওদের কৃতকর্মের লজ্জা। অনুশোচনার লজ্জা। কেউ এদের লজ্জা পেতে বাধ্য করেনি। যেমন মেয়েদের ওপর লজ্জার ভুষণ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল।মধুরিমার কণ্ঠ কিছুটা উষ্ণ হয়ে উঠেছিল।তাতে কুহেলি যেন একটু বিব্রত বোধ করে।বলে বিষয়টা বুঝলামনা দিদি। আপনি কি রাগ করলেন?
আরে না। রাগ করবো কেন? বিষয়টা বুঝলেন না তো? বুঝিয়ে দিচ্ছি।আগে নারীরা যে কারনে লজ্জা পেত বা এখনও অন্য সব এলাকায় নারীরা লজ্জা পায় আর এখন আমাদের রাজ্যের পুরুষেরা যে কারনে লজ্জা পায় তার কারণ দুটো এক নয়।পুরুষতন্ত্র নারীকে বাধ্য করেছিল অন্তপুরবাসিনী হয়ে লজ্জাশীলা থাকতে। চুন থেকে পান খসলে নির্লজ্জ্ব বেহায়া অপবাদ দেয়া হতো তাকে।কিন্তু এখানকার পুরষরা যে আজ লজ্জাশীল সেটা কেউ চাপিয়ে দেয়নি। কিংবা এখানে নারীর হাতে ক্ষমতা কর্তৃত্ব চলে এসেছে বলেও তাদের লজ্জিত হওয়ার কারণ হয়নি। ওদের লজ্জার কারণ ওদেরই কর্মফল। যে অহংকারে বা যে পুরুষত্ব দিয়ে ওরা নারীকে নিপীড়ন করতো সেটাই আজ ওদের নেই। তাই এত লজ্জা।
শীলা ও কুহেলি মধুরিমার মুখের দিকে হাঁ করে চেয়ে রইল। আসলে ওদের কিছুই বোধগম্য হচ্ছিল না। ওরা বলল তোমার কথা কেমন হেঁয়ালি মনে হচ্ছে।
হেয়ালি এখন থাক। খাওয়াটা শেষ করো তারপর তোমাদের রেস্ট নেয়া দরকার। বিকেলে আমরা ঘুরতে বের হবো তখন সবকিছু দেখতে দেখেতে হেঁয়ালি কেটে যাবে।
বিকেলে তারা ঘুরতে বের হয়। শীলা ও কুহেলীর সাথে মধুরিমার স্থানীয় দুই বান্ধবী বিপাশা ও ইরাবতী নামের দুই বোন। কুহেলীরা যা দেখে কেবলি অবাক হয়। দোকানপাটে বেচাকেনা করছে নারী। অফিস থেকে দলে দলে বেরিয়ে আসছে অধিকাংশ নারী। মাঠে ফুটবল ক্রিকেট খেলছে বয়স্ক নারী। চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছে নারীর দল। আর সবচেয়ে আচানক হচ্ছে কোথাও কোন শিশু কিশোর নেই। সবখানে ত্রিশোর্ধ নারী পুরুষ। যদিও পুরুষদের তেমন দেখা যাচ্ছিল না।
মধুরিমা ওদের অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, বুঝলে শীলা আমাদের রাজ্যে সকল কর্তৃত্ব নারীর হাতে। রান্নাঘর থেকে সিংহাসন সর্বত্র নারী পূর্ণ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত।
কুহেলি বলল, এ যে দেখছি বেগম রোকেয়ার সুলতানার স্বপ্নের নারীস্থানে এসে পড়েছি আমরা। আমরাও স্বপ্ন দেখছি নাতো দিদি? মধুরিমা তাকে চিমটি কেটে হেসে বলে, স্বপ্ন নয়গো দিদি এ সত্যি।
এই সত্যি কি করে তবে সম্ভব হলো?
সেটা সুলতানার সৌরাস্ত্র দিয়ে নয়।
তাহলে কি দিয়ে?
পুরুষদের কৃতকর্মের ফল।
কি সেই ফল বোন?
বলেছিলাম যে আমাদের পুরুষদের লজ্জার কারণ তাদের কৃতকর্মের ফল। আসলে আমাদের রাজ্যের প্রায় সমস্ত পুরুষ নপুংসক হয়ে গেছে।
সমস্ত পুরুষ নপুংসক? তাও আবার একসাথে? শীলা আর কুহেলি মধুরিমার কথা শুনে ফ্রিজ হয়ে যায়। অনেকক্ষণ তাদের মুখে কোন কথা সরে না। নিজেদের একটু সামলে নিয়ে এবার তারা একসাথে প্রশ্ন করে – সমস্ত পুরুষ নপুংসক হয়ে গেছে?
হ্যাঁ সমস্ত পুরুষই বটে। তবে পুরুষ বলতে যেসব পুরুষ নিজেদের মানুষ না ভেবে কেবল পুরুষই ভাবতো তারা। শিশু কিশোর আর মানুষ পুরুষরা নপুংসক হয়নি।
শীলাদের বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি এখনো। বোধ হয় তারা বিষয়টা বিশ্বাস করতে পারেনি। প্রায় সব পুরুষ হঠাৎ করে একযোগে নপুংসক হয়ে গেল। তারা আবার প্রশ্ন করলো- এর কারণটা কি?
কারণ? সে অনেক কারণ আছে বোন। পুরুষ তার পৌরুষের অহংকারে নারীদের সাথে কি কি করে তাতো আপনাদের অজানা নয়।অপমান নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ এসবতো প্রতিদিনের ঘটনা ছিল। ঘরে, কর্মক্ষেত্রে নারীর উপর সহিংসতা এত বেড়ে গেল যে প্রতিবাদ-আন্দোলন, দেশে নানারকম আইন করেও কিছুই পাল্টাচ্ছিল না। কারণ পুরুষের স্বভাব পাল্টাচ্ছিল না। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছিল না। শুধু শিক্ষা আর কিছু মেয়ের কর্মসংস্থান মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে পারছিল না। জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রে অধিকার বঞ্চিত নারী প্রতিদিন প্রতিমূহূর্তে নিষ্পেষিত হচ্ছিল। আর পুরুষ তার পাপের ভাড়া পূর্ণ করে চলছিল।
কুহেলি ও শীলা নির্বাক হয়ে শুনছে। ওদের চোখের পাতাও নড়ে না। মধুরিমা একটু থামতে ওরা প্রশ্ন করে তারপর?
একবার এক জাতীয় উৎসবে দেশের রাস্তায় রাস্তায় লক্ষ কোটি মানুষ বেরিয়ে পড়েছিল। শিশু কিশোর তরুণ তরুণীরা ছিল অধিক মাত্রায়। উদ্বেল আনন্দে ভেসেছিল তারা। উৎসবে মাতোয়ারা জাতির এই মহেন্দ্রক্ষণে মানুষের মতো দেখতে কতগুলো নিকৃষ্ট কীট পরিকল্পিতভাবে তরুণীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের লাঞ্চিত করে অপমানিত ও ক্ষতবিক্ষত করে। দু’চারজন পুরুষ মানুষ বাধা দিল, প্রতিবাদ করলো আর সকলে চেয়ে চেয়ে দেখলো। এমনকি যারা আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে ছিল তারাও কোন প্রতিবাদ করলো না বরং তামাশা দেখলো। তখন উৎসব বাদ দিয়ে প্রতিবাদী মানুষেরা বিক্ষোভে মিছিলে সমাবেশে মুখরিত হলো। কিন্তু কিছুই হলো না। প্রতিবাদীদের উল্টো লাঠিপেটা করা হলো। নারীদের দোষ দেয়া হলো কেন তারা রাস্তায় নামে? কেন তারা এত উদ্দাম হয়? তবে তাতে আন্দোলন থামলো না। সারাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তাল আন্দোলনের ঢেউ। তখন এক প্রতিবাদী আর লাঞ্চিত নারী অভিশাপ দেয় এই সমস্ত অত্যাচারী পুরুষ আর এদের বিচার করার শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্বেও যারা অন্ধ হয়ে থাকে তাদেরকে প্রকৃতি শাস্তি দেবে। নারী প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতির ওপর অত্যাচার করলে একদিন প্রকৃতি প্রতিশোধ নেবে। এরা ধ্বংস হবে। এরা নপুংসক হবে।
কিন্তু সেই নারীর অভিশাপকে তারা পাত্তা দেয়নি। দেশের ঘরে বাইরে নারী নির্যাতন চলতে থাকলো। দেশের আইনশৃংখলা বিচার ব্যবস্থা সকলেই অন্ধ হয়ে রইল। হয়তো তারা ভেবেছিল অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয়ে যাবে। প্রলয় বন্ধ হয়নি। অত্যাচারীদের প্রলয় নাচনে নারীদের মানসম্মান মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হতেই থাকলো। তাদের লাঞ্চনা বাড়তেই থাকল। এই পরিস্থিতিতে একদিন এক অলৌকিক কাণ্ড ঘটে গেল। এক লাঞ্চিত নারী হঠাৎ রণচণ্ডী মূর্তি ধারণ করলো। সে তছনছ করে দিতে চাইলো সবকিছু।
আসলে ধ্বংসের জন্যও একটি উপলক্ষ লাগে। অনেক সময় সে উপলক্ষ নিতান্ত তুচ্ছ ঘটনা থেকেও ঘটে যায়। রণচণ্ডী নারীর রণহংকারে জনাকয়েক অত্যাচারী পুরুষ প্রবল অট্টহাস্যে আশপাশ কাঁপিয়ে দিলো আর সেই নারীকে ক্রোধান্ধ হয়ে গালাগালি দিতে লাগল। যেমন তারা করে খাকে। ক্রোধের প্রকাশ ঘটাতে তারা তাদের নিজেদের গোপনাঙ্গের নাম উচ্চারণ করে বলে তুমি আমার অমুক তমুক করবে। সেই অঙ্গের উচ্চারণের সময় তাদের সেকি দাপট, অন্যকে বিশেষ করে নারীকে তাচ্ছিল্য করে বিকৃত উল্লাস প্রকাশ করতে এমনকি তাদের গোপনাঙ্গ প্রদর্শনও করে। সেদিনও এমনি প্রদর্শনী করে লোকটা বলছিলো তুমি আমার হেন করবে তেন করবে? করো…
হা হা! আমার হেন করবে শালার ঐ মাগী। তারপর সেই নারীকে তার গোপনাঙ্গের নামে সম্বোধন করে বললো – এ্যই ফেল্ যা, যা এখান থেকে! (অনেক পুরুষ তাদের গোপনাঙ্গকে এই নামে ডাকে)। নারীটি তার ধমকে থমকে না গিয়ে হয়তো তাকে অভিশাপ দিয়েছিল অথবা ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। সেই লোকটি তাতে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উপহাস করে বলে কি যাবি না? তুই আমার ফেল করবি? যা আমার ফেল যা এখান থেকে! দূর হয়ে যা!
রণচণ্ডী নারী এবার আবার রণহংকার ছাড়লো- হ্যাঁ তাই যেন হয়। ওটার জন্যইতো তোদের এত দম্ভ এত আড়াই বড়াই? ওটা না থাকলে বেশ হবে। তাহলে আমি শাপ দিচ্ছি তোদের, সকল নরাধম পুরুষদের যেন এটা চলে যায়। বলে সেই রণচণ্ডী নারী অকস্মাৎ কর্পূরের মতো উবে গেল।
সেই সময় কাছেই কোথাও একদল নির্যাতিত নারী আকাশের দিকে হাত তুলে কাতর কণ্ঠে প্রার্থণা করছিল- হে প্রকৃতি মা! তুমি ছাড়া কেউ নেই আমাদের রক্ষা করে। তুমি আমাদের রক্ষা করো মা! তুমি আমাদের রক্ষা করো। না হয় মাটি ফেটে দুভাগ হোক, আমরা তাতে মুখ লুকাই। মেয়েরা চোখ বুঁজে প্রার্থনা করছিল। হঠাৎ চোখ খুলে তারা দেখে সামনে এক তেজোদৃপ্ত নারী দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর সারা শরীর থেকে ঠিকরে পড়ছে তেজ। তাঁর দৃষ্টিতে বরাভয়।
তিনি বললেন তোমাদের বর দিলাম-তোমরা সকল নারী তেজদৃপ্ত হও। অত্যাচারীর অন্যায় অত্যাচার প্রতিরোধে খড়গ ধারণ করো। আর সজ্জনকে সন্তানের ছায়া দিও। তারপর যেমন হঠাৎ আভির্ভূত হয়েছিলেন তেমনি হঠাৎ অদৃশ্য হলেন।
আর এদিকে সেই লোকটি, যাকে এক রণচণ্ডী মূর্তি অভিশাপ দিলেন; সে তখন অভিশাপ শুনে আরো ক্ষেপে গেছে। প্রচন্ড রাগে সে গরগর করছে।আর বলছে যা!যা ফেল! যা… তোর অভিশাপ আমার ফেল করবে। কথা শেষ হয় না।লোকটি চেয়ে দেখে ভোজবাজির কারবার। সেই নারী তার সামনে পেছনে ডানে বামে কোথাও নেই এবং আশ্চর্য ব্যাপার যে, সে অনুভব করে, তার বিশেষ অঙ্গটি যেন যথাস্থানে নেই। তখন সেই নারীকে বাদ দিয়ে সে তার বিশেষ অঙ্গটি খুঁজতে থাকে। খুঁজে না পেয়ে সে আকুল হয়ে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে সে একটা গাছের নীচে বসে। এইসময় অন্য এক নারী তার সামনে এসে দাঁড়ায়। সেই নারীর তেজের প্রভায় আলোকিত হয়ে ওঠে চারপাশ এবং গাছতলা। বিশেষ অঙ্গহারা পুরুষটি তাঁর দিকে সম্মোহিতের মতো চেয়ে থাকে।
কি হয়েছে বাছা? সেই তেজদৃপ্ত নারী জিজ্ঞেস করেন। বড় কোমল তার কণ্ঠ। তাঁর কণ্ঠের কোমরতায় সে গলে যায়।
সে কাতর হয়ে জানায়, মাগো আমার বিশেষ অঙ্গটি হারিয়ে গেছে।
তেজদৃপ্ত নারী বললেন, তা আমি কি করতে পারি বাছা? এবারও কোমল কণ্ঠে জিজ্ঞাসেন তিনি।
মাগো মনে হচ্ছে আপনি অসাধারণ, অসামান্যা। আপনার অনেক ক্ষমতা আছে মা। আপনি দয়া করে আমার উপকারটা করুন।
কি বলছো বাছা? যে অঙ্গের অহংকারে তোমরা নারীকে মানুষ বলে মনে করো না, সেই নারীর কাছেই কিনা তোমার ক্ষমতাবান অঙ্গের জন্য প্রার্থনা করছো? তোমরা পুরুষরা না সত্যি অদ্ভূত। কিন্তু বাছা আমিত সামান্য নারী। নারীর কোনও ক্ষমতা আছে বলো?
না মা আপনি সামান্য নন। আমায় দয়া করুন মা।
দয়া করবো? কেন বাছা? দয়া করার ক্ষমতা আছে নাকি নারীর? তুমি মনে করো? তোমরা পুরুষরাতো তাকে পায়ের তলায় ফেলে রেখে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করে তাদের তোমাদের অধীন করে রাখতে পারলেই খুশী থাকো। ঘরের নারী পরের নারী সকলকেই তোমাদের সম্পত্তি মনে করো। কাউকে রেহাই দাও না তোমরা। যখন বিপদে পড়ো তখন মা মা? তা তুমি তো বাছা মানুষের মত দেখতে প্রাণী, তোমাদের দেবতারাই যখন অসুরের ভয়ে ইঁদুরের গর্তে পালায় আর নারী দূর্গাকেই শরণ নিয়ে বলে জগৎ জননী মা, রক্ষা করো মাগো! তখন তুমি তো কোন ছার্!
মাগো আমরা ভুল করি। আমি সকলের হয়ে ক্ষমা চাইছি মাগো। আর ভুল করবো না।
তার কাতর কণ্ঠের অনুনয় শুনে সেই তেজস্বী নারীর মনটা একটু নরম হয়। তিনি বলেন ক্ষমা আমি করবোনা তোমাদের, তবে কি বর চাও তুমি? দুবার সুযোগ পাবে। কাজেই ভেবে চিন্তে বর চাও।
আমি আমার বিশেষ অঙ্গ ফেরৎ চাই মা।
নারী বললেন তখাস্ত। চোখ বুজে মনে মনে বিশেষ অঙ্গের নাম ধরে ডাকতে থাকো।
লোকটি খুশী হয়ে বার বার তার বিশেষ অঙ্গের নাম ধরে ডাকতে লাগল। সে ভাবছিল যত বেশীবার সে ডাকবে তাতে তত তাড়াতাড়ি সেটা চলে আসবে। কিন্তু হলো কি, সে যতবার ডাকলো ততোবার করে একটি বিশেষ অঙ্গ তার সারা শরীরে গজাতে লাগলো। হাতে মুখে বুকে সর্বত্র।
তেজোদৃপ্ত নারী বললেন এ্যাই থামো থামো। দেখো কি করেছো তুমি।
লোকটি চোখ খুলে দেখে তার সারা শরীর বিশেষ অঙ্গে ভরে গেছে। কী বিচ্ছিরি কী জঘন্য! নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে তার নিজেরই ঘেন্না করতে লাগলো। সে কেঁদে উঠল। এ কি হলো মা? এই শরীর নিয়ে আমি এখন এই লোকসমাজে মুখ দেখাবো কি করে?
মা বললেন, কেন? এ তো তোমাদের অহংকারের জিনিস, শক্তি ও দাপটের জিনিস, পৌরুষের জিনিস! যা গোপন করে রাখার তা গোপন না করে কথায় কথায় এর নাম উচ্চারণ করো, যত্র তত্র তা প্রদর্শন ও ব্যবহার করো তাহলে এখন তা দেখাতে লজ্জা কেন বাছা? বরং বেশী হয়েছে বলে পৌরুষ বা শক্তি দাপটও অনেক বেড়ে যাবে, কি বলো?
না মা এসব কাজের কথা নয়। এ তোমার রাগের কথা। আমায় তুমি ক্ষমা করো মা। মা তুমি আমাকে বাঁচাও।
বেশ। তোমার আর একটি বর পাওনা আছে। নিয়ে নাও। তবে ভেবে চিন্তে ঠিক করে বলো। এরপর আর সুযোগ পাবে না কিন্তু।
কি বলবো মা?
এই তুমি যা চাও তাই বলো।
আমি চাই আমার এই অঙ্গগুলো চলে যাক।
তবে তাই বলো, আগের মতো চোখ বুজে মনে মনে।
সে তাই করলো। চোখ বুজে মনে মনে তার অঙ্গদের নাম ধরে বলল, যা, যা, যা, সব চলে যা। আর অমনি সব চলে গেল। আসলটিও রইল না।
দেবী বললেন, বাছা এইবার চোখ খুলে তাকাও। দেখো সব ঠিক আছে কিনা?
লোকটি চোখ খুলে দেখে তার হাতে পায়ে শরীরে আর ঐ বিচ্চিরি অঙ্গটি নেই। কিন্তু এ কি! মূলটাও যে নেই। সে যে আবার চলে গেল। বর দুটিও শেষ হয়ে গেছে। আরতো সুযোগ নেই। এখন কি হবে?
কি হলো, এত কি চিন্তা করছো? ঠিক হয় নি সব? দেবী প্রশ্ন করেন।
না মা। আবারও আমার আসল অঙ্গটি চলে গেছে।
চলে গেছে? তা কি আর করবে? আমিত দুবারের বেশী সুযোগ দিই না। তেজোদৃপ্ত নারী একথা বলে চলে যেতে উদ্যত হলেন।
লোকটি দৌড়ে গিয়ে তাঁর পায়ে পড়ে। মা, আর একটি সুযোগ দাও মা। আমাকে পঙ্গুত্ব থেকে বাঁচাও মা। আমিতো নপুংসক হয়ে গেলাম।
ঘুরে দাঁড়ালেন নারী। তার সারা শরীর থেকে ক্রোধের তেজ ঠিকরে পড়তে লাগল। তিনি বললেন বাঁচাবো তোকে? পাপিষ্ট নরাধম। বেশ হয়েছে নপুংসক হয়েছিস তুই। কিন্তু তোরা নপুংসকের অধম। এখন দেখছি চোখের সামনে অন্যায় অবিচার ঘটলে নপুংসকরাও রুখে দাঁড়ায়। আর তোরা বিশেষ অঙ্গ সর্বস্বরা যারা, বিশেষ অঙ্গকে, নারী নির্যাতনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করিস। বেম হয়েছে তোদের নপুংসক হয়ে যাওয়াই উচিত। ঠিক কাজ হয়েছে।প্রকৃতি তোদের শাস্তি দেবে।এই যেমন তোকে দিল, আমার বর নিয়েও তোর কোন কাজ হলো না।
আমায় দয়া কর মা।
দেবী আবার একটু নরম হলেন। বললেন ঠিক আছে, তোকে আমি তৃতীয় বরটি দিতে পারি। কিন্তু তা দিয়ে তুই তোর নিজের লিঙ্গ আর ফিরে পাবি না। এখন বল তৃতীয় বরে তুই কি চাস?
লোকটা হতাশা ও নিরাশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে মিইয়ে যাওয়া স্বরে বলে ওটা যদি না পাই তবে আর তৃতীয় বর দিয়ে কি হবে?
তাহলে আমি চললাম। দেবী আবার চলে যেতে উদ্যত হন। লোকটি তখন মরিয়া হয়ে বলে, মা তুমি যাবে না।
যাবো না? আমি থেকে কি করবো। বল?
সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইল কতক্ষণ, তারপর খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মত করে বলল মা, আমি তৃতীয় বরটি চাইছি।
বেশ, কি চাস বল?
সে একটু ভেবে নিয়ে বলে, সব পুরুষের মাঝে যদি আমি নপুংসক থাকি তবে বেশী লজ্জা; কিন্তু যদি সবাই আমার মতো হয়ে যায় তো –
দেবী এবার হেসে ফেলেন। বলেন বুঝেছি, সেই লেজকাটা শেয়ালের গল্পের মতো চাইছিস সকল পুরুষ তোর মত হয়ে যাক? এছাড়া আর তুই কিইবা চাইতে পারিস বল? তোরাতো আসলে শেয়ালের মতোই ধূর্ত। তা সেটা হতে পারে, যদি তুই সেটাই চাস। তবে যারা শিশু কিশোর ছেলে যাদেরকে এখনো তোর মত পুরুষের পাপ স্পর্শ করেনি তারা আর পুরুষের মাঝে সত্যিকারের মানুষ, যারা নিজেকে এবং নারীকে শুধু মানুষই ভাবে তাদের কিছু হবে না। তা এখন তুই চাস কিনা যে তোর মত পুরুষেরা নপুংসক হয়ে যাক, দেখ আবারও ভেবে বল।
সে আবার কিছুটা ভেবে নেয়। তারপর বলে, হ্যাঁ আমি এই বর চাই যে আমার মত সকল পুরুষের লিঙ্গ উবে যাক।
তাহলে চোখ বুজে এই কথা মন্ত্রের মত উচ্চারণ কর।
সে তাই করল। এবং তারপর একদিন সকাল বেলা দেখা গেল পুরুষেরা আর ঘর থেকে বের হয় না। সকলের মধ্যেই কেমন একটা কুকড়ে যাওয়া জড়সড় ভাব। তাদের তর্জন গর্জন দূরে থাক কোন হাঁক ডাক এমন কি শব্দ পর্যন্ত নেই। এক ফোটা হাসি নেই মুখে। কি ব্যাপার? হলোটা কি রাজ্যের পুরুষ পুঙ্গবদের? তারা এমন জড়সড় কেন? তারা ঘর থেকে বের হয় না কেন? রাজ্যের নারী সমাজ চিন্তিত। সমস্যা শুধু এক জায়গায় নয়। সমস্যা পরিবার সমাজ রাষ্ট্র সর্বত্র। বিষয়টা বুঝতে সপ্তাহ কেটে গেল।
সে যাই হোক, ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না বলে গোটা রাজ্য অচল হওয়ার উপক্রম। কলকারখানা, কৃষি, ব্যবসা, প্রশাসন, শাসনকার্য সব থমকে রইল। কেননা এসব কাজে নিয়োজিতরা অধিকাংশ এবং প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ পদতো তারাই অলংকৃত করে রেখেছিলেন কিনা। কিন্তু এভাবে রাজ্যকেতো আর রাজ্যের নারী অধ্যাপক, লেখক, বুদ্ধিজীবি বৈজ্ঞানিক চিকিৎসক সকলকে নিয়ে বৈঠকে বসলেন। আলোচনা করে সমস্যাসমাধানের পথ বের করলেন। রাজ্যের সকল সেক্টরের সিংহভাগ পদ একযোগে ভেসে যেতে দেয়া যায় না। এ খবর জানাজানি হলে বাইরের শক্তি এসে রাজ্য দখল করে নেবে। তাই রাষ্ট্র পরিচালনা ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেসমস্ত নারীরা ছিলেন তারা শুন্য হয়ে পড়েছে তা পূর্ণ করতে যোগ্য নারীদের প্রতি আহ্বান জানালেন তারা। দেশের স্বার্থে যোগ্য নারী এগিয়ে এলেন এবং যে যার যোগ্যতা অনুযায়ী ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। দ্রুতই সংকট কাটিয়ে উঠল রাজ্য। এখন বরং দেশ দ্রুত এগিয়ে যেতে লাগলো যোগ্য লোকদের হাতে পড়ে।
কুহেলীর মধ্যে একটু বেশীমাত্রায় কৌতুহল আছে সে কথা আগেই বলা হয়েছে। তাই সে ক্রমাগত প্রশ্ন করে। একটার পর একটা। সে বলে তারপর থেকে নারীরা বাইরে আর পুরুষেরা ঘরে ঢুকে গেল? তা বাইরের দায়িত্ব নারীরা নিতে পারলেও পুরুষ কি ঘরের দায়িত্ব নিতে পারলো? তাদেরতো কুটোটি নাড়ার অভ্যেস ছিল না। কিন্তু আর একটি কথা, যেসব পুরুষ সত্যিকারের মানুষ ছিল আর যারা শিশু কিশোর ছিল, যাদের গায়ে তোমার কথামত অভিশাপ লাগেনি, তাদের কি হলো?
মধুরিমা হেসে বলে,একসাথে এত প্রশ্ন কেউ করে? একটু দম নিতে দাও? তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর বলি, তোমরাও তো কর্মজীবি নারী, নিশ্চয়ই ঘরবাইর দুটো এই দুহাতে সামলাও? আসলে সকল নারীরা যখন বাইরের দায়িত্ব নিতে গিয়েছিল তখন তারা ঘরের ভার কার কাছে দেবে সে চিন্তা করেনি। কারণ পুরুষতান্ত্রিক যুগেও নারীদের একটা অংশ তোমাদের মতো ঘরের বাইরে কাজ করতো এবং তারা ঘরবাইর দুটোই সামলাতো। তাই অভিজ্ঞতা যেহেতু ছিল কাজেই শুরুতে ঘরের ভার নিয়ে কাউকে তেমন চিন্তা করতে হয়নি। অবশ্য কালক্রমে ঘরে থেকে থেকে সময় কাটেনা বলে এবং সংসারের শৃংখলার জন্য নিজে থেকেই কিছু দায়িত্ব পুরুষ নিয়ে নিল।
আর শিশু কিশোর ও মানুষ পুরুষদের সত্যিই কিছুই হয়নি। তারা যেমন ছিল তেমনই থেকে গেল। তবে মানুষ পুরুষরা যদিও নপুংসক হয়নি কিন্তু সমাজের সিংহভাগ পুরুষ সেরকম হয়ে যাওয়ায় তারা খুব লজ্জিত হয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ অপমানে আত্মহত্যা করেছেন, কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। অবশিষ্টরা আছেন শিশু কিশোরদের সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কাজে নিয়োজিত। কারণ সেই ঘটনার পর আমাদের শিশু কিশোরদের তাদের পরিবারের থেকে সরিয়ে নিয়ে একটি বিশেষ স্থানে রাখা হয়েছে। তাদের বিশেষ রকমের শিক্ষা দিয়ে পুরুষ নয়, নারী নয়, পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। তাদের শিক্ষা দিচ্ছেন সেইসব মানুষ পুরুষ এবং দেশের বিদগ্ধ নারী শিক্ষক ও বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানী মানুষেরা।
এতদিনে তাহলে আপনাদের শিশুকিশোরগুলি পরিপূর্ণ পুরুষ হয়ে উঠেছে বোধ করি।
হ্যাঁ, কিশোর যারা ছিল তারা এখন পরিপূর্ণ তবে পরিপূর্ণ পুরুষ বা নারী শুধু নয় তারা এক একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে উঠেছে।
শীলা এতক্ষণ একটাও কথা না বলে শুধু চুপ করে শুনছিল। এবার সে অন্য রকমের প্রশ্ন করল-তাহলে গত পনের বছরে তোমাদের এখানে কোন নতুন শিশুর জন্ম হয়নি?
না।
এটা সবচেয়ে বিস্ময়কর।
তা বটে।
পনের বছর ধরে জনসংখ্যা উৎপাদন বন্ধ! এর কোন বিরূপ প্রভাব পড়েনি রাজ্যে?
বিরুপ প্রভাব? মোটেই না। বরং একটা বিপ্লব সাধিত হয়েছে বলো। এখানেও আমাদের রাজ্য সারা পৃথিবীতে একমেবা দ্বিতীয়ম। জানো আগে আমাদের দেশ জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত ছিল। বছরে পঁচিশ লাখ করে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। জনসংখ্যা পরিদপ্তর যা পারছিলনা তা আমরা এমনিতেই পেরেছি। জানো গত পনের বছরে দেশে চার কোটি জনসংখ্যার বৃদ্ধি আটকানো গেছে!এখন আয়তনের তুলনায় সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা আর সমস্যা নয়।
কিন্তু জনসংখ্যা এভাবে কমতে থাকলে তো একসময় তোমাদের জনসংখ্যা শুন্যের কোঠায় চলে যাবে।
না না। তা হবে কেন? সেই যে আমাদের লক্ষ লক্ষ শিশু কিশোর কিশোরী বিশেষ প্রশিক্ষণাগারে মানববিদ্যার চর্চা করে যথার্থ মানুষ হিসেবে তৈরী হয়েছে এখন তাদের বিয়ে হবে। তারাই নতুন মানুষের জন্ম দেবে। বৈষম্যভরা কুটিলতাপূর্ণ পচা গলা চিন্তার মানুষগুলো একসময় মরে যাবে আর নতুন মানুষেরা গড়বে বৈষম্যহীন নতুন সমাজ। পরিবার থেকে রাষ্ট্র কোথাও নারী পুরুষ, ধনী গরীব, সাদা কালো বা সম্প্রদায়গত কোন বৈষম্য নির্যাতন থাকবে না। আমাদের এই রাজ্য হবে শ্রেণীহীন মানুষের রাজ্যে। আমরা সকলে মিলে মিশে সুখে শান্তিতে হাসি আনন্দে গল্পে গানে ভরে থাকব।
মধুরিমার কথা শেষ হলে শীলা ও কুহেলিকা নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকে শুধু। তারা যেন ভাষা খুঁজে পায় না। সত্যি এও সম্ভব? তারা কি যেন ভাবে। মধুরিমা চেয়ে দেখে শীলা ও কুহেলীর চোখে মুখে নতুন স্বপ্ন খেলা করছে। একটা নতুন আশার দোলায় স্মিত হাসিতে ভরে উঠছে তাদের মুখ। সে হাসিতে আনন্দের উদ্ভাস।
তারপর মুখের হাসিকে আরও প্রসারিত করে কুহেলী বলল, তোমাদের রাজ্য পৃথিবীর রোল মডেল হোক। আমরাও আমাদের রাজ্যে গিয়ে তোমাদের রোল মডেল করবো।
সহসা শীলার মুখের হাসি নিভে গেল। সে বলল, কিন্তু কুহেলী আমাদের রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ যে এখনও পুরুষতন্ত্রের হাতে। পুরুষতন্ত্র সেটা মানবে কি?
কুহেলী চিন্তিত হয়। তারও মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। বলে তাইতো। আমাদের পুরুষদের এখনো ওই বিশেষ অঙ্গ নামক অস্ত্রটা রয়ে গেছে যে; যদিও তারাও একধরনের নপুংসকই বটে তবু সেই অস্ত্রের জোরেই তো ক্ষমতা তাদের হাতে।
মধুরিমা বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই কুহেলী। সারা বিশ্বের নারীরা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেতো। মানুষ পুরুষেরা সকলকালেই পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। এখন তাদের সংখ্যা ক্রমশ আরো বাড়ছে তাই নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা হয়তো একটু এগিয়ে গেছি। কিন্তু একদিন সবাই পারবে। সারাবিশ্ব থেকে পুরুষতন্ত্র নিপাত হবেই হবে। আমি বলি কি তোমরা নিজেদের ভেতর সেই তেজদৃপ্ত নারীর আরাধনা করো। তার আবাহন করো। যার তেজে সব অন্যায় অবিচার জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাবে। তিনি আবির্ভূত হলে তোমাদের নপুংসক পুরুষেরা হয় সত্যিকারের মানুষ হবে নয়তো সত্যিকারের নপুংসক হবে।
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..