প্রক্সি
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নবনীতার দিদি শুচিস্মিতা ফ্লোরিডা থেকে ভিডিও কল করেছে। মায়ের সাথে কথা শেষ হলে নবনীতা ফোনটা নিয়ে নিজের রুমে চলে আসে। দিদি মনে হয় দিনকে দিন আরো সুন্দর হচ্ছে! সাধে কি ওর বর এতো ভালোবাসে দিদিকে! দিদির সাথে দরোজা বন্ধ করে আড্ডা দেওয়া ওর পুরোনো অভ্যাস। মাত্র একবছরের পার্থক্য ওদের দুইবোনের। ভিডিও কলেও মনে হয় ও দিদির পাশে শুয়ে শুয়ে গল্প করছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ সময়ে ওর মনে হয় দিদির গায়ের ঘ্রাণ পাচ্ছে ও। কীরকম একটা বুনোফুল আর মেথির মিশেল দেওয়া ঘ্রাণ!
দিদি ফিসফিস করে বলে,
– নীতা, রুমে এসেছিস?
– উঁ। এসেছি।
– নীরু দা’ দেশে যাচ্ছেন জানিস?
– কী!
উত্তেজনায় খাটের সাথে হোঁচট খেয়ে খোঁপা খুলে নবনীতার চুল কালো জলের মতো ছড়িয়ে পড়ে ওর পিঠে। দিদি হেসে বলে,
– হিহিহি, বাকীটুকু শুনলে তুই তো মরেই যাবি!
– তুই কি জোক করছিস দিদি?
– না রে! নিরু দা’ দেশে যাচ্ছেন তোরই জন্য!
গল্পটির অডিও শুনুন এইখানে:
এবারে সত্যি সত্যিই বাকরূদ্ধ হয়ে যায় নবনীতার! কাল ও অফিস থেকে এসে মায়ের কাছে শুনেছে মাসিমা মানে নিরু দা’র মা কল করেছিলেন ইন্ডিয়া থেকে। মাসিমা প্রায়ই ফোন করেন, তাই কী কথা হয়েছে সে ব্যাপারে আর আগ্রহ দেখায়নি নবনীতা। মা কী যেন বলতে গিয়েও আর বলেননি।
নিরু অর্থাৎ নিরুপম হচ্ছে নবনীতার দাদা অভিষেকের শৈশবের বন্ধু। ওদের দুই পরিবারে দারুণ মিল ছিল। মেসোমশায় আর বাবা একাত্তরে একই সেক্টর থেকে যুদ্ধ করেছেন। দুজনে রোজ বিকেলে দাবার ঘুঁটি নিয়ে বসে যেতেন। মাসিমা আর মা পুরোনো দিনের গান ছেড়ে দিয়ে পানের বাটা নিয়ে বিশ্রম্ভালাপে মেতে থাকতেন। নিরুপমের বোন মধুছন্দা আর শুচিস্মিতা মিলে সুযোগ পেলেই ওদের বন্ধু রাহেলার বাসায় ভিসিআরে হিন্দি মুভি দেখতে চলে যেতো।
শিল্পী: রিয়া দাস
নিরুর মামা ইন্ডিয়া থেকে বেড়াতে এলে দুই বাড়ির জন্যই সমান উপহার নিয়ে আসতেন। শুধু নবনীতা আর নিরুর জন্য আনা বইগুলো এক হতো না। নবনীতা নিজের বই পড়া শেষ করে নিরুকে জ্বালাতো ওর বইগুলোর জন্য। মাসিমার খুব ইচ্ছে ছিল দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তা করানোর। দাদাকে মা প্রস্তাব দিতেই দাদা বলেছিলেন,
– সে কী মা! ছন্দাকে তো আমি ছোটবোনের মতো দেখি, আমি শিওর নিরুও স্মিতাকে সেরকমই দেখে। বিয়ে না করেই কি আমরা কম আত্মীয়!
ভার্সিটির ছুটি হলে নিরুপম আর অভিষেক একসাথেই বাড়ি ফিরত। অভি মিক্সড ক্যাসেট নিয়ে আসতো আর নিরু বই আনতো নবনীতার জন্য। বইয়ের শুরুতে নিরু লিখে দিতো, খুকুকে অনেক ভালোবাসা, নিরু দা’। নবনীতা সেই লেখার দিকে তাকিয়ে থাকত অনেকক্ষণ ধরে। মাঝেমাঝে হাত বুলিয়ে দিত সেই লেখায়। মনে হতো লেখা নয় নিরুর হাতকেই স্পর্শ করছে ও! কীরকম একটা তিরতিরে ভালোলাগা আর কষ্ট ছড়িয়ে পড়ত ওর বুকের ভেতর। আগে কিছু মনে না করলেও এখন নবনীতাকে নিরু খুকু বললে ও খুব রেগে যেতো! ও কি আর বাচ্চা বসে আছে নাকি যে ওকে নিরুপম খুকু বলবে! ওহ! আর একটি ব্যাপার হচ্ছিল ওর ভেতরে। নিরু দা’কে ওর আর দাদা ডাকতে ইচ্ছে করতো না। বুঝতে পারলেও নিজের কাছে স্বীকার করতে চাইতো না নবনীতা, ও খুব অসহায়ের মতো নিরুপমের প্রেমে পড়ে গেছে! দিদি কিন্তু অনেক আগেই বুঝে ফেলেছিল এটা। কীভাবে তা আজও জানেনা নবনীতা।
নবনীতা যখন কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে তখন হঠাৎ করেই দিদি পালিয়ে গিয়ে এক মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করে ফেলে, ওর বাবা এই শোক সইতে না পেরে স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। এর পর দুই পরিবারেই একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। মধুছন্দাদি’কে কোচিং থেকে ফেরার পথে কারা যেন উঠিয়ে নিয়ে যায়। দুই দিন ধরে পাগলের মতো খোঁজাখুঁজির পর শহরের বাইরের এক ডোবায় ওর নগ্ন মৃতদেহ পাওয়া যায়, অপরাধীরা ধরা পড়লেও আটচল্লিশ ঘন্টা পরে কোন মন্ত্রবলে ছাড়া পেয়ে যায়! যথেষ্ট প্রমাণ নাকি নেই! দুই বাড়িতেই শ্মশানের নিস্তব্ধতা! সুচিস্মিতা বেঁচে থাকলেও দুই পরিবারেই যেন কন্যাশোক পালিত হচ্ছিল!
অভি আর নিরু দুজনেই জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করার ডাক পেলেও অভিষেকের আর যাওয়া সম্ভব ছিলোনা। পরিবারের হাল তো ধরতে হবে!
নিরুপমের বাবা প্রতি বিকেলে এসে নবনীতার বাবার পাশে চুপ করে বসে থাকতেন। দুই প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার মুখ দেখে মনে হতো, ওঁরা জীবন যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন!
ইন্ডিয়া থেকে নিরুপমের মামা এলেন, এই প্রথমবার খালি হাতে! কিছুদিনের মধ্যে ওদের বাড়ি ঘর, গ্রামের জমি সব বিক্রি করে দিয়ে মাসিমা আর মেসোমশাই চলে গেলেন ইন্ডিয়ায়। মাসিমা তো আগে থেকেই কান্নাকাটি করছিলেন, যাওয়ার আগে মেসোমশাই নবনীতার বাবার শীর্ণ হাতদুটো ধরে শিশুর মতো সে কী কান্না! কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন,
– দাদা, আমাদের স্বাধীন করা দেশে আমি আমার মেয়েকে রেখে গেলাম। আমার দেশ আর মেয়ে এদের দেখে রাখার দায়িত্ব এখন আপনাদের!
নবনীতার বাবার চোখ দিয়েও অঝোরে জল পড়ছিল। নিজের ঘরে স্তব্ধ হয়ে বসেছিল নবনীতা। নিরুপম এসে দরোজায় দাঁডিয়ে এই প্রথম বারের মতো কাঁপা গলায় ওর নাম ধরে বললো,
– নবনীতা, আসি রে! আমি বাবামাকে ওখানে রেখেই চলে যাবো। চিঠি লিখলে উত্তর দিস।
নবনীতার সব কথা একসাথে জড়ো হয়ে বেরুতে চাইলো। কিন্তু কিছুই বলা হলো না!
নিরুপমরা চলে যাওয়ার পাঁচ দিন পরে নবনীতার বাবা রাতে ঘুমোতে গিয়ে সকালে আর উঠলেন না।
নিরুপম শুরুতে প্রতি সপ্তাহে চিঠি লিখত। ক্রমে সেটা কমে যায়। শুচিস্মিতা আর ওর বর আমেরিকায় থাকে, এই খবর পায় ওরা। কিন্তু কোন স্টেটে তা জানতো না। বেশ কয়েকমাস পরে নবনীতাকে একদিন দিদির বন্ধু রাহেলা এসে ওদের বাসায় নিয়ে যায়, যাওয়ার বিশ মিনিটের মাথায় একটা কল আসে। দিদি! দুইবোন মিলে ফোনে কথা বলার চেয়ে কাঁদেই বেশি! বাসায় ফিরে নবনীতা মায়ের পাশে শুয়ে আস্তে আস্তে বলে,
– মা, আজ দিদির সাথে কথা হয়েছে। দিদি মা হতে চলেছে। দাদাকে একটু বলো না, বাসায় ফোন নিতে! তাহলে দিদি তোমার সাথেও কথা বলতে পারবে।
বড় মেয়ের কথা শুনে মা নবনীতাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন। অভিষেক আসার পরে মা ওকে একটা ফোনের কথা বলেন। মাসিমা ইন্ডিয়া থেকে মাঝে মাঝে ফোন করেন পাশের ডাক্তারের বাসায়। অন্যের বাড়িতে গিয়ে কথা বলতে কি ভাল লাগে! শুচিস্মিতার কথা শুনে দাদা একটু রেগে উঠতে গেলে মা বলেন,
– দ্যাখ অভি, আমার মেয়ে অন্য ধর্মের ছেলে বিয়ে করেছে, সেটা ওর কর্ম। ফল ভোগ করলে ও-ই করবে। তাই বলে আমি কি বলবো যে, ও আমার মেয়ে নয়! নাকি তুইই চাইলে রক্তের সম্পর্ক ধুয়ে ফেলতে পারবি!
অভি কিছুটা ইতস্তত করলেও মেনে নেয়। কয়েকমাস পরে ওদের বাড়িতে ফোন চলে আসে। শুচিস্মিতা প্রত্যেক সপ্তাহেই ফোন করে। মাসিমাও ফোন করেন মাসে দুমাসে। দিদির একটি ফুটফুটে পুতুলের মতো মেয়ে হয়েছে। দাদা বিয়ে করেছে ওর এক কলিগকে। নিরুপমের চিঠি আসা ক্রমে বন্ধ হয়ে গেছে। নবনীতা মনেমনে খুব আশা করতো নিরুপম ফোন করবে, কিন্তু নিরুপমের ফোন কখনই আসেনি। এমনকি মাসিমা ফোন করলেও নিরুপমের কথা খুব একটা বলতেন না। সবাই কেমন যেন সুকৌশলে নিরুপমকে এড়িয়ে জীবন যাপন করে যাচ্ছিল!
নবনীতার খুব জানতে ইচ্ছে করলেও কারো কাছে জিজ্ঞেস করতে সংকোচ লাগত। অথচ ওদের সম্পর্কটার মধ্যে আর যা-ই আসুক, সংকোচ আসার কথা ছিল না!
নবনীতা অনার্স পাশ করার পর ওর বিয়ে নিয়ে কথা শুরু হলে ও বেশ জোরে শোরে বিয়ে করবে না বলে মানা করে দেয়। দিদির পালিয়ে যাওয়া, নিরুপমদের চলে যাওয়া সব মিলে নবনীতার সংসার করার বিপক্ষে একটা মনোভাব তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ও ভাবতো, আমাদের সমাজে বিয়েটাকেই একমাত্র লক্ষ্য আর মোক্ষ কেন ভাবা হয়! বিয়ে ছাড়া একজন মানুষ কি অচল হয়ে যায়! প্রচণ্ড ভালোবাসার কেউ থাকলে সামাজিকতা রক্ষার্থে বিয়ে করলেও ঠিক আছে, কিন্তু অর্ধ পরিচিত অথবা একেবারেই অপরিচিত একজন মানুষের সাথে কিছু মন্ত্রপাঠ করেই একঘরে গিয়ে দরোজা বন্ধ করার ব্যাপারটা জানি কীরকম অশ্লীল! পারিবারিক নামডাক অথবা শিক্ষাগত যোগ্যতায় কি মানুষ চেনা সম্ভব! আসলে ও যে নিরুপমকেই চাইতো অন্য কাউকে নয়, এইজন্যই এতো সব যুক্তি ওর মাথায় আসতো!
এমএ পাশ করে ও একটা এনজিওতে চাকরিতে ঢুকে যায়। দাদা বৌদির যমজ মেয়ে নিয়ে বাড়িতেও নবনীতার ব্যস্ততার অবধি থাকে না। সময় গড়াতে থাকে। বছরের পর বছর পার হয়ে যায়। মায়ের হাঁটুতে ব্যথা। গোপীর মা রান্নাবান্না সামলায়। ছুটির দিনে বৌদির সাথে নবনীতা মিলে রান্না করে।
অনেক অপ্রাপ্তির মধ্যেও সময় ঠিকই পার হয়। শুচিস্মিতা কয়েকবার ওর বর আর মেয়েকে নিয়ে বেড়িয়ে গেছে। আর কেউ না বুঝলেও শুচিস্মিতা ঠিকই বুঝতে পারত নবনীতাকে।
একদিন হঠাৎ করেই নিরুপমের সাথে দেখা হয়ে যায় শুচিস্মিতার। মেয়েকে ইউনিভার্সিটি অফ মায়ামিতে ভর্তি শেষে ক্যাম্পাসে ঘুরতে গিয়ে একজন কাঁচাপাকা চুলের ভদ্রলোকের দিকে ওর চোখ পড়ে। একটু খেয়াল করতেই শুচিস্মিতা নিরু দা’ বলে এমন চিৎকার করে ওঠে যে, আশেপাশের সবাই চমকে ওঠে! মাঝখানে আঠারো উনিশ বছর পার হলেও ওরা নিমেষে ফিরে যায় ওদের সোনালি অতীতে।
নিরুপম জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসার কয়েকমাস পরে এক ব্রিটিশ মেয়ের সাথে লিভ টুগেদার শুরু করে। এই বিষয়টি মাসিমা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তার আগে অভিষেকের কাছে ও নবনীতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, কিন্তু অভিষেক ওকে বেশ কড়া ভাষায় মানা করে দিয়েছিল। সেই ব্রিটিশ মহিলার সাথে নিরুপমের একটি ছেলেও আছে, বনিবনা না হওয়ায় ভদ্রমহিলা ছেলেকে নিয়ে ইংল্যান্ড চলে গেছেন বেশ আগে। সবার কাছ থেকে অভিমানে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিল নিরুপম। শূন্যতা পূরণ করার জন্য নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে, আরো একটি ব্যর্থ সম্পর্কে জড়িয়েছে। কিন্তু অবাধ্য মন আজও অতীতকে ভুলে যেতে পারেনি। ও খুব ব্যাকুল হয়ে নবনীতার কথা জানতে চায়। শুচিস্মিতা হেসে বলে,
– আপনি আমার বাসায় চলুন। সব বলছি।
নিরুপম মনে মনে আশা করেছিল, নবনীতা হয়তো শুচিস্মিতার বাড়িতেই আছে। কিন্তু নাহ! ও অবাক হয়ে শোনে, সেই আঠারো বছর বয়সী কালো জলের মতো চুলের, উজ্জ্বল চোখের বইপাগল মেয়েটি আজও ওর অপেক্ষায় আছে। এটাও কি সম্ভব! ইউরোপ আমেরিকা হলে তবুও হয়তো হতো, কিন্তু বাংলাদেশের এক মফস্বল শহরে একটি মেয়ে বিয়ে না করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলছে! মধ্যবিত্ত পরিবারটিকে না জানি কত সামাজিক বিঘ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে এই মেয়েটির জন্য! শুচিস্মিতার বরের সাথে পরিচিত হয় নিরুপম। হাসান অত্যন্ত হাসিখুশি একজন মানুষ। ওদের দেখলেই বোঝা যায়, দুজনের মধ্যে দারুণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং আর প্রেম বর্তমান। আচ্ছা, নবনীতার সাথে ঘর করতে গেলে ওরাও কি এরকম সুখী হবে! ভাবতে গিয়ে আশঙ্কা আর সুখে ওর বুকের ভেতরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে।
শুচিস্মিতার সাথে পরের কয়েকটা দিন নিরুপম শলাপরামর্শ করে। প্রথমে ইন্ডিয়াতে মাকে ফোন করে জানায় যে ও নবনীতাকে বিয়ে করতে দেশে যাচ্ছে। মা যেন মাসিমাকে ফোন করে প্রস্তাব দিয়ে রাখেন। তবে নবনীতাকে পরে শুচিস্মিতাই জানাবে। এর পেছনে তো ওর কৃতিত্বই বেশি!
পরবর্তী কয়েকদিন ভীষণ ব্যস্ত রইলো নিরুপম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েকমাসের ছুটি নেওয়া, শুচিস্মিতাকে নিয়ে টুকটাক কেনাকাটা, ইংল্যান্ডে ওর এক্স এমিলি আর ছেলে নীলকে জানানো।
নবনীতার মা রাজি হওয়ার পরে নিরুপম ফোন করে অভিষেককে। অভিষেক নিরুপমের ফোন পেয়ে প্রায় কেঁদে ফেলে! ও অনেক পরে বুঝতে পেরেছিল নবনীতা আসলে নিরুকে ভালোবাসতো। আদরের ছোটবোনের একা থাকার সিদ্ধান্তের জন্য ও নিজেকেই দায়ী করতো! কিন্তু ততোদিনে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিলো! বাবার শরীর ভালো নেই, তাই ইন্ডিয়া থেকে মাকে সাথে নিয়ে প্রায় বিশ বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখে নিরুপম। এই বিশ বছরে কতো দেশে ঘুরেছে ও। কিন্তু এভাবে তো কখনও গায়ে কাঁটা দেয়নি! ওর পূর্বপুরুষের মাটি এটা! বাবার ঘাম, বোনের রক্ত, মায়ের চোখের জল মিশে আছে এই মাটিতে! বিদেশে না থাকলে দেশপ্রেম যে কী তীব্র একটি বোধ তা ও বুঝতেই পারতো না!
মা আর মাসিমার মিলিত কান্না আর উলুধ্বনি মিলেমিশে এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্য দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। প্রায় মাঝরাতে নবনীতা আর নিরুপম একা হয়। নিরুপম একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে,
– কী রে খুকু, টান দিবি নাকি কয়েকটা, আগেও তো খেতি!
একটু হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় নবনীতা। লাল শাড়ি, সিঁদুর, শাখা, পলা পরা বউয়ের হাতে সিগারেট দেখতে বেশ মজা লাগে নিরুপমের। ধোঁয়ার আড়ালে ঝকঝক করছে নবনীতার চোখ!
তারপর ইলেকট্রিক বিল জমা দিতে যাবো। আমার দেরি হবে আসতে। স্বামী অমর বলে, ঠিক আছে।…..
নভেম্বর চলছে। অনির সাথে আজ দেখা হবে তা জানাই ছিল। এই তো ক’দিন আগেই দেখা…..
বুড়িমাসি বলেন,জীবনটা বালির ঘর গো।ঢেউ এলে ধুয়ে যায় জীবনের মায়া।তবু বড় ভালবাসা ওদের দাম্পত্যে।রোদের চাদরের…..
এক ড্রইং রুমে বসে রয়েছে সদ্য কিশোর উত্তীর্ণ তরুণ গোয়েন্দা সজীব। সামনের টেবিলে ছড়িয়ে…..