নষ্ট পুরুষ

সুদীপ ঘোষাল
উপন্যাস, নভেলেট
Bengali
নষ্ট পুরুষ

চান্ডুলি গ্রামের মধু লরির ড্রাইভার।মধু বলছে মালিকের মাল লরি করে চলে যায় ত্রিপুরা,ঝাড়খন্ড,বিহার,উত্তরপ্রদেশ,পাঞ্জাব পর্যন্ত। সারা ভারত ব্যাপি উন্মুক্ত চলাচল। মালিকের অনেক লরি। লাভের কমতি নেই। তাই আমাদের টাকার কোনো অভাব থাকে না। আমরা সব সময় মালিককে বাঁচিয়ে কাজ করি। ছোটোখাটো চালাকি, বাল, চুরি তো থাকবেই। তা মালিকেও জানেন। সতন শুনছে মন দিয়ে।

মধুর এখন একটা খালাসি চাই। খালাসি তৈরি করে নিতে হয়। মধু সতনকে ট্রেনিং দিচ্ছে।
সতন বললো,ঝেড়ে কাশো তো। কি কি কাজ করতে হবে বলো।
মধু বললো,তিরপল দিয়ে মুড়ে মাল ঢাকা দিয়ে বাঁধা তোর কাজ। চাকা ফেঁসে গেলে আমার সঙ্গে লেগে পাল্টে ফেলতে হবে। রান্না করতে হবে। ছ’ মাস,বা এক বছর লরি থেকে ছেড়ে পালানো হবে না। আর গোরুর গাড়ির মতো বাঁয়ে বাঁয়ে, ডাইনে, ডাইনে জ্ঞান থাকতে হবে। তু যেমন বলবি লরি সেমনি যাবে। বিরাট দায়। বুঝে নাও। পারবা কি পারবা না পোতোমে চিন্তা কোরো। পরে বেগরবাঁই করলে কেলানি খেতে হবে। আর রাগ থাকলে হবে না। তোর মাগ থাকবে না যে রাগ থামাবে । কি করবি দেক বাপু।

সতন অনেক কিছু শুনেছে। লরি তো অনেক দূর দূরান্ত পাড়ি দেয়। ছমাস,নমাস নামা যায় না। খাটনি আছে। তবে মজাও আছে। কত দেশ,কত মেয়ে যে দেকতে পাবো তার হিসাব নাই।

মধু বললো, পিঁয়াজি করলে চলবে না। আমাকে মালিক রেখেছে। আর খালাসির মালিক আমি। আমার কথা শুনলে লিতে পারবি না কেরি মদ,ইংলিশ। চ, চ,আরও কত কি।

সতন বললো,আমি রাজি। আমাকে যা বলবা তাই করবো। বাঁড়া বাড়িতে বসে বসে অরুচি হয়ে গেয়চে।চ, তোর সঙ্গে যাই মারা অত চিন্তা করতে পারচি না। বাড়ি থেকে কি কি লোবো।

মধু বললো,সাদু মারা সাধু। কিছু লিতে হবে না। সব কিনবো।। একবার চ,তালে বুঝতে পারবি।

সতন বাড়িতে বলে লরিতে উঠে পরলো। বৌটা ভাবলো, শালা বাঁচলাম। কুঁড়ে ব্যাটাছেলে দেখতে লারি। শুধু বিসনায় ডাকবে। আর কোনো কাজ নাই। পাশের বাড়ির পুঁয়ে তালেই ছিলো। বললো,গেলো হারামিটা,তোমাকে না দেখলে ভাত হজম হয় না।
বৌ বললো,পরের বৌ খুব ভালো লাগে লয়।
পুঁয়ে বললো,যা বলেচিস। এক জিনিস ভালো লাগে না মাইরি। বলেই সতনের বৌকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় ফেললো। বৌটা বললো,অনেকদিন পরে আকাশটা ভালো লাগচে লয়। খড়ের চাল ফুটো হয়ে এক টুকরো নীল আকাশ হাসছে।

লরি তীব্র বেগে ছুটছে। যাবে ঝাড়খন্ড। সতন রাস্তা দেখছে আর গাঁজা হাতের তালুতে নিয়ে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ঘষছে। তারপর কলকে তে ভরে আগুন দিয়ে দীর্ঘ এক টান। গাঁজা পুড়ছে। এবার মধু টানছে। সুখ টান।
সতন ভাবে ড্রাইভার বটে। যতই নেশা করুক,স্টিয়ারিং কতা বলে। ঘোরাইচে দেকো,বোঁ, বাঁ…

মধু বলচে বুঝলি বোকাচো.., এ ছেলে খেলা লয়। তিরিশ বছর হলো, একটাও খাম হয় নাই। খাম হলে তোরও শেষ,আমারও জান শ্যাস। সতন বললো,মা তারার নাম করবি।
—- ওই তো ছবি আছে। ধূপ দেকাবি।
—–ওসব তোকে বলতে হবে না।

প্রায় ছ,ঘন্টা চলার পর সন্ধ্যেবেলা ওরা থামলো বনের ধারে। আলোআঁধারি। সতন বললো,এখানে ক্যানে। মধু বললো পেত্নি দেকাবো তোকে। সতন ধূপ দেখালো। তারপর কান্ট্রি বোতল খুললো।মাংস হোটেলে নিয়েছে। সতন বললো,এক প্যাগ দোবো। মধু কিছু না বলে ঢকঢক করে আদ্দেক খেলো। সতনও খেলো।
সতন বললো,পেত্নি কই?
মধু বললো,কথা কম বলো, মদনা। কাজ সেরে কেটে পরো। নরক শালা নরক।

নেশা বেশ জমেচে এমন সময়ে, এক সুন্দরী এলো। বয়স কুড়ি হবে।
মধু বললো,ভালো নাই।
সুন্দরী বললো,দাঁড়া আসছে। তারপর সতন দেখলো,
একটা আরও সুন্দরী মেয়ে এলো। মধু লাফিয়ে কোলে তুলে তার সামনেই কাজ শুরু করলো। সতনের চোখ মাছের চোখ হয়ে গেলো।

মধুর মায়া হলো। দাঁড়ানো সুন্দরীকে বললো, দে গতরের রস ওকে। টাকা,পয়সা আমি দোবো। হারামির চোখ দেখো।পলক নাই শালার।

সুন্দরীকে দেখে সতনের বুক ধক ধক করছে। সে বলছে, কোথা বৌ আর কোতা এই সন্দরী।সতন দেখলো, লুঙ্গি তুলে সুন্দরী মাথা ঢুকিয়ে ফেলেছে। কি জাদু জানে শালা। জেবন সার্থক হোলো। সতন নেশার ঘোরে বক বক করে। মধু বললো,নরক। কিন্তু এখানে তো স্বর্গসুখ। ..পাগল, মাতাল কখন যে কি বলে, লে? আহা! আহা! সুন্দরী আমার পেটে চেপে লাপাইচে দেখো।

মধু বললো,ও হো, ওহো। কি ফাঁদ, পেতেচো তুমি,আমি মরেছি, মরেছে কত, জ্ঞানী গুণী।

মধুকর মধু অভিজ্ঞ। মধু বলছে, শালা পয়সা উশুল। কিন্তু খালাসি নতুন। মধু বললো,শালা নেঙা বাসুলে, তড়িঘড়ি মাল ফেলে, ঠিক উশুল হলো না। খুচ খুচ করছে মনপাখি তোর লয়? খ্যাক,খ্যাক…।

সতন বললো,পরের বারে শোধ লেওয়া লোবো। সুন্দরী হাসে। বলে,সবাই তাই বলে সোনা, করতে গিয়ে দেখি কানা। খচ্চর, কানা বেগুন। যাঃ…

তারপর সামনের একটা মার্কেটের পাশে লরি দাঁড় করালো মধু। অনেক কিছু কেনাকাটি করলো সতন ও মধু। খাবার জিনিসও নিলো। শুকনো খাবার। তাছাড়া কাজু,কিসমিস ও মদিরাতে ইংলিশ মাল। পাঁচ বোতল নিলো। মধু বললো,পয়োজনে আরও লেওয়া হবে বুঝলি। জেবনে কিছুই নাই। খাও,দাও,হাগো, ফুর্তি করো। ব্যস,আবার কি। জেবন একটা ভোমোস। সব জল ফুটোতে যাবে। সতন বললো,যা বলেচিস। ওই ছোটো পারা ফুটোতে বিঘে বিঘে জমি ঢুকে যায়।তিনঘরার বিমান পালের তিরিশ বিঘে জমি মিতা খানকির ফুটোয় বেমালুম ঢুকে গেলো। শালা এখন ভিখারি। সত্যি কতা বললেই খারাপ হয়ে যাবি। শালা এই তো জেবনের ইয়ে।

সতন বললো,শরীলটা মাগী বোঝে রে । কিসে শেষ হবে এই বাসনা।একটার পর আর এক পাওনা।

মধু বললো, হবে না,পোতোমে হবে না। পরেও হবে না। আমার হাজার পেরিয়ে গেলো। হোলো নো হোল। সারা জাগার মেয়েছেলে পেলেও মন মানে না। বাবা এই শরীরে সারা পিতিবি বাস করে। মধুর ভাব জেগে ওঠে। পাগলা মধুর গলা ভালো,গান ধরে,ওরে দেহের ঘরে,কাদা মেরে,দে বুজিয়ে কামের ঘর। ওরে আমার রসের নাগর…

সতন ভাবলো মধুর গলা খুব ভালো। বললো,কার লেখা গান গো।

মধু বললো,বাল,লেকাপড়া শিকি নাই। আমি নিজে গড়ে নিজে গাই।

সতনের নেশা হয়েচে। শুয়ে পরলো। সুন্দরী সঙ্গে আছে। কেনাকাটা করে খুশি। মধুর সঙ্গে অনেক দিনের আলাপ। বলচে,গান কর মধু। গান কর।
মধু বললো,এই খারাপ কাজ করিস কেনে।
—-খারাপ কি বলছিস। এই কাজ করে আমরা সমাজকে সুস্থ রাখি,নির্মল রাকি।সুন্দরী এখন খুব সিরিয়াস। সবসময় ওরা নষ্টামো পছন্দ করে না। ওবলে,খানকিদেরও একটা নিয়মরীতি আছে। যখনকার কাজ তখন,বুঝলি, বোকাচোদা। এটাও একটা চাকরীর মতো। ওভার টাইমে, ডবল পয়সা।
মধুর আর কথা বেরোলো না। সতন সাবধান হয়ে গেলো সুন্দরীর গম্ভীর মুখ দেখে।

দুজনেই ঘুমিয়ে পরলো। ড্রাইভাররা ক্লান্ত হলে এইসব জায়গায় বিশ্রাম নেয়। এগুলোকে ধাবা বলে। খাওয়া, শোওয়া, মাল,মাগি সব ব্যবস্থা এখানে আছে। কোনো পুলিশের ঝামেলা নেই। এইসব হাত অনেক লম্বা। পাশেই আর একটি গুমটি আছে। খাওয়ার কোনো অসুবিধা নাই। পয়সা থাকলেই হবে।

দুঘন্টা ধাবায় বিশ্রাম নিয়ে মধু আবার লরি ছোটালো। মানি ব্যাগটা পরে গিয়েছিলো। সতন খুলে দেখলো কম কোরে তিরিশটা দুহাজার টাকা। বাইরে বেরোলে টাকার পয়োজন ভাবে সতন।
মধুকে ব্যাগটা দিলো।, হারিয়ে গেলে কি করতিস বললো সতন। মধু বললো,আমরা এক জায়গায় টাকা রাকি না। লরির ভেতরে গিয়ে দেখালো অনেক টাকা। দেকে রাক, আমি রাস্তায় মরে গেলে টাকাগোলা জলে না যায়। সতন ভাবে কি জ্ঞান মধুর। মৃত্যুকে ভয় করে না। আবেগে জোরে বলে উঠলো,তু তো সাধু রে মদু। মধু বললে,সাধু নয় চদু।

সতন ভাবে বেশ ভালো জীবন। আমরা তো মরেই আচি। তবু বাইরে বেরিয়ে অনেক কিচু বোজা যায়,দেকা যায়। মধু বললো,জল পরচে,একবার দেকে আয়। জল ঢুকলে তোর দোষ। সতন গেলো, ভালো করে ঢাকা দিলো। কাজে ফাঁকি মদু বরদাস্ত করবে না। তারপর নিচে এলো। শীতের জল।ছ্যাঁকা লাগচে গায়ে। মধু বললো, ভালো করে ঢাকা দিলি তো। সতন গা মুছতে মুছতে বললো,হ্যাঁ।

আবার গাড়ি চলতে শুরু করলো। সতন বললো,একটা কতা বলবো।
—–বল,বল
—–আবার মেয়েচেলে পাবো।
মধু বললো,পরের ব্যাপার পরে।দেকচিস না মা তারার ছবি। ওসব বলতে নাই। বাড়ি আর লরি সমান কতা। মন্দিরের মতো। কোনো খারাপ কতা সেখানে বলতে নাই।

সতন ভাবে,বহুদিন আগে মিঠুনের একটা সিনেমা দেকেচিলো। ঘর এক মন্দির। বটে,বটে ঠিক বলেচে মধু।

মধুর সঙ্গে ছেটো থেকেই একসঙ্গে মানুষ হয়েছে। কত ঘটনা মনে পরচে। মনকে চেপে ধরলো, এক ঢোক মদ খেলো। ওসব বাবুগিরি কল্পনা তবু মুছে গেলো না সতনের। সে এখন কবি।
সকালের দৃশ্য বড়ো মনোহর । লরি থেমেচে।এখানে শহরের মহিলা পুরুষ সকলেই একসাথে ভ্রমণে ব্যস্ত । সবুজের নির্মল ছোঁওয়ায় , মন হারিয়ে যায়, সুন্দর হাওয়ায় ।লরি থেকে নেমে মধু বাসি মুখে কান্ট্রী মদ খায়। তারপর সারাদিন মার্কেটের ব্যস্ততার সময়ে শরীর ঠিক থাকে । ঠিক গোধূলির আলোয় আবার মানুষের মন হারানোর পালা । এ পালা শেষ হবার লয়।

সতন জানে, চুপিচুপি অন্ধকার, রূপের আদরে আশাতীত ভালোলাগার পসরা সাজায় ।হারিয়ে যাওয়ার আনন্দে, আলোকের গোপন ঈশারায়। খানকি মাগিগোলা সেজে বেরোয় মধুর মতো মরদের খোঁজে। আঁধার ভোগের শেষে, আবার আলো। আঁধারের মূল্য অসাধারণ । আলোর পরশে ভালোলাগার কারণ এই আঁধার।আবার সতন ভাবতে শুরু করে, আমি অনেক সাধুর সঙ্গে ঘুরেচি। আবার সাদুর বেশে অনেক চদুকেও দেকেচি। ভালো মন্দ অনেক কাজই আমি করেচি। তাই ভাবি ভগমানের কথা। মনে আমার ভালো খারাপ সব চিন্তা আচে যা অনেক সাদুর থাকে না। আমি শুনেচিলাম গুরুর কাছে অনেক সাধনার কথা। সেগুলো আমার মনে মনে ভাসে। আমি লুকিয়ে,অন্ধকারে থাকতে ভালোবাসি। লোককে সাদুগিরি দেকাইতে ভালো লাগে না।
কালো সন্দর, আনন্দের সাজি সাজায় কালো । এইসব চিন্তা করতে করতে আমি দেখলাম ঝপাং করে রাত নামলো । আলো জ্বালিয়ে বুড়োদের,ছোকরাদের তাসখেলার আসর শুরু হলো জুয়ো খেলা। আর একদিকে আলো। সমস্ত অভিমান ঝেরে ফেলে ঝরঝরে নবীন মনে বাড়ি ফিরলো তারা । অনেক মানুষ একসাথে বসে দুঃখ ভুলে হরি নাম সংকীর্তনে চাঙ্গা হয়ে ওঠে। নতুন ভাবে বাঁচার রস পেয়ে যান রসিক মানুষ ।
সতন ভাবছে,আমি সামান্য খালাসি। এইসব ভাবনা আমার সাজে না। কাজটা ভালো করে করতে হবে। তবে মন মানে না। আবার ভাবতে শুরু করে,
সুখে দুঃখে ওঠা, পরায় জীবন পাল তোলা নৌকার মতো এগিয়ে চলে পতপত শব্দে। সূর্য ঘড়ির থামা ‘ বলে কোনো শব্দ জানা নাই।মনে পরে তার,চান্ডুল গ্রামে বেসকা বুড়ি তিরিশ বছর আগে একটু জায়গা দখল করে বসেছিলো। তার আসল নাম ছিলো বিশাখা। তখন জায়গাগুলো বন বাদাড়ে ভরে ছিলো। নানারকম সাপ,জন্তু, জানোয়ারে ভর্তি ছিলো এই অঞ্চলটা।

বেসকা বুড়ির মুখে বোলচাল ছিলো খুব। সে প্রায়ই বলতো,জানিস, আমরা বাঘের সঙ্গে লড়াই করেচি। আর তোরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করে মরিস। আরে আমরা মিলেমিশে ছিলাম বলেই তো টিকে আছি। দশটা লাঠি দেখে বাঘও ভয় পায় রে। মনে রাকিস কথাটা।

সতন দেখতো,বুড়িকে সবাই ছেদ্দা করতো। সে জানে, সবার সুখে দুখে সে থাকতো। পরামর্শ দিতো। সবাই তার শান্ত স্বভাব দেখে আদর করে, দাতা বুড়ি, বলে ডাকতো। সবার সুখে তার সুখ।

দাতাবুড়ি যখন কুড়ি বছরের যুবতি জীবনে পা দিয়ে চলতে শুরু করেছে তখন থেকেই তার অনাথ শিশুদের প্রতি ভালোবাসা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো। রাস্তায় একদিন একটি অনাথ বাচ্চা বললো,দিদি আমাকে কিছু খেতে দাও।

—–ঠিক আছে আয়। কচুরি খাবি আয়।

পরম যত্নে বাচ্চাটাকে খাইয়ে তার ভিতরে একটা আনন্দঘন শক্তির অনুভূতি হলো। সে বলে,এই আনন্দ বলে বোঝানো যায় না। যার হয় সেই বোজে রে। সতন জানে,

তারপর থেকে সে শুরু করেছিলো দীন, গরীবদের একমুঠো খাবার মুখে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা। নিজে বাড়ি বাড়ি ঝিগিরি করতো। পয়োজনে ভিক্ষা করতো। তবু পতিদিন দশ জনের খাবার ব্যবস্থা করতো।
তার শরীরের সুন্দর বাড় দেকে অনেকে তাকে সংসারী হতে বলেছিলো।

সে প্রথমেই জিজ্ঞেস করতো , প্রতিদিন দশজন বাচ্চার খাওয়ার দায়ীত্ব নিলে সে চিন্তা করতে পারে। পারবে কি?

কেউ রাজি হয় নি। সাহস করে বুকের পাটা দেখায় নি। একটু একটু করে সময়ের কাঁচিতে ছোটো বিবর্ণ হয়ে গেছে তার ভরন্ত শরীর।

মনে পরছে সতনের, দাতাবুড়ি তার ছোট্ট খড়ের চালের কুটিরে বসে। ক্যামেরা এনে কতগুলো লোক রাস্তায় ল্যাংটো বাচ্চাদের সাথে তার একটা ছবি তুলেছিলো। পুরস্কার দেওয়ার জন্য ডেকেছিলো। তাদের একজন বলেছিলো,আপনাকে পুরস্কৃত করবো আমরা। শিশুদের সেবা করার জন্য।

বুড়ি বলেছিলো, পুরস্কার নয়। আমাকে চাল দিন।ডাল দিন। নুন দিন। তাহলেই আমার পুরস্কার পাওয়া হবে। তা না হলে মরগা,ঘাটের মরাগোলা। কি আমার ঢঙের মালা রে। মালা লিয়ে পেট ভরবে? যত ওলাওঠার দল
পালা পালা,যত ঝামিলি…

তাদের একজন বুড়িকে ভালোবেসে ফেলেছিলো। সুশান্ত নামের ছেলেটা খুব শান্ত স্বভাবের। সে রাজী হয়েছিলো বুড়ির বিয়ের শর্তে। বুড়িকে দেখে তার চোখে কান্নার বান আসতো।

তারপর সুশান্ত বিয়ে করেছিলো
। প্রায় কুড়ি বছর তারা দুজনে সেবাশ্রম চালিয়েছিলো। বুড়ির সন্তান হয় নি। সবাই বলতো ও বাঁজা। অলক্ষুণে…

সুশান্ত বলতো, তোমার অ নেক সন্তান গো। তাই ভগমান তোমাকে আলাদা করে কোনো ছেলেপিলে দেয় নাই।

সুশান্ত মরে যাওয়ার পরে আবার পুরোপুরি নিজের কাজে ডুব দিয়েছিলো। ধীরে ধীরে তার বয়স বাড়লো। তার তো জমানো মূলধন নাই। তাই সকলের কাছে চেয়ে নিজের খিদে মেটাতো। এখন সে ভালো করে হাঁটতে পারে না। কত জনাকে খাইয়ে এসে শেস জেবনে তাকে খাবার দেবার লোক নাই। কেউ জানলো না তার আজীবন সাধনার বিষয়। দাতাবুড়ি ভিকিরি হয়ে গেলো। সতন দেখতো,
বুড়ি বসে বসে ভাবতো তার জীবনের কথা।সতনকে সে কথায় কথায় বলতো, আমার আসল নাম বিশাখা। সবাই ছোটোবেলায় বেসকা বলে ডাকতো। আর এখন আমার নাম হয়েছে দাতাবুড়ি। আমার ভগমান মানুষ। ভালোবাসা। আমার জ্যান্ত ভগমানের সঙ্গে মিলিত হবার শেষ আয়োজন শুরু হয়েছে। মনে পরচে, আমার সামনে থেকেও রকেটের দাগের মতো মিলিয়ে গেলো সোয়ামী। গঙ্গার জলে ডুব দিয়ে আর উঠলো না সুশান্ত । তলিয়ে গেলো স্রোতের তোড়ে। রোজ আকাশে তারা হয়ে জ্বল জ্বল করে আমার চোকের আয়নায়। হাওয়ায় ওড়া আমার বেহিসাবী মন আজও দেখতে পায় অই আকাশে তার বিচরণ। বুড়ি বক বক করে আপনমনে।সতন যেতে আসতে তার প্রতি নজর রাখতো। আঁকে আমলে মানুষের ভালোবাসা জড়ায় জেবনে।

যে সব মানুষ অন্ধ, খোঁড়া, সে কারণে মানুষের সাহায্য চেয়ে বাঁচতে চায় তারা ভিখারি নয়। বুড়ি বলতো।

বুড়ি ভাঙ্গা গলায় ফোকলা দাঁতে বলতোকাউকে জানিয়ে তো আমার সাদনা সফল হবে না। নীরব,নির্জন পরিবেশে সাধনা করতে হয়। তবেই সিদ্দিলাভ ঘটে গো। বুঝলা কিছু বাবাসকল।
বুড়ি বসে বসে শুধু পুরোনো দিনের কথা ভাবে আর বলে। কিন্তু শোনে না কেউ। সে তো লেখাপড়া জানে না। তাই মন পাতায় লিখে রাখে ভাবনার কলমে। কালের বিচারক কোনোদিন ঘুষ খায় না গো। অপেক্ষায় প্রহর গোনে নিজের অন্তরের দীপ শিখা জ্বালিয়ে বুড়ি ভাবে আরও অনেক স্বপ্নের কথা।
বুড়ি বলছে, আমার জীবনে দেকা ঘটনার কথা। গল্প লয়। ভালো করে শোনবা। আজকে বৃষ্টি পরচে বলে তোমরা চারজন পাড়ার বৌ শুনছো আমার বকবকানি। তাদের বলছে বুড়ি, শোনো সত্যি ঘটনা। কয়েকদিন ধরে দেখছি,
একটা দশ বছরের বাচ্চা মেয়ে আমাদের পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। কে ওর বাবা কে যে ওর মা কেউ জানে না। কারও জলএনে, কারও চা এনে ও কাজ করে আপনমনে। তারপর মুড়ি নিয়ে, কারও কাছে চেয়ে ভাত খায় আধপেটা।যে মা জন্ম দিয়ে সন্তান ফেলে পালায় সে তো অপরাধি বটেই।কিন্তু তার থেকে বেশি অপরাধ করে কাপুরুষগোলা। তারা রাতের আঁধারে মেয়েছেলে পেলেই পশু হয়ে যায়।দিনের বেলায় ভদ্র সেজে ঘুরে বেড়ায়।আর রেতের বেলায় গুয়ামারানির দল গু চেটে খায়। নিজের মেয়ের বয়সী মেয়েকেও ছাড়ে না। শালাদের পরকাল ঝরঝরে।

বুড়ি সব জানে,সব বোঝে। তবু তার পাড়ায় নাবালিকা, নাবালক অনেকে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি শুধু দুমুঠো খবারের আশায় পরে থাকে। খোলা আকাশের নীচে শোয়। শীতে ঢাকা পায় না। রাতে রাতচড়ার আক্রমণ। কচি মেয়েদের শালারা কুকুরের মতো চাটে। বোকাচোদাদের বিচার না করে গুলি করে মারা উচিত। কিন্তু ঘন্টা বাঁধার মানুষের বড্ড অভাব। বুড়ি বলে তার পাড়ার লোকদের। সে বলে,আর কোথায় বা বলবো বল। তোরাই আমাকে শ্মশানে পোড়াইতে লিয়ে যাবি। আমার জন্য কাঁদবি। তোরাই আমার আপনজন। সুখে,দুখে,শ্মশানে যারা থাকে তারাই তো আসল বন্ধু রে। আর বাকিরা সব টাকার গোলাম। তুমি দিতে পারলে ভালো। দিতে না পারলে বোকাচুদি।

সত্যি কথাগুলো মনে করলেই বুড়ির মুখটা কালো মতো হয়ে যায়।
ও বলে পাড়ার বৌ, ঝিদের। ওসব বড়ো বড়ো কথা ভেবে লাভ নেই। আমরা আদার ব্যাপারি গো। কতজনকে খেতে দোবো?আমাদের খ্যামতা কতটুকুন?

কথা বলা আর কাজ করে দেখানোর মধ্যে বিস্তর ফারাক গো।ভগমান খ্যামতা দিলে একবার দেকতাম। বুড়ি বলে যায় তার পরিচিত লোকদের।

এবার সতন বুড়ির কথা ছেড়ে বাস্তব জগতে ফিরে এলো। বললো,বাঁয়ে বাঁয়ে…। লরি চলছে। বসে ভাবা ছাড়া কাজ নাই। এত ভাবুক হলে হবে না সে ভাবে মধু তো পাকা ড্রাইভার। ঠিক সামিলে নেবে। আবার ভাবে,বোকাচোদা বিশাল মাতাল। চুদির ভাই কেনে যে গাড়ি চালাবার আগেই মদ খায়, জানিনা। আমরা খালাসি, একটু,আধটু খেতে পারি। কিন্তু তু তো ড্রাইভার। তোর খাওয়া উচিত লয়। আবার ডুবে যায় চিন্তায় সতন। সামলাতে পারে না নিজেকে, অতীতের ভালোবাসা, থেকে,স্মৃতির আকর্ষণ থেকে।
আবার বুড়ির কতা মনে পরচে।যে চারজন পাড়ার বৌ তার সঙ্গে ছিলো। তার মাজে আমার বৌটাও ছিলো। তার মুকেই শোনা। বুড়ি বলচিলো,আমি ঝিয়ের কাজে যেতাম আর বাচ্চা মেয়েটাকে দেখতাম। আজ কয়েকদিন হলো পাড়ায় কোথাও মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না। বেশ কয়েক বছর আগে ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসে পরেছিলো। তখন মেয়েটা পনেরো বছরের। বাবা, মা কেউ নাই। কোতায় গেলো বাপু। আমাকে ওর মতো বয়সে এক বুড়ো ঢ্যামনা আমাকে পোতোম ন্যাংটো করেছিলো। শালা, সেই শালাকে ঠেলে সিঁড়িতে ফেলেছিলাম। ভয়ে আর আমার গতরে হাত দেয় নাই। তাহলে আমার মতো ঘটনা ঘটে নাই তো। মেয়েটোকে লিয়ে পালায় নাই তো?

বুড়ি শুনলো,সবার মুখেএকটাই কথা। গেলো কোথা? যে বাচ্চাটি ওর সঙ্গে কাজ করে সে এসে বুড়িকে বললো, গতরাতে দুজন লোক গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে মেয়েটাকে লিয়ে পালাইলো। আমরা চেঁচামেচি করেছি কিন্তু রাতে কাউকে পাই নাই। একজন মটর সাইকেলে ছিলো। মেয়েটাকে মাজে বসিয়ে কাপড় ঢাকা দিলো। মেয়েটা দেকলাম নেতিয়ে পরলো।

বুড়ি বললো,দিনরাত দেকচি রে লীলাখেলা। শালারা অজ্ঞান করে তারপর লিয়ে যায়। যা কাজ কর। শালা, লোকগলা পাপিষ্ঠ। কোনো বেশ্যাখানার গলিতে বেচে দেবে। মুখোশ পরা আসামীর দল। মেয়েটাকে ছিঁড়ে খাবে হায়েনার দল। বুড়ি বলচে,আইন আছে। কিন্তু সে আইন শুধু কাগুজে আইন। সারা জাগায় কে বসে থাকবে পাহারা দিতে। তবে ওপরওলা আচে। তিনি সব দেকচেন। বুড়ি বলে চলেছে তার অভিজ্ঞতার কথা। সে বললো,শালা, কি আর বলবো। আবার নতুন আমদানী। অনেক দিন পর আবার মাঠপাড়া বস্তিতে দেখলাম একটা বুড়ি কাজ করছে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। সোজা হতে পারচে না। একটা বৌ বললো, আমাদের বস্তির গো,তমালের বেটা পড়লো না স্কুলে। মদ খেতো।বিড়ি খেতো। তামিলনাড়ুতে সোনার দোকানে কাজ করচে। ছোটো ছেলের রোজগারে বাপ মা খায়। কি করবে,বস্তি তে থাকলে, মামেগো, মদ খাবে। তাই তার দিদিমা ওদের খেটে খাওয়ায়। মায়ের রোজগারে মেয়ে, জামাই খেচে। লজ্জার কতা বাফু। বুড়ি সব জানে,তাই সে বললো, শোনো গো আমার কতাটা। মাঝে কোনো কতা বোলো না। তোমাদের কথা পরে শুনবো। আমি নতুন বুড়ির কতা বলি।

মধু হঠাৎ সতনকে সাবধান করলো,ভালো করে দেকিস,গাড়ি ঘোড়া। বেশি বাড়ির কতা ভাবিস না। লাভ নাই। ও বলছে,সতনকাজ না করে চুপ করে বালছাল চিন্তা কোরোনি,শালা মরবা নাকি?

তবু বেহায়া সতন আবার ভাবছে পুরোনো দিনের কথা। বৌয়ের কাচে শোনা কতা। দাতাবুড়ির কতা।

বুড়ি দোকানে জিজ্ঞাসা করলো,কি গো নতুন বুড়ি দেকচি। ভাই,একে পেলে কোতায়?
— আর বলবে না ঠাকুমা । রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বেড়াতো। কথা বলে না। কম বলে। বুড়ি,আর কদিন পরেই ভোগে যাবে। আমি কত বলি,কতা বলো গো। একবারও বলে না।

—– কেনে গো…

–; অত বুঝি না, খাটে খায়।

বুড়ি বলে,আমার বনধু ঝুমা যেচে বাজারে। আমি তার সঙ্গ নিলাম।
—- চায়ের দোকানে বুড়িটা দেকলি?
—- হ্যাঁ, দেকেছি,ওর সব কতাই শুনেছি। কিছু করার নেই। পারবি চ,ওকে হাসপাতালে দি গা।
—- যদি মরে যায়।সব খরচ,ঝামেলা তোমার মাতায় চাপবে। আর তোমার সমত্থ বয়েস নাই। আমার সংসার আচে গো। তুমি রাকোগা।

বুড়ি ভাবে, ও তো জানে না আমার কথা। আমিএই বয়সে আর। মাজা তুলতে পারবো না। পুরোনো ঘোড়া, ঘুরে ঘাস খাবে না। আমিও রাস্তায় রাত দেকেচি। বড়ো হয়েচি। এখন একটা খড়ের চালের ঘুপচি ঘরে আচি। কোতায় রাকবো ওকে।

পরের দিনেই কতা না বলা, বুড়িটা মরে গেলো। দোকানের লোকগোলা চাঁদা তুলে পোড়াইলো। এইজন্যে দোকানের লোকগোলাকে ভালোলাগে। বেপদে ওরাই আগিয়ে আসে গো। বাছারা বেঁচে থাকো
বুড়ি কাপড়ের খুঁটে চোক মোচে। নাকের জল মোচে। রাস্তার ছোটোলোক ছেলেদের পরমায়ু বাড়ার আশীর্বাদ করি। ওরা যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক ভগমান। আমার এই গল্প আজ শেষ হলো গো। তোমরা বাড়ি যাও।

জল পরা, থেমে গেলো। সবাই কাজ আছে বলে ঘরে চলে গেলো। আমার বৌটা ঘরে এলো। সতন ভাবে,বৌ এর কাছে আমি বুড়ির সব কথা শোনতাম। বৌটাও বুড়িকে ছেদ্দা করতো
এটা সেট খাবার রান্না করে দিতো।

তারপর আমি বাইরে এলাম দেখলাম, বুড়ির কোনো কাজ নাই। ষাঁড়ে গুঁতিয়ে ফেলে দেওয়ার পর থেকে কোমোর ভেঙ্গে গেয়েছে। দুহাতে ভর করেই নিত্য কাজগুলি করে খুব কষ্ট করে। সতন আরও দেখলো,দুটো পাড়ার মাতাল এসে বললো,নিজের জন্যে কিছুই নাই। ভিখারী কোতাকার। আবার বড়ো বড়ো বাতেলা। রাকতে পারো নাই কিচু। আমি বললাম,ওকে কিচু বোলো না গো। ও দাতাবুড়ি।আমাদের বস্তির নামকরা নোক। একটা নেপও লাই যে,ওকে দোবো। কিচু নিজের বলে লাই গো বুড়ির। মাতাল দুটো কেঁদে ফেলে। পালিয়ে পেন্নাম করে পালায়।

বুড়ি বলে, শুনে যা। টাকা, পয়সা রেকে কি করবো রে। একবার চোক বুজলে দেকতে পাবি তোর বাড়ি,জমি। সব হাসবে। জোর করে চোক খুললেও দেকবি না তকন। মলে আর কিচুই তোর লয়। শালা মাতাল হয়েও চোকে জল। হুঁ হুঁ বাবা, এই হলো আমার দেশের নোক।

তিনকুলে আমার কেউ নাই। মরলে তোরাই কাঁধে নিবি বাবা, আমি জানি। সতন দদেখেছিলো,জোড় হাতে মনে মনে ওদের মঙ্গলের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলো দাতা বুড়ি। সে ভাবে,দাতা বুড়ি,এত বড় মন কোতায় পেলো?

১০

দাতাবুড়ি আজ সাতদিন হলো মৃত্যুশয্যায় শুয়ে আচে। কিছু খেতে পায় নাই ঘরে পরে আছে। ঘেন্নায় পায়খানার গন্ধে কেউ কাছে যায় না। সাতদিন পর সকালে সে পৃথিবীতে গোলাপ মনের পাপড়ি র সুগন্ধ ছিটিয়ে পরলোকে চলে গেলো। সবাই বললো,একটা দাতাবুড়ি ছিলো বটে,পাড়ায়।

সতন পরে শুনেচে,পাড়ার দুজন গাঁজা খোর লোক বুড়ির খুঁটে বাঁধা টাকা চুরি করতে গিয়ে দেখলো তার অভাব নাই। অনেক টাকা। সমাজের ওপকারে লাগাইতো। পাড়ায় জানাজানি হলো। লোক দুজন মাথা হয়ে পাড়ায় চাঁদা তুললো। প্রায় পাঁচ হাজার টাকা হয়েছিলো।তাদের নেশা তীব্র হলে বিবেক জাগ্রত হয়ে বলে, বুড়ির দয়ায় ফুরতি হলো। এবার ওর ছেরাদে মচ্ছপ করবো। ছেলেপিলে খাবে। আমরা একা খাবো কেনে। পাপ হবে না।

দাহ করার দশদিন পরে বাকি টাকায় বাচ্চাদের খিচুড়ি খাওয়ালো পাড়ার লোকজন। লোক দুটিও বলে উঠলো,জয় দাতাবুড়ির জয়।
ছেলেমেয়েরা সমস্বরে বলে উঠলো,জয় জয়…

দাতাবুড়ির জয়ধ্বনিতে ভরে গেলো পাড়ার একটুকরো আকাশ…

অনেক দূরে এসে সতনের পাড়ার কথা মনে পরছে। লরি আবার চলতে শুরু করলো। মধু খুব স্পিডে গাড়ি চালায়, ঝাড়খন্ড যেতে হবে যে। সে অন্য মনস্ক হয়ে গেলো।

মধু জোরে ব্রেক মেরে লরি দাঁড় করালো। সতনকে বললো,কি ভাবছিস। লরি থেকে নেমে ভাববি। এখুনি কিন্তু গাড়ি পাল্টি খেয়ে যেতো। মা তারা বাঁচিয়ে দিলো। দুবার সুযোগ পাবি না। সাব ধান। বোকাচোদা সাধু সেজো না। খালাসিগিরি করো। সতন সাবধান হলো। সে ভাবলো,ঠিক বলেচে মদু। গরীবলোকের এত শক ভালো লয়। প্রায় পাঁচঘন্টা পরে লরি আবার থামলো।

গাড়িটা সাইড করে লাগিয়ে গাড়ির আড়ালে বসলো দুজনে। এখানে বৃষ্টি হয় নাই। রান্না শুরু করলে সতন। লরি থেকে স্টোভ, হাঁড়ি, চাল,ডাল সব নামালো। তারপর ফুটতে শুরু করলো খিচুড়ি। সামনে নদী ছিলো। ঠান্ডা জলে চান করে প্রাণমন শান্ত হলো। খাওয়া হয়ে গেলো

তবে শোন, বলি,সতন শুরু করলো,পমদের গ্রামে চাঁদু বায়েন বরাবরই নাস্তিক প্রকৃতির লোক। সে রাস্তা দিয়ে গেলে,বিড়াল যদি রাস্তা কাটে তিন পা পিছিয়ে গিয়ে থুতু ফেলে না। এক শালিক দেখলে মুখে চুক চুক শব্দও করে না। আবার জোড়া শালিক দেখলে পেন্নাম করে না। শক্ত পোক্ত মন ও দেহের মানুষ। পম বলে ছেলেটা তাকে খুব ছেদ্দা করে। জীবনে সে এত শক্ত লোক দেখে নাই। তাই চাঁদু দা, কে দেখলেই সে নমস্কার জানাতো।

১১

একদিন চাঁদুকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে গ্রামের প্রবীণ মোড়ল মশাই বললেন,হাড় আম হাগিয়ে দেবে। পরো নাই তো সত্যি ভূতের কবলে। নিশি ভূত দেখেচিস।

চাঁদু বললো, দেখা আচে সব দেখা আচে।

মোড়ল বললেন,ঠাকুর একদিন ওকে সত্যি ভূতের কবলে ফেলে দাও। পঙ্গু করে দাও শালাকে। কোনো কিচু মানা শোনে না গো।

মোড়োল আরও বললেন,জানিস আমাকে নিশি ভূতে ডেকে নিয়ে গেয়েচিলো। সারারাত দুনি করে জল হেঁচেছি।সকালে দেকচি জলে জলময় জমিগোলা শীতের সকালে জলে আমার জীবন চলে যেতো। এই গেরামের লোকেই তো বাঁচিয়েছে রে। তাই তোকে বলচি,তেনাদের নামে খারাপ কতা বলো না। সতন আর মধু পুরোনো দিনের কথা নিয়ে গল্পে মত্ত। বাইরে বেরোলেই নিজের গ্রামের মাটি সোনা হয়ে যায়।

মধু বললো,ওই শালো পম ভোগ করতো আমার কাকার মেয়েটাকে।শালা ওকে ভালো লাগে না। চ,চ এবার লরিতে উঠি। ভাট বকলে আসল কাজ হবে না। তবে সতন তু যখন গল্প বলিস। ভাষাগোলা অত ভালো বলিস কি করে রে? আসলে তোর মধ্যে জ্ঞান ছিলো,ফুটে বেরুইলো না রে। তু ক্লাস সেভেন পড়েছিস আর আমি নাইন। আরও পড়লে ভালো হতো রে। আমাদের ছেলেগোলা যেনো মানুষের মতো মানুষ হয় ঠাকুর। তাদের জন্যই তো এত কষ্ট করি পভু।

সতন বললো,হা রে চ বাড়ি যাই। তিন মাস হয়ে গেলো। মেয়েটার জন্যে মন খারাপ করছে রে। বউটা কি করচে কে জানে।

মধু বললো, যাবি কি করে মাল খালাস করে তবে তো যাবো। শালা,আমার বৌটা কিছু কতা শোনে না। মজা দিতে জানে না। মাঝে মাঝে খাসি খেতে মন হয় রে। ওইজন্যে বাইরে শখ মিটিয়ে লি। মরগা তু শালি, খানকি।

মধু বললো,আমি আর একটা বিয়ে করেচি। সেখানে কিচু পয়সা ঢালতে হবে। কাউকে বলিস না, বাল। অশান্তি হবে।

সতনের মনটা ফুক ফুক করচে। মধুকে বার বার বলচে, আর একবার কচি মালটা পাবো না। তখনকার রক্ত চোষার মজাটা আর একবার পেতে চায়। মধুর মতো নাচতে চায় মন। পাবো না পভু।

——পাবি,পাবি থেমে খা দই খাবি। তোর হচে বড়ো দোষ। ধর তক্তা মার গজাল। গজাল শান দে। আমার বউটা কেমন রে?
সতন বলে,তোর বউ হেমার সঙ্গে…

মধু বলে,বাল,আমরাও তো তাই। করুগ, ওদেরও তো কাম ওঠানামা করে। ভদ্দলোকের বৌদের, মারা কত মেরেছি। আর আমরা তো ছোটোলোক। একবার ওই শালা মাষ্টারের বৌটা ডাকলো। মাষ্টার ছ,মাসে ন,মাসে বাড়ি আসে। বৌটা বাঁজা ব’ লে বাড়ির লোকে দেকতে লারে। ডাইনি বলে। শালী,ডাইনি বটে। একবার দেখি কাপড় তুলে, বড় বাজারের দোকান। তারপর ছ মাসের উপোসী ছারপোকা। দু ঘন্টায় সব মাল খালাস করেছিলাম। খুশি হয়ে অনেক টাকা দিয়েছিলো। দু বছর পরে একদিন দেখলাম,একটা ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে বাজারে যেচে। আমাকে চিনতে পারলো না। স্বামী,শ্বাশুড়ি সবাই খুশি। আর আমার মালিকের বাড়ির পাশেই ওদের বাড়ি। তাই অত কতা জানি। ছাড় মারা,গাঁড় মারাগগো।

১২

সতন বলে,ঠিক বলেচেস। ওই যে স্টেডিয়ামের কাছে তিনতলা সাদা বাড়িটার বৌটা,শালি, আমাকে দিয়ে করিয়ে কতবার টাকা দিয়েচে। বরটা শালা বুড়োচোদা।

মধু বলে,ঠিক করে। শালা বরটা দেকগা বাইরে কি করচে। নতুন নতুন মাগি। আর যত দোষ মেয়েছেলের বেলায়। আগুন লাগা, শালার সমাজের মুখে। ভাবে গান ধরে মধু,

ও মন আয়নাঘর, মনপাকি শুদু ধরি ধরি,ধরতে পারি না। আমার আমার করে ভুলি, কে বা আপন,কে বা পর। কামের ঘরে কাদা মেরে দে বুজিয়ে কামের ঘর…

ড্রাইভারের এত ভাব ভালো লয়। সতন বললো,গাড়ির দিকে মন দে চদু। মধুর মনে মধুকর মাতাল ঢুকে পরেচে। সে ভাবে লক্ষণ ভালো লয়।
সতন বলে,তোর গানের মাতা নাই,মুন্ডু নাই। শালা মাতাল। ভালো করে চালা আর গান করতে হবে না। সামনে খাল। দেখে চালা। মারবি নাকি নিজেও মরবি শালা, আমাকেও মারবি।

মধুর মাথা ঘুরছে,বুকটাতে ব্যাথা করছে। হাত পা অবশ হয়ে আসছে। সতন কি বলছে কানে ঢুকছে না শুধু ওর মনে পরছে একটা বিখ্যাত কবির লেখা গানের লাইন,মরণ কারো বারণ শোনে না রে,মরণ কারো মানা শোনে না…

সতন খালাসি বলে চলেছে, ঠায়ে,ঠায়ে চ,বায়েঁ বাঁয়ে, মধু গেলো,গেলো, বিরাট খাল ডাইনে। ওরে মাতাল, ওরে দামাল,ওরে কবিয়াল, সামালকে…, সতন লরির দরজায় চাপড় মারছে বাঁ হাত দিয়ে,ধপ,ধপ,ধপ…

হঠাৎ ভীষণ শব্দে লরি পাল্টি খেলো। ডানদিকের নয়ানজুলিতে উল্টে পরলো মাল সমেত , ভরপেট ফুল পাঞ্জাব লরি । লরিটা নয়ানজুলির জলে পরে আদ্দেক ডুবে গেলো, ইঞ্জিন সমেত। সতন,আর মধু প্রচন্ড চাপে তলিয়ে গেলো কাদায়, পাঁকের ভেতরে। ওপরে জল, ছল ছল করছে।

কোনোরকমে সতন বেরিয়ে এলো কাদামেখে।কিন্তু মধু আর বেরিয়ে আসতে পারলো না। তলিয়ে গেলো কাদার ভেতরে।সতন সংসারের কথা ভুলে গেলো।খবরও দিলো না বাড়িতে বা মালিকের কাছে।সে শোকে মুহ্যমান।তার বন্ধু মরে গেলো। সে হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো নতুন এক শহরে। যেখানে কেউ তাকে চেনে না, জানে না।

১৩

সতন যে জায়গায় এলো সেটি এক মফস্বল শহর।গ্রামের মতই সবকিছু। এখানে এক পতিতাপল্লিতে অর্পিতার বাস৷ টোটোন অর্পিতার প্রেমিক। সে তার কাছে যেতে গিয়ে রাস্তায় দেখলো কাদামাখা একটা লোক বসে আছে মাথা নিচু করে।টোটোন জিজ্ঞেস করলো,এই যে শুনছো,তোমার বাড়ি কোথায়?

সতন বললো,আমার বাড়ি নেই।কাজ করি খাই।

— তোমার গায়ে কাদা কেন?

—কাজ করতে গিয়ে লেগেছে।

—-যাও চান করে নাও।তোমার নাম কি?

—আমার নাম নাম রাজু।

সতন নিজের নাম ধাম পরিবর্তন করে এক নতুন জীবনের শুরু করলো।টোটোন সতনের ওরফে রাজুর হাতে পঞ্চাশ টাকা দিলো।এবার সে চান করে নিলো।তারপর খেয়ে নিলো।শহরে একটা ঘর ভাড়া নিলো। একমাস পরে ভাড়া দেবে।কাজ করবে।টাকা জমবে, তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে।এই কথা মনে মনে ভেবে সে আনন্দ পেলো।

টোটোন বললো,আমি বাস স্ট্যান্ডের কাছে থাকি।প্রয়োজন হলে বলবে । তারপর টোটোন অর্পিতার কাছে এলো।

অর্পিতা নিজেকে বেশ্যা বলে না। যারা লুকিয়ে চুরিয়ে খানকিগিরি করে। বাবা,মা, স্বামী,ছেলেকে ঠকায় তারাই তো বেশ্যা। কিন্তু সমাজ এসব বোজে না। টোটোনের সঙ্গে ছোটো থেকে সে বড় হয়েচে। গ্রামের ওখানেই ওদের প্রথম পরিচয়। আর পরিচয় থেকে ভালোবাসা। আর তারপরেই ছাড়াছাড়ি। আবার বিয়ের পরে তারা স্বামী স্ত্রী র মত থাকে। মনে তাদের ভালোবাসা আচে পরস্পরের প্রতি। দুজনেরই আলাদা সংসার আছে। তবু দুজনে একরাতও থাকলে ওরা শান্তিতে থাকে। ওরা একসাথে খায়,শোয়। বাড়িতে সবাই জানে। সবাই মেনেও নিয়েছে। এখন ওরা কলকাতায় থাকে। আর গ্রামে যায় না। বিয়ে করে নিয়েছে আজ পাঁচ বছর। টোটোন লেখাপড়া জানে। অর্পিতাকে শিখিয়েছে। এখন অর্পিতা বেশ্যা নয়। সংসারী গৃহবধূ। সব পুরোনো ময়লা ঝেড়ে ফেলে দুজনে একসাথে সুখে আছে। টোটোন একটা কারখানার ম্যানেজার ভালো মাইনে পায়। অভাব নেই। কথাবার্তা,চালচলন সব পাল্টে গেছে ভালো পরিবেশের গুণে।

আজ অর্পিতার মন ভালো নেই। তাই ও আজ খায় নি। অর্পিতা এখন শুয়ে আছে। পাশে টোটন। সে চিন্তা করছে,অর্পিতা কি ঘুমিয়েছে। তারও ভালো লাগছে না। ঝগড়া না করাই ভালো। এখন মনের ব্যথার ভাগটা কি কেউ নেবে। বোকার মতো ঝগড়া করলাম। আমি যদি চুপ করে যেতাম তাহলে এতটা বাড়াবাড়ি হতো না। অর্পিতা খেলো না পর্যন্ত। কোনোদিন না খাওয়া হয়নি। বিছানায় সব ঠিক হয়ে যায়। আমি। তাই বিছানার নাম রেখেছি প্রান্তিক সীমানা। সব বিচার বিছানায় হয়। একটু আদর করলেই সব বরফ গলে জল হয়ে যায়। কিন্তু না খেয়ে ঘুমোচ্ছে। কি সুন্দর লাগছে মুখটা। ঘুমোলে ওকে ভারী সুন্দর লাগে। একটা চুমু খাবো কপালে। না,যদি রেগে যায়। পেট খালি থাকলে রাগ বেশি হয়। দরকার নেই। আমি চেয়ে চেয়ে দেখি সারারাত। শাড়ি পরেই আছে। আজ আর চেঞ্জ করে নি। অন্যদিন ম্যাক্সি পরে নেয়। শাড়িটা হাঁটুর উপর উঠে আছে। আ হা দারুণ পজিশন। না,ডিসটার্ব করবো না। মেয়েরা তার বাবা,মা,ভাই,বোন ছেড়ে স্বামীর ঘরে আসে। তার চেনা জগতটা ছেড়ে একটা নতুন পরিবেশে তাকে খাপ খাওয়াতে হয়। কত কষ্ট,গঞ্জনা সহ্য করতে হয়। রান্নাবান্না করতে হয়। শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেক সদস্যদের চাহিদা মেটাতে হয়। তারপর স্বামীর পাগলামী তো আছেই। আহা, একটু হাত বুলিয়ে দেবো। না যদি ঘুম ভেঙ্গে যায়। আবার ঝগড়া হবে। তারপর না খেয়ে আছে। অসুস্থ হয়ে পরবে। আমার মনে পরছে কলেজে যেদিন প্রথম ভর্তি হলাম ওর চোখে চোখ পরে গিয়েছিলো। প্রথম দর্শনে ভালো লেগে গেলো। মধুকর মন।মধু খোঁজে নিশিদিন। আমি মৌচাকে এলাম। না চাইতেই মধু। সময় হলে ঠিক পাওয়া যায়। তা না হলে বৃথাই ছটফটানি। শহরে ক্যান্টিন ছিলো।কফির দিকে মন নেই। কি করে বলি,নতুন করে,ভালোবাসি। দু বছরের মধ্যে ভালোবাসা মধ্যগগনে। চাকরী পাওয়ার আগেই বিয়ে করলাম। এতদিন রক্ষিতা হয়ে ছিলো। ব্যস, ভালোবাসা। দি এন্ড। এখন শুধু চেয়ে চেয়ে আছি সারাদুপুর। ভালোবাসা শেষ হয়নি। তা না হলে চেয়ে আছি অপেক্ষায় কেন?

১৪

অর্পিতা লম্বা ঘুম দিয়েছে। না খেয়ে ঘুম আসে। আমার আসে না। তাহলে ঘাপটি মেরে আছে নাকি? হাত দেবো না। ভুল হবে। মায়া হয়। এখনও কোনো সন্তান হয় নি। ওষুধ খাচ্ছে। আহা কেউ এখন কাছে নেই। আমি ছাড়া। ও আমাকে ভরসা করেই তো বেঁচে আছে। আমি তো অফিস চলে যাই। একা থাকে। একদিন অফিস থেকে আগে ফিরলাম। ওকে মনে পরলো। বসকে বলে ছুটি নিলাম। আমার দোতলায় ফ্ল্যাট। পাশেই একটা ছোটোদের স্কুলে এক দিদিমণির সাথে আমার জানাশোনা। কথা বলতে গেলাম। আমার ফ্ল্যাটের দিকে চোখ গেলো। বিছানায় অর্পিতার সঙ্গে কে? মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আবার আগের স্বভাব কেন? আমারও তাই। শালা রক্তে মিশে যায় কুঅভ্যাসগুলো। যা বটে,তা বটে। ওই তো দুজনে শুয়ে পরলো। ওপরে অর্পিতা। বসে বসে লাফাচ্ছে। দিদিমণি মুচকি হেসে বললো,ওটা রোজকার নীল ছবি। আমরা দেখি। আপনি চেনেন নাকি? আমি বললাম,না না।সবাইকে আমি বাড়ির ঠিকানা দিই না। দিদিমণি বলছে,চলুম আজ লজে যাই। ঘর বুক করা আছে। আমার মনে পরলো। মনটা হাল্কা হলো। মদিরার দোকানে একটা ছোটো নিয়ে মাগিকে নিয়ে গেলাম লজে। স্কুলের বাইরে মাগি আমাকে খিস্তি দিয়ে কথা বলে। ও বলে,সেক্সের আগে এগুলো প্রয়োজন। মাল খেলাম দুজনেই। জানালার দৃশ্য দেখে রাগের ঝালটা মাগির ওপরে ঝারলাম। শালি বললো,ভালো খেলেছো। চারবার গোল হলো। আমার রাগটা কমে গেলো। লজ থেকে বেরিয়ে চলে গেলাম ফ্লাটে। অর্পিতাকে বিকেলে খুব সুন্দর দেখতে লাগে। ফুরফরে মেজাজ। চা করে আনলো। ডিমের রোল। খেলাম। এবার ওর ভালো থাকার কারণ বুঝতে পারলাম। আর তার পর থেকে অশান্তি। আমি জানি ওর খেলা। কিন্তু ও তো আমার খেলা দেখেনি। অর্পিতাকে আমার সঙ্গে সক্রিয় হয়ে খেলতে দেখিনি। অথচ একটা পরপুরুষের সঙ্গে একদম বিন্দাস। ভালো থাকলেই ভালো। দেখুক যদি সন্তান হয়। কই দুবছর চলছে, থোর বড়ি খাড়া। হোলো না। রেজাল্ট জিরো। আজ আমার আসতে রাত হয়েছে। মুখে মদের গন্ধ। ঝগড়া হয়ে গেলো।আমি মাল খেয়ে ছিলাম। বলে দিয়েছি। আমাকে ভালো লাগে না। পরপুরুষের বেলায় লাফানি। অর্পিতা থেমে গেলো। জোঁকের গায়ে নুন পরেছে। আর তারপর থেকেই কথা বন্ধ

হলো। এখন ঘুমোচ্ছে। আমার রাত জেগে কাটলো। সকালে তাড়াতাড়ি অফিস চলে গেলাম। ফিরলাম তাড়াতাড়ি। পাশের স্কুলে দোতলায় উঠলাম। এখন দেখছি, একা বসে আছে অর্পিতা। দরজা বন্ধ। আর বাইরে সেই লোকটা দরজা ঠক ঠক করছে। ও গিয়ে ভিতর থেকে কি বললো। লোকটা চলে গেলো। আমি ফ্লাটে ফিরলাম। মাগির সঙ্গে গেলাম না। অর্পিতা আমার চা আনলো। খেলাম। তারপর ঠেলে বিছানায় ফেলে বিপরীত সঙ্গম শুরু করলো। একঘন্টা কাটলো। কোনো কথা না বলে। তারপর বললো,আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি বললাম,ঠিক আছে। আবার আমি এই সুযোগে বিছানায় ফেললাম। বললাম,খেয়েছো। ও বললো,না একসঙ্গে খাবো। আমি উঠে পরলাম। ও এখনও খায় নি। জানলে আমি খেলতাম না।

এখন ও রান্নাঘরে। রান্না করছে।একসঙ্গে খাবো।একসঙ্গে রাত জাগবো।আবার কলেজ জীবনে ফিরে যাবো। ওই বেশ্যামাগীর কাছে আর যাবো না। আমার পাপে অর্পিতা খারাপ হলো।তা না হলে ও মেয়ে হিসাবে ভালো। মেয়েরা এমনি এমনি খারাপ হয় না। ওরা সব বোঝে। আমাকে একদিন বলেছিলো,তোমার গালে, পিঠে কার ঠোঁটের ছাপ। তারপর আমি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু মদ,মাগী দুই ছিলো। তাহলে ও পরে পরে মার খাবে কেন?ভালো করেছে।যা করেছে বাধ্য হয়ে করেছে।

সেই রাতে খাবার আগেই ওর বাবা মরে যাওয়ার খবর এলো। লোকটা যেতে বলছে তার সঙ্গে। বলছে,আপনি দেখার পরে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি কি করে বলি,ও খায় নি। বাবা মরে গেছেন। সব রান্না ফেলে আমরা সবাই রওনা হলাম গ্রামে। ট্রেনে চেপে আমার বার বার মনে পরছে,ও খায় নি। এখন খেতেও পাবে না। বাবার মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পরে চা হলো। সবাই চান করে তারপর চা খেলাম। পেট ভরতির খাবার সকালে হবে। সকালে উঠেই বেনাগাছে জল দেওয়ার পালা।শ্রাদ্ধ বাড়িতে খাওয়ার জন্য বলতে ভালো লাগে না। শোক বলে কথা। নতুন পুকুরে বেনাগাছে জল দেওয়া হলো। আত্মার শান্তি কামনা করে জল দেওয়ার প্রথা। তারপর ভিজে কাপড়ে বাড়ি এসে হবিষ্যি রান্না করে খাওয়া। আমি দেখলাম ও খেতে পারলো না। জল খেয়ে উঠে পরলো। পরে শরবত খেলো। আমিও খেলাম না। পাতা গুটিয়ে বাইরে ফেলে এলাম। বাইরের দোকানে চা খেলাম। ও খায় নি,আমি কি করে চোখের মাতা খেয়ে গব গব করে ভাত খাই। যতই হোক সহধর্মিনী বলে কথা। কিছু যে খাচ্ছি না। তা নয়। তবে পেটভরে ভাত না পেলে,খাওয়াটা বেশ খাওয়া হয়ে ওঠে না। অর্পিতা এটা সেটা খেয়ে চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভরপেট খাচ্ছে না। দুর্বল হয়ে পরবে। ও না খেলে আমার মন খারাপ হয়। একটা বয়স্ক মা, কি করছেন উনি। কি করছেন গো মা?
মা বললো,আর বোলো না গো। দুদিন খাই নাই। দশটা টাকা দাও। কিছু কিনে খাই। শুভ পঞ্চাশ টাকার নোট দিয়ে বললো,ভালো করে খেয়ে নিও। এইতো এরা না খেয়ে দিনের পর দিন উপবাসি থাকে। তাহলে,আমরাও থাকি দুদিন উপোসি। ওতে কিছু যায় আসে না। না খেয়ে লোকে মরে না। বেশি খেয়েই মরে। স্বয়ং বুদ্ধদেব না খেয়ে সাধনা করেছেন। ওনারা সাধক লোক। ওঁদের কথা আলাদা।

১৫

কান্নাকাটি করে অর্পিতার চোখ,মুখ বসে গেছে। অর্পিতা বলছে,এবার যাওয়ার সমর মিতাকে নিয়ে যাবো। ও আমার সাথে থাকলে আমার সুবিধা হবে। কাজ করবো দুজনে। আমার ওই প্রস্তাব শুনে ভালো লাগলো। দুহাজার টাকা মাইনে দেবো। বললো,অর্পিতা। মিতার মা বাবা রাজী হলো। বাবার বাড়ি এসে একঢিলে দুইপাখি মারলো অর্পিতা। তিনদিনের পরে মেয়ের কাজ হলো। বাবার আত্মার শান্তির জন্য মেয়ের প্রার্থনা ভগবানের কাছে। হবিষ্যি খেয়ে এই কদিন চলেছে। মাকে প্রণাম করে আমরা তিনজনে বেরিয়ে পরলাম শহরের দিকে।ফ্লাটে ঢুকে আমি বললাম,আমি রান্না করছি।তুমি আর মিতা গল্প করো। রান্না আমি ভালো করি। ভাত আর ডিমের ঝোল। খেতে বসলাম একসাথে। আমি হিসাব করে দেখলাম অর্পিতা পাঁচদিন ভালোভাবে খায় নি। ও না খেয়েই ছিলো। শুধু জল আর দুধ খেয়েছে। ও এখন বাথরুমে গেছে। আসুক তারপর খাবো। ও না খেলে আমি খাই কেমন করে?
অনেকক্ষণ আগে বাথরুম গেছে। কি হলো? যাই একবার দেখে আসি। কই গো কি হলো তোমার? এই যে পরে গেছো। অজ্ঞান হয়ে গেছে। এই মিতা,এখানে আয়। ধর, ধর তোর বৌদিকে ধর। যা তুই খেয়ে নে। আমি দেখছি। বিছানায় রাখ। ঠিক আছে।তুই যা। খেয়ে নে। বাকি খাবার সব ঢাকা দিয়ে রান্নাঘরে রেখে দে।

অনেকক্ষণ হয়ে গেলো। আমি ওকে নিয়ে নার্সিং হোমে যাই। মিতা দরজা বন্ধ করে দে। নিচে নামিয়ে আনলাম আমরা দুজনে। এবার টোটোওয়ালাকে ডাকি। এই টোটো। দাঁড়াও। ধরো ধরো। রোগী মানুষ। সেবাসদনে চলো।

টোটো দশ মিনিটের মধ্যে সেবাসদনে এলো। রোগী ভরতি হলো। এক ঘন্টা পরে ডাক্তারবাবু বললেন,পায়ে চিড় ফাট হয়েছে। প্লাস্টার করেছি। একটা সুখবর আছে। আপনার স্ত্রী মা হবে। তাই মাথা ঘুরে পরেছে। চিন্তার কিছু নেই।

শুভর খুব ভালো লাগলো। অন্যকিছু বিচার করে লাভ নেই। মনে মনে ভাবছে,যা হয়, ভালোর জন্যই হয়। শুভ বাড়ি গেলো না। নিচে ওয়েটিং রুমে ঘুমিয়ে নিলো।
প্রায় তিন ঘন্টা পরে অর্পিতার জ্ঞান ফিরলো। সে এবার ভাবছে,রান্না করেও খেতে পেলো না শুভ। খুব খারাপ লাগছে। আমার মা হবার আশার সংবাদে ওর কি খুব আনন্দ হয়েছে। নাকি খারাপ লেগেছে। জানি না। পরে জিজ্ঞাসা করা যাবে। আচ্ছা সকাল হয়ে গেলো। এখনও এলো না কেন? তাহলে কি স্কুলে ছেলেদের খাবার দিতে গেলো। কোনো খুশির খবর হলে পাশের মর্নিং স্কুলে বাচ্চাদের খাবার দেয়। সন্দেশ,কেক আরও কত কি?ডে স্কুলে ছেলেরা মিড ডে মিল খায়। সবাই খায় তো? সকলের খাওয়া উচিত। ও বলে ছেলে,মেয়েরা হলো সাক্ষাৎ ঈশ্বরের দূত। ওরা খেলে ভালো লাগে। ও বাচ্চাদের এত ভালোবাসে বলেই হয়তো আমি মা হতে পারবো। স্কুলের দিদিমণি ওকে খুব সম্মান করে। ওই তো বলেছিলো। আমি দিদিকে চিনি না। তবু মনে হয় ওর সাথে কোনো খারাপ সম্পর্ক নেই তো? না, না হয়তো আমার ভুল ভাবনা।

দুপুরের দিকে শুভ এলো। তুমি খেয়েছো? শুভ জিজ্ঞাসা করলো। না,আমাকে খেতে দিয়েছে। ঢাকা দিয়ে রেখেছি।একসাথে খাবো বলে। অর্পিতা বলছে,আমাদের সন্তান হবে। তোমার মতো হবে। শুভ বলছে,না না তোমার মতো একটা কন্যা সন্তান হলে ভালো হয়। চলো,এবার দুজনে খেয়ে নি। দুজনে খাওয়ার আগে আলোচনা করছে,বাড়িতে মিতা আছে। কাজ করবে। ও রান্নাবান্না করেছে তো। যদি না খায়। অর্পিতা বললো,তাহলে চলো, ডাক্তারবাবু তো বাড়িতে বিশ্রাম নিতে বললেন,এক মাস। তাহলে টাকা পয়সা মিটিয়ে দিয়ে বাড়ি যাই। তারপর তুমি আর মিতা হাতেপাতে লেগে রান্না করে নেবে। তারপর সবাই একসাথে খাওয়া যাবে। শুভ বললো,ঠিক বলেছো। ও এখনও হয়তো খায়নি…

১৬

রাজু যে বাড়িতে ভাড়া থাকে সেই বাড়ির মালিকের মেয়ে অনুপমা।তার সঙ্গে সতনের ওরফে রাজুর পরিচয় হয়েছে। কিন্তু রাজুর ধান্দা ভালো নয়। নারীশরীরের স্বাদ তার অন

অনুপমা ছোটো থেকেই বিভিন্ন ফুল ওফলের গাছের ভক্ত। তাছাড়া যে কোনো গাছের কাছে গেলেই সেই গাছের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পরে। গাছটার সঙ্গে কথা বলে,আদর করে, গোড়ায় হাত বুলিয়ে দেয়। সে বলে বাড়ির উঠোনের আমগাছটাকে,কি রে আমি আগের জন্মে তোর বোন ছিলাম? বুঝলি আমি আগের জন্মে আবার গাছ হবো। তোর ডালে ডালে আমার সোহাগ উথলে ওঠে। আমি তোর বোন হবোই। সুন্দর সহজ সরল জীবন নিয়ে আমি সুস্থ রাখবো জগতের সমস্ত জীব কুলকে। আমি গাছ হবো।

উঠোনের আমগাছটার ইতিহাস আছে। অনুপমার দাদু বি,ডি,ও অফিস থেকে চারা এনেছিলেন। তিনি উঠোনে ছায়া হবে, আর সিজনে কিছু আম পাওয়া যাবে বলে গাছটা লাগালেন। গর্ত খুঁড়তে গিয়ে হাতটার আঙুলে কোদালের চোট পরে কেটে গেছিলো সেদিন। অনুপমার ঠাকুমা রেগে বললেন,উঠোনের মাঝে আমগাছ লাগালে। তারপর আবার বাধা। অপয়া গাছ। পাতা পরে জঙ্গল হবে।দাদু কোনো কথা বলে নি। শুধু বলেছিলো,খবর্দার এই গাছে কেউ যেনো হাত না দেয়। কুরুক্ষেত্র বাঁধিয়ে ছাড়বো।

তখন অনুপমা ছোটো। অনুপমা বললো থাক,ঠাকমা আমি পাতা পরিষ্কার করবো। তারপর ঠাকুমা, নাতনির মুখ চেয়ে আর কিছু বলেন নি। দাদু এবার দুবছর পরে বাড়ি এসেছে।থাকে অনেকদূরে। অনুপমা ভাবে,কেন,এতদূরে থাকে দাদু। একদিন ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করে দেখবে। কিন্তু বলতে সাহস হয় না। ঠাকমা যদি বকাবকি করে।

তারপর অনেক বৈশাখ কেটে গেলো। শেষে অনুপমার আঠারো বছর বয়সে আমগাছের মুকুল এলো। এতদিন গাছে জল দেওয়া, পাতা কুড়িয়ে পরিষ্কার করা সবকাজ সে নিজেই করেছে। তার ভালো লাগে তাই করে। আমের শুকনো পাতাগুলো এক জায়গায় জড়ো করে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিতো। পরিষ্কার হতো তাড়াতাড়ি।

বাবা, মা কে অনুপমার মনে পরে না। দাদুর কাছে শুনেছে, সে যখন এক বছরের মেয়ে তখন তার বাবা রোড আ্যাক্সিডেন্টে মারা যান। মা তার এক বছর পরেই বাবার বাড়ি চলে যায়। মা তাকে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু দাদু দেন নি। দাদু বলেছেন,ছেলের স্মৃতিটুকু তুমি নিয়ে যেও না বৌ মা। তাহলে আমি বাঁচবো না। আমার আর কেউ নেই ও ছাড়া। মা তারপর আর জোর করেন নি। একা চলে গিয়েছিলেন কাঁদতে কাঁদতে কোনো প্রতিবাদ না করে। তার মা নাকি এখন বিয়ে করেছে অনেক দূরে। মায়ের মুখ অনুপমার মনে পরে না। তাই মায়ের মায়া তাকে কাবু করতে পারে না। অনুপমা দেখতো,দাদু থাকে না বাড়িতে। তবু একটা ফর্সা, কটাপারা লোক ঠাকুমার ঘরে যায় প্রায়। তাকেও চকলেট দেয়। কিন্তু জানে না লোকটা কে? পাড়ার লোকেরা ওকে জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু ও বলে,আমি জানি না। তখন সবাই মুখ টিপে হাসে। ভালো লাগে না তার। মনে মনে বলে,একদিন ঠাকুমাকে জিজ্ঞাসা করতেই হবে। কিন্তু ঠাকুমা যদি রেগে যায়।

একদিন দুপুর বেলা ঘুঙুর পরা হাঁসটা কেমন হেলেদুলে চলেছে। অনুপমার পিছনে পিছনে চলেছে হাঁসটা। তাকে এখন সরস্বতী ঠাকুরের মতো লাগছে। বাহন তার চলেছে সঙ্গে সঙ্গে। ঘাটে শান বাঁধানো সিঁড়িতে সে বসে পরলো। আর হাঁসটা উড়ে গিয়ে পরলো জলে। ডুব দিয়ে তাকে খেলা দেখিয়ে চলেছে। সে জলে ঝুঁকে পরা গাছটার ডাল ধরে তুলে আনলো পানিফল। ছাড়িয়ে খেতে গিয়ে পানিফলের কাঁটা ফুটে গেলো। লাল এক ফোঁটা রক্ত চুঁইয়ে পরলো মাটিতে। পাশে চাঁদু এসে বললো,দে দে আঙুলটা দে। অনুপমার আঙুলটা মুখে নিয়ে চুষতে লাগলো। তার খুব সুড়সুড়ি পেলো। সে হাসতে লাগলো। সে বললো,জানিস না,মুখের লালায় ঘা পর্যন্ত ভালো হয়ে যায়। সে আঙুল ছাড়ছে না, খুব ভালো লাগছে। অনুপমাও জোর করছে না। একটা ভালো লাগা শিরশিরে ভাবে সে বিহ্বল। সে আঁচল থেকে কটা পাকা কুল দিলো চাঁদুকে হাত ছাড়িয়ে। রাজু বললো,তোর সব সময় কাঁটা নিয়ে কাজ। কুলগাছেও কাঁটা থাকে। সে হাসতে হাসতে বললো,তুই তো আমার মিষ্টি কুল। তাইতো কাঁটা ভালোবাসি। সে পাশের পাড়ায় থাকে। কিন্তু তার সঙ্গেই তার ভাব বেশি। সে বলে অনুপমাকে,আমার মাকে আমার বাবা রোজ মারধোর করে। মাথা ফাটিয়ে দেয়। বড়ো হয়ে আমি এর শোধ নেবো। অনুপমা বলে,ওসব বলতে নেই। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। চাঁদু বলে,কিচ্ছু ঠিক হবে না। একটা রাক্ষস আমার ভেতরে আছে। তবু আমি আমার বাবাকে ভালোবাসি। তুই আমার থেকে সাবধানে থাকিস। রাক্ষসটা কখন জেগে উঠবে আমিও জানি না।

অনুপমার ভয় হয়। তার মনে পরে, তার দশজন বন্ধু, পুজো বাড়ির শ্যাওলা পড়া দেয়াল ঘেঁষে বসতো। পিঠে সবুজ ছাপ পরে যেতো। পুরোনো কারুকার্যের মুগ্ধতা ছাড়িয়ে ভালোবাসার গান বিরাট বাড়িতে প্রতিধ্বনি শোনাতো। বন্ধুদের মধ্যে চারজন মেয়ে ছিলো। দেবীকা বলতো, বন্ধু শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ করিস না। ভালো শোনায় না। কোনোদিন সে তাদের মেয়ে মনে করেনি। বন্ধু তো বন্ধুই। তার আবার ছেলে আর মেয়ে কি?বলতো চাঁদু।

একই কাপে তারা কফি খেতো পুজো বাড়ির পাশের কফি হাউসে । ভাগে কম হলে রূপসী বলে বন্ধুটা রাস্তায় লোকের মাঝে দীনেশকে ফেলে মারতো খুব।তাদের বন্ধুদল বিপদে,আপদে কাজ করতো গ্রামে। তাই তাদের অনেকেই সম্মান দিতো। আর আদরের এই মার খেতেই দুষ্টুমি করে তার ভাগেরটা কম রাখতো। অভিভাবকরা কোনোদিন ছেলে মেয়েদের মেলামেশায় বাধা দিতেন না। দরজা ঘাটের বাঁধানো ঘাটে পানকৌড়ি আর মাছরাঙার কলা কৌশল দেখে পার হয়ে যেতো অবাধ্য সময়।

১৭

অন্ধকারে ফুটে উঠতো কালীতলার সার দেওয়া প্রদীপ। ঘরে ঘরে বেজে উঠতো শঙ্খধ্বনি। হাতগুলো অজান্তে চলে যেতো কপালে। তারপর হাত পা ধুয়ে ভাইবোন একসাথে বসে সরব পাঠের প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যেতো পাড়া জুড়ে। কিন্তু অনুপমার ভাইবোন ছিলো না। সে চুপচাপ পড়তো। নীরব পাঠ। আর তার ফলে তার মনে ভেসে উঠতো ছোটোবেলার চাঁদুর মুখ। বইয়ের পাতা জুড়ে প্রেমের খেলা।

কে কত জোরে পড়তে পারে,পাড়ায় প্রতিযোগীতা চলতো। একবার অতনুদের বাড়ি পড়তে গেছিলো অনুপমা মাটির দোতলা ঘরে। বুলু কাকা বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি শুনতে পেলেন অতনু পড়ছে, ন্যাটিওনাল মানে জাতীয়, ন্যাটিওনাল মানে জাতীয়। ঘরে ঢুকে কাকা বললেন,ন্যাটিওনাল নয় ওটা ন্যাশনাল। ঠিক করে পড়। অতনু জোরে পড়ছে বলে উচ্চারণটা ঠিক হলো। এই অতনু সেদিন বুলুকাকা যাওয়ার পরে তার পাশে বসে পড়ছিলো। আর বারবার তার হাঁটুতে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলো। তারপর একটা আঙুল তার প্যান্টের ফাঁক দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো যোনীপথে। খুব ভালো লাগছিলো। কিন্তু একটা অপরাধবোধ কাজ করছিলো ভিতরে। পড়া হয়ে গেলে সে চলে এলো নীচে।
তারপর পড়া হয়ে গেলে একান্নবর্তী পরিবারের সবাই উঠোনে খেতে বসলো।অনুপমা দেখলো, কি সুন্দর পরিবেশে অতনু বড়ো হচ্ছে। চাঁদের বাড়ি যদি এই পাড়ায় হতো, তাহলে বেশ হতো। আলাদা করে কোনো শিশুকে খাওয়া শিখতে হতো না,জোর করতে হতো না। সবার খাওয়া দেখে ধীরে শিখে যেতো নিজে খাওয়ার কৌশল।

১৮

চাঁদু শুনে বলতো, আমাদের কাকার মেয়ে, ছেলে সবাই পড়তে আসে আমাদের বাড়িতে। আমরা শুই সবাই একসাথে। কাকার মেয়ের সাথে মারামারি করি। শোওয়ার পালা আরও মজাদার। বড় লেপে তিন ভাই,বোনের ঢাকা। কেউ একটু বেশি টানলেই খেলা শুরু হয়ে যেতো রাতে। কোনো কোনো দিন ভোরে। মা আরও ভোরে উঠে শীতকালে নিয়ে রাখতেন জিরেন কাঠের খেজুর রস। সকালে উঠেই খেজুর রস। সেই দিনগুলো আর কি ফিরবে? বড় মন খারাপ হয় বড়ো হয়ে যেতো চাঁদুর।

ভাড়াটে ছেলে রাজুর সঙ্গে অনুপমার বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো। সব কথা শেয়ার করতো অনুপমা রাজুর সঙ্গে।অনুপমাকে ঠাকুমা বলেন,চেনাশোনা নেই,বংশ জানা নেই,ঘর বাড়ির ঠিকানা নেই, এমন ছেলের সাথে মেলামেশা বেশি ভালো নয় বুঝলি,?

অনুপমা বলতো, মানুষকে অবিশ্বাস করা তো পাপ ঠাকুমা।রাজু ভালো ছেলে।

—-+তোর থেকে বয়সে অনেক বড়।

—-তা হোক ঠাকুমা।ওকে আমার খুব ভালো লাগে।

—–তা তো লাগবেই।কি কিছু ইন্টুমিন্টু হয়েছে নাকি?

—-কি যে বলো ঠাকুমা।

লজ্জায় অনুপমা পালিয়ে গেলো।ভোলোবাসা কোনো বাধাই মানে না। ভালোবাসা চিরকাল অন্ধ।

রাজুকে অনুপমা আঙুল ঢোকানোর কথাটা বলেছিলো।সে বললো, মনে পরলে খারাপ লাগে। বলো ওটা পাপ নয়?

—-না পাপ নয়।তোমার তো একবার। আমি যে কতবার কত মেয়েকে ওরকম করেছি তার হিসেব নেই।তাহলে আমি বড় পাপি।ছোটোবেলায় ওসব হয়।

রাজুর মিথ্যা গল্প শুনে অনুপমার অপরাধবোধ কমে যেতো। সে ভাবতো,তাহলে রাজুও অনেক মেয়ের সাথে এরকম করতো।ওর তো নিজের কেউ নেই। পাড়ার কেউ হবে হয়তো। তাহলে চাঁদু তো সব কথাই বলে। ওগুলো বলে না কেন? ওসব বলতে নেই। সে ভাবে,চিরকাল ছেলে মেয়েরা গোপন করে যায় ভালোলাগার কিছু মূহুর্ত। এগুলো হয়তো বলতে নেই। আকাশ পাতাল চিন্তা করেও হিসেব মেলাতে পারে না অনুপমার মতো কিশোরী মেয়েরা।অনুপমা বার বার হারিয়ে যায় স্মৃতির অন্তরালে।

তারা বন্ধুরা,একসাথে ঘুরতো।অনুপমারা খেলতো নানারকমের খেলা। চু কিত-কিত,কবাডি,সাতগুটি,ঘুরি ওড়ানো,ক্রিকেট,ব্যাডমিন্টন ও আরও কত কি। বন্ধুরা জড়ো হলে,এলাটিং,বেলাটিং সই লো,যদু মাষ্টার কইলো…, তারপর আইশ,বাইশ কত কি। হাততালি দিয়ে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে খেলতাম,কাটুরিস,চায়না প্লিজ,মেম সাব, মেইন আপ… । তারপরের কথা, খেলা ডুব দিয়েছে কোন অতলে জানিনা, অনুপমা বলতো, সব কথা পুরো মনে পরে না। ছেঁড়া, ছেঁড়া স্মৃতিগুলো হৃদয়ের পদ্মপুকুরে ভেসে উঠেই ডুব দেয়, আর হারিয়ে যায় ব্যস্ত সময় সংসারে। সেখানে আবেগ মানে ছেলেখেলা পাগলামি। তবু তার মনে হয়, এরকম পাগলের সংখ্যা আরও বাড়ুক। বাড়লে পাওনাটা মন্দ হয় না। ভালো পরিবেশে মানুষ হয়েছে অনুপমা ও চাঁদু। সেই চাঁদু বলেছে,তার মনে কি করে রাক্ষস ঢুকলো বুঝতে পারে না সে। সে ভাবে,মানুষ হয়তো পাল্টে যায় পরিস্থিতির চাপে । যে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে হয়ে যায় ডাকাত। আর যে সংসারী হয়ে সুখে থাকতে চায় সে হয়ে যায় খেলার পুতুল, রূপাগাছির অপরূপা বেশ্যা।চাঁদু পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে বাবা, মায়ের অশান্তির চাপে,একথাটাও শুনেছে অনুপমা।সে নাকি কেরালায় জুট মিলে কাজ পেয়েছে।সে ভাবে,যাক একদিকে ভালোই আছে।

১৯

অনুপমা ভাবে, তিরস্কারের থেকে জীবনে পুরস্কারই বেশি পেয়েছি। পুরস্কার বলতে মানুষের আদর, ভালোবাসা। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা। এর থেকে বড় পুরস্কার আমার অভিধানে নেই। আমার যোগ্যতার বেশি, তার পরিমাণ। ঈশ্বর সময় হলেই প্রত্যেকের যোগ্য পাওনাটুকু দিতে ভোলেন না। শুধু প্রয়োজন ধৈর্য আর সহনশীলতা। সময় কিন্তু কারও কথায় এগিয়ে আসবে না বা পিছিয়ে যাবে না। অভিজ্ঞ লোকেরা প্রথমে ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। অন্য মানুষকে সহ্য করা, সম্মান করা ধর্মেরই নামান্তর। মানুষের জন্যই মানুষ। শুধু শুকনো লোক দেখানো ধর্ম যা মানুষকে ছোটো করে সেটা কখনই ধর্ম হতে পারে না। ধর্ম হচ্ছে অণুবিক্ষণের মতো। ছোটো জিনিসকে বড়ো করে দেখে। পোকা, মাকড়ও ঈশ্বরের করুণা থেকে বাদ পরে না। ভাবনা আমার ভালো কিন্তু ভাগ্যের চাকাটা যে বনবন করে ঘোরে। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সে।
অনুপমা কদিন ধরেই দেখছে রাজু কতগুলো ছেলের সঙ্গে মেশে। তাদের কোনোদিন দেখে নি সে। রাজুকে জিজ্ঞাসা করলল বলে,অনেক দূরে বাড়ি ওদের। এখানে এলে আমার সঙ্গে দেখা করে যায়। অনুপমা বলে,তুই খারাপ হয়ে যাস না, ভালো হয়ে থাকিস। তুই আমার জীবনের ভরসা। আমার ভালোবাসার ধন।
রাজু ভাবে,অনুপমা আমাকে ভালোবাসে। সে আমাকে ভালো হতে বলে। আর তো আমরা ছোটো ছেলে নই। বড়ো হয়েছি। বুঝতে শিখেছি ভালোমন্দ। রাজু কোনোদিন ভালোবাসা পায় নি । সে জানে না তার মর্ম।কিন্তু অনুপমা তাকে হৃদয় থেকে ভালোবাসে।ছল, চাতুরি বোঝে না। আর চিরকাল তারাই জীবনে হেরে যায়, ঠকে যায়।

কি করে সতন ভালো হয়ে থাকবে। ছোটোনেলা থেকে বাড়িতে নিত্য নতুন অশান্তি। তার মনে পড়ে,বাবা,মায়ের মারামারি। মা সন্দেহ করত বাবাকে। সতন ভাবে, এখন আমিও সন্দেহ করি বাবাকে। বাবা রোজ রাতে কোথায় যায়?বারোটার পর বাড়ি ফেরে। এত জানাশোনা আছে তার। তবু সে জানতে পারে না। সে মনে মনে বলত,কোনোদিন যদি জানতে পারি, আমার বাবাকে কেড়ে নিচ্ছে কে? আমি তাকে খুন করবো। আমাদের বাড়িতে অশান্তি ঢোকানোর বদলা আমি নেবোই। সতনের মা কে বলতো,তুমি পুলিশকে জানাও,আইনের সাহায্য নাও। কিন্তু মায়ের, বাবার ভয়ে অতদূর এগোতে সাহস হয় না। তবে মনে মনে ভাবে সে,এর শেষ দেখে ছাড়বো। মা কে বলতে শুনেছে,তুমি অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করা ছেড়ে দাও। অন্য মেয়েছেলের সঙ্গ ছেড়ে দাও। অন্যায় করে রোজগার করা ছেড়ে দাও। তা না হলে আমি রোজ তোমার সঙ্গে অশান্তি করবো। সে ভাবে,কি করে একটা ভালো মেয়ে আমার মায়ের মত বড়ো বেশ্যা হয়ে যায়,ডাকাত রাণী হয়ে যায়। খুনি হয়ে যায়।

২০

অনুপমা ভাবে,আমি আর ঠাকুমা দুইজনের সংসার। দাদু মরে গেছেন।

ঠাকুমা অসুস্থ। ঠাকুমা বলেন,তুই যাকে ভালোবাসিস, তাকে বিয়ে কর। আমি হঠাৎ মরে গেলে তোর কি হবে বলতো?

আমি বলতাম ,কিছু হবে না ঠাকুমা। আমার বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। আমি তোমার কাছেই থাকবো। ঠাকুমা বলেন এ আবার কেমন কথা? মেয়েরা বিয়ে না করলে হয় না কি?

আমগাছটাকে বলছে অনুপমা,ছোটোবেলার বন্ধু চাঁদুকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু চাঁদু ভিতুর ডিম। সে বিয়ে করবে না জানিয়ে দিয়েছে।

এখন রাজুকে ভালোবাসে পাগলের মত।সৌম্যসুন্দর চেহারা রাজুর। রাজুর বাড়ির লোকজন নেই।বংশপরিচয় জানা নেই।

আমরা লুকিয়ে দেখা করি। ঠাকুমা জানে,কিন্তু ঠাকুমাকে একা রেখে আমি চলে গেলে, ঈশ্বর আমাকে মাপ করবে না। আমি কি করবো বলো?তবু হয়তো একদিন যেতেই হবে। বিয়ের ফুল ফুটলে কেউ অবিবাহিত থাকে না।

আমগাছটা তার ডাল দুলিয়ে, পাতা নাড়িয়ে হাওয়া দেয়। বুদ্ধি দিতে পারে না। অনুপমা ভাবে,গাছগুলো কথা বলতে জানলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। গাছের নিচু ডালে বসে সে আকাশ পাতাল চিন্তা করতে আরম্ভ করলো।

মনে পরে দাদু যেদিন মারা যায় সেদিন ঠাকুমা খুব কাঁদছিলো। ঠাকুমার বিয়ের পর থেকে দাদুর সঙ্গে অশান্তি হতো। ঠাকুমার মুখে শুনেছে সে। ঠাকুমা বলেছিলেন,আমি আমাদের গ্রামের একটা ছেলেকে মানে…ভালোবাসতাম।
অনুপমা বলে,ঠাকুমা বলো না ঠিক করে। তুমি তো আমার বন্ধুর মতো। সব কথা বলা যায় বলো।

ঠাকুমা বলছেন তার ভালোবাসারকথা।

ছেলেটার সঙ্গে মিশতাম। ভালোবাসা হয়ে গেলো। আমার মা বাবা না থাকলে ছেলেটা সুযোগ বুঝে ঘরে ঢুকে পরতো। রান্নায় সাহায্য করতো। আদর করতো। চুমু খেতো। কিন্তু আমাকে যে ভালোবাসতো না সেটা আমি জানতে পারলাম দুবছর পরে। আমার বন্ধু বিমলের কাছে শুনলাম আরও অনেক মেয়ের সঙ্গে ও এরকম ব্যবহার করে। ওরা সাত ভাই। তাই কেউ ভয়ে কিছু বলে না তাকে। তারপর একদিন চুপি চুপি ও আমাদের বাড়ি এলো। আমি বলে দিলাম,বাবা,মা,না থাকলে আমাদের বাড়ি আসবে না। ও জোর করে আমাকে নগ্ন করলো। ও বললো,আর আমি আসার সুযোগ পাবো না
ও বললো,কেন?আসবো না কেন?
আমি বললাম,কেন, তুমি জানো না? সব জানো তুমি। হাজারটা মেয়ের সর্বনাশ করছো তুমি। নিজেকে খুব চালাক ভাবো তুমি না?
তারপর দেখলাম ওর মুখ পেঁচার মতো হয়ে গেলো। ও মরিয়া হয়ে গেলো। আমাকে চিত করে ফেলে চেপে বসলো। আমি হাত দুটো মাথার উপরে তুলতেই পেয়ে গেলাম কাটারি। অই কাটারির উল্টো পিঠে মারলাম এক ঘা। বাবারে বলে,ভয়ে পালিয়ে বাঁচলো শালা।

তারপর থেকে কোনো কথা ছিলো না। কিন্তু আমার বিয়ের পর অশান্তি ঢুকিয়ে দিলো আমাদের জীবনে। তোর দাদুকে সব কথা বলে দিলো। ও আমার অপমানের আমার কাছে মার খাওয়ার বদলা নিলো।
তোর দাদু তারপর থেকে আমাকে মারধোর করতো। সন্দেহ করতো। আমি বার ববার তোর দাদুকে বুঝিয়েছি। ওই খচ্চরটা আমার ইজ্জত নিতে পারে নি। তবু বিশ্বাস করতো না আমার কথা। আমাকে পেটাতো লাঠি দিয়ে। একবার মাথায় লেগে মরেই যেতাম। কোনো রকমে বাঁচলাম হাসপাতালে দেখিয়ে। সেখানেই পরিচয় হলো এক পুরুষের সঙ্গে। খড়কুটো ধরে ডোবার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করলাম আমি। পুরুষটা ধান্দাবাজ, কামুক। আমার কথা শুনে বললো,কোনো চুতিয়া কিছু করতে পারবে না। আমি আছি তোমার সঙ্গে। টাকা পয়সার অভাব হবে না। শুধু চাই তোমার শরীর। একদম ষোলো আনা। আমি ষোলো আনাই দেবার প্রতিশ্রুতি দিলাম।
আমি বাধ্য হয়ে এক শক্তিশালী যুবককে প্রেমের খেলায় ফাঁসালাম। সে আমার ঘরে বসতো। আমাকে নিয়ে বেড়াতে যেতো। তোর দাদুকে ও বলেছিলো, যদি শুনি মারধোর করেছিস, সেদিন তোর শেষ দিন। আমি গুন্ডা,বদমাশ লোক। মাথা গরম হলে খুন করে দেবো। এই কথা বলে কোমর থেকে বের করে একটা বড়ো নেপালা দেখিয়েছিলো। তারপর তোর দাদু সোনাপাড়ার জমি দেখাশোনা করতো। আমার কাছে আসতো না। আমিও খবর নিতাম না। তোর দাদু সড়কিখেলায়, লাঠিখেলায় ওস্তাদ ছিলো। কিন্তু নেপালা দেখে,মারমুখী মূর্তি দেখে তাকে বললো,ঠিক আছে আজ খালি হাতে আছি। তোর মৃত্যু আমার হাতে। মনে রাখিস,আমি ফালতু কথা বলি না।

অনেকবার চেষ্টা করেও পারে নি। তবে তোর দাদুর হাতে একটা নেপালার কোপ পরেছিলো। সেই দাগ আজও আছে। আমি জানি,তোর দাদু এই লোকটাকে খুন করবেই।

তারপর তোর বাবা বড়ো হলো। বিয়ে হলো। তুই হলি। ঘর ভরতি আলো। আমার নাঙ, তোর জন্মদিনে বিরাট আয়োজন করেছিলো। তারপর হঠাৎ একটা পথ দুর্ঘটনায় তোর বাবা মরে গেলো। তোর মা তার মাসখানেক পরে চলে গেলো। তোর দাদু তোকে রেখে দিলো। তোর মা কে আমি বাধা দি নি যাওয়ার সময়। কারণ আমার বাড়িতে যে ঢ্যামণা পুরুষ আসতো তার নজর পরেছিলো তোর মায়ের গতরে। তোর মতোই সুন্দরী ছিলো তোর মা।

ধীরে ধীরে,সময়ের পাকে,তুই বড় হয়ে গেলি। তারপর তুই তো সব ঘটনা জানিস। তোর দাদুর ক্যান্সার হয়েছিলো লিভারে, অতিরিক্ত মদ্যপানে। তোর দাদু তখন বুদ্ধি করে এক রাতে আমার ঘর থেকে বেরোনোর পর লম্পট লোকটাকে সিপাই দিঘির জঙ্গলে সড়কি পেটে ঢুকিয়ে খুন করে এলো। আমি দেখলাম হাতে রক্তমাখা সড়কি।
বললো,তোর প্রেমিককে খুন করে এলাম রে খানকি মাগী এই বুড়ো বয়সে। শালা আমার সঙ্গে টক্কর,শালা আমার সঙ্গে পাঙ্গা। এবার তোর কুটকুটানি মরবে। তোকে মারবো না। বেঁচে থেকে তু শাস্তি ভোগ করবি। আমি ভূত হয়ে দেকবো।

তারপর আমি কিছু বোঝার আগেই গলায় দড়ি নিয়ে ঝুলে পরলো, তারই হাতে লাগানো আমগাছে।

২১

ওই আমগাছটা সব জানে। ও তো আর কথা বলতে পারে না। ওই প্রধান সাক্ষী। তারপর পুলিশের ঝামেলা পেরিয়ে আজ এই অবস্থা। হয়তো আমার পাপেই তোর দাদু,বাবা মারা গেলো। এবার আমি গেলেই বাঁচি। অনুপমা বললো,না,না,ঠাকুমা সব বিধির লিখন। তোমার কপালে যা ছিলো তাই হয়েছে। দুঃখ কোরো না।

ঠাকুমা বলছে,তোরা দুজনে বিয়ে করে পালা। ওরা মানবে না ভালোবাসার বুলি। আজকেই পালিয়ে যা। অনুপমা কথাটা বলতে পারছিলো না। আজকে ঠাকুমা সব পথ সহজ করে দিলো।
অনুপমা ছুটতে ছুটতে ঠাকুমার দেওয়া সোনাদানা নিয়ে রাজুর সঙ্গে দেখা কোরলো। রাজু তখন বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলো।তার মধ্যে টোটোনও ছিলো।আরও পরিচিত গাঁজাল, মাতাল বন্ধুদের সঙ্গে রাজু পরামর্শ করে, অনুপমাকে নিয়ে সোজা চলে গেলো সিপাই দিঘির জঙ্গলে। বললো,কি এনেছিস দেখা। অনুপমা বললো,সব সোনা এনেছি। নে এবার চ। ও অনুপমাকে চুমু খেলো। জঙ্গলে শুয়ে ওরা নিশ্চিন্ত হলো। তারপর বিয়ের আগেই ওরা মিলিত হলো প্রচন্ড আবেগে। অনুপমা নগ্ন হয়ে রাজুর ওপরে উঠে দীর্ঘস্থায়ী খেলা খেললো। রাজু পাল্লা দিয়ে সাড়া দিলো প্রচন্ড শীৎকারে। রাজু ভাবছে,শালি খানকির কায়দা কি করে শিখলো।খানকির বংশ তো।আমি সব শুনেছি।নতুন হলেও আমি সব জানি।

হঠাৎ জঙ্গলে এলো কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা গুন্ডার দল। তার সব রাজুর সাজানো দল।কিন্তুঅনুপমা কিছুই বুঝতে পারলো না।রাজুকে ডাকাতরা বললো,এখানে তোরা কি করছিস। আমাদের আড্ডার কথা জেনে গেছিস রাজু। মেয়েটা কে রে? বেশ ডবকা মাল। একবার দেখি, বলেই অনুপমার উদ্ধত খোলা বুকে হাত দিলো। টেনে ছিঁড়ে ফেলতে চাইলো তার মাইযুগল। একজন বললে,এক্কেবারে রেডি মাল। শালির রস গড়িয়ে পরছে। শালা গরম গরম,হাতে গরম।

রাজু মুষ্ঠিবদ্ধ হাত চালিয়ে দিলো একজনের মুখে। রক্ত পড়তে শুরু করলো।অভিনয়টা ভালোইকরছে রাজু। একটা ডাল ভেঙ্গে মারতে আরম্ভ করলো। অনুপমা দেখলো রাজু সবাইকে চেনে।কারণ রাজু বলছে,শালা বন্ধু হয়ে মুখোশ পরে চালাকি,রাজুর সঙ্গে। তোদের থেকে বড় গুন্ডা আমি। মুখোশধারী একজন বললো,আমরা তোর বন্ধু নই, যম। ওরা বললো,মেয়েটাকে ছেড়ে দেবো ছিবড়ে করে। কিন্তু তোকে মরতেই হবে। ওরা দড়ি দিয়ে রাজু আর অনুপমাকে বেঁধে ফেললো। অন্ধকারে পাড়ার এই জঙ্গলে কেউ আসে না। একটা বড় পাথর দিয়ে থেঁতলে দিলো বোধহয়, রাজুর মাথাটা। রাজু চিৎকার করে থেমে গেলো।অনুপমাকে অবাক করে দিয়ে সব অভিনয় চলতে থাকলো পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী।

অনুপমা কিছু দেখার আগেই মনে ভাবলো, রাজু হয়তো মরে গেছে। অতবড় পাথর দিয়ে মাথায় মারলে কি আর মানুষ বাঁচে। তবু একটা আশা। সে বলছে,ভগবান আমাকে মারো কিন্তু আমার রাজু বেঁচে থাকুক। অনুপমা কিছু দেখতে পাচ্ছে না। তার বুকে নির্মম ভাবে আড়াল করে বসে আছে দুই নগ্ন পাষন্ড। তার সুডৌল স্তনযুগল দলে,মুচড়ে ছিঁড়ে নিচ্ছে লম্পটের দল। রাজুর মরা মুখ সে ভাবতেই পারছে না। শুধু শুনতে পেলো,দে শালার মাথা থেঁতলে। কেউ যেনো চিনতে না পারে। তারপর নদীর জলে ভাসিয়ে দেবো। এই কথা শুনে অনুপমা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলো। সেই সুযোগে ওরা পাঁচজন অমানুষিক অত্যাচার করলো তার উপর। তারপর সবাই ওরা চলে গেলো,অনুপমাকে নগ্ন অবস্থায় ফেলে।
প্রায় দুঘন্টা পরে অনুপমার জ্ঞান এলো। দেখলো রাজুর দেহটা নেই। ওরা হয়তো গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে অন্য কোথাও বা কোনো নদীতে ফেলে দেবে। সে রক্তমাখা শরীর নিয়ে উঠলো। বুঝতে পরলো পশুরা তার সব সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। কোনোরকমে ছেঁড়া জামাটা পরলো। ব্যাথায় টনটন করছে তলপেট। আর বাঁচার কোনো মানে হয় না রাজু নেই। পরে যাচ্ছে বারে বারে। সিপাই দিঘির এই জঙ্গলে আসতে মানা কোরতো ঠাকুমা। রাজু তাকে নিয়ে এলো। কতবার মানা করলাম শুনলো না। অনুপমা দেখলো দড়িটা ওর তার গলায় বেঁধেছিলো পশুরা কিন্তু সে মরে নি। টান করে বাঁধা তাও সে মরে নি। সে ভাবে মরে গেলেই ভালো হতো। ওরা হয়তো ভেবেছে,মরে গেছি আমি। দাদুকে মনে পরলো ওর। দাদু ডাকছে আর বলছে, গলায় দড়িটা শক্ত করে বাঁধ। ও আগে শুনেছে যাদের অপমৃত্যু হয় তারা এভাবেই ডাকে। অনুপমা দাদুকে বলছে,দাদু ওরা রাজুকে মেরে ফেলেছে। তাহলে আমি বেঁচে কি করবো। আমি তোমার কাছে যাবো। দাদু ডাকছে, দাদুর কথা শুনতে পাচ্ছে ও। দাদু ডাকছে,আয় আমার হাতে লাগানো বাড়ির আমগাছে আয়। ওখানেই ঝুলে পর। আমি আছি,আয়,আয়। অনুপমা ভাবের আবেশে বাড়ির উঠোনে এলো। এখন অন্ধকার রাত। মনেও কালো অন্ধকার, অনুপমার অন্তর জুড়ে,চাপ চাপ কালোর দলা পাকানো রক্ত। নীচু ডালে পা দিয়ে উঠে পরলো গাছে। দড়িটা শক্ত করে বাঁধলো ডালে।কোনোদিন কঠিন কাজ সে করেনি। কি করে দড়ি বাঁধলো সে নিজেও বুঝতে পারলো না। অবশেষে রাজুকে মনে করে ঝুলে পরলো ডাল থেকে।

২২

সকালবেলা অনুপমার ঠাকুমা কাঁদতে শুরু করলো।মরা কান্না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখে, গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে নগ্নপ্রায় নাতনি। ঠাকুমা দেখলো,অনুপমা গলায় দড়ি দিয়েছে দাদুর মতো। আর দেখলো পাড়ার সবাই ভিড় করে এসেছে তার নাতনিকে দেখতে। ভিড়ের মাঝে রাজুকে দেখতে পেলো ঠাকুমা। রাজু বলছে,ঠাকুমা এই অভিশপ্ত আমগাছটা কেটে ফেলতে হবে। অনুপমার ঠাকুমা বলে,তোমার সঙ্গে কাল দেখা হয় নি অনুপমার। রাজু বললো,না তো,আমি কাল একটু মামার বাড়ি বেড়াতে গেছিলাম। আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে।
—-কিন্তু ও যে বললো,তোমার কাছে যাবে।

—–না,ঠাকুমা, আমাকে তো বলেনি কিছু।

—–না,ও আমাকে বলে বাড়ি থেকে বেরোলো। আমার কাছে সোনাদানা নিয়ে বললো,আমি রাজুর কাছে যাচ্ছি। তুমি কাল ঘরে ছিলে না বাবা।তুমি কোথায় ছিলে?

—–ও আপনি চিনবেন না। আমরা একই স্কুলে পড়তাম। ছোটোবেলায় তাদের বাড়িতে কত খেলেছি। আপনিও তো আমাকে দেখেছেন কাল রাতে।

—–ঠাকুমা বললেন, হ্যাঁ দেখেছি। আমি সব জানি। কিন্তু ও গলায় দড়ি দিলো কেন?
—–ঠাকুমা, সোনা দিয়েছেন ওকে। ও একা একা অন্ধকারে বেরিয়ে গেলো। আপনি ভুল করেছেন ঠাকুমা। সোনাদানা আর অন্ধকারে একা যুবতী মেয়ে। না না, ঠাকুমা এটা আপনি ঠিক করেন নি। পাড়ার লোক বলুক। আপনি ভাবুন তো একবার,একথা জানলে পুলিশ আপনাকে ছাড়বে? তবে আমার উপর ভরসা রাখুন।সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাজু দেখলো ওর পাশে ওর সব শাগরেদ হাজির। ওদের দেখে ডাকাত ছেলে রাজুর সাহস বেড়ে গেলো। বাপকা বেটা..বললো,শুনুন ঠাকুমা পুলিশ যদি জানে,আপনি নিজে সোনা দানা সমেত একটা যুবতী মেয়েকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন, তাহলে ঝামেলা হবে। তারপর পুলিশ এলে পোষ্টমর্টেম হবে। যদি রেপ হয়েছে বুঝতে পারে আপনার নাতনির বদনাম হবে। কাগজে,কাগজে ছেপে যাবে আপনার বাড়ির ইতিহাস। আপনার পরিবারের ইতিহাস। আপনার সমগ্র ইতিহাস।

—–তা হলে কি করা যায় বলো তো। মেয়েটা তো মরেই গেছে। তাছাড়া আমি বুড়ি। এই বয়সে আমি অত ধকল সইতে পারবো না। তুমি যা ভালো বোঝো করো। আমাকে বাঁচাও।

—–ঠিক ভেবেছেন আপনি। আমার উপর ভরসা রাখুন। আমি দিল দিয়েছিলাম ওকে। আমার কথা মনে করলো না ও। কি নিষ্ঠুর তুমি অনুপমা। রাজুর অভিনয়ে ঠাকুমা ভুলে গেলেন সবকি।
ঠাকুমা রাজুর চোখ মুছিয়ে দিলেন। বললেন,যা হয়েছে,তা আর ফিরে আসবে না। তুমি পাড়ার লোক ম্যানেজ করে তাড়াতাড়ি শ্মশানে নিয়ে যাও।
রাজু তার দলবল নিয়ে পাড়ার লোকদের বললো,আপনারাই বলুন। একা বুড়ি মানুষ পুলিশের ঝামেলায় যেতে চাইছে না। তাহলে আমরা কি মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাবো। পাড়ার সব লোক ফিসফাস করলো। কেউ ঝামেলায় থাকবে না। একজন বয়স্ক মহিলা বললেন,নিয়ে যাও,ওর ঠাকুমাই তো মালিক। উনি যা বলবেন,তাই করো। আমাদের আপত্তি থাকবে কেন?
রাজু ভাবছে এখনও শালি, বুড়িটা টাকা দিলো না। মদ, মাংস খেতে হবে। পাড়ার লোক,বন্ধু,বান্ধব,শ্মশান খরচ খানকি বুড়ি…
—–তা হলে,ঠাকুমা, চাঁদা তুলি।
——আরে,ছি,ছি বলো কি? টাকার কোনো অভাব নেই। যত লাগে দেবো। সব তো নাতনির জন্যই রাখা আছে।
দশ মিনিট পরে ঠাকুমা রাজুর হাতে কুড়ি হাজার টাকা দিলেন। বললেন,আরও লাগলে দেবো। টাকার কোনো অভাব নেই।
রাজু টাকা নেয় আর ভাবে,শালি,আমাকে টাকা দাও।তা না হলে তোমার দশাও অনুপমার মত হবে। রাজু তার বন্ধুদেরকে বললো,অভিনয়টা চমৎকার হয়েছে বল? তবে অনুপমা কিন্তু কিছুই জানতে পারে নি। আমাকে ও সত্যি ভালোবাসতো।তা না হলে আমি মরে গেছি জেনে ও গলায় দড়ি দেয়?বল তোরাই বল? বন্ধুরা বললো,তোমার জবাব নেই গুরু।এবার বাড়িটাও তোমার হয়ে যাবে।

রাজু বললো,দেখ না শালা,কি করি বুড়ির দশা।

তারপর হাসি হাসি মুখে বুড়িকে বলে,আর কোনো চিন্তা নেই। আপনি চেয়ারে বসে দেখুন।আপনি শুধু অর্ডার করুন।

বুড়ি ভাবে,ঠিক বিপদের দিনে লোক পাওয়া যায় না। ভাগ্যিস এই ভাড়াটে রাজু ছিলো।ও দলবল নিয়ে এসে আমাকে রক্ষা করলো।আমি ওকে ঘরের ছেলে করে রাখবো।

রাজুর নেতৃত্বে তার দল আমগাছে উঠে লাশ পারলো। ট্রাকটর চলে এলো। কুড়িজন লোক সঙ্গে করে চলে গেলো শ্মশানে।
বন্ধুকে আড়ালে বলছে রাজু,শালা এবার বুড়ির পালা। তারপর ওই জায়গায় গজিয়ে উঠবে আমাদের আড্ডা। শালা প্রথমে ক্লাব হবে,পাশে মন্দির হবে।

রাজু বলে উঠলো,বল্লো হরি…
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,হরিবোল…

আবার বল্লো,…

শ্মশানের চিতাটা, রাজুর বোকা চিৎকারে, হেসে উঠলো দাউ দাউ শব্দে…

সুদীপ ঘোষাল। গল্পকার। জন্ম ভারতের পশ্চিমব্ঙ্গরাজ্যের কেতুগ্রামের পুরুলিয়া গ্রামে। প্রকাশিত বই: 'মিলনের পথে' (উপন্যাস)। এছাড়াও কয়েকটি গল্প ও কবিতার বই আছে।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখাসমূহ