করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
রাতে আমার এক বন্ধু হোয়াটস অ্যাপে একটা শর্টফিল্মের লিঙ্ক পাঠিয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করে ওটা দেখতে। রাতে আর দেখা হয়ে ওঠেনি, আজ সকালে দেখলাম। গল্পটা হল খানিক এরকম, একটি ঘরের ভিতর নানা বয়সের নারীরা একত্রিত হয়েছে। সকলেরই সামাজিক পটভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন। সকলেই বেশ হাসিখুশি। ধীরেধীরে যখন গল্প এগোয় তখন জানা যায় এরা প্রত্যেকেই পুরুষ দ্বারা ঘটিত কোনো না কোনো ভায়োলেন্সের শিকার। তা একাধারে যেমন শারীরিক তেমনই মানসিক। এমন সময় ডোরবেল বেজে ওঠে। বোঝা যায় কোনো একজন বা একাধিক ভিক্টিম দরজার বাইরে অপেক্ষা করছে বাড়িতে আসার জন্য। প্রথমে তো বাড়ির ভিতরের সভ্যদের মধ্যে মতানৈক্য শুরু হয় আগন্তুককে প্রবেশ করতে দেওয়া উচিৎ হবে কিনা এ নিয়ে, কারণ বাসযোগ্য স্থানাভাব। কেউ কারো জায়গা ছেড়ে দিতে চায় না। পরে অবশ্য দরজা খুলে দেওয়া হয় ও নতুন সভ্য ভিতরে প্রবেশ করে। ক্যামেরা ঘোরালে দেখা যায় নতুন যে এল সে একেবারেই নাবালিকা। গল্প এখানেই শেষ। কিন্তু দর্শকের দেখা শুরু এখান থেকেই। গল্পটার মধ্যে দুটো বিষয় লক্ষ্য করার আছে। প্রথমত যে বিষয়টি বেশিভাবে উঠে আসে তা হল নারীর উপর পুরুষের পাশবিকতা। গল্পে যেখানে নানান বয়সী নারীদের দেখানো হয়েছে, একেবারে অন্তিমে পৌঁছে আমরা বুঝতে পারি সেখানে এই শিশুটিরই অভাব ছিল এবং বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে যেন সে অভাবেরই একটা অনুরণন হল। একটি নেহাতই শিশু তাকেও রেহাই দেওয়া হল না এই ঘৃণ্য কদর্যতা থেকে। সমাজের একটা ক্রমবর্ধমান জ্বলন্ত ব্যধির ছবি আমাদের চোখের সামনে ফুটে উঠল। যদিও আমরা নির্ভয়া দেখেছি, আসিফা দেখেছি, প্রিয়াঙ্কা দেখেছি তবু বারেবারে বিস্মৃতি প্রবণ মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া খুব জরুরী যে ভুলে গিয়ে এইসব ঘটমান বর্তমানকে আর এড়িয়ে চলা যাবে না। জোরদার আন্দোলনের মাধ্যমে গণসচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। পৃথিবীতে ভারতবর্ষের নাম এখন উচ্চারিত হয় মেয়েদের জন্য সবচেয়ে অসুরক্ষিত দেশগুলির একটি হিসেবে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত দ্য থমসন রাইটার্স ফাউন্ডেশনের ৫৫০টি দেশের উপর চালানো নিরীক্ষা অনুযায়ী এ ব্যাপারে সর্বাগ্রে নাম রয়েছে ভারতের। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় নামগুলো হল যথাক্রমে আফগানিস্তান ও সিরিয়া। এ আর যাইহোক আহ্লাদের কথা একেবারেই নয়। স্ট্যাটিস্টিকের দিকের নজর দিলে আতঙ্কে ঘুম হবে না।
আর দ্বিতীয় যে বিষয়টি অতি সূক্ষ্মভাবে নজর না করলে ভাবনার আওতার বাইরে চলে যাবার প্রবল সম্ভাবনা তা হল বাড়িতে বসবাসকারী নারীদের মানসিক একতার প্রসঙ্গটি। যারা ইতিপূর্বেই বাড়িতে রয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ একেবারেই চাইছিলেন না নতুন মানুষকে স্বাগত জানাতে। ভয় পাছে এমন সুরক্ষিত স্থানটি তাকে ছাড়তে হয়। পাছে পুনরায় ফিরে যেতে হয় সেই নরকে যেখান থেকে সে উঠে আসতে পেরেছে আজকের সুরক্ষায়। স্বয়ং শিকার হওয়া এক নারী যদি অন্য অত্যাচারিতার জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা না রাখে তাহলে কি এটাই ধরে নিতে হবে নারী নিজেই অন্য নারীর প্রতি সহমর্মিতা পোষণ করে না, বদলে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তাই তার কাছে বেশি প্রেয় হয়ে উঠছে? ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে আরো যে বিষয়টি চোরাগোপ্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা হল নারী ও পুরুষের মধ্যে ভেদ। পুরুষচালিত সমাজব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে নারী কি নিজের জন্য ভিন্ন একটি সমাজ তৈরি করতে চাইছে? আমার বক্তব্য বিষয় এখান থেকেই শুরু। একেবারে ভিন্ন একটি আলোচনার মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করব দ্বিতীয় দৃষ্টিকোণটিকে গ্রাহ্যে রেখে। আমার আলোচনার সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণকারী সর্বদাই স্বাগত।
কিছুদিন আগে হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন সমগ্র পৃথিবীব্যাপী ঝড়ের সূচনা করেছিল। যে কোনো আন্দোলনের মতোই এই আন্দোলনও শুরু হয়েছিল একটি বিশেষ অসন্তোষকে কেন্দ্র করে। যে আন্দোলনকে সামনে রেখে মেয়েরা তাদের কথা বলতে পেরেছিল অকপটভাবেই। মানুষ বুঝতে শুরু করেছিল মেয়েদের সংকটটা। সমাজের পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিতর বাস করে যে কোনো ক্ষেত্রে নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইটা মেয়েদের চিরকালই বেশি। লড়াইয়ের কারণ এই নয় যে মেয়েদের পুরুষের তুলনায় শারীরিকভাবে কমজোর আর পুরুষের উপর নির্ভরশীল করে গড়ে তোলার ব্যাপারে ঈশ্বরের অবিচার, না তা একেবারেই না। লড়াইয়ের এক এবং একমাত্র কারণ হল পুরুষ কোনোদিনই নারীকে তার শরীরের উপরে উঠে ভাবতে পারেনি। নারীর মেধা, তার মনন,চিন্তনকে জায়গা ছেড়ে দিতে বেঁধেছে। ফিমেল অবজেক্টিফাইং তখনও ছিল আজও আছে। ফলে এই অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রয়োজন। মেয়েরা তাই চুপ করে থাকতে পারেনি। অনেক লুকিয়ে থাকা সত্যি প্রকাশ হয়ে পড়েছে। কিন্তু মিটুর মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা আন্দোলনকেও পড়তে হল মুখ থুবরে। এর বিরুদ্ধতা করা হল দুভাবে। প্রথমত বলা হল, যাঁরা মুখ খুললেন, তাঁরা ঘটনা ঘটার সময় কেন চুপ থেকে এতদিন পর সামনে এলেন? যা আমার মনে হয়েছে এ বিষয়টা ততটা প্রাসঙ্গিক নয়। কারণ ঘটনা ঘটার সময় অন্যায় যেভাবে ঘটিত হয়েছে, সময়ের ব্যবধানেও তা একইরকম অন্যায় থাকে। চলে যাওয়া সময়ের রুমালে মুখ মুছে অন্যায় কখনই পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠতে পারে না। যদিও কেউ কেউ হয়ত বলবেন সময়ে প্রতিবাদ করা হলে আজকের সমাজ এতটা প্রদূষিত হয়ে যেত না। কিন্তু আমার মতে বেটার লেট দ্যান নেভার। যে প্রতিবাদ পূর্বে করা হয়নি তা যে আর কখনই করা যাবে না তেমন কোনো রুলবুক কোথাও নেই। তার প্রয়োজনও নেই। সত্য চিরকালই সত্য। আর দ্বিতীয় যে কারণটা আমাদের সামনে আসে তাকে গুরুত্ব না দিয়ে থাকা যায় না। কেউ কেউ মনে করেন আন্দোলন যখন চরমে সে সময় কিছু মহিলা নেমে পড়েন ঘোলা জলে মাছ ধরতে। এর সত্যিমিথ্যে জানিনা, আমার আলোচনার বিষয়ও সেটা নয়। কিন্তু আমার আশঙ্কা এর ক্ষীণতম অংশও যদি সত্যি হয় তাহলে তা মেয়েদের জন্যই অহিত ডেকে আনবে না কি? গোটা দুনিয়া জুড়ে যখন মেয়েদের নিজস্বতা প্রতিষ্ঠার লড়াই জোরদার হওয়ার কথা তখন কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী নারীর জন্য যদি তা পণ্ড হয়ে যায় এ দুঃখ রাখার জায়গা কোথায় ?
কিছু ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য একটা বৃহত্তর আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যাওয়াটা একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। আধুনিকতা যেমন শক্তির ধারক অন্যদিকে তেমনি যেন তা অপশক্তিরও প্রচারক না হয়ে দাঁড়ায়। ভয় হয় অজান্তে অলক্ষ্যে মেয়েরাই মেয়েদের কথা বলার লড়াইকে খাটো করে নিশ্চিহ্ন না করে বসি।
আমার দিদিমা বলতেন, মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। বিশ্বাস হত না। সে বিশ্বাস আজও যে খুব পোক্ত হয়েছে তা নয় তবে ফাটল ধরেছে তো বটেই। এমন কিছু কিছু ঘটনা আমাদের চারপাশে রোজ ঘটে যাচ্ছে যে এ ভাবনাকে আর ব্রাত্য বলে ফেলে রাখা যাচ্ছে না। যদি সাহিত্যকে সমাজের দর্পণ বলে আমরা ধরে নিই তাহলে সাহিত্যে যে এর বহুবিদ উদাহরণ ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে তা আর বলে দিতে হবে না, অভিজ্ঞ পাঠকমাত্রই জানেন। তবে দিদিমার যে কথা আমি বিশ্বাস করিনি, বড় হতে হতে নিজের জীবনেই যখন সেসব ঘটনা ঘটতে শুরু করে তখন ক্রমশ মনে হতে থাকে তাঁদের জীবনের অভিজ্ঞতা নিশ্চিতই আমাদের চেয়ে কিছু কম ছিল না।সময়ের পলি সরিয়ে যদি অতীতের দিকে তাকান যায় তাহলে দেখা যাবে বিয়ের পর একান্নবর্তী পরিবারের হাজারো ঝামেলা সামলানো সত্বেও শাশুড়ি বা শাশুড়িসমা সম্পর্কীয়া নারীদের যখনই বকুনি জুটেছে তখনই হয়ত দিদিমার মনে হয়েছে, এ দুনিয়ায় মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। শুধু তাই নয় পান থেকে চুন খসলে স্বামীর কানে কথা তুলে দিয়ে স্বামীর হাতে বউয়ের হেনস্থা দেখে মনের কিলবিলিয়ে ওঠার সুখও তো তখন ছিল বহুলভাবে, এখনও কি এ অবস্থার খুব পরিবর্তন ঘটেছে? মেয়েরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীন। তারা স্বয়ং উপার্জনক্ষম। সংসারে তাদেরও একটা নিজস্ব বক্তব্য আছে। সংসারের বাইরেও তারা আজ পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলছে। জয়েন্ট ফ্যামিলি ভাঙতে ভাঙতে নিউক্লিয়ার হয়েছে। এতদিন যেভাবে সমাজে নারীর স্থান নির্ধারিত করা হয়েছিল আজকের নারী তা থেকে বেরিয়ে এসেছে। নিজের চাহিদা ও অধিকার রক্ষার পক্ষে জোরালো সওয়াল করছে। তবু সত্যের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে কই? নারী-পুরুষের সমানাধিকারের সত্য প্রতিষ্ঠা থেকে বারবার লক্ষ্যভ্রষ্ট হচ্ছে কেন আন্দোলন? তবে কি পুরুষতান্ত্রিকতার বাইরে অলক্ষ্যে মেয়েরাই মেয়েদের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে? ভারতবর্ষে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের ইতিহাস বহু পুরনো। আগে সেসব চেপেচুপে রেখে যে অন্যায় করা হত এখন তার হাত থেকে অব্যাহতি মিলেছে কিন্তু ভায়োলেন্স যে তিমিরে ছিল সেখানেই আছে। তবুও কি সবটা সামনে আসছে? বাড়ির পুরুষটি যদি ভায়োলেন্স ঘটিয়ে থাকে তার পিছনে বাড়ির অন্যান্য মহিলার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ যে নেই সে কথা তো জোর দিয়ে বলা যায় না। হয় তারা সরাসরি ঘটনা ঘটানোর জন্য উস্কে দেন অথবা চুপ করে থেকে অপ্রত্যক্ষ সাহায্য করেন। বাড়ির ভিতর একটি মেয়ে দিনের পর দিন অত্যাচারিত হচ্ছে কিনা অপর মেয়ে বা মেয়েদের উপস্থিতিতে? শেষপর্যন্ত অত্যাচারিতা মেয়েটি পুলিশের কাছে গেলে তাকেই চরিত্রহীন বলে দাগিয়ে দিচ্ছে শ্বশুরবাড়ির বা প্রতিবেশী অন্যান্য মহিলারা। আবার উল্টোটাও যে ঘটছে না তাও নয়। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছে পুরুষ বা তার বাড়ির অন্যান্য মহিলারা। এবং দিনের পর দিন ফলস চারশো আটানব্বই ক ধারার যেভাবে অপব্যবহার হচ্ছে সে স্ট্যাটিস্টিক্সও তো বেজায় ভাবিয়ে তুলছে।
মেয়েদের ওপর হওয়া ঘরেলু হিংসা আটকানোর জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির (১৯৮৩) ৪৯৮ক ধারা অনুযায়ী যদি কোনো বিবাহিতা মহিলা তার স্বামী অথবা শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে তার প্রতি মানসিক অথবা শারীরিক হিংসার অভিযোগ আনে তাহলে অভিযুক্তদের জন্য কড়া শাস্তির ব্যবস্থা আছে।
‘ক্রূরতা’ কে ব্যাপক অর্থে পরিভাষিত করা যেতে পারে, যেমন মহিলার শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করা অথবা ক্ষতিকর কাজে উৎসাহ দেওয়া, তাকে ব্ল্যাকমেল করা, মহিলার কোনো চাহিদা পূরণের জন্য তারসঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক বানানো বা তাকে শোষণ করা, মহিলাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা করার মতো পরিস্থিতি তৈরি ইত্যাদি। পণের জন্য অত্যাচারকেও এই ক্রূরতার অধীনেই ধরা হবে। অনুসন্ধিৎসু পাঠক ব্যাপারটা আরো ভালো করে বোঝার জন্য সামান্য গুগল করে নিতে পারেন। একটা সময়ে আইনের এই ধারা অনুযায়ী আরোপীকে পুলিশ কোনোরকম ওয়ারেন্ট ছাড়াই তৎক্ষনাৎ গ্রেফতার করতে পারত। সেই আইনের বদল করে এখন তা বন্ধ করা হয়েছে। বদলে যাওয়া আইন অনুযায়ী পুলিশ এখন আর অভিযোগ মাত্রই স্বামী বা তার পরিবারের অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারে না। এখন প্রশ্ন হল এই তৎক্ষণাৎ গ্রেফতারের আইন বদল করা হল কেন? আরোপীকে সমাজে খোলা ছেড়ে দেওয়া কোনোভাবেই তো সমর্থন যোগ্য নয়। বিশেষ করে ভারতবর্ষের মতো দেশে যেখানে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের সালানা গড়ে ১,০০,০০০ কেস রেজিস্টার করা হয়। তাহলে কী এমন হল যে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট এই বদল আনতে বাধ্য হল? এই আইন মেয়েদের ওপর হওয়া অত্যাচার বিরোধী এক শক্ত হাতিয়ার উঠতে পারত কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তব অন্যকথা বলে। দেখা যায় যে রেজিস্ট্রিকৃত কেসের ৮০% ই শেষ হয় আরোপীর বেকসুর খালাসের মধ্য দিয়ে। সুপ্রিম কোর্টের একটি ভার্ডিক্ট অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে যে, যে আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মেয়েরা তাদের হকের লড়াই লড়তে পারত তাকেই কিছু কিছু মেয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি এবং অহং তৃপ্তির হাতিয়ার করে তুলেছে। উদাহরণ হিসেবে অর্নেশ কুমার বনাম স্টেট অব বিহার, মঞ্জুরাম কালিটা বনাম স্টেট অব আসাম, বিবি পরওয়ানা খাতুন বনাম স্টেট অব বিহার, রাজেশ কুমার অ্যান্ড আদার্স বনাম স্টেট অব ইউপি, সোশ্যাল অ্যাকশন ফোরাম ফর মানবাধিকার বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া প্রভৃতি কেসগুলো উল্লেখ করা যায়। এখন প্রশ্ন হল এভাবে একটা আইনের মিসইউজ করে লাভ কার আর ক্ষতিই বা কার? ভেবে দেখা দরকার। মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সামিল যদি না হতে পারি অন্তত বাধা হওয়ার হাত থেকে নিজেদের দূরে তো রাখা যেতেই পারে। মেয়েদের প্রতিনিয়ত লড়াইকে যদি মেয়েরাই সম্মান দিতে না পারি তাহলে সেইসব মেয়েরা যারা সত্যি সত্যিই অকথ্য অত্যাচারের সম্মুখীন হয়ে সমাজে সসম্ভ্রম মাথা তুলে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সেই লড়াইকে ছোট করে দেওয়া হয় না কি? এবং এভাবেই আমার দিদিমার ‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু ‘ কথাটা আজও একইরকম ভাবে প্রাসঙ্গিক থেকে যায়। সমাজের বিভিন্ন অসাম্যের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের জন্য যে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিষ্ঠা, কিছু কিছু মেয়েদের নিন্দাযোগ্য আচরণের কারণে সেই দিবসের মহিমাই কি প্রকারান্তরে ক্ষুণ্ণ হয়ে যায় না?
আবার গোড়ার কথায় ফিরি। সিনেমায় আমরা একটা ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি হতে দেখেছি। ধরা যাক কিছু সংখ্যক সদস্যের কথা শুনে বাইরের পৃথিবীর নৃশংস কদর্যতার শিকার হয়ে ওই বাড়ির সদস্য হতে আসা নতুন
শিশুটিকে জায়গা দেওয়া হল না তাহলে কী হত? মেয়েরাই কি অজান্তে হয়ে উঠত না মেয়েদের শত্রু? ‘ভয়’ নামক দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দিয়ে সত্যের মুখোমুখি হওয়ার সাহস হারিয়ে ফেলা নারীদের কোন্ সান্ত্বনা বাকি থাকত নিজেদের দেওয়ার জন্য? পুরুষ শাসিত সমাজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে সম্পূর্ণ মেয়েদের যে জগৎ তৈরির ইঙ্গিত পরিচালক দিয়েছেন তার ভিত্তি কী হতো? স্বার্থপরতা? নীতিহীনতা? তিতিক্ষাহীন, ত্যাগহীন, অন্যের দুঃখে সামিল হতে না পারা বিকৃত মন? তাহলে আর নতুন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কী প্রয়োজন?পুরনোটাই তো রয়েছে বহাল তবিয়তে। ফিল্মমেকারকে ধন্যবাদ তিনি তেমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করেননি, জাস্ট একটু স্পর্শ দিয়ে বেরিয়ে গেছেন। কিন্তু সামান্য ওই স্পর্শটুকুই হাড় হিম করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। সমাজে নানারকম অসঙ্গতি থাকবে। কিন্তু সেই অসঙ্গতিগুলোকেই শুধু মাথায় রেখে নারী -পুরুষ বিভেদ সৃষ্টি কখনই কাম্য হতে পারে না। একই সমাজে একই সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণকারী মানুষ থাকবে। আমাদের কাজ হল সকলের শুভশক্তি প্রয়োগে সামাজিক অসঙ্গতিগুলো দূর করার মধ্য দিয়ে একটা সামাজিক স্থিতাবস্থা তৈরি করা। আইনের জন্য জনগণ নয়, জনগণের জন্য আইনের সৃষ্টি। তাকে সর্বান্তকরণে রক্ষা করা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। আলোচনা-প্রতি আলোচনা সর্বদাই স্বাগত কিন্তু আলোচনার আড়ালে ডিফেমেশনের মতো সোশ্যাল বুলিয়িং কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে এক শ্রেনীর মানুষ (নারী অথবা পুরুষ) সর্বদা এ কাজে লিপ্ত থেকে প্রকৃত সমাজকর্মীর কাজের অগ্রগতি রোধ করার চেষ্টা চালিয়ে যান। তবে সুখের বিষয় হল সত্যিকারের লড়াই কখনো কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থেমে থাকেনি। এগিয়ে যাওয়ার রসদ সে নিজেই জোগাড় করে নিয়েছে সারা পৃথিবীর লড়াকু মানুষের সঙ্গে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..