করাচিতে নজরুল
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
বিশ্বের আর সব দেশের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশেও প্রতিবছর নারী দিবস পালিত হয়, হচ্ছে। শুরুতে শ্রমজীবী নারীর শ্রমের ন্যায্য মজুরি আদায়ের এই আন্দোলনটি ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্বীকৃতি পায়৷ আজ নানা দেশে নানান অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজনে উৎসবের আমেজে দিনটি পালিত হয়। কিন্তু চাপা পড়ে যায় নারীদিবসে নারীর অধিকার রক্ষায় নারীবাদের প্রস্তাবনা।
১৮৫৭ সালে নিউইয়র্কের এক সুতা কারখানার শ্রমিকেরা তাদের প্রতি মালিকপক্ষের বৈষম্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠে। মালিকপক্ষ পাল্টা দমন পীড়নে লেখেন শোষণের আরেক ইতিহাস। চলতে থাকে শাসক শ্রেণির দমনের ধারাবাহিকতা। ১৯০৭ সালে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ঘাম ঝরানো শ্রমিকদের এই রক্তাক্ত আন্দোলনের ইতিহাসকে ম্লান করে দিতে চায় কিছু শ্রেণিশত্রু।
আজো বহু বুর্জোয়া শাসক শ্রেণির প্রতিনিধি বলে বসেন, নারী দিবসের দরকার কী! চাই মানুষ দিবস হতে চাই মানুষ, নারী না৷ এরা বলেন কারণ মনে মননে এরা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ধারণ করেন, লালন করেন। এরা আমাদেরও ভুলিয়ে দিতে চান, শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত কর্ম পরিবেশ, ন্যায্য মজুরি, শ্রম আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবীতে পালিত হয় নারী দিবস। যে দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী, সংসদ স্পীকার নারী, পাবলিক ইউনিভার্সিটির ভিসি নারী, শিল্প মালিক নারী তবুও সেই রাষ্ট্র আদতে নারী বান্ধব হতে পারে নাই। প্রতি বছর নারী দিবসের ঝলমলে আয়োজনে এর আসল উদ্দেশ্য তাই চাপা পড়ে যায়। তাই বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেউ কেউ নারীদিবসের মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে মানুষ দিবসের দাবি তোলেন।
নারীবাদ মানে পুরুষ বিদ্বেষ না, পুরুষের বিরুদ্ধে কথা বলা না, পুরুষকে দমন করে তাকে পর্যুদস্ত করে তার আসন ছিনিয়ে নেয়াও না৷
নারীবাদ সাম্যের কথা বলে, সমতার কথা বলে, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলে। সাম্যবাদের চর্চায় নারীবাদ তাই নারীর যৌন স্বাধীনতার কথা বলবে। এখন যৌন স্বাধীনতা বা সঙ্গী নির্বাচনের স্বাধীনতা মানে তো এই না যে কেউ গরুর মতো যথেচ্ছ বিহার করে বেড়াবে! মাঠে ঘাটে যত্রতত্র যার তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্হাপন করার নাম স্বেচ্ছাচার, যৌন স্বাধীনতা না। বিবাহ বহির্ভূত যৌনতাকে যারা যৌন স্বাধীনতার নামে চালাতে চান তাদের শুভবুদ্ধির পরিচয় আমরা পাই না। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে এই রকম ব্যক্তিরাই নিজেদের নারীবাদী বলে গলা ফাটিয়ে চেঁচান আর নিজেদের সমস্ত কর্মকান্ডকে নারীবাদী আচরণ বলে ঘোষণা দেন। যখন তখন যারতার সাথে যৌনতার কথা প্রচার করে আর পিতৃপরিচয়হীন শিশুকে এদেশে জন্ম দেয়া যাবেনা বলে যারা বারবার গর্ভপাতের আশ্রয় নেন তাদের সম্পর্কে ভাববার সময় এসছে৷ বস্তুত এই প্রজাতির মানুষের বিতর্কিত জীবনের বিতর্কিত আচরণের কারণে নারীবাদ তো বটেই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন প্রকৃত নারীবাদীরা।
নারীবাদ মানে নারীর কর্তৃত্ব লাভের লড়াই না, পুরুষের সমকক্ষ হয়ে তাকে পদলতিত করাও না। কিন্তু আফসোসের কথা হলো এই যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীবাদকে এতোটাই বিতর্কিত এতোটাই নির্লজ্জ একটা চেহারা দেয়া হয়েছে যার কারণে খোদ নারীবাদীরাও নিজেকে নারীবাদী বলে পরিচয় দিতে বহু ক্ষেত্রে কুন্ঠিত হন। নারীর অধিকারে কথা যারা লেখেন সেইসব লেখকগণও নিজেকে নারীবাদী লেখক হিসেবে পরিচিত করাতে ইচ্ছুক নন৷ বরং কিছু এলিট শ্রেণীর সুবিধাবাদী নারী পুরুষ নিজেদের নারীবাদী হিসেবে ঘোষণা দেন। আবির্ভূত হন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানান রকম উদ্ভট তত্ব নিয়ে। নানান বিতর্ক সৃষ্টি করে নেহাতই নিজের চেহারাটাই এরা লোকের কাছে তুলে ধরেন, সঙ্গে থাকে এদের এমন কিছু কার্যকলাপ যার সাথে নারীবাদকে না মেলালেও চলে।
এদেশের এলিট শ্রেণীর নারীবাদীগণ কেউ কেউ বিবাহ প্রথায় বিশ্বাসী নন বলে ঘোষণা দেন তো কেউ কাবিননামা করে বিয়ে করার বিপক্ষে মত দেন। এদের মতে ইসলাম ধর্ম মতে বিবাহের একটা মূল বিষয় মোহরানা একটা বাতিল বিষয়। কিন্তু এর বাইরে গিয়ে নারীর যোনির দাম হিসেবে তালিকাভুক্ত মোহরানা বাদ দিয়ে কীকরে বাংলাদেশের নরনারী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন সেই দিকনির্দেশনা দেওয়ার বেলায় আবার তারা গরহাজির! ফের যিনি বলছেন বিবাহ একটা বাজে প্রথা বা প্রতিষ্ঠান, নারীবাদ পরিপন্থী তিনি নিজেই বারবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন। আমরা নাদান মানুষ হিসাবে কোনটাকে নারীবাদ বলে বুঝবো!? ফের নারীবাদী বলে নারীর জন্য নারীর পক্ষে কথা বলা পুরুষটি যখন নির্যাতন আর নিপীড়ন করেন প্রেমের কথা বলে কোন নারীকেই, তখন আমার মতো বোকা মানুষের মনে হতেই পারে এই ব্যক্তি আর যাই হোন বা যতো বড় ক্ষমতাধর হোন না কেন নারীর অধিকারের পক্ষের লোক নন।
মোটাদাগে বললে, বলতে হবে নারীবাদ নারী পুরুষের সমতার লড়াই। একই পঞ্চভূতে তৈরী নারী এবং পুরুষ এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে সমান সমান অধিকার ভোগ করবে, কেউ কারো বিপক্ষে না বরং নারী পুরুষ উভয়ের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম অধিকার নিয়ে কথা বলার স্বাধীনতার কথা বলে নারীবাদ। নারীবাদ আন্দোলনে নারী, পুরুষের শারিরীক ও মানসিক পার্থক্যকে হিসেব করেই দুইজনের সমান অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর জন্য একটা নারীবান্ধব সমাজ তৈরী করাটাই নারীবাদের মূল উদ্দেশ্য।
যদিও নারীদিবসকে কেন্দ্র করে নানান রকম প্রস্তাবনাও বাংলাদেশে গৃহীত হয় বটে, কিন্তু একটু নজর করলেই দেখা যাবে বাংলাদেশে নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলা আর কাজের সাথে নারীবাদের দূর দূর পর্যন্ত কোন সম্পর্ক নাই। সাম্যবাদ যদি মানুষের উদ্দেশ্য হয় তবে নারীবাদ হলো তার পথ। নারীবাদ নারী পুরুষের সমতার কথা বলে, মানববাদের কথা বলে।
কিন্তু যে দেশে একটা মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয় এর উদ্যোক্তাদের সেখানে মানববাদ দূর, মানবতার কথাও পাশে রেখে চলা ঘটনা! এটা বলছি এ কারণে যে, এদেশে নারী দিবস পালিত হয় দস্তুরমত এবং এদেশে প্রচুর প্রগতিশীল চিন্তার নারীবাদী আছেন। আছেন নিজেদের মানবতাবাদী আর মানববাদী বলা সুশীল সমাজের মানুষ। তাদের সম্মিলিত চেষ্টার বড় অভাব এদেশে সেটা স্পষ্ট, যদি একতা থাকতো বা নিদেন একের মতের প্রতি অপরের নূন্যতম শ্রদ্ধা থাকতো তবে তাঁরা বিচ্ছিন্ন ভাবে কথা না বলে সকলে মিলে একত্রিত হয়ে একসাথে এই উদ্যোগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতেন। তা তারা করেন নাই, যদিও আমাদের আশা করতে বাঁধা নাই। যতো বলি নারীবাদ এদেশে স্রেফ একটা মরীচিকার মায়া মাত্র।
বাংলাদেশ নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশে, মুসলিম শাসন নাই বটে কিন্তু মুসলমান সংখ্যাগুরু সম্প্রাদায়ের কথা মাথায় রেখেই এখানে নারী অধিকারের বিষয়ে কথা বলা হয়। আর তাই প্রশাসন চুপ থেকে দেখে যায় কেবলই গ্রাম শহরের পাড়ায় মহল্লায়, রাজধানীর রাস্তায় যান চরাচল বন্ধ করে চলছে নানান ওয়াজিদের৷ ওয়াজের নামে নারীর প্রতি বিদ্বেষের দাপট। বাদ নেই রাষ্ট্রায়ত্ত গণযোগাযোগ মাধ্যমও। ধর্মের কথা বলবার নামে দেশজুড়ে চলছে একশ্রেণির উচ্চাভিলাষী ধর্ম ব্যবসায়ীর ওয়াজ ব্যবসা, আয় করছে লাখো কোটি টাকা স্রেফ আর স্রেফ নারীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। ইউটিউব তো বটেই পাড়ার দোকান, হাটে বাজারেও মিলবে এদের ওয়াজের নমুনা। নারীর সম্পর্কে এমন কুৎসিত বিকৃত কথা এরা বলেন যে শ্রোতা দর্শকেরা ওয়াজ চলাচালীনই কামোত্তেজনার চরম সীমায় পৌঁছায়।
পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সাথে ধর্মের গাঁটছড়া এতোটাই পোক্ত যে,দেশের সবরকম মাদ্রাসা গুলোতে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসনের উদ্যোগে এইসব মাদ্রাসার শিক্ষা প্রণালী, শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবার আগ্রহ অনুপস্থিত।
পিতৃতন্ত্রের মূল স্তম্ভ হিসেবে আবির্ভূত ধর্মকে বাঁচাতে এদেশের আইনগুলোও বড় বেশি রকম একপেশে। এখনো এই দেশে সবরকম পারিবারিক আইনে ধর্মের সহজ বিচরণ। সবগুলো পারসোনাল ল’ ধর্মগ্রন্থ মেনে চলে। সন্তানের কাস্টডি পেতে স্বামী পরিত্যক্তা বা বিবাহ বিচ্ছিন্না নারীরা হিমশিম খাচ্ছেন।
সেই বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন’র সময় দেখা গঙ্গা পদ্মায় বহু জল গড়িয়েছে বটে কিন্তু নারী মুক্তি রয়ে গেলো সত্যি যেনো মরীচিকা হয়েই।
এই এলো এই হচ্ছে হবে করে করে আমরা বহু বছর অতিক্রম করেছি বটে, বিশ্বের আর সকল দেশ নারীবাদের তৃতীয় ওয়েভ লালন করছে মনে মজ্জায়, যাপন করছে তুরীয় স্বাধীনতা নারী জীবন যাপন করতে আমরা তখন আজো দ্বিতীয় ওয়েভে আটকে আছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেই বাবা আদমের যুগের সাথে বা প্রস্তর যুগের সাথে আমাদের কিছুমাত্র ফারাক আছে বলে মনে হয় না।
তখনও যেমন আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলা হতো সকল অনিষ্টের মূল নারী,
হাওয়া নামক নারীর কারণেই গন্ধম নামক জ্ঞানফল খেয়েছিলেন আমাদের আদিপুরুষ আদম বা এ্যাডাম তেমনি এ কালেও নারীর দিনগত পাপক্ষয় করতে হয় এইসব কথা শুনে আর মেনে।
জানিনা ফলের নাম যখন জ্ঞানফল তখন তা খেয়েছেন বলে কথিত ঈশ্বরের অপ্রিয়ভাজন কেন হলেন আদম ওরফে এ্যাডাম।
“রমনী প্রতিভার আদি অধিশ্বরী। ইহা সর্ববাদিসম্মত যে নারীই প্রথম জ্ঞানফল চয়ন ও ভক্ষণ করিয়াছেন। পরে পুরুষ তাহার উদ্দিষ্ট প্রদত্ত ফলপ্রাপ্ত হইয়াছেন।“ (রোকেয়া রচনাবলী;পৃঃ২০৬)
জানা নাই কেনইবা এর দায়ভার এলো হাওয়া নামের নারীটির নামে। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মে যথাক্রমে হাওয়া বা ইভ’কে প্রথম নারী বলা হচ্ছে। কিন্তু এই দুইটি ধর্মের আদি রূপ হলো ইহুদি ধর্ম।
যদিও ইহুদি ধর্মগ্রন্হ দ্য বুক অব জেনেনিসে আমরা ‘লিলিথ’ নামের আরেক নারীর উপাখ্যান জানতে পারি। যেখানে নর-নারীকে একইসাথে সৃষ্টির কথা বলা হচ্ছে। লিলিথ সেই নারী যিনি আদমের সঙ্গী বটে কিন্তু তার পাজরের হাড় থেকে নয় বরং আদমের মতো লিলিথও মাটির তৈরী।
So god created man in his own image in the in the image of god created he him.; male and female created he them ( 1:27) অর্থাৎ নরনারী একসাথে একই উপাদানে সৃষ্টি৷ কথা আছে বটে আদি আব্রাহামিক ধর্মমতে কিন্তু আরো বহু ঘটনা বা কাহিনির মতো লিলিথকেও ঢেকে দেয়া হয়েছে কালের অন্ধকারে। কারণ খোঁজ করলে উঠে আসবে লিলিথের স্বাধীনচেতা স্বভাব তাঁর জোরালো যুক্তির সাথে প্রবল বিদ্রোহের কথা যা মানলে ধর্মের মহিমা নষ্ট হয়।
ঠিক যেমন এখনো বহু রকমের অদ্ভুত নিয়ম, অন্যায় অবিচার আর নারীর প্রতি বৈষম্য চাপিয়ে দেওয়া চলে ধর্মের মোহনীয় মোড়কে ঢেকে। আমরা কথা বলি না বা বলতে পারি না। নিজের অধিকারের দাবীতে সোচ্চার হইনা কারণ ধর্মে সেই অধিকার নেই। ধরুন সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের বিবাহ বিচ্ছেদের কথা। বারবার কেবলমাত্র লোক দেখানো আয়োজন আর সভার নামে একটা আশ্বাস দেয়ার ভড়ং চলেছে বলা যাবে। কাজের নামে কবি কিন্তু নীরব, কাজের নামে অষ্টরম্ভা আইন প্রনয়ণ কমিটি। কী? নাহ!! হিন্দু ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদের কথা নাই নাই কোন সমাধানও।বড়জোর তারা সেপারেশন চাইতে পারেন, আইন প্রণেতাগণ এইখানে বড়ই সদয় বটে।
The Hindu married women right to separate residence and maintenance act 1946!
ঘটনা হচ্ছে ৭৩ বছরের পুরানো একটা আইন আজো চলছে কিন্তু এদেশের নারীবাদীরা এটি নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেন না। বিচ্ছিন্ন কিছু আলাপ হয়তো হয় কিন্তু এই আইনটি বদলানোর জন্য সোচ্চার হতে আমি অন্তত কাউকে কখনো দেখি নাই।
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক এখানে অগ্নি দেবতার সাক্ষ্য মতে তৈরী,সাত জন্মের বন্ধন। যেখানে মতের অমিল সহ নানান রকম ঘটনার ঘনঘটায় একটা জীবন একে অপরের সাথে কাটানো মুশকিল সেখানে সাতজন্মের কথা আসে কীকরে!
এদেশের আইনের নামে আরেক ঠুঁটোজগন্নাথ হলেন বিশেষ বিবাহ আইন, যেটি ১৪৭ বছরের পুরানো একটি আইন। ১৮৭২ সালে তদানিন্তন বৃটিশ ভারতে আইনটি প্রণীত হয় যা আজো চলছে। মজা হলো এই আইনে দুই ধর্মের দুইজন নারীপুরুষ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন যেহেতু প্রতিটা ধর্মের আলাদা করে বিবাহ আইন রয়েছে। কিন্তু এই আইনে ডিভোর্সের কোন বিধান নাই বা রাখা হয় নাই৷ এই ২০২০ সালে এসেও কোন মানুষ মতোবিরোধ নিয়ে সংসার করতে বাধ্য হচ্ছে সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি কিন্তু যাদের দেখার কথা তারা দেখছেন না।
প্রতিবছর নারীদিবস আসে যায় ঘুরেফিরে আর সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতারাও ব্যানার-ফেস্টুন টানিয়ে উৎসবের মতো করে তা পালন করেন। তাদের মনে থাকে না, অসহায় বোনটার কথা। মনে না থাকার জন্য আরো কিছু বিষয় যেহেতু তাদের আছে, যেহেতু তারা জানেন বোনটিকে সালঙ্কারা নববধূবেশে সম্প্রদান করা মানেই তো দায়মুক্তি তাদের। সম্পত্তির ভাগের কথা আসলেই মিতাক্ষরা আর দায়ভাগার বিতর্ক আসবে। ফের বাপের ভিটায় ঘুঘু চড়ানোর নানান ফন্দিফিকির ফাঁস হয়ে যায় তো। তাই ওপথে হাঁটা যাবে না, হিন্দু বিবাহবিচ্ছেদের আইন প্রনয়ণ যতো দেরি হয় ততো বেশি ভালো।
হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন হয়েছে বটে কিন্তু কেবল আর কেবলমাত্র আইন করে কখনো লাভ কিছু হয় না যদিনা তদারকি থাকে। আইন হয়েছে বটে কিন্তু কয়জন সেই বিয়েটা রেজিস্ট্রি করেন তা ভাববার বিষয়। ঠিক যেমন নারীর অগ্রযাত্রার কথা চিন্তা করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১২ সালে নারী উন্নয়ন নীতি প্রবর্তন করে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে প্রণীত হয়েছে, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০! পারিবারিক সুরক্ষা নীতিমালা ২০১৪! প্রণীত হয়েছে, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় নীতিমালা! যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮২!
কিন্তু এইসব আইনের প্রয়োগ নিয়ে খোদ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা চলে আসে। আজো যখন কোন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হন তখন মামলা নিতে চান না পুলিশ ভাইয়েরা। ধর্ষণের শিকার মেয়েটির চালচলনের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলে কিন্তু দোষীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে যতো গড়িমসি! ব্রাকের প্রতিবেদন বলছে, ৯৪ শতাংশ নারী গণপরিবহনে যৌন নির্যাতনের শিকার হন৷ যখন বাংলাদেশের ৮৭ শতাংশ নারী রোজ শিকার হচ্ছেন পারিবারিক সহিংসতার!
নারী অধিকার, নারী মুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন এদেশে আজ পর্যন্ত ফাঁকাবুলির অপর নাম। খালি চোখে দেখা যায় বটে, নারীর আইনগত ও সামাজিক নানান সমস্যার সমাধান দিতে কাজ করছে দেশী বিদেশি উন্নয়ন সংস্থা। রয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়,আইন ও শালিস কেন্দ্র। কিন্তু একটু খেয়াল করে দেখলে ফাঁকটা দেখা সম্ভব হবে। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সিডও সনদের অনুমোদন করে ও সাক্ষর করে। নারীর প্রতি সকর প্রকার বৈষম্য বিলোপ এই সনদের অনুচ্ছেদ ২ এবং অনুচ্ছেদ ঃ১৬.১(গ) দ্বারা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। ২ধারা মতে, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য নিরসনে শরীক দেশগুলো আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে।
১৬.১(গ)ধারায়, বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার ও দায়িত্বের কথা বলা আছে।
অর্থাৎ সাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এই সনদের দুইটি ধারা রাস্ট্র কর্তৃক পালিত হলে বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের দায় দায়িত্ব, উত্তরাধিকারের জটিলতা এবং নারী ও পুরুষের মধ্যকার প্রচলিত বৈষম্যের বিলোপ ঘটে। কিন্তু রাষ্ট্র তা করেছে কী?
বাংলাদেশে যারা নারী অধিকার নিয়ে কাজ করেন তারাও নিজেদের নারীবাদী বলেন না বা বলতে চান না।এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পর্কে রাষ্ট্রকে অবহিত করানোর মতো দায়িত্ব পালনে এদের বড়ই অনীহা। নারীর লড়াই যে পুরুষ না বরং পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে সেটা কেবলই তত্ব কথা হিসাবে রয়ে গেছে, বাস্তবে মানে বড় কম মানুষ। বোঝে তারচেয়ে আরো কম মানুষ। তাই নারীবাদ আজ বহু তাবড় তাবড় পন্ডিতের কাছে স্রেফ একটা বিশৃঙ্খলার নাম, কাজের কিছু না। যেমন বহুজনের কাছে তার নারীবাদী পরিচয় স্রেফ একটা চাকরি মাত্র, জীবনবোধ না।
প্রতিটা দেশেই নারীবাদের চেহারা ভিন্ন ভিন্ন রকম, ভিন্ন তার প্রয়োগ। বাংলাদেশে নারী দিবসের অনুষ্ঠান হবে কিন্তু বাংলাদেশের গণমানুষের কাছে নারীবাদ তার গ্রহণযোগ্যতা তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে। বলা চলে, প্রান্তিক খেঁটে খাওয়া নারী পুরুষ নারীবাদ নিয়ে ভাবে না। তারা এমনকি নারীবাদ নিয়ে মাথা ঘামায় না, বোঝেও না। এর একটা বড় কারণ, এদেশের নারীবাদীরা প্রান্তিক পর্যায়ে নিজেদের পৌঁছাতে ব্যর্থ। আমি জানি কথাটা অনেকের ভালো লাগবে না বা পছন্দ হবে না। কিন্তু এর দ্বিমত থাকলে আগে ভাবুন আপনি নিজেকে নারীবাদী কেন ভাবেন? বাংলাদেশের প্রান্তিক নারীর জীবন বদলাতে আপনার অবদান কী? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একেকটা ইস্যু নিয়ে পোস্ট দেয়া আর মাঠে কাজ করার মধ্যে প্রভেদ আছে তো, সেইটা বোঝেন আগে।
করাচি বন্দরে এককালে গ্রিক-পারসিক-আরবীয় সওদাগরেরা নোঙ্গর করেছে; অনেক স্থাপত্য চিহ্ন আজো রয়ে গেছে; যা…..
তিনি বললেন, ভাষা হল ওষ্ঠের উপর সুধার মতো। আর বললেন, কবিতা যথেষ্ট স্বাদু, কিন্তু…..
রূপকথা পড়েছেন ছোট বেলায় অনেকে একথা আর বলা সন্দেহমুলক, প্রযুক্তির ব্যবহার জন্মের পর থেকে এখন …..
একটি পরাধীন দেশ আর তার বাসিন্দাদের মনে স্বাধীনতার আকুতি আমরা দেখেছিলাম ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে। এর…..